স্বাধীনতা দিবস অনুচ্ছেদ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য যে
সব গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ রয়েছে এর মধ্যে স্বাধীনতা দিবস
অনুচ্ছেদটি অন্যতম। আপনি যদি স্বাধীনতা দিবস অনুচ্ছেদটি খুঁজে
থাকে তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই
আর্টিকেলে স্বাধীনতা দিবস অনুচ্ছেদটি তুলে ধরেছি।
আশা করি অনুচ্ছেদটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি
যদি এই অনুচ্ছেদটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না
বাড়িয়ে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।
স্বাধীনতা দিবস অনুচ্ছেদ
বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা, সম্পদ-সম্ভ্রম ও দীর্ঘ সংগ্রামের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে
আমাদের স্বাধীনতা। ত্রিশ লাখ বীর শহিদের রক্তে রাঙানো আমাদের স্বাধীনতার সূর্য।
তাই মহান স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি গৌরবোজ্জ্বল
দিন। ২৬শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে অর্থাৎ
২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার গোষ্ঠীর দখলদারিত্ব থেকে
মুক্তির লক্ষ্যে আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়।
তাই এ দিন আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দু'শ বছরের
শাসন-শোষণ-নিপীড়নের পর সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসকেরা ১৯৪৭ সালে এদেশ ত্যাগ করতে
বাধ্য হয়। কিন্তু যাবার পূর্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে হিন্দু এবং মুসলমান
সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে খণ্ডবিখণ্ড করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়। এরই অংশ
হিসেবে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে পাকিস্তান নামে এক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম
হয়।
আরও পড়ুনঃ
শ্রমের মর্যাদা অনুচ্ছেদ
ব্রিটিশরা হিন্দু এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাংলাকেও দ্বিখণ্ডিত করে
পূর্ব বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তান নাম দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করে। ফলে পূর্ব
বাংলা হলো পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানিরা
নানাভাবে পূর্ব বাংলাকে শাসন ও শোষণ করার দীর্ঘমেয়াদি চক্রান্তে লিপ্ত হয়। চাকরি,
ব্যবসায়-বাণিজ্য, অর্থসম্পদ ও অন্যান্য সম্পদ বিলি-বাটোয়ারায় তারা পূর্ব বাংলাকে
ঠকাতে শুরু করে।
তারা পূর্ব বাংলার মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি উর্দু
ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়। ফলে পূর্ব বাংলার ছাত্র-জনতা এ
চক্রান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে
তোলে। ১৯৫২ সালের রক্তক্ষয়ী ভাষা আন্দোলনের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে
অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হলেও এদের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত
আর শোষণ-নির্যাতন থেমে থাকেনি।
ফলে ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই সংঘটিত হয় ৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-র ছয় দফা ভিত্তিক
স্বাধিকার আন্দোলন এবং উনসত্তরের উত্তাল গণঅভ্যুত্থান। বিতাড়িত হয় স্বৈরশাসক
জেনারেল আইয়ুব। ক্ষমতাসীন হয় আরেক জেনারেল ইয়াহিয়া খান। নব্য স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া
খান সত্তর সালে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং বঙ্গবন্ধু আবির্ভূত হন বাংলার মানুষের
অবিসংবাদিত নেতারূপে।
আরও পড়ুনঃ গ্রন্থাগার অনুচ্ছেদ
আওয়ামী লীগের এ অভূতপূর্ব বিজয় শাসকগোষ্ঠীর কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত। তাই সামরিক
শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এসেম্বলি আহ্বান করতে টালবাহানা শুরু করে। ফলে বাংলার
আপামর জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অতঃপর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ
মানুষের বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন- 'এবারের সংগ্রাম আমাদের
মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
আন্দোলনে-সংগ্রামে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ। এলো ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ। এদিন মধ্যরাতে
হানাদাররা রাজধানীর ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ট্যাংক
আর মেশিনগান নিয়ে। হত্যা করল হাজার হাজার ঘুমন্ত নারী-পুরুষ-শিশুকে। হত্যা করল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীকে। হত্যা করল রাজারবাগ পুলিশ
লাইনের শত শত বাঙালি নিরস্ত্র পুলিশ আর পিলখানার নিরস্ত্র বাঙালি ইপিআর সৈন্যকে।
গ্রেফতার করল বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কিন্তু
গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়ারলেসের মাধ্যমে
২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার
আহ্বান জানান। অবশেষে দীর্ঘ নয় মাসে তিরিশ লাখ শহিদের আত্মদানে ও অসংখ্য মা-বোনের
সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় প্রিয় স্বাধীনতা আমরা যে মহান উদ্দেশ্য নিয়ে
স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
আরও পড়ুনঃ গ্রাম্য মেলা অনুচ্ছেদ
স্বাধীনতার বীজমন্ত্রে সাম্প্রদায়নিরপেক্ষ বাংলাদেশ নির্মাণের যে প্রত্যয়,
ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা এখনও আমাদের ভাবায়। আমাদের জাতীয়
ঐক্যেও নানাধরনের বিভ্রান্তির বিষবাষ্প প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরাজিত
শক্তিরা আজও সুযোগের অপেক্ষার প্রহর গুনছে অথচ এরূপ ক্ষেত্রে আমাদের ভিত খুব একটা
শক্ত নয়। দেশ-জাতির বৃহত্তর কল্যাণে আমাদের বাঙালি জাতির সেই ঐক্যবদ্ধ
প্লাটফর্মটি আবার গড়ে তুলতে হবে।
তাহলেই শত সমস্যার মধ্যেও আমরা স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে পারব। ২৬শে
মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবসটি প্রতি বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে
পালন করা হয়। এ দিবসের অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন আয়োজন আমাদের চেতনাকে শাণিত করে। তাই
স্বাধীনতার মূলমন্ত্রকে হৃদয়ে ধারণ করে আমাদের সকল বিভেদ ভুলে, সংঘাত পরিহার করে,
সংকীর্ণ স্বার্থচিন্তা বিসর্জন দিয়ে দেশের উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url