একটি ঝড়ের রাত রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি একটি ঝড়ের রাত রচনাটি খুঁজছেন? যদি খুঁজে
থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলটিতে একটি ঝড়ের রাত
রচনা তুলে ধরেছি। সকল ছাত্র-ছাত্রীকেই বাংলা পাঠ্য বইয়ের বিভিন্ন ধরনের রচনা
পড়তে হয়।
অন্যান্য রচনা গুলোর মধ্যে রচনাটি অন্যতম। আশাকরি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি
মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মূল
বিষয়ে যাওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ একটি ঝড়ের রাত রচনা
সুচনা
আমার জীবনে অনেক ঝড়ের রাত এসেছে। কালবৈশাখীর তাণ্ডব নৃত্যও দেখেছি; আবার আশ্বিনের
অকালে প্রচণ্ড ঝড়ও দেখেছি। বইপত্রে অনেক ঝড়ের বর্ণনা পড়েছি। কিন্তু গত বছর
জ্যৈষ্ঠের এক রাতে ঝড়ের যে তাণ্ডবলীলা প্রত্যক্ষ করেছি তা আমার দেখা এবং শোনা
সমস্ত ঝড়ের রাতের স্মৃতিকে স্নান করে দিয়েছে।
সেই স্মরণীয় রাত
২৮শে মে দিনটি বেশ সুন্দরই ছিল। মেঘমুক্ত নীল আকাশ। প্রখর রোদের সঙ্গে ঝিরঝির
বাতাস, বেশ মনোরম। মনে হচ্ছিল দিনটিকে। অথচ সন্ধ্যার প্রাক্কালে সমস্ত মানুষকে
অবাক করে উত্তর-পশ্চিম কোণে দেখা দিল এক বিশাল ঘন কালো মেঘের পাহাড়। ধীরে ধীরে
সূর্য ডুবছে, সন্ধ্যা নামছে আর মেঘের পাহাড় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ নৌকা ভ্রমণ রচনা
সমস্ত আকাশ, গাছপালা, লতাপাতা, বাতাস নিস্তব্ধ। সমস্ত আকাশ ধীরে ধীরে গাঢ়
অন্ধকারে ছেয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা শুনতে পেলাম বাতাসের সাঁই সাঁই শব্দ।
সাগরের উত্তাল তরঙ্গের মতো গর্জন করে বাতাস আসছে, ঝড় আসছে। ধুলোবালিতে আচ্ছন্ন
হয়ে গেল চতুর্দিক। দরজা-জানালা বন্ধ করে দিলাম।
ভয়ংকর সেই ঝড়
বাতাসের সঙ্গে শুরু হলো প্রচণ্ড বৃষ্টি। বাতাসের বেগ ক্রমে বাড়তে লাগল। মানুষের
গগনভেদী চিৎকার আর আজানের ধ্বনি শুনে আমার শরীরে কাঁপন ধরল। আমাদের ঘরের পাশের
বড়ো আম গাছটি একটা বিকট শব্দ করে ভেঙে পড়ল। আমি ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম। আমার মায়ের
কান্নাকাটি ও বারবার নির্দেশে আমিও কয়েকবার আজান দিলাম।
এমন সময়ে কোথা থেকে এক টিনের চালা এসে আমাদের ঘরের চালের সঙ্গে প্রবল বেগে ধাক্কা
খেল এবং আমরা এর বিকট শব্দে শঙ্কিত হয়ে গেলাম। কিন্তু আমাদের ঘরটি খুব মজবুত ছিল
বলে ভেঙে পড়েনি, তবু ভয়ের অন্ত ছিল না। আমার সমস্ত চেতনা, শিরা-উপশিরা যেন হিম
হয়ে এলো।
অন্ধকার ভয়াল রাত, সমস্ত পৃথিবী যেন অন্ধকারে ছেয়ে গেল। ঝড়ের শুরুতেই বিদ্যুতের
আলো নিভে গেল। আমাদের ঘরে একটি হারিকেন জ্বলছে। তাও আবার ডেকচির ভেতর বন্দি।
কেননা বাতাসে এটিও নিভে যেতে পারে। এদিকে ঝড়ের বেগ ক্রমেই বেড়ে চলল। প্রকৃতি যেন
পাগলপারা হয়ে ধ্বংসলীলায় মেতে উঠল।
ঝড়ের পরে
মধ্যরাতের দিকে ঝড় থামল। কিন্তু বাতাস একেবারে থামেনি, মাঝে মধ্যে দমকার আকারেও
আসে। চতুর্দিক থেকে জেনে আসতে লাগল মানুষের কান্নার শব্দ, কিন্তু রাতের এই
অন্ধকারে বেরোতে সাহস হলো না। বিছানায় শুয়ে ঘুমাতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু ঘুম আসছে
না। মানুষের কান্না এবং আহাজারির অস্পষ্ট শব্দগুলো শুনে মনে হলো গ্রামের বাড়িঘর
বুঝি আর কিছুই আন্ত নেই।
সবই হয়তো শেষ করে দিয়ে গেছে এই সর্বনাশা ঝড়। তাই ঘুম আর হলো না। সমস্ত রাতটা
উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে কাটল। ভোর হতে না হতেই বেরিয়ে পড়লাম। মেঘমুক্ত
সীমাহীন নীল আকাশ, প্রকৃতি নীরব-নিস্তব্ধ। চারদিকে ধ্বংসস্তূপ। ভয় আর বেদনায় বুক
থরথর করে কাঁপতে লাগল। ধীরে ধীরে এগোতে লাগলাম। পাড়া-প্রতিবেশীদের বাড়ির দিকে।
আরও পড়ুনঃ বর্ষাকাল রচনা
বৈদ্যুতিক তারের খুঁটি, গাছপালা, বাড়িঘর সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সব স্তূপাকারে
পড়ে আছে উঠানে, রাস্তা-ঘাটে, খেতে-খামারে। ফসলের মাঠের দিকে তাকানো যায় না। সময়
ফসল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে শিলাবৃষ্টি আর ঝড়ে। বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে
পড়ে আছে মানুষের ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ। এসব দেখে চোখ ঝাপসা হয়ে যেতে চায়।
অসংখ্য অসহায় নারী-পুরুষের বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস-প্রকৃতি যেন গুমরে গুমরে
কাঁদছে। এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য যে না দেখেছে তাকে বুঝানো বড়ো কঠিন। আমার চোখ দিয়েও
ঝরঝর করে পানি পড়তে লাগল। ইচ্ছে করছিল চিত্কার করে কাঁদি কিন্তু পারিনি। যতই বেলা
বাড়তে লাগল ততই চতুর্দিক থেকে ধ্বংস আর মৃত্যুর খবর আসতে লাগল। ঝড় যেন কেবল গরিব
মানুষেরই গজব, মৃত্যুর অমানিশা, স্বজনহারা মানুষের গগন বিদারী আর্তচিৎকার।
উপসংহার
এই ভয়াবহ ধ্বংসলীলা আর বীভৎস মৃত্যুর দৃশ্য এ জীবনে কখনো ভুলব না এবং তা ভোলারও
নয়। এই স্মৃতি আমায় হৃদয়ে ও চৈতন্যে চিরদিন জেগে থাকবে ভয়ের কালরাত হিসেবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url