ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কি - বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি জানেন ক্ষুদ্র এই নৃগোষ্ঠী কি? যদি না
জেনে থাকেন তাহলে সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কেননা আমরা এ আর্টিকেলটির মাধ্যমে
আপনাদের জন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কি এটি সহ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রচনাটি
তুলে ধরেছি।
আশা করি এটির মাধ্যমে আপনারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি এই সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পন্ন শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না
বাড়িয়ে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কি - বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রচনা
ভূমিকা
সমগ্র বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে। বাংলাদেশও এমনি ছোটো-বড়ো
জাতিসত্তার মানুষ আবহমানকাল ধরে বসবাস করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এদের অবদান
ছিল গৌরবের। এরা সংখ্যালঘু হলেও এদের সংস্কৃতি আমাদের মূল্যবান সম্পদ।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কি
প্রাচীন সংস্কৃতিবিশিষ্ট ছোটো-বড়ো অনগ্রসর নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীই হলো আদিবাসী।
এরা আধুনিক সভ্যতাকে পুরোপুরি গ্রহণ না করে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে ছোটো সমাজ বা
গোষ্ঠী গঠন করে অরণ্যে বা এর কাছাকাছি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করে। বাংলাদেশে বাস করে
চাকমা, খাসিয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, গারো, মারমা, সাঁওতাল, ত্রিপুরা, ওরাঁও, মুন্ডা,
হাজং, কোচ, ম্রো, চাক, রাখাইন,
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের কৃষক রচনা
মণিপুরিসহ আরও অনেক জাতিসত্তার মানুষ। গভীর অরণ্যে যেসব নৃগোষ্ঠীর বাস তাদের
মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতিকে প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এই অর্থে
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অপর নাম পৃথিবীর 'আদিম বাসিন্দা'। এরা 'উপজাতি' হিসেবেই বেশি
পরিচিত আমাদের বাংলাদেশে। বেসরকারি হিসেবে বাংলাদেশে ৪৫টি ছোটো-বড়ো জাতিসত্তার
প্রায় ২০ লাখ লোক বাস করে।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শ্রেণিবিভাগ
অঞ্চল ভিত্তিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে দুটো ভাগে ভাগ করা যায়: ১. পার্বত্য
চট্টগ্রামের জেলাসমূহ ও বরিশাল-পটুয়াখালি অঞ্চল; ২. বাংলাদেশের বাকি অঞ্চল।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা, বরিশাল ও পটুয়াখালিতে আছে চাকমা, মারমা,
ত্রিপুরা, মুরং, ম্রো, কুকি, লুসাই, খুসি, বনযোগী, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখো প্রভৃতি
নৃগোষ্ঠী। বাকি অঞ্চলে রয়েছে সাঁওতাল, মণিপুরি, গারো, খাসিয়া, হাজং, মুন্ডা,
ওরাঁও প্রভৃতি নৃগোষ্ঠী।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতি
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরা গোষ্ঠী সচেতন। যেকোনো সমস্যা এরা দলবদ্ধভাবে মোকাবিলা
করে। এদের সমাজকাঠামো নানা রকম। জনসংখ্যা অনুযায়ী এক-একটি সমাজ ছোটো ছোটো কয়েকটি
দল-উপদলে বিভক্ত। প্রতিটি দলই নিরাপত্তা রক্ষায় সচেষ্ট। নিজস্ব সরকার ব্যবস্থায়
পরিচালিত হয় নৃগোষ্ঠী সমাজ। এদের শিক্ষাব্যবস্থার ধরনও নিজস্ব। তবে বৃহত্তর
সমাজের ভাষা ও শিক্ষাদীক্ষাও এরা গ্রহণ করে।
আরও পড়ুনঃ মে দিবস ইতিহাস
এদের কোনো কোনো সমাজ মাতৃকেন্দ্রিক। পশুপালন ও কৃষিকাজ এদের প্রধান জীবিকা। জাদু,
জড়পূজা এদের সমাজজীবনের একটি বড়ো অংশ দখল করে আছে। এদের অধিকাংশই বৌদ্ধ ও হিন্দু।
কেউ কেউ আবার খ্রিষ্টধর্মও গ্রহণ করেছে। সরকার ব্যবস্থার দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে
বিশেষ গুণসম্পন্ন ব্যক্তি বা বয়োজ্যেষ্ঠদের ওপর। সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বও
এদের ওপর ন্যস্ত থাকে। এদের বিবাহ পদ্ধতিও স্বকীয়।
বিয়েসহ অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব, । বিভিন্ন অনুষ্ঠান দায়িত্বশীল ব্যক্তির নির্দেশেই
হয়ে থাকে। এদের গান, গল্প, উপকথা, বৈচিত্র্যময় নৃত্য, মুখে মুখে চলে আসা গল্প,
ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সম্ভার আমাদের সংস্কৃতিকে বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ করেছে।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমা, মারমা, রাখাইন ও মণিপুরিরা
শিক্ষাদীক্ষায় তুলনামূলকভাবে অনেক অগ্রসর।
জাতিসংঘ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী
জাতিসংঘ ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৯ই আগস্ট আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী দিবস
পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণের অবস্থার পরিবর্তনের
অঙ্গীকার হিসেবে জাতিসংঘ ১৯৯৫-২০০৪ দশককে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্যে আন্তর্জাতিক
দশক হিসেবে ঘোষণা করে।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব রচনা
এই দশকের লক্ষ্য ছিল, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আর্থসামাজিক ও রাজনীতিক সব ধরনের
সমস্যার অবসান ঘটিয়ে তাদের মূল ধারার জনগোষ্ঠীর সমপর্যায়ে নিয়ে আসা। ১৯৯৩ সালের
১৪ থেকে ২৫শে জুন ভিয়েনায় বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমাজের
নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, তাদের বঞ্চনার ইতিহাস
বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন।
এতে উন্মোচিত হয়েছে এক নতুন দিগন্ত। ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও
সামাজিক পরিষদ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্যে স্থায়ী ফোরাম গঠন করেছে। ক্ষুদ্র
নৃগোষ্ঠীর উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তবায়নই এই ফোরামের লক্ষ্য।
উপসংহার
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বকীয়তা, ভাষা ও সংস্কৃতি আমাদের এক মূল্যবান সম্পদ। তাই এই
নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি আমাদের গৌরব ও অহংকার। তাই
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সব ধরনের অধিকার দিতে হলে দেশের সরকার এবং সেই সঙ্গে সচেতন সকল
নাগরিককে বৃহত্তর ভূমিকা পালন করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url