নৌকা ভ্রমণ রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি নৌকা ভ্রমণ রচনাটি খুঁজছেন? যদি খুঁজে
থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন, কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের
জন্য নৌকা ভ্রমণ রচনাটি তুলে ধরেছি।
আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি নৌকা ভ্রমণ রচনাটি
পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ
পর্যন্ত পড়ুন।চলুন তাহলে আর বেশি সময় নষ্ট না করে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ নৌকা ভ্রমণ রচনা
ভূমিকা
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌকাভ্রমণ যেমন আনন্দদায়ক তেমনই অভিজ্ঞতা প্রসারক বিষয়।
নৌকাভ্রমণের মাধ্যমে নদীকে যেমন কাছ থেকে চেনা যায় তেমনই দুপাড়ের জনজীবন সম্বন্ধে
বাস্তব অভিজ্ঞতাও লাভ করা যায়। এছাড়া আরও উপভোগ করা যায় নদী- কেন্দ্রিক প্রকৃতির
অবারিত সৌন্দর্য। গত বছর বন্যার সময় ত্রাণ বিতরণ উপলক্ষ্যে আমার নৌকাভ্রমণের
সুযোগ হয়েছিল- যা থেকে আমি যুগপৎ আনন্দ ও বেদনার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি।
ভ্রমণের পরিকল্পনা
মাত্র কয়েকদিন পরই গ্রীষ্মের ছুটি। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে ঠিক করলাম ছুটির দিনগুলো
ভ্রমণ করে কাটাব। ছুটির দুই দিন মাত্র বাকি। হঠাৎ দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে
দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক
ছাত্রদের ডেকে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন।
তিনি বললেন, টাকা-পয়সা, পুরানো কাপড়-চোপড়, চিড়া-গুড়, যাই হয় আমরা যেন সঙ্গে করে
নিয়ে আসি। পরদিন বিদ্যালয়ের ত্রাণ কেন্দ্রে অনেক সাহায্য জমা হলো। রাজিব স্যার
আমাদের একটা প্রস্তাব দিলেন। বললেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ত্রাণসামগ্রী আমরা নিজেরাই
দুর্গত এলাকায় দিয়ে আসব।
যাত্রা শুরু
মাঝারি ধরনের একটা নৌকায় আমরা দশজন মিলে উঠে পড়লাম। দুজন মাঝি নৌকা ছেড়ে দিয়ে
বৈঠা বাইতে শুরু করল। আমরা আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শেষ হলে
আমরা নৌকায় চড়ে বৌদ্ধ মন্দির দেখতে যাব। আমাদের নৌকায় রাজিব স্যারও ছিলেন। আমরা
তাঁর কাছে আমাদের পরিকল্পনার কথা জানালাম। তিনি বললেন, এটা তো খুব ভালো কথা।
আরও পড়ুনঃ শীতের সকাল রচনা
বললেন, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শেষে আমরা সবাই সেখানে যাব। প্রায় ৪/৫ ঘণ্টা নৌকা চলল।
আমরা দুপুর নাগাদ দুর্গত এলাকায় এসে পৌঁছলাম। নিজের চোখে না দেখলে দুর্গত মানুষের
দুর্দশা সম্পর্কে কোনো ধারণাই করতে পারতাম না। যেদিকে তাকাই শুধু পানি আর পানি।
ফসলের খেত, বাড়িঘর, ভিটেমাটি সব ডুবে গেছে পানিতে।
অসহায় মানুষেরা কিছু গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ত্রাণ শিবিরে।
সেখানে তাদের মানবেতর জীবনযাপন দেখে বেদনায় আমাদের চোখে পানি এলো। আমরা
ত্রাণসামগ্রী সবার কাছে পৌছে দিতে পারলাম না। কারণ যা এনেছি তা প্রয়োজনের তুলনায়
খুবই কম ছিল। তবুও আমাদের মনে সান্ত্বনা ছিল যে, আমরা এদের কিছুটা তো সাহায্য
করতে পেরেছি।
ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
ত্রাণসামগ্রী বিতরণের পর আমাদের মনটা খুব খারাপ ছিল। রাজিব স্যার আমাদের বললেন,
তোমরা মন খারাপ কর না। বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বিদ্যালয়ে যে
ত্রাণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে সেটা বন্ধ হবে না, তোমরা আবার সাহায্য নিয়ে আসবে। আবার
ত্রাণসামগ্রী বন্যার্তদের মাঝে বিলিয়ে দেব। মানবতার সেবাই ছাত্রদের ধর্ম কথাটা
মনে রাখবে। তোমরা মন খারাপ করবে না।
তোমাদের জীবনে অনেক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। তোমরা ভয় পেয়ো না। দুঃখ কর না।
রমজান স্যার বললেন, আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দির দেখার জন্য
রওনা হব। তার আগে চল আমরা কিছু খেয়ে নিই। তখন বিকেল তিনটা। মাথার উপর সূর্য তাপ
দিচ্ছে। পানিতে সূর্যের কিরণ আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। আমরা নৌকা ভ্রমণের আনন্দ
উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌতুক শুনছি। একেক জন একটা করে কৌতুক বলছে আর সবাই
হাসছি।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা
স্যাররাও আমাদের সঙ্গে মন খুলে হাসছেন। দুজনে দুটি করে চারটা কৌতুক শোনালেন।
রমজান স্যারের একটা কৌতুক শুনে আমাদের পেটে খিল ধরে গেল। কৌতুক বলা শেষ করে আমরা
খেয়ে নিলাম। খাওয়ার পর আমরা মাঝিদের বলি একটা গান শোনাতে। মাঝিরা বলল, আজকাল কেউ
মাঝিদের মুখে গান শুনতে চায় না। মাঝিদের মুখের ভাটিয়ালি গান তো এখন রেডিওতে
প্রায়ই শোনা যায়। তবুও আমরা মাঝিদের মুখেই গান শুনতে চাই। মাঝিরা খালি মুখে গান
ধরলেন-
মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে
আমি আর বাইতে পারলাম না...
আমরা কোরাস গাইতে থাকি। নদীর কানায় কানায় পূর্ণ পানিতে ঢেউ হচ্ছে অনেক বেশি।
প্রতিকূল স্রোত ঠেলে আমাদের নৌকা এগিয়ে চলেছে। মাঝে মধ্যে দুই-একটা যাত্রীবাহী
লঞ্চ ভোঁ ভোঁ শব্দ করে যান্ত্রিক আওয়াজ তুলে দ্রুত ছুটে যাচ্ছে গন্তব্যে।
হঠাৎ করে দুর্যোগ শুরু হলো
পড়ন্ত বিকেলে আমরা রওয়ানা হলাম বাড়ি ফেরার জন্য। নৌকা ছেড়ে মাঝি জোরে জোরে বৈঠা
বাইতে লাগল। অন্তায়মান সূর্যের রক্তিম আভা নদীর স্বচ্ছ বুকে অপূর্ব দৃশ্যের
সৃষ্টি করল। সোনালি রঙের ঢেউগুলো অপূর্ব সুন্দর লাগছে। আমরা প্রাণ ভরে নদীর বুকের
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছি। সূর্য নদীর বুকেই ডুবে গেল।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা
এমন সময় হঠাৎ আকাশের অবস্থা খারাপ হলো। মুহূর্তেই যেন ক্ষুব্ধ হলো প্রকৃতি।
রুদ্ররূপ ধারণ করল শান্ত নদী। আমরা ভয়ে অস্থির হলাম। মাঝিরা আমাদের সান্ত্বনা
দিল। বলল, ভয় নেই, আমরা ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাব। তার কিছু সময় পর দেখলাম
আকাশ পরিষ্কার। নদীও শান্ত। আমরাও এসে পড়েছি ঘাটে। নৌকা তীরে ভিড়ল। সবাই একে একে
নেমে পড়লাম।
উপসংহার
ত্রাণ বিতরণ, নৌকা ভ্রমণ ও ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দির দর্শনের স্মৃতি আমার মনে চিরদিন
জেগে থাকবে। কিছু কিছু স্মৃতি আছে যা একই সঙ্গে আনন্দের ও বেদনার। এটাও ঠিক
তেমনই।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url