শিশু শ্রম কি - বাংলাদেশে শিশু শ্রম প্রতিরোধের উপায়

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি জানেন শিশু শ্রম কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানবো শিশু শ্রম কি এবং বাংলাদেশে শিশু শ্রম প্রতিরোধের উপায় সহ আরও ইত্যাদি বিষয়ে।
শিশু শ্রম কি
প্রিয় পাঠক আপনি যদি শিশু শ্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত সব তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ শিশু শ্রম কি - বাংলাদেশে শিশু শ্রম প্রতিরোধের উপায়

ভূমিকা

শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার, দেশের অমূল্য সম্পদ। তাদের মাঝেই আগামী দিনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। তাই শিশুদের দক্ষ নাগরিক এবং যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব অভিভাবকদের। কিন্তু দেখা যায়, তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশসমূহের শিশুরা অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন- এসব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থা অত্যন্ত করুণ ও মর্মন্তদ।
শিশুশ্রমের সর্বনাশা পরিণামের কথা চিন্তা না করে আমাদের দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর দরিদ্র পিতামাতা তাদের শিশুসন্তানকে জীবিকার খোঁজে হাড়ভাঙা শ্রমদানে বাধ্য করে। ফলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। অনাদর অবহেলায় লাঞ্ছিত-বঞ্চিত গৃহহারা নির্যাতিত দরিদ্র শিশুরা নিশ্চিত অন্ধকারে নিপতিত হচ্ছে। যা দেশের জন্য এক অন্তত আশঙ্কা, জাতির জন্য এক কলঙ্কিত অধ্যায়।

শিশু শ্রম কি

বাংলাদেশের জাতীয় শিশুনীতিতে ১৪ বছরের কম বয়সি ছেলেমেয়েদের শিশু বলে অভিহিত করা হয়। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ ১৮ বছরের কম বয়সের সবাইকে শিশু হিসেবে গণ্য করে। আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিল ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষকে যেকোনো ধরনের শারীরিক ও মানসিক শ্রমে নিয়োগ করাকে 'শিশুশ্রম' বলে উল্লেখ করেছে। অর্থাৎ আঠারো • বছরের কম বয়সি সকল শিশুকে যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করাই হলো শিশুশ্রম।

শিশুশ্রমের বিভিন্ন দিক

জীবিকার সন্ধানে আমাদের দেশের অপরিণত বয়সের অসংখ্য শিশু-কিশোর বাস-ট্রাকের হেলপার, কাঠ মিস্ত্রির হেলপার, ইট ও পাথর ভাঙার কাজ করছে। অনেকে রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি প্রভৃতি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। কেউবা বাদাম, চানাচুর, ফুল, পানি, চা বিক্রি, হোটেলের বয়, কুলি এবং ফুটপাতে কাগজ কুড়িয়ে বিক্রি করার কাজে নিয়োজিত আছে। এসব শিশু- কিশোর শ্রমিকের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।
কেবল বাংলাদেশেই নয়, তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল যেকোনো দেশে যেকোনো সময় তারা বেড়ে ওঠে একটা সুস্থ জীবনবোধের আশ্বাসে। অনেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করার পর বৃত্তিমূলক শিক্ষা নেবে এবং নিজেকে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তুলবে। আমাদের দেশের শতকরা ৩০% শিশু ৮/১০ বছর বয়স থেকেই শ্রমকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়, নিতে বাধ্য হয়। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সন্তান তার পিতার কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়, পেশাজীবীর সন্তান তার পিতার পেশায় হাতেখড়ি নেয়।

শিশু শ্রম এর কারণ

আর্থনীতিক, সামাজিক কিংবা যেকোনো কারণেই হোক বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে নিয়তই শিশুশ্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ লোক এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এসব দারিদ্র্যপীড়িত বাবা-মা অভাব-অনটনের তাড়নায় নিজেদের শিশু সন্তানকে শ্রমবৃত্তি গ্রহণ করতে বাধ্য করে। আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের নিষেধাজ্ঞা আজ অবধি কোনো দেশের শিশু-কিশোর শ্রম রোধ করতে পারেনি।
দেশের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক কোনো উন্নয়নই এ শ্রম বন্ধ করতে পারেনি। পেটের তাগিদেই শিশু-কিশোরদের অমানুষিক পরিশ্রমের কাজ করতে হচ্ছে। এক শ্রেণির আদম ব্যাপারী ও ছেলেধরা পেশায় নিয়োজিত একটি মহল মধ্যপ্রাচ্যে শিশু পাচারে নিয়োজিত। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হচ্ছে শিশু এবং উটের জকির কাজ করে এসব পাচারকৃত শিশুরা। বিষয়টি আশঙ্কাজনক।

বাংলাদেশে শিশু শ্রম প্রতিরোধের উপায়

অসহায় ও নির্যাতিত এ শিশুদের রক্ষা করতে হলে সরকারি, বেসরকারি সর্বমহলের আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বঞ্চিত, নিপীড়িত, গৃহহীন এ শিশু-কিশোরদের বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা বিধান করতে না পারলে বিশ্বের কোনো আইনই নিষ্ঠুর শ্রমের হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করতে পারবে না।

দেশে শিশুশ্রম যেমন বাড়ছে তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শিশু নির্যাতনের প্রকোপ। শিশুরা সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর মজুরিও পায় নিতান্তই সামান্য। তাছাড়া অকথ্য গালাগালি তো রয়েছেই, মানবেতর এ জীবন থেকে এদের পরিত্রাণের উপায় কী? এ প্রশ্ন রয়ে গেল সমাজের বিবেকবান মানুষের কাছে।

শেষ কথা

শিশুশ্রম রোধ করতে না পারলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠন করতে চাইলে সর্বপ্রথম বর্তমান প্রজন্যের স্বীকৃতি ও পরিচর্যা একান্ত অপরিহার্য। এজন্য দেশের সরকার ও বিত্তবান মানুষের এগিয়ে আসতে হবে। দেশে নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করতে হবে।

দেশের অন্যান্য জটিল সমস্যার সঙ্গে শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতনের ব্যাপারটি মানুষের মধ্যে মানবিকভাবে বিবেচনা করতে হবে। প্রত্যেকটি শিশুকে নিশ্চিত মৌলিক অধিকার প্রদান ও যথাযথ বিকাশের সুযোগ করে দিতে পিতামাতা, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url