শ্রমের মর্যাদা অনুচ্ছেদ - শ্রমের মর্যাদা অনুচ্ছেদ class 7
শ্রমের মর্যাদা রচনা কিংবা অনুচ্ছেদ দুটিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি শ্রমের
মর্যাদা অনুচ্ছেদটি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই
আর্টিকেলে শ্রমের মর্যাদা অনুচ্ছেদটি তুলে ধরেছি। আশা করি অনুচ্ছেদটি আপনাদের
উপকারে আসবে।
আমাদের এই আর্টিকেলে উল্লেখিত অনুচ্ছেদটি ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত সকল
শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য। প্রিয় পাঠক শ্রমের মর্যাদা অনুচ্ছেদটি পড়তে
আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর
কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক। ।
শ্রমের মর্যাদা অনুচ্ছেদ
মানবসভ্যতার উষালগ্ন থেকেই পৃথিবী গড়ে উঠেছে একটি বিরাট কর্মশালা হিসেবে। কর্মের
ওপর ভর করে পৃথিবী দাঁড়িয়ে আছে। সভ্যতার চরম বিকাশের মূলে রয়েছে যুগ-যুগান্তের
অগণিত মানুষের অফুরন্ত শ্রম। মানুষ তাদের মূল্যবান শ্রম উৎসর্গ করে পৃথিবীকে
দিয়েছে আজকের এই আধুনিক সভ্যতা। অথচ এদের অনেকের নামই ইতিহাসের পাতায় স্থান
পায়নি।
কিন্তু তাদের শ্রমের উজ্জ্বল স্বাক্ষরই সভ্যতার চরম উৎকর্ষ রূপে প্রতীয়মান।
মানবজীবনের জন্য শ্রমের আবশ্যকতা অপরিহার্য। বিশেষ করে মানুষ একদিকে যেমন সভ্যতার
স্রষ্টা, অপরদিকে, নিজের ভাগ্য নির্মাণের স্থপতি। মানুষের ভাগ্য মানুষকে নিজের
হাতে গড়তে হয়, অন্যের ওপর নির্ভর করে নয়। শ্রম ভাগ্য নির্মাণের হাতিয়ার। প্রতিটি
মানুষ পৃথিবীতে আসে সুপ্ত প্রতিভা নিয়ে আর এ সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত হয় শ্রমের
মাধ্যমে।
পৃথিবীর বরণীয় ব্যক্তিদের স্মৃতিচারণ করলে বোঝা যায় এরা ব্যক্তি জীবনকে
প্রতিষ্ঠিত করতে কতখানি পরিশ্রম করেছিলেন। তাছাড়া শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো এমন
করে স্রষ্টা তৈরি করছেন যে, পরিশ্রম না করলে চলবে না। পরিশ্রমবিমুখ শরীরের
যন্ত্রগুলো বিকল হয়ে যায়, স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। তাই দৈহিক কিংবা মানসিক উভয়
ক্ষেত্রেই শ্রমের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। পরিশ্রম মানুষের মনকে সবল করে তোলে।
আরও পড়ুনঃ গ্রাম্য মেলা অনুচ্ছেদ
শ্রমের মাধ্যমে ব্যক্তির অঙ্গ সঞ্চালন ও বুদ্ধিবৃত্তি চালনা করলে মানসিক পুষ্টি
সাধিত হয়। প্রতিদিন নির্ধারিত কর্তব্য পালন করে গেলে হৃদয়ে যে একটা আত্মপ্রসাদ
অনুভূত হয় তার আস্বাদন একমাত্র পরিশ্রমী লোকই পেতে পারে। প্রতিটি মানুষের জীবনেই
প্রতিদিন একটি সুন্দর সকাল অপেক্ষা করে নতুন আশা উদ্দীপনার স্বপ্নীল অঙ্গীকার
নিয়ে।
অকর্মণ্য লোকদের জীবনে যেমন শ্রম নেই, স্বপ্ন নেই তেমনই চিত্তের স্বাধীনতাও নেই,
শুধু বিচ্ছিন্ন কতকগুলো ভাবনা তাদের জীবনকে অসহ্য করে তোলে। তাইতো আল-কোরানে
বর্ণিত আছে, 'মানুষের শ্রম ব্যতিরেকে কিছু নেই।' শ্রম শুধু ভাগ্য উন্নয়নের
চাবিকাঠি নয়, মানসিক পুষ্টি সাধনেরও নির্ভরযোগ্য টনিক। যারা পরিশ্রম করে জীবনে
প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তাদের সামাজিক মর্যাদা সমুন্নত।
শ্রমজীবী মানুষেরা পরিশ্রমকে সম্মানের চোখে দেখেন। অন্যদিকে অলস লোকেরা সমাজে
ঘৃণার পাত্র। পরিশ্রমী লোক কখনো কোনো কিছুর জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করে না। যার
কারণে পরিশ্রমী মানুষেরা সমাজে সম্মানজনক আসনে প্রতিষ্ঠিত হন। পৃথিবীতে যত মানুষ
গৌরব অর্জন করেছে সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তাই জনৈক মনীষী বলেছেন, 'ক্ষণস্থায়ী
জীবনটাকে পরিশ্রম দ্বারা যত বেশি পারা যায় কাজে লাগাইয়া লও।'
নিরলস কর্ম প্রচেষ্টাই সমাজের উচ্চস্তরে পৌঁছানোর সহজ সিঁড়ি। শ্রমের ক্ষেত্রে
নানা দৃষ্টিভঙ্গি কর্মই প্রকৃত মানুষের সাধনা। আর কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষকে
শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হয়। কিন্তু সকল মানুষের পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব নয়, তাতে
সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আর এজন্যই মানুষ শ্রমের শ্রেণিবিভাগ করেছে। কিন্তু
এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে জাতিভেদ প্রথা। অথচ ভারতীয় উপমহাদেশে শ্রমের শ্রেণিবৈষম্য
আমাদের জাতীয় শ্রমশক্তিকে পশ্চাতে ঠেলে দিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বাংলা নববর্ষ অনুচ্ছেদ
কিন্তু উন্নত বিশ্বে এ ধরনের হীন দৃষ্টিভঙ্গি নেই। এরা শ্রম বিভাজনকে শ্রম
উন্নয়নের সহজতর উপায় মনে করে। তাই জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ শ্রমের
মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আর্থনীতিক সমৃদ্ধি লাভ করেছে এবং পৃথিবীতে উন্নতির
সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছে। শ্রমই শক্তি। শ্রমের মাধ্যমেই মানুষ সন্ধান করে
নতুন কিছু আবিষ্কারের পন্থা।
বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলা ইত্যাদি বিকাশের পেছনে রয়েছে নিরন্তর শ্রমসাধনা।
হিলারির হিমালয় জয় আর নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি উদ্ভাবনে অসাধারণ শ্রমের
দৃষ্টান্ত রয়েছে। তাই বিশ্বায়নের এ যুগে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিশেষে আমরা
বলতে পারি যে, শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে মনের সকল সংকীর্ণতা ত্যাগ করতে হবে
এবং যেকোনো শ্রমকেই শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। সম্মিলিত শ্রমই একটি জাতির
কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে। কবির ভাষায় বলা যায়-
পরিশ্রমে ধন আনে পুণ্যে আনে সুখ।
আলস্যে দারিদ্র্য আনে পাপে আনে দুঃখ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url