বাংলাদেশের কৃষক রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি বাংলাদেশের কৃষক রচনাটি খুলে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য বাংলাদেশের কৃষক রচনাটি তুলে ধরেছি। বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের একটি সব রচনাটি অন্যতম।
বাংলাদেশের কৃষক রচনা
আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের কৃষক রচনা

ভূমিকা

সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,
দেশ মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা।
মাটি, পানি ও মানবসম্পদ- তিনটি হলো বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এই বাংলাদেশের মাঠে-প্রান্তরে যে কৃষিপণ্য উৎপন্ন হয়, তার সঙ্গে সমগ্র দেশবাসীর ভাগ্য জড়িত। বাংলাদেশের শতকরা ৮০ জন লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

এদেশের আর্থনীতিক বুনিয়াদ সম্পূর্ণ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং, আমাদের জাতীয় জীবনে কৃষক-সমাজের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও টেকসই উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন, দারিদ্র্য নিরসন ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃষিখাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

আমাদের দেশের কৃষক

যারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, শক্ত হাতে লাঙল ধরে, ধরণির কঠিন মাটি চিরে নতুন ফসলের অযুত সম্ভাবনায় এদেশকে সমৃদ্ধ করে তারা হলো এদেশের অবহেলিত কৃষকসম্প্রদায়, তথা বাংলার কৃষক। তারা আপন সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে, দেশ ও জাতির অগ্রগতির স্বার্থে নীরব ভূমিকায় অবতীর্ণ।

কৃষকদের দুরবস্থার কারণ

আজ এদেশের বিরাট জনগোষ্ঠী চাষিসম্প্রদায় দারিদ্র্যের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে। বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অনেক দেশই চরম উন্নতি সাধন করেছে। কিন্তু আমাদের দেশ তেমন উন্নতি করতে পারেনি। কারণ প্রাচীনকাল থেকে আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতে কৃষিকাজ চলত, আজও ওই পদ্ধতির পরিবর্তন হয়নি। দেশের অধিকাংশ কৃষকই মান্ধাতার আমলের ভোঁতা লাঙল, শীর্ণ গোরু তাদের চাষাবাদের একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
কৃষকের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ পরিমাণে- সে অনুপাতে জমির পরিমাণ বাড়েনি। ফলে তাদের পেটের খাবার জোগাতেই তারা হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশের জমিতে প্রচুর সেচ ব্যবস্থা নেই। ফলে আজও এখানে অনাবৃষ্টির সময় প্রকৃতির দিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকতে হয়। অপরদিকে অতিবৃষ্টির সময় অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে কৃষকদের হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

তাছাড়াও কৃষিযোগ্য জমিতে ক্রমাগত চাষ করতে করতে ভূমির উর্বরতা একসময় কমে আসে। এতে কৃষির উৎপাদন আগের তুলনায় কমে যায়। এখন আমাদের দেশে প্রায়ই শোনা যায়, পোকামাকড়ের উপদ্রব হতে ফসল রক্ষা পায় না। এদের উপদ্রব হতে ফসলকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজনমতো কীটনাশক ঔষধ ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু আজও আমাদের দেশে এ ব্যবস্থা সার্বিকভাবে চালু করা হয়নি।

দুরবস্থা দূর করার উপায়

বর্তমান বাংলাদেশের কৃষকদের দুরবস্থা দূর করতে হলে কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন অবশ্যই করতে হবে। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থায় চাষাবাদের ব্যবস্থা করতে হবে। অনাবৃষ্টির সময় প্রকৃতির দিকে চেয়ে না থেকে জমিতে কূপ খনন করে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। অতিবৃষ্টির সময় জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
কীটপতঙ্গের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য প্রয়োজনে কীটনাশক ছিটিয়ে ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে জমি চাষ করে অল্প সময়ে অধিক ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। চাষিদের মধ্যে স্বল্প সুদে ঋণ, উন্নতমানের বীজ ও সার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

কৃষকের উন্নতির জন্য গৃহীত পদক্ষেপ

দেশের কৃষকের অবস্থার উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষকদের শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনে গণশিক্ষার কাজ চলছে। শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়ায় কিছুটা অবশ্য অগ্রগতিও হয়েছে। কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি উন্নয়ন সংস্থা অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়িত করেছে।

উন্নতমানের বীজ, পর্যাপ্ত সার ও কীটনাশক, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে চাষাদের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীরা উন্নয়ন কর্মে নিয়োজিত আছে। এখন কৃষি উপকরণ যাতে সব কৃষকের হাতের কাছেই অতি সহজে পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য যাতে পায় সেদিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে নানা গবেষণা চলছে। ইতোমধ্যে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা কৃষকদের অবস্থার পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সরকার কৃষকদের জন্য কৃষি ঋণের ব্যবস্থা এবং শস্য ঋণের ব্যবস্থা করেছে।

উপসংহার

আমাদের জাতীয় উন্নতির মেরুদণ্ড হলো কৃষক। আমাদের দেশের কৃষকদের ওপর নির্ভর করে আমাদের জীবন। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, কৃষকই জাতির খাদ্যের জোগানদাতা। এদের উন্নতিতেই দেশের উন্নতি। কৃষককে বাদ দিয়ে জাতি কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। আর তাই দেশ ও জাতির স্বার্থের কথা ভেবেই কৃষকদের অবস্থার উন্নয়নে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই সোনার বাংলা ভরে উঠবে ধনে-ধান্যে, পুষ্প-পল্লবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url