মে দিবস ইতিহাস - মে দিবস অনুচ্ছেদ

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি মে দিবস ইতিহাস সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে মে দিবস ইতিহাস, মে দিবস কত সাল থেকে পালিত হয়, মে দিবস অনুচ্ছেদ ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেছি।
মে দিবস ইতিহাস
প্রিয় পাঠক আপনি যদি মে দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে মে দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ মে দিবস ইতিহাস - মে দিবস অনুচ্ছেদ

ভূমিকা

প্রতিবছর মে মাসের প্রথম তারিখে বিশ্বব্যাপী পালিত ঐতিহাসিক দিবসটি 'মে দিবস' নামে পরিচিত। শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দুর্বার আন্দোলনের রক্তস্রোত স্মৃতি বিজড়িত এই মে দিবস। শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রতি অবিচারের অবসান ঘটাবার সুতিকাগার বলা হয় মে দিবসকে।

প্রায় দেড়শত বছর আগে শ্রমিকদের মহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় শ্রমজীবী মানুষের বিজয়ের ধারা। সেই বিজয়ের ধারায় উদ্ভাসিত বর্তমান বিশ্বের সকল প্রান্তের প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় সারাবিশ্বে প্রতি বছর উদ্যাপিত হয়ে আসছে মহান মে দিবস।

মে দিবস ইতিহাস

শ্রম শোষণের বিরুদ্ধে জোর সংগ্রাম সবসময় সকল সমাজে বিদ্যমান ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলে শ্রমজীবীরা ধীরে ধীরে তাদের শ্রমের মর্যাদা পেতে শুরু করে। কিন্তু এক্ষেত্রে শ্রমের কোনো সময় নির্ধারণ করা ছিল না। সে সময় মালিকপক্ষ শ্রমিকদের কাছ থেকে ১৬-১৮ ঘণ্টার শ্রম আদায় করে নিত, যা স্বভাবতই শ্রমিকদের পক্ষে মেনে নেওয়া কষ্টদায়ক হতো।

এক সময় শ্রমিকরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলে। তাদের এই প্রতিবাদের সুর ধীরে ধীরে বিপ্লবে পরিণত হয়। ১৮৮০ সালে প্রথম আমেরিকার শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। ১৮৮৪ সালে তারা সংগঠিতভাবে ৮ ঘণ্টা দৈনিক শ্রম নির্ধারণের জন্য মালিকপক্ষের কাছে প্রস্তাব করে। 
আর এ প্রস্তাব কার্যকরের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয় ১৮৮৬ সালের ১ মে পর্যন্ত। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের প্রস্তাব কার্যকর না হওয়ায় সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন লক্ষ শ্রমিক তাদের কাজ ফেলে ঐদিন রাস্তায় নেমে আসে। শ্রমিক নেতা জোয়ান মোস্ট,

আগস্ট স্পীজ ও লুই লিং-এর নেতৃত্বে ১লা মে শিকাগোতে তারা মহাসমাবেশের মাধ্যমে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। এসময় পুলিশের গুলিতে বেশ কিছু শ্রমিক হতাহত হলে এ আন্দোলন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকদের, দাবি মেনে নেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

মে দিবস কত সাল থেকে পালিত হয়

শ্রমিক নেতাদের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ১৮৮৯ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মে দিবসকে অন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করে রক্তঝরা মে দিবস। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৮৯০ সালের ১লা মে বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মে দিবস পালন করা হয়। সেই থেকে আজ অবধি মে দিবস সারাবিশে পালিত হয়ে আসছে।

মে দিবসের প্রভাব

মে দিবস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর শ্রমিক শ্রেণির মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত - হয়েছে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের উপর এ দিবসের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এর প্রভাবে শ্রমিকদের কাজের দৈনিক সময় ১৮ ঘণ্টা থেকে - নেমে আসে ৮ ঘন্টায়।
বিশ্বের সব দেশের শ্রমিকরা এর মাধ্যমে তাদের শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা পেতে শুরু করে। নিজেদের অধিকার আদায়ে তারা সামনে এগিয়ে যায়। মেহনতি মানুষ তাদের শৃঙ্খলিত জীবন থেকে মুক্তি পেতে শুরু করে। বিশ্বের ইতিহাসে সংযোজিত হয় সামাজিক পরিবর্তনের আরেকটি নতুন অধ্যায়।

মে দিবস নিয়ে কিছু কথা

বর্তমান শ্রেণি বৈষম্যহীন সভ্য সমাজের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে মূলত ১৮৮৬ সালের সেই শ্রম আন্দোলন এবং যে - দিবসের জন্ম। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে তাই মে দিবসের তাৎপর্য ব্যাপকভাবে সমাদৃত। সারা পৃথিবী জুড়ে শ্রমিক আন্দোলন ও মুক্তির সংগ্রামের মহান ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ মে দিবস। সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী অমানবিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করার মন্ত্র বিশ্ববাসীকে শিখিয়ে দিয়েছে এই দিবস।
মে দিবসের কারণে শ্রমিক শ্রেণির চিন্তা ও চেতনায় বৈপ্লবিক উন্নতির উদয় হয়েছে। তাদের সংগ্রামী চেতনার আলোয় আলোকিত হয়েছে সমগ্র মানবসমাজ। শ্রমিক শ্রেণির সামনে উন্মোচিত হয়েছে এক নতুন দিগন্ত। শ্রমিক সংহতি ও ঐক্য হয়েছে আরও বেশি দৃঢ় ও মজবুত। মে দিবস সমাজ থেকে কলুষিত ও বিভীষিকাময় অন্ধকার দূর করতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশে মে দিবস

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা অনেক। বর্তমানে মহান মে দিবসের সম্মানার্থে বাংলাদেশেও ১লা মে সরকারি ছুটি পালিত হয়। এদিন শ্রমিকরা মহা উৎসাহ ও উদ্দীপনায় মে দিবস পালন করে। শ্রমিক সংগঠনগুলো মে দিবসে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ও কল্যাণমুখী কর্মসূচির আয়োজন করে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আনন্দঘন পরিবেশে মহান মে দিবস উদ্যাপিত হয়।

উপসংহার

ঐতিহাসিক মে দিবসের তাৎপর্যপূর্ণ অবদান আজকের শ্রমিক শ্রেণিকে আগলে রেখেছে। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী চেতনা এখন শ্রমজীবীদের ভূষণ। ১৮৮৬ সালের রক্তঝরা সেই ১লা মে এখন সবার কাছে অবিচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জোর সংগ্রামের শপথ গ্রহণের দিন এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র। মে দিবসে সকল শ্রমজীবী মানুষ তাদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করার মাধ্যমে উন্নয়নমুখী পরিবর্তন সূচনার অঙ্গিকারের প্রয়াস পায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url