মোবাইল ফোন রচনা - মোবাইল ফোন রচনা ক্লাস ৪

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আপনি যদি মোবাইল ফোন রচনাটি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন, কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য মোবাইল ফোন রচনাটি তুলে ধরেছি।
মোবাইল ফোন রচনা
বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে রচনা অন্যতম। আশাকরি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। আপনি যদি রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ মোবাইল ফোন রচনা - মোবাইল ফোন রচনা ক্লাস ৪

ভূমিকা

মানবজীবনে বিজ্ঞানের অবদান ব্যাপক ও বিচিত্র। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার মানব জীবনকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরে দিয়েছে। বিজ্ঞানের নানা উদ্ভাবনের মধ্যে আধুনিক একটি উদ্ভাবন হলো মোবাইল ফোন বা মুঠোফোন। যোগাযোগ সহজ ও দ্রুত করার দাবিদার মোবাইল ফোন যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা করেছে। মানুষ তার অনুভূতি, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে পারছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে।

মোবাইল ফোন আবিষ্কার

আমেরিকার বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্রাহাম বেল প্রথম টেলিফোন আবিষ্কার করেন। তাঁর দুই সহকারী গবেষক ছিলেন রিচার্ড এইচ. ফ্রাংকিয়েল এবং কোয়েল এস. অ্যাঞ্জেল। তাঁরাই পরবর্তীকালে মোবাইল ফোনের কৌশল উদ্ভাবন করেন।

মোবাইল প্রযুক্তির কার্যপ্রণালি

মোবাইল ফোনের দ্বারা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ করা যায়। মোবাইল ফোনের এই কার্যপ্রণালিটি যেভাবে সংঘটিত হয় তা হলো- মোবাইল ফোন যে এলাকা জুড়ে কাজ করবে তার সবটাকে 'সেল' অর্থাৎ ছোটো এলাকা বা কোষ অংশে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক সেলে শক্তিশালী বেতার টাওয়ার (মাঞ্চল) বসানো হয়। টাওয়ারগুলো একটি অন্যটির সাথে যোগাযোগের একটা অদৃশ্য জাল (নেটওয়ার্ক) তৈরি করে।

মোবাইল সেটের মধ্যে থাকে একটা 'অ্যানটেনা'। সারাক্ষণ তরঙ্গের মাধ্যমে সেটি টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। কোনো সেট থেকে বোতাম চেপে যখন কোনো নম্বরে যোগাযোগ করা হয় তখন সবচেয়ে কাছের টাওয়ারের মাধ্যমে অন্য প্রান্তের ফোনসেটকে সেটি খুঁজে নেয়। একটাতে না পেলে রিলেরেসের মতো করে সেটি পরপর যতগুলো টাওয়ার দরকার তার সব পার হয়ে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট নম্বরটিতে।
আবার গ্রাহকের ফোনসেট বেতারতরঙ্গকে কথায় বা আওয়াজে রূপান্তরিত করে। আগে অবশ্য অপারেটরের সাহায্য লাগত। তবে অনেক সময় ঠিকমতো কথা শোনা বা বোঝা যায় না। কারণ পুরো নেটওয়ার্ক নানা কারণে কখনো কখনো দুই প্রান্তের 'সেল'-কে ঠিকমতো চিনতে পারে না। অনেকগুলো জায়গায় বসানো নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে সমন্বয় করে মোবাইল ফোনের পুরো ব্যাপারটির কাজ চলে।

যোগাযোগে মোবাইল ফোন

যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন এক বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করে সমগ্র বিশ্বকে হাতের মুঠোয় বন্দি করেছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে, পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় অবস্থানরত মানুষের খোঁজখবর নেওয়া যায়। আগে বিদেশি অবস্থানকারী আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সাথে কথা বলা এবং তাদের খোঁজখবর নেওয়া ছিল সময়, কষ্ট ও ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার।

মোবাইল ফোনের সাহায্যে এখন দ্রুত ও কম খরচে তাদের খবর নেওয়া যাচ্ছে। মোবাইলের এসএমএস ব্যবস্থার কারণে দ্রুত কাউকে কোনো টেক্সট করা যায়। শুধু যে কথা বলা ও এসএমএস করা যায় তাই নয়, মোবাইলের সাহায্যে ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ফেসবুক, টুইটার এবং সম্প্রতি চালু হওয়া স্কাইপি-এর জন্য মানুষ সবার সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে।

মোবাইল ফোনের বিচিত্র ব্যবহার

মোবাইল ফোন শুধু কথাবার্তায় ব্যবহৃত হয় না। বর্তমানে এর নানামুখী ব্যবহার সত্যি আমাদের বিস্মিত করে। চলার পথে যেকোনো ধরনের গাণিতিক হিসেব সম্পাদনের জন্য খাতা-কলম কিংবা ক্যালকুলেটরের পরিবর্তে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যায়। মোবাইল ফোনে রক্ষিত ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে ছোটো-বড়ো গাণিতিক সমস্যার সমাধান হয়।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার রচনা
মোবাইল ফোনে থাকা ঘড়ি ও ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে মোবাইল ব্যবহারকারী সঠিক দিন, সময় ও তারিখ দেখার সার্বক্ষণিক সেবা পেয়ে থাকে। শুধু বর্তমান নয় অতীত এবং ভবিষ্যতের দিন, তারিখ দেখারও সুযোগ থাকে মোবাইল ফোনে। গান-বাজনা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি বিনোদনমূলক কাজে মোবাইল ফোনের ব্যবহার সত্যিই বিস্ময়কর।

যেকোনো স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য মোবাইলের ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহজেই বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল প্রদান করা যায়। মোবাইল কোম্পানিগুলো যেকোনো জাতীয় দিবসের প্রতিপাদ্য বা সরকারের আদেশ সহজেই সর্বস্তরের জনগণের মাঝে পৌঁছে দিতে পারে।

মোবাইল ব্যাংকিং

ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে মানুষের হাতের নাগালে এনে দিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতি। সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত ও নিরাপদে টাকা পাঠানো যাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। টাকা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশে ডাচ-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং, বিকাশ ইত্যাদি ব্যবস্থা চালু আছে। বাংলাদেশ পোস্ট অফিসে মোবাইলে টাকা পাঠানোর চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে।

মোবাইলের অসুবিধা

প্রত্যেকটি জিনিসেরই ভালো দিক বা সুবিধা যেমন থাকে তেমনই ক্ষতিকারক দিকও থাকে। মোবাইল ফোন যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজসাধ্য করলেও এর মাধ্যমে সহজেই নাশকতামূলক কার্যক্রম সংঘটিত হয়ে থাকে। মোবাইল নেটওয়ার্কের কারণে অগ্রিম সংবাদ পেয়ে সন্ত্রাসীরা সহজেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে পারে।
অনেকে ফোনের মাধ্যমে হুমকি প্রদান করে মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করে। মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন মানবদেহে উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে ব্রেন টিউমারের মতো কঠিন রোগের আশঙ্কা সৃষ্টি করে। এছাড়া নার্ভ, চোখ, রক্তসহ হার্টেরও ক্ষতিসাধন করে থাকে।

উপসংহার

মোবাইল ফোন আমাদের বিশেষত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের জীবনে যেমন ভূমিকা রাখছে তেমনই সামাজিকতা, দায়িত্ববোধ অনেকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিকগুলো পরিহার করে ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করলেই বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর অবদান মোবাইল ফোন হয়ে উঠবে মানুষের পরমবন্ধু।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url