জাতীয় শিশু দিবস রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি জাতীয় শিশু দিবস রচনাটি খুঁজছেন? যদি
খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকালের মাধ্যমে
জাতীয় শিশু দিবস রচনাটি তুলে ধরেছি। বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য বিষয় গুলোর
মধ্যে রচনা অন্যতম আশা করি এ রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে।
রচনাটিতে শিশু দিবসের প্রেক্ষাপট, প্রথম উদযাপিত শিশু, দিবস জাতীয় শিশু দিবসের
তাৎপর্য ইত্যাদি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি জাতীয় শিশু
দিবসের রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে
সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে রচনাটি পড়ে নেওয়া
যাক।
সূচিপত্রঃ জাতীয় শিশু দিবস রচনা
সূচনা
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের
ভাষায় ব্যক্ত হয়েছে শিশুর অধিকার এবং আমাদের করণীয় সম্পর্কে এক দৃঢ় অঙ্গীকার।
শিশুর জন্য চাই নিরাপদ সুন্দর পৃথিবী। আজকে যারা শিশু, আগামী দিনে তারাই হবে
জাতির কর্ণধার। ভবিষ্যতে তারা কেউ হবে বিজ্ঞানী, কেউ শিল্পী,
কেউ সাহিত্যিক, কেউ সাংবাদিক, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি অথবা রাষ্ট্রনেতা। মাঠে ফসল
ফলাবে কেউ, কারও দক্ষ হাতে ঘুরবে কল-কারখানার চাকা। তাই যথাযথ মর্যাদা ও সাহচর্য
দিয়ে শিশুদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। এসব লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রতিবছর সারা
বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে 'জাতীয় শিশু দিবস'।
শিশু দিবস
জাতিসংঘ ১৯৫৪ সালে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রতিবছর আক্টাবর মাসের
প্রথম সোমবার জাতীয় শিশু দিবস' পালন করা হয়। এ দিবস পালনের তাৎপর্য হলো-
শিশু-কিশোরদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে ও তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথনির্দেশ প্রদানে
বিশ্ববাসীকে সচেতন করে তোলা।
শিশু দিবসের প্রেক্ষাপট
১৯৪৫ সালে মহাযুদ্ধের পর বিশ্বের বুকে শান্তি নেমে এলো, চিন্তাশীল ব্যক্তিরা তখন
দেখলেন যুদ্ধে বেসামরিক লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে শিশু। যারা বেঁচে
আছে, তাদের অবস্থাও খুব শোচনীয়। অনেক দেশে শিশুরা দুবেলা দুমুঠো খেতেও পারছে না।
আরও পড়ুনঃ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা
তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। কেউ যুদ্ধে বাবা-মাকে হারিয়ে নিরাশ্রয় হয়ে পথে পথে
ঘুরে বেড়াচ্ছে। মহাযুদ্ধ বিশ্বের কোটি কোটি শিশুর জীবনে এনে দিয়েছে এক অভিশাপ।
দুনিয়ার চিন্তাশীল ব্যক্তিরা চমকে উঠলেন। দারিদ্র্যের এ অভিশাপ থেকে আজকের
শিশুদের উদ্ধার করতে হবে।
নইলে ভবিষ্যতে পৃথিবী হবে ধ্বংস। ঠিক হলো, শিশুদের নিয়ে চিন্তা-ভাবনা এবং তাদের
সব সমস্যা বড়োদের সামনে তুলে ধরে তার সমাধানের পথ খুঁজে বের করার জন্য একটি বিশেষ
দিন উদ্যাপন করতে হবে। দিনটির নাম দেওয়া হলো 'বিশ্ব শিশু দিবস'।
প্রথম উদ্যাপিত জাতীয় শিশু দিবস
বিশ্ব শিশুর কল্যাণের জন্য গঠিত হলো আন্তর্জাতিক শিশু কল্যাণ ইউনিয়ন। সে শিশু
কল্যাণ ইউনিয়নের উদ্যোগে ১৯৫৩ সালে প্রথম উদ্যাপিত হলো জাতীয় শিশু দিবস। সেদিন
বিশ্বের ৪০টি দেশ উদ্যাপন করল দিনটি। আর আজ পৃথিবীর ১২৪টি দেশে উদ্যাপিত হয়
জাতীয় শিশু দিবস। আন্তর্জাতিক শিশু কল্যাণ ইউনিয়ন 'ইউনিসেফ'-এর সহযোগিতায় দিনটি
উদ্যাপনের জন্য পৃথিবীব্যাপী আয়োজন করে থাকে। বিভিন্ন দেশের সরকার, সমাজ কল্যাণ
সংগঠন নিজ নিজ অবস্থান থেকে দিনটি উদযাপন করে।
জাতীয় শিশু দিবসের তাৎপর্য
জাতীয় শিশু দিবসের তাৎপর্য গভীর এবং ব্যাপক। শিশুদের কল্যাণ সাধন এবং তাদের
নানাবিধ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাই হলো 'শিশু
দিবস' পালনের প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এখন
'শিশু দিবস' সম্পর্কে সচেতন নয়। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের শিশুদের দিকে তাকালে
তাদের নানা করুণ চিত্র আমরা দেখতে পাই।
আরও পড়ুনঃ সময়ের মূল্য রচনা
তারা ক্ষুধায় অন্ন পায় না, চিকিৎসায় পায় না ওষুধ। শুধু কি তাই বাসস্থান ও শিক্ষার
মতো মৌলিক অধিকারগুলো থেকেও তারা বঞ্চিত। শুধু কাগজে-কলমে শিশুদের অধিকারের কথা
লিখে সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। তাই এর বাস্তব রূপ দিতে এবং বিশ্ববাসীর মননে গভীরভাবে
অনুধাবন করতে 'জাতীয় শিশু দিবসের' গুরুত্ব অপরিসীম।
শিশু অধিকার সনদ
'জাতীয় শিশু দিবস' প্রথম যখন উদ্যাপন শুরু হয় তখনকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো
'শিশু অধিকার সনদ' গ্রহণ। সম্ভবত এটি ১৯৫৪ সালের ঘটনা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অনেক
চিন্তা-ভাবনার পর শিশুর অধিকার সম্পর্কে ৭টি ধারা তৈরি করুণ। ৭ ধারা সংবলিত এ
শিশু অধিকার সনদ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হলো।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব রচনা
এর প্রধান ধারাগুলোতে বলা হলো- শিশু যে দেশের এবং যে সমাজের বাসিন্দা হোক না কেন,
তার জন্মের পর থেকেই সে পাবে পুষ্টিকর খাদ্য ও আশ্রয়। তার স্বাস্থ্য রক্ষা,
শিক্ষাদানের ব্যবস্থা এবং তার জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। এগুলো তার জন্মগত
অধিকার। এ অধিকার থেকে কোনো শিশুকে বঞ্চিত করা যাবে না।
উপসংহার
প্রতি বছর 'জাতীয় শিশু দিবস' আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আজকের শিশুরাই রাষ্ট্র ও
জাতির ভবিষ্যৎ। স্মরণ করিয়ে দেয়, 'জাতিসংঘ শিশু অধিকার' সনদের কথা, প্রতিটি
শিশুকে দিতে হবে পুষ্টিকর খাদ্য ও আশ্রয়, ব্যবস্থা করতে হবে তার শিক্ষা ও
স্বাস্থ্য রক্ষার, বিধান করতে হবে জীবনের নিরাপত্তা।
আরও পড়ুনঃ নারীর ক্ষমতায়ন রচনা
শিশু জাতির সম্পদ, দেশের সম্পদ। তাদের মৌলিক অধিকার প্রদানে এবং সুনাগরিক হিসেবে
গড়ে তুলতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে সকলকে।
আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হই-
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url