সততা অনুচ্ছেদ

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। বাংলা পাঠ্য বইয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ গুলোর মধ্যে সততা অনুচ্ছেদটি অন্যতম। আপনি যদি সততা অনুচ্ছেদটি খুঁজে থাকেন তাহলে একজন সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আজকালের সততা অনুচ্ছেদটি সম্পূর্ণ তুলে ধরেছি।
সততা অনুচ্ছেদ
আশা করি অনুচ্ছেদটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি অনুচ্ছেদটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

সততা অনুচ্ছেদ

'Honesty is the best policy' (সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা) বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের মন্তব্যটি জীবনের সততা ও মহত্ত্বের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু জগতে মানুষের ব্যস্ততা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জীবনের জটিলতা যেমন বেড়েছে তেমনই অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে সততার গুরুত্ব, ধারণা। সৎ নীতি পালন করাকে সততা বলে। আদর্শবান মানুষ সত্য ও বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করে এবং মনুষ্যত্বকে অর্জন করে।

সততা মানবজীবনের একটি শ্রেষ্ঠ গুণ। বিশ্ব বিবেক সততাকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হিসেবে চিহ্নিত করে ঘোষণা করেছে- 'Honesty is the best policy." সততার গুরুত্ব কালের প্রবাহে বিন্দুমাত্র কমেনি। তাইতো এর ব্যাখ্যা করলে পাওয়া যায় 'সততা' হলো বিশ্বাস এবং সদাচরণের সম্মিলিত রূপ, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং অপরিবর্তনীয়। 
সততা হলো- সত্য কথা বলা, সত্য পথে চলা, মিথ্যা ও অসৎ পথ থেকে দূরে থাকা, অপরকে অসৎ পথ থেকে দূরে রাখা, অপরের মঙ্গল করা, কাউকে ফাঁকি না দেওয়া, অপরের স্বার্থ রক্ষা করা, ন্যায়নিষ্ঠ হওয়া, সেই সঙ্গে পরের দ্রব্য ও সম্পদে হস্তক্ষেপ না করা, চরিত্রবান হওয়া, অপরের মঙ্গল করা, লোভ না করাসহ সব রকম পাপকর্ম থেকে বিরত থাকা এবং নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা। 

এক কথায় যাবতীয় মানবিক গুণের সমষ্টিকেই সততা বলে। বস্তুত অন্যায় অত্যাচারের কবল থেকে নিজেকে দূরে রেখে যে জীবন পরিচালিত হয় তাই সৎ জীবন। আর সেখানেই প্রকাশ পায় সততার নিদর্শন। বিবেকবান মানুষের পরিচয় ফুটে ওঠে সৎ কাজের মাধ্যমে। তাই সততা মহৎ ব্যক্তির জীবনে অহংকার স্বরূপ। সমাজকে মানুষের বাসযোগ্য করে তোলার জন্য হিংসা, দ্বেষ, অসততাকে পরিহার করতে হবে।

অবশ্য ধর্মীয় দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ধর্মেই সততাকে মর্যাদাহীন বিবেচনা করা হয়নি। সকল ধর্মেই সততাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সততা মানুষকে আলোর পথ এবং চির কল্যাণের পথ-প্রদর্শন করে। সততার দ্বারাই জগতে মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা যায়। অপরদিকে, মিথ্যা হলো সকল পাপের উৎস। মিথ্যা মানুষের বিবেককে নষ্ট করে দেয়। মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না। সমাজে তাকে সবাই ঘৃণার চোখে দেখে।
সততা জীবনকে সার্থক করার একটি চমৎকার উপায়। তাই মানবজীবনে সততার পথ অনুসরণ করলে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে জীবন অতিবাহিত করা যায়। সমাজে সুন্দর জীবনের জন্য সততার অনুশীলন অত্যাবশ্যক। জীবনে চলার পথে সততাকে অবশ্যই সার্বিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। শিশুকাল থেকেই সততার আদর্শকে সমুজ্জ্বল করে রাখতে হবে। পারিবারিক পরিবেশে পিতামাতার কাছ থেকে শিশুরা সততার ধারণা শিক্ষা লাভ করবে।

তাই এ ব্যাপারে পিতামাতার দায়িত্ব অপরিসীম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সততা শিক্ষার প্রাধান্য দিতে হবে। শিক্ষাজীবনে যাতে কোনো প্রকার অসততা প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে শিক্ষকসমাজকে সচেতন থাকতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সততা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। ব্যক্তিগত লোভ-লালসাকে বড়ো করে না দেখে জাতীয় কল্যাণকেই প্রাধান্য দিতে হবে। শিক্ষাজীবনে বেশি করে সৎ মানুষের জীবনী পাঠ করতে হবে।

মহানবি হজরত মুহম্মদ (স.)-এর সততার জন্য তাঁর শত্রুরাও তাঁর কাছে সম্পত্তি, টাকা-পয়সা গচ্ছিত রাখত এবং তাঁকে আল-আমিন উপাধি দেওয়া হয়েছিল। সত্যের জন্য যিশুখ্রিষ্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়েছেন। সত্য পালন করতে শ্রীরামচন্দ্র চৌদ্দ বছর বনবাস যাপন করেছেন। সত্যকে সমুন্নত রাখতে মহাজ্ঞানী সক্রেটিসকে বিষপানে জীবন দিতে হয়েছে। সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তাঁরা সবাই পৃথিবীতে অমর হয়ে আছেন।
সত্যবাদী মানুষ নির্ভীক হয়, দুর্বার সাহস তার মনে বাসা বাঁধে। মানব জীবনের চারপাশেই অন্যায়-অত্যাচার, লোভ- লালসা ছড়িয়ে আছে। তাই জীবনকে সকল প্রকার অন্যায় থেকে রক্ষা করে সৎ ও পবিত্র জীবনযাপন করার জন্য চেষ্টা করতে হয়। জীবনে চলার পথে নানান প্রলোভনকে অতিক্রম করে আমাদের ইন্দ্রিয়কে অবশ্যই জয় করতে হবে। বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে। এ চর্চার মাধ্যমে মানবজীবন তথা ব্যক্তি এবং সমাজ জীবন সুন্দর ও উপভোগ্য হয়ে উঠবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url