বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা - বর্ষাকাল রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আমাদের প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকেই পরীক্ষার জন্য রচনা পড়ার প্রয়োজন পড়ে। আপনি যদি বর্ষাকাল রচনাটি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন, কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য বর্ষাকাল রচনাটি তুলে ধরেছি।
বর্ষাকাল রচনা
আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা - বর্ষাকাল রচনা

সূচনা

'বর্ষামঙ্গল' কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্ষা বন্দনা করতে গিয়ে বলেছেন-
ওই আসে ওই অতি ভৈরব হরষে
জলসিঙ্কিত ক্ষিতিসৌরভরভসে
ঘনগৌরবে নবযৌবনা বরষা
শ্যামগম্ভীর সরসা।
'ভৈরব হরষে' এবং 'শ্যামগম্ভীর সরসা- দুটি কথা দ্বারা বর্ষার প্রচণ্ডতা এবং মধুরতা উভয় বৈশিষ্ট্য বোঝা যায়। সত্যই তাই। বাংলাদেশে বর্ষা আসে সাড়ম্বরে- গুরুগম্ভীররূপে। বর্ষার এ আগমন বাংলার প্রকৃতি ও মানুষের মনে সাড়া জাগায়। প্রকৃতিতে আসে এক অভাবিত পরিবর্তন। মানুষের কাছে বর্ষা আশা এবং আনন্দের ঋতু। বর্ষা যুগপৎ আনন্দ-বেদনার ঋতু। বর্ষার আকাশে পুঞ্জীভূত কালো মেঘ দেখে এদেশের কৃষক প্রাণে নব উদ্যম খুঁজে পায়। বর্ষার বৃষ্টি কৃষকদের কাছে বহন করে আনে আশা ও আনন্দের বার্তা।

বর্ষার চেনা রূপ

আকাশে স্নিগ্ধ কালো মেঘের আনাগোনা, বিদ্যুৎ-চমক, গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজ, থেমে থেমে বৃষ্টি, কখনো মুষলধারে, কখনো হালকা তালে আবার কখনো ইলশেগুঁড়ি- এই হলো বর্ষার অনন্য রূপ। মাঝে মাঝে দুতিন দিন সূর্যের মুখ দেখা যায় নাঃ চারদিকে হালকা অন্ধকার বিরাজ করে। আকাশ যেন মুখভার করে থাকে। কখনো বৃষ্টির মাঝে বাজ পড়ার বিকট শব্দে ছেলে-বুড়ো সবাই আঁতকে ওঠে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ সহজে ঘরের বাইরে যেতে চায় না।

গ্রাম্য-প্রকৃতি

কৃষক আর কৃষির দেশ আমাদের বাংলাদেশ। কৃষি নির্ভর করে বারিবর্ষণের ওপর। বর্ষায় শুষ্ক খাল-বিল এবং নদী-নালা কানায় কানায় ভরে যায় এবং মরুপ্রায় প্রান্তরগুলো নতুন শ্যামল তৃণে, শস্যে ও ফলে-ফুলে ভরে ওঠে। মাঠে মাঠে চলে জলের খেলা। বর্ষার বর্ষণে বাংলাদেশ সজীব, প্রাণবন্ত, সতেজ ও ঋদ্ধ হয়ে ওঠে। সর্বত্রই একটা প্রাণ-প্রাচুর্যের পরিচয় প্রকাশ পায়। ছোটো ছোটো নৌকা ঢেউয়ের তালে নাচতে নাচতে চলতে থাকে। ধানের গাছগুলো জলের পরশে শ্যামল হয়ে মৃদু বাতাসে আন্দোলিত হতে থাকে আশার আনন্দে আন্দোলিত হয় কৃষকের মন।

মানবহৃদয় ও বর্ষা-প্রকৃতি

বর্ষার মাসে মানুষের হৃদয়ের এক গভীর সখ্যের পরিচয় পাওয়া যায়। বর্ষা প্রকৃতি মানুষের মনে এক সহজ- সরল ও স্বচ্ছ অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটায়। কবিচিত্তে বর্ষা আরও প্রভাব ফেলে। বর্ষাকে নিয়ে না। সাহিত্যে অসংখ্য কবিতা রচিত হয়েছে। মহাকবি কালিদাস বর্ষাকালীন প্রেমাতুর মানব হৃদয়ের যে অনিন্দ্যসুন্দর বহিঃপ্রকাশ তাঁর 'মেঘদূত' কাব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন তা বিশ্বসাহিত্যে এক অনবদ্য সৃষ্টি।

উপকারিতা

বর্ষা ধরণির আবর্জনা দূরীভূত করে, দূষিত বায়ু বিশুদ্ধ করে। বর্ষাই বাংলাদেশকে সুজলা-সুফলা ও শস্য-শ্যামলা করেছে। বর্ষার ওপর নির্ভর করে বাঙালিদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের বাস্তবায়ন। বর্ষার জলধারা জমিতে পলি টেনে ভূমিকে উর্বর করে। এ সময়ে নৌকাপথে যাতায়াতের ও বাণিজ্যদ্রব্য চলাচলের খুব সুবিধা হয়। বর্ষাকালে কদম, কেয়া, কামিনী, জুই, গের, বেলি প্রভৃতি ফুলের সুগন্ধে চারদিক আমোদিত হয়ে ওঠে। কৃষকের ঘরে আসে অর্থকরী ফসল পাট। বর্ষাকালে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।

অপকারিতা

বর্ষার সুবিধা ও অসুবিধা দুই দিকই আছে। এ সময় বৃষ্টিপাতের ফলে গ্রামের রাস্তাঘাট পিচ্ছিল কর্দমাক্ত হয়ে যায়। মাঝে মাঝে ছতি বর্ষণে ফসলাদি নষ্ট হয়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। অপ্রত্যাশিত প্রবল বন্যায় দেশ ভাসিয়ে মানুষকে গৃহহারা করে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে ডায়রিয়া, আমাশয় প্রভৃতি পানিবাহিত রোগের ব্যাপক প্রকোপ পড়ে। গবাদি পশুও নানা রোগে পড়ে এবং তাদের প্রচণ্ড খাদ্যাভাব দেখা যায়। এ সময় ডোবা নালায় জল জমে মশকের উৎপত্তি হয়, ফলে ম্যালেরিয়ার উপদ্রব বাড়ে। তবু বর্ষা বাঙালিদের অতি প্রিয়।

উপসংহার

বর্ষা মানুষের হৃদয়কে প্রবলভাবে আন্দোলিত করে। কিছু অসুবিধা থাকলেও সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলা বর্ষারই দান। মেঘের গম্ভীর নাদ, আকাশে বিজলির চিরচঞ্চল নীলা, আর বর্ষার ধারাপতনের শব্দে কার মন না জেগে ওঠে? এমন দিনে প্রাণ যেন কার নিবিড় সান্নিধ্যলাভ করতে চায়। তাই কবিগুরু গুরু লিখেছেন-
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।

সূত্রঃ উক্ত রচনাটি ড. হায়াৎ মামুদ এবং ড. মোহাম্মদ আমীন এর পুস্তক থেকে সংগৃহীত

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url