জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা রচনাটি
খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের
জন্য জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা রচনাটি তুলে ধরেছি। বাংলা পাঠ্যবয়ের বিভিন্ন
গুরুত্বপূর্ণ রচনা গুলোর মধ্যে এই রচনাটি অন্যতম।
আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক
হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত
পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা রচনা
ভূমিকা
নারী ও পুরুষের যৌথ প্রচেষ্টায় আজকের সভ্য পৃথিবী গড়ে উঠেছে। পুরুষের পাশাপাশি
নারীরও অবদান রয়েছে। গুহাবাসী মানুষ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত নারী-পুরুষ
সম্মিলিতভাবে সকল বাধার প্রচীর ভেঙেই তো বিশ্বকে এতো সুন্দর করেছে। এ দৃষ্টিকোণ
থেকেই আমাদের জাতীয় জীবনে নারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই দেশ-জাতি তথা
একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে নারীসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
নারীর কর্মক্ষেত্র
বর্তমান বিশ্বে প্রায় ছয়শ কোটি লোকের অর্ধেক নারী। সুতরাং সমাজ ও সভ্যতার
উন্নয়নের জন্য নারীর কর্মক্ষেত্রে আবির্ভূত হওয়া একান্তভাবে প্রয়োজন। সন্তান
প্রতিপালন, সন্তানের জীবন গঠন নারীর প্রথম এবং প্রধান কর্ম হলেও জীবনের আরও অনেক
ক্ষেত্রে নারীর করণীয় অনেক কিছুই রয়েছে। অতীতের মতো আজ নারীসমাজ পিছিয়ে নেই।
আরও পড়ুনঃ নারীর ক্ষমতায়ন রচনা
আজ যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে মানুষের জীবনের গতি, বেড়েছে কাজ। আর এ
পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে নারীর কাজও বেড়েছে। আজ নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে
কাজ করে চলেছে। মেধা-মননে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিক্ষাদীক্ষায় এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্র
পরিচালনায় নারীরা পুরুষের চেয়ে কম যোগ্য নন, একথা আজ বিশ্ব-স্বীকৃত। এছাড়াও
মাতৃত্বের মহান গৌরবে নারী শ্রেষ্ঠ।
নারীত্বের গৌরব
নারীর সার্থকতা মাতৃত্বে। এ কারণে ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, 'মায়ের পদতলে সন্তানের
বেহেশত।' জাতির জন্য, দেশের জন্য, সবচেয়ে বড়ো উপহার তার সন্তান। পৃথিবীর সকল সমাজ
সংস্কারক, চিন্তাবিদ, বিজ্ঞানী, কবি, লেখক, রাষ্ট্রনায়ককে তারাই প্রতিপালন
করেছেন।
এ নারীই গর্ভে ধারণ করেছেন হজরত মুহম্মদ (স.)-এর মতো মহান ব্যক্তিত্বকে।
আইনস্টাইন, নিউটনের মতো বিজ্ঞানী, প্লেটো, অ্যারিস্টটলের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী,
শেকস্পিয়ার, রবীন্দ্রনাথের মতো মহৎ সাহিত্যিক এবং আলেকজান্ডার, নেপোলিয়নের মতো
বিশ্বজয়ী বীরদের।
শিশুর চরিত্র গঠনে নারী
আজকের শিশু আগামী দিনের জাতিকে নেতৃত্ব দেবে। আর এ শিশুকে নেতৃত্বের আসনে পৌছে
দেওয়ার দায়িত্ব মায়ের। কারণ শিশু জন্মের পর থেকে মায়ের কাছেই মানুষ হয়। মায়ের
স্নেহ-মমতা এবং শাসনের মধ্যে তার আত্মবিকাশ ঘটে। মা যদি সন্তানকে সুপথে পরিচালিত
করেন তবে সে সন্তান মনুষ্যত্ববোধে দীপ্ত হবে।
শিক্ষার আলোকে নিজে আলোকিত হবে এবং অপরকে আলোকিত করবে। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, 'আমাকে
শিক্ষিত মা উপহার দাও, আমি ভালো জাতি উপহার দেব।' সুতরাং শিশুর চরিত্র গঠনের
জন্য, তার মনন বিকাশের জন্য মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ একটি বলিষ্ঠ
জাতিগঠনে মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
জাতিগঠনে নারীসমাজের ভূমিকা
জাতি গঠনে নারীসমাজের দায়িত্ব পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। জাতীয় জীবনে জ্ঞান,
সচলতা, কর্ম এবং প্রাণ-চাঞ্চল্যের সৃষ্টি না হলে জাতি অচল হয়ে যায়। উন্নত
দেশসমূহে নারী জাগরণের ফলে দেশের সমৃদ্ধি এসেছে, সমাজ জীবন সচল ও গতিশীল হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট
আমাদের দেশের নারীরা সমাজ গঠনে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এলে সমাজ উন্নতির পথে অগ্রসর হবে
সন্দেহ নেই। শুধু সেবা ও গৃহকর্মের মধ্যে নারীকে সীমাবদ্ধ না রেখে নারীকে দেশের
সমৃদ্ধি এবং জাতির মঙ্গলের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আর এ সুযোগ পুরুষ শাসিত সমাজকেই
দিতে হবে।
নারীর অধিকার
আমাদের সমাজে নারীরা এখনও অবহেলিত। পুরুষ শাসিত এ সমাজে নারীরা পুরুষের ইচ্ছার
বাইরে তেমন কিছু করতে পারে না। শিক্ষা, সংস্কৃতি সর্বত্র পুরুষের চেয়ে নারীরা
অনেক পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে গ্রামের অশিক্ষিত নারীসমাজ, তারা সারাদিন স্বামীর
সংসারে খেটে মরে, বিনিময়ে সামান্যতম অধিকারও ভোগ করতে পারে না।
অবশ্য শহরের আধুনিক শিক্ষিত সমাজের মধ্যে কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। তবে এটাও
আশানুরূপ নয়। বরং দেশের নারী-সমাজের এক বৃহৎ অংশ নানা ধরনের ধর্মীয় কুসংস্কার আর
সামাজিক বাধা-নিষেধের বেড়াজাল এখনও ভাঙতে পারেনি। নারীর কর্মক্ষেত্র ও পরিবেশও
নিরাপদ নয়।
উপসংহার
শুধু পুরুষের সেবা ও কর্ম দ্বারা একটি জাতি আত্মবলে বলীয়ান হতে পারে না। নারীর
ত্যাগ, সেবা ও শিক্ষা জাতিকে গৌরবদীপ্ত মহিমা দিতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে
নারীসমাজ জাতিগঠনে পুরুষের পাশাপাশি অবদান রেখে চলেছে। জাতিকে সুস্থ, উন্নত ও
কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার কাজে নারীসমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এক্ষেত্রে আমাদের উদার মানসিকতা একান্ত প্রয়োজন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url