শহীদ মিনার রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি শহীদ মিনার রচনাটি খুজছেন? যদি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে আপনাদের জন্য শহীদ মিনার রচনাটি তুলে ধরেছি। আশা করি রচনাটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন।
শহীদ মিনার রচনা
প্রিয় পাঠক বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে রচনা অন্যতম। আপনি যদি এই রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ শহীদ মিনার রচনা

সূচনা

শহিদ মিনার মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য স্মৃতির মিনার। ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২শে ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠীর লেলিয়ে দেওয়া পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউর, সালামসহ নাম না জানা অনেকে। সেদিন ছাত্র-জনতার মধ্যে শ্লোগান উঠেছিল 'শহিদ স্মৃতি অমর হোক'।
শহিদ স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য সেদিনের আন্দোলনরত ছাত্ররাই ২৩শে ফেব্রুয়ারি বিকাল থেকে সারা রাত সবাই মিলে ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে গড়ে তোলে এক শহিদ মিনার। সেদিনের স্বৈরাচারী খুনি সরকার এ শহিদ মিনারকে সহ্য করতে পারেনি। ২৬শে ফেব্রুয়ারি অপরাহ্নের মধ্যেই নুরুল আমীনের পুলিশ বাহিনী গুড়িয়ে দেয় বাঙালির প্রথম শহিদ মিনার।

শহিদ মিনারের স্থান

বাঙালির প্রথম শহিদ মিনার নির্মিত হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে যেখানে রক্ত দিয়েছিল রফিক, বরকত, জব্বার সালামসহ নাম না জানা কিশোর। এটি গুড়িয়ে দেওয়ার পর আর কোনো শহিদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে ১৯৫৬ সালে বিধ্বস্ত শহিদ মিনারের স্থানটির কাছাকাছিই বর্তমান শহিদ মিনারের স্থানটি নির্বাচন করা হয় এবং ৫৬ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সরকারিভাবেই শহিদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

কিন্তু শহিদ মিনার নির্মিত হয়নি। তারপর ৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বাধীন কৃষক-শ্রমিক পার্টির মন্ত্রিসভার পতন ঘটলে ৬ই সেপ্টেম্বর আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ১৯৫৭ সালের নভেম্বরে শিল্পী হামিদুর রহমানের নকশা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী শহিদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং একটানা কাজ চালিয়ে ৫৮ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে শহিদ মিনারের ভিত্তি,
মঞ্চ এবং তিনটি স্তম্ভ তৈরি সমাপ্ত হয়। কিন্তু আটান্ন সালের মার্চ থেকে মাত্র চৌদ্দ মাসের মাথায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে শিল্পী হামিদুর রহমানকে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেওয়া হয়। ফলে থেমে যায় শহিদ মিনারের নির্মাণ কাজ। আটান্ন থেকে বাষট্টি সাল পর্যন্ত এই অসমাপ্ত শহিদ মিনারেই মানুষ ফুল দিয়েছে, সভা করেছে, শপথ নিয়েছে। তারপর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লে. জেনারেল আজম খান শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য একটি কমিটি করে দেন।

সেই কমিটি শিল্পী হামিদুর রহমানের সাতান্ন সালের শহিদ মিনারটির মডেল ভিত্তিক সহজ ও ছোটো আকারের শহিদ মিনার নির্মাণের সুপারিশ করেন এবং সেই অনুযায়ী ১৯৬৩ সালের ২০ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে শহিদ মিনার নির্মাণের কাজ শেষ হয়। হামিদুর রহমানের পরিকল্পনায় শহিদ মিনারের স্তম্ভে চোখের নকশা থাকার কথা ছিল তার পরিবর্তে লোহার শিক লাগিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া সূর্যের প্রতিফলন, ঝরনা, ঘড়ি, ভাস্কর্য, মুর‍্যাল সব বাদ দেওয়া হয়।

তেষট্টি সালের একুশে ফেব্রুয়ারি নবনির্মিত এই শহিদ মিনারের উদ্বোধন করেন শহিদ আবুল বরকতের ৭২ বছর বয়স্কা মা হাসিনা বেগম। একাত্তরের পঁচিশে মার্চ মধ্যরাতে ঢাকা শহরে গণহত্যা শুরু করে ছাব্বিশে মার্চ বর্বর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ভারী-গোলাবর্ষণ করে শহিদমিনারের স্তম্ভগুলো গুড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর ৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ প্রথম শহিদ দিবস পালন করেছিল ওই শহিদ মিনারে।

শহিদ মিনার নির্মাণ

স্বাধীন বাংলাদেশে ৭২-এর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে প্রধান করে শহিদ মিনার পুনঃনির্মাণের জন্য কমিটি গঠিত হয়। উক্ত কমিটি শিল্পী হামিদুর রহমানের নকশা ও পরিকল্পনাটিই অনুমোদন করে, যা ছিল সাতান্ন সালের নকশা ও পরিকল্পনার অনুরূপ। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এক অজ্ঞাত কারণে সেই নকশা ও পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নিতে পারেনি।
বরং সরকার তাড়াহুড়া করে ১৯৭৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির অব্যবহিত পূর্বে 'সি এন্ড বি' বিভাগকে দিয়ে ইয়াহিয়া-টিক্কা বাহিনীর ধ্বংস করা শহিদ মিনারের স্তম্ভগুলো নির্মাণ করে, যা পাকিস্তানি আমলে অর্থাৎ ৬৩ সালের নির্মিত স্তম্ভগুলোর চেয়েও উচ্চতায় খাটো এবং সামনের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়া। এবং শহিদ মিনারের মঞ্চ ও স্তম্ভগুলোর আনুপাতিক সামঞ্জস্য রক্ষিত হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

শহিদ মিনারের ব্যাখ্যা

শহিদ মিনারের স্তম্ভগুলো মায়ের প্রতীক। মা তাঁর শহিদ সন্তানদের নিয়ে দণ্ডায়মান; মা অনন্তকাল ধরে সন্তানদের রক্ষা করছেন, যাঁরা তাঁর মর্যাদা রক্ষার জন্য নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আর সে জন্য গৌরবান্বিত মা তাঁদের আশীর্বাদ করছেন। সন্তানদের আত্মত্যাগের মহিমায় আর স্নেহে মা একটু সামনে ঝুঁকে আছেন। এবং এই সন্তানদের মধ্যে দিয়ে মা তাঁর লক্ষ লক্ষ সন্তানদের দেখতে পাচ্ছেন।

উপসংহার

শহিদ মিনার আজ শুধু শহিদদের অমর স্মৃতি নয়। এই শহিদ মিনার বাঙালির প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামে, অধিকার আদায়ের আন্দোলনে, অন্যায়, শাসন-শোষণ, জেল-জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। একুশের শহিদ মিনার আমাদের অহংকার, আমাদের গৌরব, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের দুর্বার সাহস।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url