বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনাটি অন্যতম। আপনি যদি বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনাটি খুজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এ আর্টিকেলে বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনাটি তুলে ধরেছি।
বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা
আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে এবং পরীক্ষা ভালো নম্বর আনতে সহায়তা করবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা

ভূমিকা

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর লীলাবৈচিত্র্যের দেশ। আমাদের দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এদেশের কোমল সবুজ আঙিনায় ষড়ঋতু বিচিত্র বেশভূষায় সজ্জিত হয়ে একের পর এক আবির্ভূত হয়। বাংলার এই শ্যামল মঞ্চে ছয়টি ঋতু একে একে আবির্ভূত হয়ে বাঙালির হৃদয়-মনে অপূর্ব শিহরন জাগায়। ঘরে-বাইরে বয়ে যায় আনন্দের হিল্লোল।
প্রকৃতি হয়ে ওঠে সৌন্দর্যে ও ঐশ্বর্যে ঝলমল। মনে হয় যেন প্রাগৈতিহাসিক কাল হতে কোনো এক নেপথ্য শিল্পীর দক্ষ পরিচালনায় এই বৈচিত্র্যময় ঋতুচক্রের খেলা চলছে অবিরাম। আর এই বৈচিত্র্যময় ঋতুচক্র যুগে যুগে, কালে কালে এ নরম মাটির মানুষকে করেছে রোমান্টিক কবি, করেছে সুরের সম্রাট, করেছে শিল্পী-সাহিত্যিক।

বাংলাদেশের ঋতুর পালাবদল

বাংলাদেশে ষড়ঋতু যেন একই মায়ের স্তন্যে লালিত ছয়টি সন্তান। স্বভাবচঞ্চল এই ছয়টি ঋতু হলো- গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। অপরূপ এদেশে এ ঋতুগুলো সৌন্দর্যে নব নব রূপ দান করে।

গ্রীষ্ম

গ্রীষ্মের আগমনে বাংলার ঋতু প্রবাহ শুরু হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এ দুমাস তার অবস্থিতি। অতীতের দুঃখ, গ্লানি, জরা-জীর্ণতা মুছে ফেলে নতুনের জয়গান গেয়ে গ্রীষ্মের আগমনে শুরু হয় নববর্ষ। গ্রীষ্মের দুপুরে খাঁখাঁ রোদ্দুরে মাঠঘাট ফেটে চৌচির হয়ে গেলেও এবং কখনো কখনো কালবৈশাখীর তাণ্ডব নৃত্যে,
প্রচণ্ড ঝড়-বাদলে মানুষের জীবন বিপর্যন্ত করে তুললেও সে দুঃখ-দুর্দশার কথা মানুষ ভুলে যায় অতি অল্প সময়েই। গ্রীষ্মের তীব্রদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও সবকিছুকে ছাপিয়ে মানুষ উল্লাসে মেতে ওঠে আম, জাম, লিচু আর জাতীয় ফল কাঁঠালের সমারোহে। গ্রীষ্মকাল যেন তখন বাংলার বুকে বিধাতার আশীর্বাদস্বরূপ।

বর্ষা

গ্রীষ্মের বহ্নিদাহ, কালবৈশাখীর তাণ্ডব নৃত্য, বাংলার জাতীয় ফল কাঁঠালসহ হরেক রকমের সুস্বাদু ফলের সমারোহের শেষে আকাশের বুক চিরে নামে আষাঢ়-শ্রাবণের অবিরাম বারিধারা। রৌদ্র দগ্ধ ধরণির বুক নব বারিধারায় স্নাত হয়ে সুস্নিগ্ধ শ্যাম-সমারোহে ভরে ওঠে।

কালো মেঘের পালক উড়িয়ে প্রকৃতি হয় অপরূপ সুষমামণ্ডিত। গ্রীষ্মের রিক্ততাকে সে ভরে দেয় ঐশ্বর্যের পূর্ণতায়। অবিরাম বর্ষণে খাল-বিল, নদী-নালা, ডোবা-পুকুর পানিতে হয় পরিপূর্ণ। চারদিকে শুধু পানি আর পানি থৈ থৈ করে।
রঙিলা নায়ের মাঝি পাল উড়িয়ে ভাটিয়ালি গান গেয়ে চলে যায় গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জন, আকাশে বিদ্যুতের চাঞ্চল্য আর ধারা পতনের শব্দে মানুষের মন হয়ে ওঠে চঞ্চল। বিরহী আত্মা যেন গুমরে গুমরে কেঁদে ওঠে প্রিয়জনের নিবিড় সান্নিধ্য পাওয়ার আশায়। বর্ষা এদেশবাসীর নিকট আশা ও আনন্দের ঋতু।

শরৎ

ঋতুচক্রের আবর্তনে বর্ষার পরেই শরৎ তার শুভ্র জ্যোৎস্না এবং বিচিত্র ফুলের সমাহার নিয়ে বাংলার প্রাঙ্গণে আগমন করে। ভাদ্র-আশ্বিনে চলে তার রঙ্গলীলা। মেঘমুক্ত আকাশের নীলিমায় ভেসে ওঠে রুপার থালার মতো শরতের পূর্ণ শশী।

সকালের সোনালি রোদে ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দু কী চমৎকার দেখায়। তাইতো কবির চোখে 'শরতে ধরাতল শিশিরে ঝলমল।' শরতে তরুণী পৃথিবী সদ্যস্নাতা মুর্তি ধারণ করে অপরূপ মহিমায় নিজেকে বিকশিত করে তোলে। বর্ষার মেঘ শরতের আকাশে সাদা পাল তুলে ছুটে বেড়ায় ইতস্তত।
শিশির ধৌত শারদ-প্রভাতে ঝরা শেফালির প্রাণমাতানো স্নিগ্ধ-মদির সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। সর্বত্র শুভ্রতায় ভরে ওঠে। ডালে ডালে মনের আনন্দে গেয়ে ওঠে দোয়েল-কোয়েল। কাশের গুচ্ছ, নবীন ধানের মঞ্জরি আর শেফালি ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় মানুষের মন।

হেমন্ত

হেমন্তকালের সূচনা কার্তিকের প্রথম লগ্নে আর বিস্তৃতি অগ্রহায়ণ মাসের শেষ পর্যন্ত। শরৎ ঋতুর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে হালকা কুয়াশার চাদর পরে শীতের আমেজ নিয়ে হেমন্ত এসে হাজির হয়। ঘরে ঘরে থাকে সোনালি ফসলের ছড়াছড়ি। কৃষান-কৃষানির প্রাণে আনন্দের জোয়ার শুরু হয়। সর্বত্র সাড়া পড়ে যায় নবান্ন উৎসবের। ক্রমে বাতাসে শোনা যায় শীতের পদধ্বনি। ধীরে ধীরে কুজঝটিকার আড়ালে বিদায় নেয় হেমন্ত।

শীত

শীতের আগমনে বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি রুক্ষমূর্তি ধারণ করে। বৃক্ষরাজি হয়ে যায় পত্র-পল্লবহীন বিবর্ণ। উত্তরের হিমেল বাতাস যেন হাড়ে কাঁপন জাগায়। সমাজের ওপরতলার লোকদের জন্য শীত আনন্দ আর সুখের হলেও বাংলাদেশের গরিব মানুষের জন্য এই শীত বড়ো কষ্টকর ও দুঃসহ। তবু পৌষের পিঠে-পুলি, মাঘের খেজুরের রসের স্বাদ তাদের মনে জাগায় আনন্দের এক অপূর্ব শিহরন। প্রচুর রবিশস্য ও তরি-তরকারি এই মৌসুমের উপহার।

বসন্ত

শীতের কুয়াশার জাল ভেদ করে, নবসূর্যের নব আলোয় স্নাত হয়ে, অনুপম নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিয়ে সবশেষে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। গাছে গাছে নবীন পত্র-পল্লবে রংবেরঙের নানান ফুলে শীতের শ্রীহীনতা দূর হয়ে যায়। গাছে গাছে, ডালে ডালে বিহঙ্গের • মনমাতানো কলকাকলিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।

উপসংহার

বিচিত্র সৌন্দর্যে বাংলাদেশে সারাবছর রূপের পালাবদল চলে। ঋতুচক্রের আবর্তনে বাংলাদেশের মাঠ-ঘাট, নদী-নালা, খাল-বিল, বনরাজি ও বৃক্ষলতা রূপবৈচিত্র্যে রমণীয় হয়ে ওঠে। বিশ্ব কবির সোনার বাংলা, জীবনানন্দের রূপসি বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ চিরদিন সুখ, সৌন্দর্য ও শান্তির নিকেতন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url