টেলিভিশন রচনা - টেলিভিশন রচনা সপ্তম শ্রেণী
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি টেলিভিশন রচনাটি খুঁজছেন? যদি খুঁজে থাকেন
তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য
টেলিভিশন রচনাটি তুলে ধরেছি। আমাদের উল্লেখিত রচনাটি পঞ্চম থেকে শুরু করে নবম
শ্রেণী পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের জন্যই প্রযোজ্য।
আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি টেলিভিশন রচনাটি পড়তে
ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ
পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে আর সময় নষ্ট না করে মূল বিষয় যাওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ টেলিভিশন রচনা - টেলিভিশন রচনা সপ্তম শ্রেণী
ভূমিকা
টেলিভিশন বিংশ শতাব্দীর একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার। এ যন্ত্রের সাহায্যে মানুষ ঘরে
বসে দূরদূরান্তের কোনো ঘটনার ছবি ও বাণী একই সঙ্গে দেখতে ও শুনতে পারে। বর্তমান
বিশ্বে টেলিভিশন চিত্তবিনোদনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। প্রতিদিন অসংখ্য চ্যানেলে
বিভিন্ন ধরনের আনন্দদায়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।
টেলিভিশন বর্তমান সভ্যতায় এমন এক অবস্থানে পৌঁছে গেছে যে, প্রায় প্রত্যেক
মধ্যবিত্ত শ্রেণির এমনকি শ্রমজীবী শ্রেণির পরিবারেও কমপক্ষে একটি টেলিভিশন সেট
রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড়ো কথা হলো টেলিভিশনের অনুষ্ঠানগুলো শুধু বিনোদনমূলকই নয়,
শিক্ষামূলকও।
টেলিভিশন
ইংরেজি Television শব্দটি গ্রিক Tele অর্থাৎ দূর এবং ল্যাটিন শব্দ Vision অর্থাৎ
দৃশ্য শব্দ দুটির সংযোগে তৈরি হয়েছে। টেলিভিশন শব্দের আভিধানিক অর্থ 'দূরদর্শন'।
প্রকৃতপক্ষে টেলিভিশন হলো একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র। এর সম্মুখভাগে একটি Screen বা
পর্দা থাকে। এতে সবাক চলচ্চিত্র (Moving Picture) দেখা যায়।
আবিষ্কার
জার্মান বিজ্ঞানী পল নেপকো প্রথম টেলিভিশনের সম্ভাব্য সম্পর্কে তাঁর অভিমত ব্যক্ত
করেন। শব্দের মতো ছবিও বায়ু তরঙ্গে দূরে যেতে পারে, এ তথ্য অনুসরণ করেই
টেলিভিশনের প্রাথমিক গবেষণা শুরু হয়। এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষা- নিরীক্ষা
চালানো হয় এবং ১৯২৫ সালে ইংল্যান্ডের বেয়ার্ড এ যন্ত্র আবিষ্কার করেন।
আরও পড়ুনঃ সংবাদপত্র রচনা
তারপর ক্রমে ক্রমে উন্নতি লাভ করে যন্ত্রটি ১৯৪৫ সালে পূর্ণ রূপ লাভ করে। ব্রিটিশ
ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (BBC) প্রথমে ব্যাবসায়িক ভিত্তিতে টেলিভিশন চালু করে।
তারপরে টেলিভিশন যন্ত্রের আরও উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে টেলিভিশনে শুধু সাদা-কালো
ছবিই নয়, রঙিন ছবিও প্রদর্শন করা হচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে টেলিভিশন
শিক্ষার উন্নয়নে টেলিভিশনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টেলিভিশনের সাহায্যে
শিক্ষাবিস্তার অনেক সহজ ও সুগম হয়। এর সাহায্যে হাতে-কলমে বহুজনকে একত্রে
শিক্ষাদান করা যায়। তাছাড়া এতে শিক্ষাদান বেশি চিত্তাকর্ষক ও উপভোগ্য হয়।
কারণ কোনো বিষয়ে শিক্ষাদান করতে যদি তথ্য প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সে দৃশ্যও
দেখানো হয়, তবে সে শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ ও আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে। আর এটা একমাত্র
টেলিভিশনের মাধ্যমেই সম্ভব। বর্তমানে পাশ্চাত্য দেশসমূহে টেলিভিশনের মাধ্যমে ঘরে
ঘরে শিক্ষা পৌছিয়ে দেবার ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের দেশে অনুরূপ পর্যায়ে না হলেও
শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান। প্রচারে টেলিভিশনের ভূমিকা কম নয়।
আরও পড়ুনঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০টি ব্যবহার
টেলিভিশনে প্রচারিত বিতর্ক, টকশো, আলোচনা, সেমিনার, অভিমত ইত্যাদি অনুষ্ঠানে
আর্থনীতিক, রাজনীতিক সাংস্কৃতিক, সামাজিক সমস্যা আলোচিত হয়। এ ধরনের অনেক
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞের অভিমত ও আলোচনায় দর্শকরা উপকৃত - হন।
দেশের পশ্চাৎপদ জনগণের মধ্যে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রসারে টেলিভিশন কিছুটা হলেও
ভূমিকা রেখেছে।
টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্প্রচারিত দূরশিক্ষণ কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া
গেছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নেও বাংলাদেশ টেলিভিশন
ভূমিকা পালন করেছে। তাছাড়া শিশু-কিশোরসহ সকলের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারেও
আমাদের টেলিভিশন যথেষ্ট সচেষ্ট।
বিনোদন মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন
টেলিভিশন গতিময় কর্মকাণ্ডের মধ্যে এনে দেয় দুদণ্ড বিশ্রাম ও বিনোদনের সুযোগ।
টেলিভিশনে রয়েছে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের সৃজনশীল মনোমুগ্ধকর নানা আকর্ষণ।
টেলিভিশনে সংগীত, নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি উপভোগের
সুযোগ রয়েছে।
টেলিভিশনের সুবাদেই আমরা খেলার মাঠের ভিড়ে শামিল না হয়েও বিশ্বকাপসহ বিভিন্ন
গুরুত্বপূর্ণ খেলা ঘরে বসে দেখতে পারি। সিনেমা হলে না গিয়েও ঘরে বসে বিভিন্ন
চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারি। এসব অনুষ্ঠান দেখে সমস্যাক্লিষ্ট জীবনের যন্ত্রণা
লাঘব হয়, হতাশা কেটে যায়; বিষণ্ণ মুহূর্তগুলো প্রশান্তি ও আনন্দে ভরে ওঠে।
জাতীয় জীবনে টেলিভিশন
জাতীয় জীবনেও টেলিভিশন বিশেষ অবদান রাখছে। টেলিভিশনের মাধ্যমে সরকার দেশের
আর্থনীতিক অবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, পরিবার পরিকল্পনা,
কৃষিব্যবস্থা ইত্যাদি সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করে থাকে। জনগণও
জাতীয় সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়ে সচেতন হয়ে উঠতে পারে।
টেলিভিশন না হলে এ ধরনের প্রচার কার্য খুবই ব্যয়সাপেক্ষ ও কষ্টদায়ক হতো।
উপসংহার
শিক্ষার উন্নয়ন ও দেশগঠনে টেলিভিশনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের মতো
উন্নয়নশীল দেশে জাতীয় 'পুনর্জাগরণ ও অগ্রগতির স্বার্থে টেলিভিশনকে
শিক্ষা-সংস্কৃতি ও উন্নয়নমুখী রাজনীতির মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জাতির নৈতিক
চরিত্রের গঠনমূলক উত্তরণে টেলিভিশনকে কার্যকর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা
কিন্তু টেলিভিশনের ঘাড়ে যদি অপশক্তি চেপে বসে এবং টেলিভিশন যদি অপসংস্কৃতির
মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় তবে অধোগতির পথেই দেশ এগিয়ে যাবে। তাই টেলিভিশন যেন সুস্থ
সাংস্কৃতিক বিকাশের পরিপন্থি না হতে পারে তা নিশ্চিত করা দরকার।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url