বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রচনাটি খুজছেন? যদি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে আপনাদের জন্য বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রচনাটি তুলে ধরেছি।
বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞান ছাড়া আমরা অচল। আমরা সকলেই এটি জানিয়েছে আমাদের জীবনে বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয় পাঠক আপনি যদি বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্রঃ বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকা

আজকের বিশ্ব বিজ্ঞান ছাড়া অচল। তাই বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে আজ আমাদের অস্তিত্বই যেন অচল। কলম, কালি, কাগজ থেকে শুরু করে আমাদের পারিপার্শ্বিক সবকিছুতেই বিজ্ঞানের প্রভাব বিরাজমান। বিজ্ঞানের বদৌলতে মানুষ আজ সভ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে আসীন; তাই বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

বিজ্ঞান মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়েছে। মানুষ দূরকে নিকট করেছে, জীবনকে করেছে সুন্দর। বৃদ্ধি পেয়েছে মানুষের পরমায়ুও। বিজ্ঞানের সাহায্যেই দূরের নক্ষত্রলোকের খবর পেয়েছে মানুষ, গ্রহলোক সম্বন্ধে আহরণ করেছে নতুন তথ্য। গ্রহ, নক্ষত্র, মহাকাশে সর্বত্রই মানুষের পদচারণা। সকালের টুথপেস্ট থেকে শুরু করে রেডিও, টেলিভিশন এবং সংবাদপত্র কোথায় নেই বিজ্ঞান। কৃষিকাজ তাও এখন হয়ে উঠেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর।

প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখন বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে। জমিতে পানি সেচের কাজে কোথাও কোথাও ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ। জ্বালানির বিকল্প হিসেবে এবং স্বল্প পরিসরে আলো সরবরাহের জন্য ভাবা হচ্ছে বায়োগ্যাস ব্যবহারের কথা। এক কথায় কামার-কুমার, জেলে-তাঁতি, ছুতোর-মিস্ত্রি সব ধরনের পেশাজীবী মানুষের পেশাগত কাজে এসেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক পরিবর্তন।
বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে উন্নত বীজ ব্যবহার করে শস্য, ফল ও সবজি চাষে ব্যাপক উন্নয়নের প্রচেষ্টা চলছে। তাতে সাফল্যও কম নয়। কৃত্রিম পরাগায়ণের মাধ্যমে উৎপাদন করা হলো উচ্চ ফলনশীল জাতের শস্য। ভিনদেশি উন্নত জাতের হাঁস-মুরগি এবং তার ডিম থেকে দেশি হাঁস-মুরগির উন্নত প্রজাতি তৈরি হচ্ছে। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গবাদি পশুরও প্রজাতিগত উন্নয়ন হয়েছে। 
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ফলে এক্ষেত্রেও ঘটেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ফসল সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। হিমাগারের কল্যাণে আমরা মৌসুমি সবজি, ফলমূল ইত্যাদির উদ্বৃত্ত অংশ সারা বছর ধরে সংরক্ষণ ও প্রয়োজনমতো সরবরাহ করতে পারছি। পচনশীল নানা ধরনের কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণেও ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

শিক্ষা ও বিজ্ঞান

বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানুষ মুদ্রণযন্ত্র, ক্যালকুলেটর, কাগজ, জ্ঞান আহরণের জন্য সংবাদপত্র ও পুস্তকাদি ব্যবহার করতে পারছে। চলচ্চিত্র, বেতার যন্ত্র, টেলিভিশন প্রভৃতি যেমন মানুষকে অফুরন্ত আনন্দ দিচ্ছে, তেমনই শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে। কম্পিউটার বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করেছে এক নতুন শিক্ষাপদ্ধতি। বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা এখন কম্পিউটারেই শিখতে পারছে অসংখ্য বিষয়। তাছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন বিখ্যাত লাইব্রেরির বই, বিখ্যাত শহর- বন্দর-বাণিজ্য, দেশ ইত্যাদি সম্পর্কে মুহূর্তেই দিতে পারছে হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত।

বিজ্ঞান শিক্ষা

স্বচ্ছ ও সুস্থ চিন্তাধারাই শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য। জগতে সব ঘটনার পেছনেই থাকে এক অনিবার্য কার্যকারণ সূত্র। বিজ্ঞান সেই সূত্রকেই উদ্‌ঘাটিত করে। ব্যাবহারিক জীবনে মানুষ নানা প্রথাচার, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন থাকে। বিজ্ঞান শিক্ষা মনের ক্ষুদ্রতা ও ভ্রান্তির আবরণ ভেদ করে যথার্থ সত্যকে চেনায়। সমাজ এক জায়গায় স্থির থাকে না।
নতুন নতুন চিন্তাধারা, কর্মপ্রবাহে সমাজজীবনও সদাচঞ্চল। বৈজ্ঞানিক চিন্তার বিকাশেই মানুষের ভ্রান্ত ধারণার অবসান হয়। বিজ্ঞানমনস্কতাই মানুষের মোহান্ধতা দূর করতে পারে। ফলে সে যুক্তিবাদী ও বিচারবোধসম্পন্ন হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানের নিছক পঠনপাঠনেই বিজ্ঞানমনষ্কতা গড়ে ওঠে না। কিন্তু বর্তমানে নানাবিধ কারণে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রত্যাশিত অগ্রগতি হচ্ছে না।

বিজ্ঞান শিক্ষার অন্তরায়সমূহ

বিজ্ঞানের অজস্র উপকার সত্ত্বেও আজও আমাদের দেশে বিজ্ঞান শিক্ষা আশাব্যঞ্জক নয়। প্রথমত, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাপকভাবে বিজ্ঞান শিক্ষার বৈপ্লবিক প্রসার ঘটানো আসলেই সম্ভব নয়। এছাড়াও ইদানীং স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও বিজ্ঞানকে একটি নীরস বিষয় হিসেবে অভিহিত করে অনেক অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীরা বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে দূরে সরে আসছে। এর পরিবর্তে ব্যাপকভাবে মানবিক বিষয় এবং বাণিজ্য শাখায় শিক্ষার্থী বেড়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারে করণীয়

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার ইতোমধ্যে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে সরকারকে আরও যত্নবান হতে হবে। বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যাপারে জোর দিতে হবে। এ লক্ষ্যে স্কুলগুলোতে অধিক বিজ্ঞান-বিষয়ক শিক্ষক নিয়োগসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ল্যাবরেটরি প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনে সভা 'সেমিনার' সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা যেতে পারে।

উপসংহার

বিজ্ঞান মানবজীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজকের বিশ্ব বিজ্ঞানেরই অবদান। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় আমাদের সমান তালে এগিয়ে যেতে হবে। আর এজন্য বিজ্ঞান শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url