ট্রেন ভ্রমণ রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আমরা সকলেই জানি বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রচনা অন্যতম। আপনি যদি ট্রেন ভ্রমণ রচনাটি খুঁজে
থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কেননা আমরা এই আর্টিকেলে আপনাদের জন্য
ট্রেন ভ্রমণ রচনাটি তুলে ধরেছি।
আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক
হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত
পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ ট্রেন ভ্রমণ রচনা
ভূমিকা
ভ্রমণ সর্বদাই আনন্দের। ভ্রমণ করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আর ভ্রমণ থেকে অর্জিত
হয় অপার আনন্দ ও জ্ঞান। প্রকৃতপক্ষে ভ্রমণের ফলে মানুষের চিত্ত যেমন প্রফুল্ল হয়
তেমনই সে অনেক অজানার সন্ধান লাভ করে।
ভ্রমণ
ভ্রমণ হলো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বেড়ানো। ঘুরে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে যদি কোথাও
যাওয়া হয় তখন সেটাই ভ্রমণ। মহানবির বাণীতে আছে, জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে তোমরা সুদূর
চীন দেশে যাও। শ্রীকৃষ্ণও বিশেষ উদ্দেশ্যে মথুরা থেকে বৃন্দাবনে ভ্রমণ করেছেন।
ধর্মীয় মহাপুরুষদের পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা চন্দ্রপৃষ্ঠ বা মহাশূন্যে পরিভ্রমণ করেন।
এ সবকিছুর সঙ্গেই আছে আনন্দ আর জ্ঞানের পিপাসা। ভ্রমণ মানবমনে আনন্দ দান করে এবং
জ্ঞানের পিপাসা মেটায়। সে কারণে অনেকে এটিকে কর্তব্যকর্ম বলেও মনে করে।
ভ্রমণের উপায়
স্থলপথ, জলপথ, আকাশপথ এই তিন পথেই ভ্রমণ করা যায়। স্থলপথে বাসভ্রমণ, সাইকেল
ভ্রমণ, মোটরসাইকেল ভ্রমণ, ট্যাক্সি ভ্রমণ ইত্যাদি হতে পারে। তবে পরিসর বড়ো, দীর্ঘ
পথ ক্লান্তিহীনভাবে ভ্রমণের পক্ষে আরামদায়ক রেলভ্রমণ। এতে পথে অনেক স্টেশন থাকায়
নানা স্থানের বিচিত্র মানুষের সঙ্গে ক্ষণিক দেখা হওয়ার সুযোগ ঘটে।
প্রথম ট্রেনভ্রমণ
পরীক্ষা শেষে তখন আমার স্কুল বন্ধ। ডিসেম্বর মাসের ৪ তারিখে মা-বাবার সঙ্গে সকাল
সাড়ে আটটায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে পৌঁছালাম। সঙ্গে আমার বোন মাত্রা।
উদ্দেশ্য গ্রামের বাড়ি শেরপুরে যাব। আমার বাবা আগেই ট্রেনের টিকিট করে রেখেছিলেন।
আমরা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের 'সুলভ' শ্রেণিতে নির্ধারিত আসনে বসলাম।
ট্রেনের নাম 'অগ্নিবীণা'।
ট্রেনের ভেতরের মুহূর্ত
বাবা আমাকে বলেছিলেন, 'সুলভ' শ্রেণিতে উঠলে বিচিত্র ধরনের মানুষের দেখা মেলে।
সত্যি তাই দেখলাম। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত নানা ধরনের নারী-পুরুষ সেই সঙ্গে শিশুরা
আসনে বসেছে। দুজনের আসনে তিন বা চারজনও কষ্ট করে বসেছিলেন। একজন বৃদ্ধ আসন পাননি।
পাশের আসন থেকে একজন যুবক উঠে দাঁড়িয়ে তাকে বসতে দিলেন।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের নদ নদী রচনা
বিভিন্ন খাবার বিক্রেতারা খাবার বিক্রি করতে আসে। এরই মধ্যে চানাচুরওয়ালা
'চানাচুর-বাদাম' বলে মিহি সুর তুলে, আকর্ষণীয় গন্ধ ছড়িয়ে আমাদের পাশ দিয়ে চলে
গেল। একজন চোখের সামনে দৈনিক পত্রিকা মেলে ধরে তা পাঠ করায় মনোযোগী ছিলেন। ট্রেন
ধীরে ধীরে গতিপ্রাপ্ত হলো।
রেল স্টেশন
আমি ইতোমধ্যে জানালার ধারে গিয়ে বসেছি। বোন মাত্রা আমার মুখোমুখি। আমার পাশে বাবা
আর মা বসা। দেখলাম ট্রেন তেজগাঁও, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর স্টেশন,
জয়দেবপুর ইত্যাদি স্টেশনে খানিক দাঁড়াল। আর স্টেশনে অপেক্ষমাণ মানুষেরা খুব দ্রুত
উঠে পড়ল ট্রেনে। কারও হাতে ছিল ব্যাগ, কারও কোলে শিশু। কিন্তু সবারই একটাই লক্ষ্য
এবং তা হলো ট্রেন। ট্রেনে উঠেই তাদের সব ব্যস্ততা কমে যায়। যে যার আসন খুঁজে নিয়ে
সেখানে বসে যান।
বাইরের দৃশ্য
জানালার ধারে বসে আছি। মনে হচ্ছে মাঠ-ঘাট-গাছপালা দৌড়াচ্ছে। আমার চক্ষু স্থির।
কয়েকটা পাখি আকাশে পাখা মেলে আমাদের পাশাপাশি চলে আবার পিছিয়ে পড়ে। মনে হয়, সারা
পৃথিবী যেন ঘুরছে, আর আমরা স্থির আছি। জানালার ধারে বাতাসের গতিবেগের কারণে আমার
চুল এলোমেলো হয়ে যায়। পাশে তাকিয়ে দেখি বাবা বই হাতে, মা চোখ বুজে আছেন। ট্রেন
থেকে শূন্য মাঠ দেখা যায়।
দর্শনীয় স্থান
ট্রেনভ্রমণে প্রথমেই উল্লেখযোগ্য স্থান ও স্থাপনার মধ্যে পড়ল কমলাপুর রেলস্টেশন।
দীর্ঘতম প্ল্যাটফর্ম আছে এই স্টেশনে। তারপর তেজগাঁও আসার আগেই দূর থেকে চোখে পড়ে
ঢাকার চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা বা এফডিসি। ভাওয়ালের জমির উপর দিয়ে জয়দেবপুর যাবার
আগেই ঢাকা বিমানবন্দর চোখে পড়ে।
আরও পড়ুনঃ শীতের সকাল রচনা
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুরে যমুনা সার কারখানা ছাড়াও পথে
নানা স্থান ও স্থাপনার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। সাইনবোর্ডগুলোর উপর একটু স্থির
দৃষ্টি রাখলে স্থান ও স্থাপনাগুলোর নাম ভালোভাবেই পাঠ করা সম্ভব।
গন্তব্যে পৌঁছাবার মুহূর্ত
ট্রেন থেকে নামার আগের প্রস্তুতি হিসেবে আমরা যে যার ব্যাগ হাতে নিলাম। বাবা বড়ো
ব্যাগগুলো একসঙ্গে রেখে ট্রেন থামার অপেক্ষা করলেন। আমি আমার একপাটি জুতো খুঁজে
পাচ্ছিলাম না। মাত্রা বলল বিপাশা দিদি, তোমার জুতা আমার সিটের নিচে এসে গেছে।
ট্রেন থামতেই লাল শার্ট পরা কুলিরা এলো। বাবা তাদের হাতে ব্যাগ বুঝিয়ে দিলেন।
উপসংহার
ট্রেনভ্রমণ না করলে জীবনের বিরাট অভিজ্ঞতা ও আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত হতাম।
বিচিত্র মানুষের সঙ্গে পরিচয়, নানা স্থান অবলোকন, বিভিন্ন স্থাপনা দর্শন ইত্যাদি
আমার মনে নানা জিজ্ঞাসার শুত্ব দেয়। সুবজ-শ্যামল বাংলাদেশ আমার মনকে দেশপ্রেমে
উদ্বুদ্ধ করে তোলে। ট্রেন ভ্রমণের এই সাতটি ঘণ্টা আমার কাছে সারা জীবনের
স্মৃতিগাথা হয়ে থাকবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url