গ্রাম্য মেলা অনুচ্ছেদ

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি গ্রাম্য মেলা অনুচ্ছেদটি খুঁজে থাকেন তাহলে একজন সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে গ্রাম্য মেলা অনুচ্ছেদটি তুলে ধরেছি। আশা করি অনুচ্ছেদটি আপনাকে বাংলা পরীক্ষায় ভালো নম্বর আনতে সহায়তা করবে।
গ্রাম্য মেলা অনুচ্ছেদ
প্রিয় পাঠক আপনি যদি গ্রাম্য মেলা অনুচ্ছেদটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে অনুচ্ছেদটি পড়ে নেওয়া যাক।

গ্রাম্য মেলা

'মেলা'র আক্ষরিক অর্থ- একত্রে মিলিত হওয়া বা একত্রে অবস্থান করা। গ্রাম্যমেলা হলো কোনো উপলক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট দিনে বা সময়ে গ্রামাঞ্চলের কোনো বিশেষ স্থানে গ্রামীণ এলাকার শিশু-কিশোর, যুবা-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের মিলনে নানারকম পণ্যদ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয়সহ আমোদ-প্রমোদের আয়োজন। মেলা হলো গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এ দৃষ্টিকোণ থেকে মেলা আমাদের লোক-সংস্কৃতিরই একটি অঙ্গ। মেলার প্রচলন ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে তা বলা সম্ভব নয়। স্বাধীনতা পূর্বকালে কিংবা ১৯৪৭-এর দেশ বিভাগের পূর্বকালে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা ছিল আজকের তুলনায় অনেক বেশি। হিন্দুদের কোনো কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে নদীর তীরে কিংবা বটবৃক্ষের নিচে মেলা বসত।

সেকালে মেলায় হিন্দুদের প্রাধান্য থাকত। কালক্রমে এসব মেলায় হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমান শিশু-কিশোরদেরও সমাগম ঘটতে থাকে এবং পরবর্তীকালে এসব মেলা হিন্দু-মুসলমান উভয়েরই উৎসব হিসেবে পরিগণিত হয়। তাছাড়া বছরের শেষ দিনে অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে সংক্রান্তি মেলা এবং বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে বৈশাখী মেলার প্রচলনও সেই আদিকাল থেকেই।
জানা যায়, তাও হিন্দুদেরই পূজা কিংবা পুণ্যস্নান উপলক্ষ্যে। বর্তমান বৈশাখী মেলা পল্লি বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় মেলা এবং এটি বাঙালির সম্প্রদায়নিরপেক্ষ উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সমগ্র পল্লি অঞ্চলেই নানা ধরনের মেলার প্রচলন রয়েছে। স্থান বিশেষে অনেক বিখ্যাত মেলা রয়েছে। ওইসব মেলা স্থানের নামে পরিচিত। যেমন- ভোলাচঙের মেলা, ভাদুঘরের মেলা, ময়নামতির মেলা ইত্যাদি।

পূর্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী যেসব গ্রামে মেলা বসে তার জন্য একটি স্থান নির্ধারিত আছে। সাধারণত গ্রামের কেন্দ্রস্থলে খোলা মাঠে কোনো প্রাচীন বটবৃক্ষের সামনে, কোথাও কোনো মন্দিরের সামনে, কোথাও নদীর তীরে কোনো প্রাচীন বটবৃক্ষের নিচে মেলা বসে। অতঃপর দিনব্যাপী চলে মেলা। সাধারণত হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামগুলোতেই মেলার প্রচলন আছে সুদূর অতীত থেকেই।

এসব মেলার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে পীর আউলিয়াগণের মাজার প্রাঙ্গণে বাৎসরিক উরস উপলক্ষ্যে মেলা বসে থাকে। মেলা মানেই অসংখ্য মানুষের ভিড় ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ের হাতে হাতে নানা ধরনের বাঁশি, ঢোল, ঝুনঝুনি, পুতুল নাচের আসর এবং মাইকের গান-বাজনা ও সংলাপের আওয়াজ, চেঁচামেচি, ঠেলাঠেলি- এসব আনন্দের উচ্ছ্বাস। গ্রামাঞ্চলে মেলার দুটো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে। 
একটি হলো গ্রামীণ জীবনে মেলা শিশুকিশোরসহ সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে এক অনাবিল আনন্দ বয়ে আনে। মেলা গ্রামের নিস্তরঙ্গ জীবনে বয়ে আনে এক আনন্দের উৎসব, প্রাণের স্পন্দন। এ উৎসবের রেশ থাকে অনেক দিন। অপরদিকটি হলো আর্থনীতিক। মেলা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কারিগরের তৈরি নানা পণ্যসামগ্রী ও বিভিন্ন শিল্পসম্ভার বিক্রি হয়। এতে তাদের জীবিকানির্বাহ হয়।

 আবার শিশু-কিশোররা যেমন পায় তাদের আনন্দের সামগ্রী তেমনই গৃহিণীরাও পায় তাদের গৃহস্থালির নানা সামগ্রী। এছাড়া মেলায় নানা ধরনের লোকসংগীত ও লোকক্রীড়ারও আয়োজন হয়। এগুলোর মধ্য দিয়ে বাঙালির সংস্কৃতির শিকড়ের দিকটিই প্রতিফলিত হয়। স্বচ্ছ বিনোদন আর নিষ্কলুষ আনন্দের স্বাদ নিতে গ্রাম্য মেলার রয়েছে অসাধারণ ভূমিকা।

গ্রাম্যমেলা হলো বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচায়ক। আমাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ এ মেলা। নিছক আনন্দ-উৎসবের পাশাপাশি গ্রামীণ মানুষের অকৃত্রিম জীবনাচার এর মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। গ্রাম্য নির্ভর কুটিরশিল্প এখানে বিকশিত হতে পারে অন্যদিকে একটি গ্রাম্যমেলার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url