শীতের সকাল রচনা - একটি শীতের সকাল রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি শীতের সকাল রচনাটি খুজছেন? যদি খুঁজে
থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলে
শীতের সকাল রচনাটি তুলে ধরেছি। রচনাটি আপনারা পরীক্ষা নিয়ে তাই লিখে ভালো নম্বর
আনতে পারবেন।
রচনাটি ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রযোজ্য। প্রিয়
পাঠক আপনি যদি শীতের সকাল রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
সূচিপত্রঃ শীতের সকাল রচনা - একটি শীতের সকাল রচনা
ভূমিকা
প্রকৃতিকে বিভিন্ন রূপে সাজিয়ে বছরে পর্যায়ক্রমে ছয়টি ঋতুর আগমন ঘটে। শীত আসে
কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে। গায়ে হিম-ঠান্ডা, কনকনে শীতল বাতাসের ছোঁয়া লাগলেই
আমাদের মনে পড়ে শীত এলো। শীত এলে আমাদের গরম কাপড় পরতে হয়। শীতের সকালে যখন
প্রকৃতি কুয়াশায় ঢাকা থাকে তখন মনে হয় প্রকৃতির সবকিছুই যেন বরফ সাদা। কুয়াশার ঘন
সাদা পর্দা ভেদ করে শীতের সকালে সূর্যের কিরণ সহজে পৃথিবীতে পৌঁছতে পারে না।
শীতের সকাল ব্যস্ত জীবনের যান্ত্রিকতাকে যেন থামিয়ে দিতে চায়।
শীতের সকালে প্রকৃতি
পৌষ ও মাঘ দু'মাস শীতকাল। প্রকৃতিতে বিবর্ণতার নির্মম খেলা শুরু হয়। গাছপালা
পাতাহীন, নদ-নদী গতিহীন হয়ে পড়ে। শীতের সকালে যখন ঘন কুয়াশা সবকিছু ঢেকে রাখে তখন
প্রকৃতিকে অপূর্ব সুন্দর মনে হয়। পাণ্ডুর প্রকৃতির মধ্যে এক নীরব সৌন্দর্য দেখা
যায় শীতের সকালে। এ সৌন্দর্য অনেকটা বিমূর্ত। শীতের সকালে প্রকৃতি আশ্চর্য
নিস্তব্ধতায় নিমগ্ন হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুনঃ বইমেলা রচনা
কুয়াশার অবগুণ্ঠন ছিড়ে নিস্তব্ধতার বুক চিরে কোনো পথিক হেঁটে গেলে মনে হয় শীতের
কনকনে ঠান্ডায় তার শরীর কাঁপছে। টিনের চালে, গাছের ডালে, ঘাসের ডগায়, কুয়াশার
বিন্দু জমে থাকার মনোরম দৃশ্য শীতের সকাল ছাড়া দেখা যায় না। মৌমাছির গুঞ্জনে
মুখরিত হয় হলুদ সরষে খেত আর ফুলের বাগান। কুয়াশার চাদর সরিয়ে সূর্য উকি দেয়, তখন
স্নিগ্ধ আলোয় ঝলমল করে ওঠে প্রকৃতি।
শীতের পিঠে
শীতের সকালে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন খেতের পাকা ধান ঘরে তোলায় কৃষানির ঠোঁটেও হাসি
ফোটে। ফসল তুলে ঘরে আনলেই শীতের পিঠে খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। শীতের সকালে পিঠে তৈরির
সুগন্ধ ভেসে এলে মন আনন্দে ভরে ওঠে। সকালে পিঠে আর দুপুরে কী রাতে টাটকা শাকসবজি,
তরিতরকারি আমাদের রুচির পরিবর্তন আনে। স্বাদ আসে মুখে। শীতের সকালে খেজুরের রস,
খেজুরের গুড়, সবই টাটকা পাওয়া যায়।
শহরে শীতের সকাল
শীতের সকালে শহরে অন্যরকম পরিবেশ বিরাজ করে। লেপের উষ্ণতা ছেড়ে অনেকেরই কাজকর্মে
যেতে ইচ্ছে করে না। অলসতা যেন আঁকড়ে ধরে। যাদের সকালে উঠতেই হয় তারাও ছুটির দিনে
বেশ দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। শীতের সকালে উঠে কনকনে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুতে ইচ্ছে
করে না বড়োদেরও, ছোটোরা তো ঠান্ডা পানির ভয়ে পালাই পালাই করে।
আরও পড়ুনঃ লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা
শহরের মানুষদের সূর্যোদয় দেখা, সূর্যাস্ত দেখা, শীতের সকালের কুয়াশা দেখার
মনমানসিকতা যেমন নেই তেমনই সুযোগও নেই। যান্ত্রিক জীবনে যারা অভ্যন্ত তাদের কাছে
ওসব অর্থহীন আবেগ। সভ্যতার যান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় শহুরে মানুষের কাছে আবেগের
স্থান নেই বললেই চলে। সবসময় ঘড়ির কাঁটা ধরে চলা তাদের অভ্যাস। বাড়তি কিছু করার
সময় তাদের নেই।
গ্রামে শীতের সকাল
গ্রামে-গঞ্জে শীতের সকালে সৃষ্টি হয় অভূতপূর্ব দৃশ্য। শীতের সকালে পাওয়া যায়
টাটকা খেজুর রস। ভাপা পিঠার মিষ্টি গন্ধে সকালবেলায় খিদে বেড়ে যায়। বিত্তহীন,
দুস্থ, দরিদ্র গ্রামবাসীদের শীতে গরম জামাকাপড় থাকে না। সকালে তারা ঠান্ডায়
কাঁপতে থাকে। অতি ভোরে গ্রামের মসজিদে আজান হয়,
ঘোর অন্ধকার ভেদ করে দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিরা মসজিদে আসেন নামাজ পড়তে। ভরপেট
পান্তাভাত খেয়ে কৃষক কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরবেলায় মাঠের কাজে যায়। শীত একটু বেশি লাগলে
সকালবেলায় নাড়ার আগুনে ছেলের দল মটরশুঁটি পুড়িয়ে খায় আর আগুন পোহায়।
শীতের সকালের অসুবিধা
শীতের সকালে হাড় কাঁপুনে শীত পড়লে গ্রামের মানুষ যেন জড়তা ও বিষন্নতায় ভোগে।
মানুষের কাজের উদ্যম থেমে যায়। আরাম-আয়েশ করে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে
করে। গরিব মানুষেরা গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট পায়।
যানবাহন চলাচলের অসুবিধা
শীতের রাতে বা সকালে চারদিক কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে। ফলে একটু দূর থেকে স্পষ্ট কিছু
দেখা যায় না। মনে হয় কুয়াশার সাদা পর্দা ছাড়া সামনে কিছু নেই। এ সময় রাস্তাঘাটে
যানবাহন চলাচলের ফলে দুর্ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। নদীপথে লঞ্চ-স্টিমার চলাচলের
ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি হয়।
উপসংহার
শীতের সকালে শিশিরভেজা সোনালি রোদের স্পর্শ কার না ভালো লাগে! সুবিধা-অসুবিধা
দুয়ে মিলে শীতের সকাল আমাদের জীবনে প্রতি বছর দুই মাস সময় অন্য রকম ভালোলাগার
অনুভূতিতে হৃদয়কে পরিপূর্ণ করে তোলে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url