বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনাটিতে
থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের
জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনাটি তুলে ধরেছি। বাংলা পাঠ্য বইয়ের
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
আশা করি উক্ত রচনাটি পরীক্ষায় আসলে তা লিখে আপনারা ভালো নম্বর আনয়ন করতে
পারবেন। প্রিয় পাঠক আপনি যদি রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট
না করে মূল যাওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা
ভূমিকা
হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির শ্রেষ্ঠতম অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর এই
স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে, তিনি বাংলাদেশের
অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়,
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতাদের অন্যতম। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের
পথ বেয়ে ১৯৭১ সালে ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি অর্জন করে মহান
স্বাধীনতা। তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বের কারণে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি ভালোবেসে তাঁকে
'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করেছে।
জন্ম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার নিভৃত
পল্লি টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। মধুমতী নদীর তীরবর্তী ছায়াঢাকা এই গ্রামে
পিতামাতার কোল আলোকিত করে যে শিশুর জন্ম হলো তাকে তার জনক-জননী 'খোকা' নামে ডাকতে
শুরু করলেন এবং পুরো নাম রাখলেন 'শেখ মুজিবুর রহমান'।
শিক্ষাজীবন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখাপড়া শুরু স্বগৃহে। ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে
গিমাডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর ছাত্রজীবনের সূচনা হয়। তারপর গোপালগঞ্জে
সীতানাথ একাডেমি এবং পরে পিতার কর্মস্থল মাদারীপুরে ইসলামিয়া হাইস্কুলে চতুর্থ
শ্রেণিতে তাঁকে ভর্তি করা হয়। এ সময় মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি বেরিবেরি রোগে
আক্রান্ত হন এবং তার চোখ প্রায় অন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চোখের অপারেশন হয় এবং এরপর প্রায় তিন বছর তার পড়ালেখা
বন্ধ থাকে। চোখের অসুখে আক্রন্ত হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন প্রায় চার বছর
ব্যাহত হয়। ১৯৩৭ সালে তিনি ভর্তি হন গোপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুলে এবং এখান থেকেই
১৯৪২ সালে তিনি এন্ট্রান্স (প্রবেশিকা) পরীক্ষা পাশ করেন। পরবর্তী শিক্ষাজীবন
তিনি শুরু করেন কলকাতা শহরে।
আরও পড়ুনঃ স্বদেশপ্রেম রচনা
১৯৪৭ সালে তিনি বিএ পাশ করেন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে। এরপর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং
কারাবরণ করেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ধর্মঘটকে
সক্রিয়ভাবে সমর্থন করায় এবং জরিমানা দিতে অস্বীকার করায় . কর্তৃপক্ষ তাঁকে
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে। শেখ মুজিবের শিক্ষাজীবন এভাবেই অসমাপ্ত থেকে
যায়।
রাজনীতিক জীবন
কলকাতায় থাকা অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে 'যুক্ত ছিলেন।
ইসলামিয়া কলেজের ছাত্রাবাস বেকার হোস্টেলে অবস্থানকালে শেখ মুজিব তৎকালীন অবিভক্ত
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ প্রখ্যাত রাজনীতিক নেতা শেরে
বাংলা, নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু, মওলানা ভাসানী প্রমুখের সাহচর্যে এসেছিলেন।
১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের সময় তিনি কারাবন্দি থাকা
অবস্থায় সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তাঁকে আওয়ামী মুসলিম
লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি
যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রাদেশিক সরকারের
কৃষি ও বনমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হন।
সত্তরের নির্বাচন ও স্বাধীনতা ঘোষণা
নতুন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মধ্যস্থতায় ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ
নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানি সামরিক সরকার টালবাহানা শুরু করে। শুরু
হয় নতুন করে ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দেশব্যাপী গণজোয়ার যা
গণআন্দোলনে রূপ নেয়।
এমনি বাস্তবতায় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে আহূত এক বিশাল জনসমুদ্রে
দাঁড়িয়ে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন- 'প্রত্যেক
গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং
আমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো।
এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির
সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
আরও পড়ুনঃ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা
অতঃপর ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে ঘুমন্ত ঢাকাবাসীর ওপর বর্বর পাকিস্তানি হানাদার
বাহিনীর পৈশাচিক আক্রমণ, নারকীয় হত্যাকাণ্ড, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার এবং
গ্রেপ্তারের পূর্ব মুহূর্তে ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা: This is may be my last
message. From today Bangladesh is independent, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী
ওয়ারলেসের মাধ্যমে ঘোষিত ও প্রেরিত স্বাধীনতার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু দেশবাসীকে
মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
জাতির পিতা উপাধি
১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ ছাত্রলীগ আয়োজিত পল্টনের বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন। বাংলার জাতির পিতা হিসেবে প্রথম অভিহিত করা হয় এবং
স্বাধীনতার পর সরকার তাঁকে জাতির পিতা হিসেবে ঘোষণা করে।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও শাসন ক্ষমতা গ্রহণ
স্বাধীনতার পর ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা বীরের মতো
প্রত্যাবর্তন করেন স্বদেশের মাটিতে। সেদিনও লক্ষ লক্ষ জনতা তাকে আনন্দাশ্রু দিয়ে
স্বাগত জানায় স্বাধীন বাংলার রক্তাক্ত মাটিতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেশ পরিচালনা
করতে পেরেছেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও
সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক তখনই দেশি-বিদেশি
স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রে কতিপয় বিভ্রান্ত সেনা কর্মকর্তার দ্বারা
নির্মমভাবে পরিবার- পরিজনসহ নিহত হন ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোররাতে।
উপসংহার
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যায়, অত্যাচার আর শাসন-শোষণের
বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন জীবন বাজি রেখে। ফলে অসংখ্যবার তিনি জেলে গিয়েছেন,
জেলে কাটিয়েছেন জীবনের একটি বড়ো সময়। তবুও তিনি অবিচল থেকেছেন বাংলাদেশ ও বাঙালি
জাতিকে মুক্ত করার দৃঢ় সংকল্পে। তাইতো বঙ্গবন্ধু অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন বাংলার
মানুষের হৃদয়ে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url