ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি - ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি জানেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? যদি না
জেনে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিকে
আপনাদের জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা
করেছি।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক হয়ে
থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি - ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার
ভূমিকা
১৯৬২ সালে মর্টন হেইলিগ তার Sensorama আবিষ্কারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির
ধারণার সূত্রপাত করেন। ১৯৬৮ সালে ইভান সুথারল্যান্ড সর্বপ্রথম মাথার সাথে বসানো
ত্রিমাত্রিক ডিসপ্লের আবিষ্কার করেন। ১৯৮৯ সালে জেরন লেইনার (Jaron Lainer)
সর্বপ্রথম virtual reality" শব্দটির প্রচলন করেন। কাজেই ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির
জনক নিয়ে মতভেদ আছে।
প্রফেসর বারডিয়া (Grigore C. Burdea) তাঁর Virtual Reality Technology বইতে
ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটিকে অবগাহন (immersion), কল্পনার জগৎ (imagination) ও
মিথস্ক্রিয়া (interaction) এর সমন্বয় হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর মতে
ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটিতে মানুষ কল্পনার রাজ্যে নিজকে নিমজ্জিত বা অবগাহন করে
মিথস্ক্রিয়া করতে সমর্থ হয়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি
ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি বা VR হচ্ছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত (সিস্টেম যাতে মডেলিং
(Modelling) ও অনুকরণবিদ্যাক (Simulation) প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষ কৃত্রিম
নিয়ন্ত্রিত বিস্টেম যাতে মডেলিং সার্থে সংযোগ স্থাপন বা উপলব্ধি রিয়েলিটিম্যাল
রিয়েলিটিতে পরিবেশ ইঞ্চি বাপ্তাৰ শত হতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক সময় ভার্চুয়্যাল
রিয়েলিটি থেকে বাস্তব অভিজাকরণকৃত পরিবেশ হুবহু বাস্তব পৃথিবীর মত হরেণকৃত বা
সিমুলেটেড পরিবেশ বাস্তব থেকে আলাদা হতে পারে। যেমন-ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি গেমস।
ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটিতে ব্যবহারকারী সম্পূর্ণরূপে একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত
পরিবেশে নিমজ্জিত হয়ে যায়। তথ্য আদান প্রদানকারী বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস সম্বলিত
চশমা, হেডসেট (headsets) বা মাথায় বসানো ডিসপ্লে (Head Mounted Display-HMD),
গ্লোভ (gloves), পোষাক (suit) ইত্যাদি পরিধান করার মাধ্যমে ভার্চুয়্যাল
রিয়েলিটিতে বাস্তবকে উপলব্ধি করা হয়। একটি টিপিক্যাল ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটিতে
একজন ব্যবহারকারী ত্রিমাত্রিক স্ক্রীন সম্বলিত একটি হেলমেট পরে এবং তার মধ্যে
দিয়ে বাস্তব থেকে অনুকরণকৃত প্রাণবন্ত ছবি দেখে।
আরও পড়ুনঃ ডেটাবেজ কি - dbms বলতে কি বুঝায়
কৃত্রিম ত্রিমাত্রিক জগতে উপস্থিত থাকার ভ্রমণ একটি গতি নিয়ন্ত্রণকারী সেন্সর
দ্বারা প্রভাবিত করা হয়। গতি নিয়ন্ত্রণকারী সেন্সর এর মাধ্যমে স্ক্রীনে প্রদর্শিত
ছবির গতিকে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি ব্যবহারকারীর গতির সাথে মেলানো হয়। যখন
ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি ব্যবহারকারীর গতির পরিবর্তন হয় তখন স্ক্রীন এ প্রদর্শিত
দৃশ্যের গতিও পরিবর্তিত হয়। এভাবে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি ব্যবহারকারী কৃত্রিম
ত্রিমাত্রিক জগতের সঙ্গে মিশে যায় এবং সেই জগতের একটি অংশে পরিণত হয়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগ বা ব্যবহার নিচে তুলে ধরা হলো-
- গেইম শিল্প ও সিনেমাঃ বিভিন্ন প্রকার আধুনিক আকর্ষণীয় গেম তৈরিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়। যেমন Xbox360, PS5 ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য ধারণ করতে প্রয়োজনীয় অ্যানিমেশন তৈরি করার সময় ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহার করা হয়।
- শিক্ষা ও প্রশিক্ষণঃ শিশু শিক্ষা, বিজ্ঞান শিক্ষা ও প্রকৌশল শিক্ষাই এর ব্যাপক প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের অভ্যন্তরীণ সিম্যুলেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনুধাবন করতে পারে।
- চিকিৎসাক্ষেত্রেঃ ইচ্ছা ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগ করে বিভিন্ন ধরনের ভুল ও ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।যেমন সিম্যুলেটেড সার্জারির মাধ্যমে নতুন ডাক্তার ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব।
- সামরিক বাহিনীঃ সামরিক বাহিনীতে অনেক বছর যাবত মিলিটারি প্রশিক্ষণ এর ফ্লাইট সিমুলেশন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে প্রচলিত ফ্লাইট সিম্যুলেটর এর আরো উন্নতি সাধন করা সম্ভব।
- ব্যবসা বাণিজ্যঃ ব্যবসা বাণিজ্য ভার্চুয়ালিটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। কোন যন্ত্র বা পণ্য উৎপাদন শুরু করার আগে তা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে তৈরি করে তার মান ও গুনাগুন পরীক্ষার জন্য জনসম্মুখে উপস্থাপন করা যায়।
- শিল্প কারখানায়ঃ ভার্চুয়ালিটির মাধ্যমে শিল্প কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়ার সিম্যুলেশন করা হয় এর ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করার পূর্বে তার দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা, ঝুঁকি ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা যায়।
- ফ্লাইট সিমুলেটরঃ ফ্লাইট সিমুলেটর এমন একটি যন্ত্র বা ডিভাইস যা পাইলট প্রশিক্ষণ, ডিজাইন, গেম ইত্যাদি কাজের উদ্দেশ্যে কৃত্রিমভাবে বিমান বা এয়ারক্রাফট উদয়ন ও অবতরণ এবং এর চলাচল কাল্পনিক পরিবেশ তৈরি করে।
- মহাকাশ অভিযানঃ মহাকাশ অভিযানের প্রতিটি পর্বেই রয়েছে নানা ধরনের ঝুঁকি। প্রস্তুতি পড়বেন নানা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিরীক্ষা, নভোচারীদের কার্যক্রম, নবযান পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রশিক্ষণের ভার্চুয়াল রিয়েলেটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব
প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষন জানলাম ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি। চলুন তাহলে এবার এটির
ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির কিছু ইতিবাচক প্রভাব-
- বাস্তবায়নের পূর্বেই বাস্তবকে অনুভব করাঃ ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির সাহায্যে অনেক ক্ষেত্রেই কোন কিছু বাস্তবায়ন করার পূর্বেই কম্পিউটার, মেকানিক্যাল, সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল ইত্যাদি ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার প্রয়োগের ফলে কাল্পনিক মডেল তৈরি করা যায় যা বাস্তবের অনুরূপ। যেমন একটি ভবন তৈরি করে ক্রেতাকে দেখানো পর ক্রেতার চাহিদা অনুসারে তার পরিবর্তন করা কঠিন। কিন্তু ভবন নির্মাণের পূর্বে তার মডেল ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির প্রয়োগের মাধ্যমে তৈরি করে ক্রেতাকে দেখালে ক্রেতা তার পছন্দমত ডিজাইন পরিবর্তন করতে পারেন। ডিজাইন চূড়ান্ত হলে এই মডেল অনুসারে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হতে পারে।
- শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী করাঃ শিক্ষা ক্ষেত্রে জটিল বিষয়গুলোর সিম্যুলেশন ও মডেলিং করে শিক্ষার্থীদের দেখালে সঠিক শিক্ষার বিস্তরণ হয়। যেমন মানুষের হার্ট কীভাবে কাজ করে তা বাস্তবে দেখানো কঠিন কিন্তু ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির মাধ্যমে তা সহজেই দেখানো যেতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ বা জটিল উৎপাদন ব্যবস্থাকে সহজ ও সরল কপারে শিল্প-কারখানার ঝুঁকিপূর্ণ বা জটিল প্রসেসকে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির সাহায্যে প্রকৌশল বিদ্যার প্রয়োগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সহজ ও সরল করা সম্ভব।
- খরচ কমানোঃ ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির প্রয়োগের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই খরচ কমানো সম্ভব হয়। বাস্তবায়নের পূর্বেই মডেল তৈরি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ডিজাইন চূড়ান্ত করা হলে নির্মাণ খরচ তুলনামূলকভাবে কম হবে।
ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির কিছু নেতিবাচক প্রভাব-
- মনুষ্যত্বহীনতাঃ বর্তমান সমাজের মনুষ্যত্বহীনতা বা ডিহিউম্যানাইজেশন (Dehumanization) ইস্যুটি হচ্ছে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির একটি নেতিবাচক দিক। পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে মনুষ্যত্বকে ধরে রাখতে হবে এবং একই সাথে খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা প্রযুক্তি দ্বারা চালিত না হই। কিন্তু যদি বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে তাহলে মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। কারণ মানুষ তখন ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি দ্বারা বাস্তব জীবনের চেয়েও অনেক ভালো সঙ্গী এবং মনের মত পরিবেশ পাবে। আর মানুষ যদি এভাবে goggles আর gloves কে মানুষ ও সমাজের বিকল্প হিসেবে বেছে নেয় তাহলে মানব সমাজ বিলুপ্ত হতে আর বেশি সময় লাগবে না।
- কল্পনার রাজ্যে বিচরণঃ ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির মাধ্যমে মানুষ তার কল্পনার রাজ্যে ইচ্ছেমত বিচরণ করতে পারবে। ফলে দেখা যাবে মানুষ বেশিরভাগ সময় কাটাবে কল্পনার জগতে এবং খুব কম সময় থাকবে বাস্তব জগতে। কিন্তু এভাবে যদি মানুষ কল্পনা ও বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য করতে না পারে তাহলে এই পৃথিবী চরম অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হবে।
- স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরঃ এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে যে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও হানিকর। এটি মানুষের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির ক্ষতিসাধন করে।
- ডিজিটাল ডিভাইড তৈরিঃ ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি ব্যয়সাধ্য বিধায় অনেকেই তা ব্যবহার করে এর সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন না। যাদের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে শুধুমাত্র তারাই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছেন। ফলে এখানে ডিজিটাল ডিভাইড তৈরি হচ্ছে।
শেষ কথা
আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি আর্টিকেলটি
পড়ার মাধ্যমে আপনারা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করতে
পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোন মতামত থাকলে
অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এমন বিভিন্ন টপিকে আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি
ভিজিট করতে পারেন, আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটিতে নতুন নতুন আর্টিকেল পাবলিশ
করে থাকি। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত আমি বিদায় নিচ্ছি। আমাদের সাথেই
থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url