বাংলা ভাষা রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি বাংলা ভাষা রচনাটি খুঁজছেন? যদি
খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে
আপনাদের জন্য বাংলা ভাষা রচনাটি তুলে ধরেছি।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা গুলোর মধ্যে এটিও একটি। প্রিয় পাঠক আপনি যদি ভাব
রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে
সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর বৃথা সময় নষ্ট না করে নিচে
উল্লেখিত রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।
বাংলা ভাষা
পৃথিবীর প্রত্যেক দেশ ও জাতির নিজস্ব ভাষা রয়েছে। বাংলাদেশের বাঙালিরও মাতৃভাষা
বাংলা। বাংলা বাংলাদেশের সংবিধানস্বীকৃত একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। আকস্মিকভাবে এ ভাষা
জন্মলাভ করেনি। এর রয়েছে দীর্ঘ পটভূমি। বাংলা ভাষার উদ্ভব সম্পর্কে বিভিন্ন মত
প্রচলিত আছে। এই মতগুলোর মধ্যে কোনো ব্যাপক পার্থক্য নেই। শুধু দু'একটি স্থানে
পণ্ডিতরা একমত হতে পারেননি, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
বাংলা ভাষার উদ্ভব সংক্রান্ত আলোচনা ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও ড. মুহম্মদ
শহীদুল্লাহ্র অভিমত সবচেয়ে বেশি মান্য হয়ে থাকে। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের তালিকা
থেকে বাংলা ভাষার সন্ধান করা হয়েছে। এই ভাষা বংশ পাঁচ হাজার খ্রিষ্টপূর্বকালের।
এর কেন্তুম ও শতম নামে দুটি শাখা আছে। শতম থেকে ভারতীয় ও আশেপাশের ভাষার জন্ম
হয়েছে।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ মনে করেন, ভারতিক ভাষা থেকে বৈদিক ও প্রাচীন ভারতীয়
আর্যভাষার সৃষ্টি। খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দে প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা থেকেই প্রাকৃত
ভাষার সৃষ্টি। ঋগ্বেদ বৈদিক ভাষায় রচিত। আজ বৈদিক ভাষা চলমান নেই। আর ভারতীয়
আর্যভাষা অনুমান নির্ভর। আদিম প্রাকৃত প্রাচীন ভারতের এই অঞ্চলে শক্তিশালী ভাষা
ছিল। পালিসহ একাধিক ভাষা এই ধারার।
খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে আদিম প্রাকৃত ভাষা থেকে পালি ভাষার মতো প্রাচীন প্রাচ্য
ভাষার সৃষ্টি হয় বলে শহীদুল্লাহ্ মনে করেন। আনুমানিক ৪০০ খ্রিস্টপূর্ব অব্দে এই
ভাষা থেকে গৌড়ী প্রাকৃত এবং আনুমানিক ৪০০ অব্দে গৌড়ী প্রাকৃত থেকে গৌড় অপভ্রংশের
সৃষ্টি। জর্জ গ্রিয়ারসন, সুনীতিকুমার সহ অধিকাংশ ভাষাবিজ্ঞানী মনে করেন মাগধী
প্রাকৃত থেকেই বাংলা ভাষার উৎপত্তি।
কিন্তু শহীদুল্লাহ্ মনে করেন, গৌড় অপভ্রংশ থেকে আনুমানিক খ্রিস্টীয় ৫০০ অব্দে
বঙ্গ কামরূপী ভাষা তৈরি হয়। তিনি বলেন, গৌড়, অপভ্রংশ এখন মৃত ভাষা। বঙ্গ কামরূপীর
একটি অনুমান সিদ্ধ নাম। শহীদুল্লাহর মতে, গৌড় অপভ্রংশ হয়ে বঙ্গ কামরূপী ভাষার
মাধ্যমে ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ভাষা স্বতন্ত্ররূপ পরিগ্রহ করে। তিনি তাঁর
'বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত' বইয়ে যা বলেছেন যে অনুসারে নিচে বাংলা ভাষার উৎপত্তি
দেখানো হলোঃ
- ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা শতম (৩৫০০)
- শতম - হিন্দ আর্য (২৫০০)
- হিন্দ আর্য ভারতিক (১২০০)
- ভারতিক – প্রাচীন ভারতীয় আর্য
- প্রাচীন ভারতীয় আর্য- আদিম প্রাকৃত (৮০০)
- প্রাচীন প্রাচ্য - গৌড়ী প্রাকৃত
- গৌড়ী প্রাকৃত - গৌড় অপভ্রংশ ৮। গৌড় অপভ্রংশ - বঙ্গ কামরূপী
- বঙ্গ কামরূপী বাংলা
উনিশ শতকে বাংলা ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে কারো কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না। উনিশ
শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে ভাষা সম্পর্কে সূত্র পাওয়া শুরু হয়। বিশ শতকের নবম বছরে
বাংলা ভাষার জন্য উল্লেখযোগ্য সময়। ১৯০৭ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বাংলা ভাষা
সম্পর্কে অন্যতম অবদান রাখেন। তিনি বাংলা ভাষার প্রাচীন দৃষ্ঠান্ত 'চর্যাপদ'
গ্রন্থ আবিষ্কার করে অমর হয়ে আছেন।
আর বাংলা ভাষার ইতিহাস আবিষ্কার সম্পর্কে অবদান রাখেন অনেক। যেমন বিজয়চন্দ্র
মজুমদার, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, সুকুমার সেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড,
মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ইত্যাদি স্থানে বাংলা ভাষার প্রচলন রয়েছে।
এসব অঞ্চলে অনেকেরই মাতৃভাষা বাংলা। তা ছাড়াও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স,
জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা সহ পৃথিবীর বহু দেশেই বাঙালি জনগণ রয়েছে। সেসব স্থানে
বাংলা অনেকের মাতৃভাষা। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি লোকের মাতৃভাষার বাংলা।
মাতৃভাষার দিক থেকে বিশ্বে বাংলা ভাষার স্থান চতুর্থ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url