ভাবসম্প্রসারণঃ পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা করো এই ভাব সম্প্রসারণটি খুঁজছেন? যদি খুঁজে থাকেন তাহলে একজন সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর ভাব সম্প্রসারণটি তুলে ধরেছি।
পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভাবসম্প্রসারণ গুলোর মধ্যে এটিও একটি। প্রিয় পাঠক আপনি যদি ভাব সম্প্রসারণটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর

মূলভাবঃ পাপ পুণ্য মিলেই এ দুনিয়া। পাপ অপবিত্র কিন্তু - পাপী অপবিত্র নয়। কেননা, সে পাপ দ্বারা কলুষিত। তাই পাপীকে নয় বরং পাপকে ঘৃণা করতে হবে।
সম্প্রসারিত ভাবঃ পাপ বলতে আমরা অন্যায় অবিহিত কাজ, অধর্মকে বুঝি। যে অন্যায় কাজ, অধর্মের কাজ করে, তাকে আমরা পাপী বলি। সাধারণভাবে আমরা পাপ ও পাপী উভয়কেই ঘৃণা করি; কিন্তু এটা ঠিক নয়। পাপ অবশ্যই ঘৃণার কাজ, কারও জন্যই তা বাঞ্ছনীয় নয়। পাপের ফলে মানুষের ইহকাল ও পরকাল দু-ই নষ্ট হয়। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। পৃথিবীতে যখন একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হয় তখন সে থাকে নিষ্পাপ। তার বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে চাওয়া-পাওয়ার প্রসার ঘটে। না চাইতেই যে পায় সে হয়ত এ সংঘাতকে এড়াতে পারে। কিন্তু যে শিশু জন্মের পর থেকে বা পরবর্তীতে বিরূপ পরিবেশে বড় হয়, দুঃখকষ্ট, ক্ষুধা আর নির্যাতনের সাথে যার বাস, জীবনের প্রয়োজনে তার পক্ষে সমাজের নিষিদ্ধ পথে, পাপের পঙ্কিল পথে পা বাড়ানো অস্বাভাবিক নয়। বাধ্য হয়েই সে পাপী হয়। কিন্তু জন্মের সময় তো সে পাপী ছিল না। বরং পরিবেশের প্রতিকূলতাই তাকে পাপী করেছে। অনুকূল পরিবেশ পেলে; স্নেহের, ভালোবাসার একটু পরশ পেলে হয়তো বা তার হৃদয়ে সৃষ্টি হতে পারে অনুতাপের অমিয় ধারা। -এ জগতে এমন অনেক উদাহরণ আছে, যাঁরা জীবনের একটি সময়ে অনেক পাপ কাজ করেছেন কিন্তু পরবর্তী জীবনে তাঁরাই মানবকুলের শিরোমণি হিসেবে নিজেদের স্থান নিশ্চিত করেছেন। উদাহরণ হিসেবে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা)-এর কথা বলা যায় যিনি ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (স)-কে হত্যার জন্য উন্মুক্ত তরবারি নিয়ে হযরতের (স) দিকে ছুটে গিয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তী জীবনে তিনি হয়েছেন আদর্শ পুরুষ। তাই পাপীকে ঘৃণা করে সমাজকে কলুষমুক্ত করা সম্ভব নয়। সেজন্যই পবিত্র হাদিসে বলা হয়েছে, "তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো পাপকার্য অনুষ্ঠিত হতে দেখলে সে যেন হাত দিয়ে তাতে বাধা দেয়, নয়তো মুখ দিয়ে তা নিষেধ করে। আর যদি তাও না পারে তবে যেন অন্তত অন্তর দিয়ে সেই পাপকার্যকে ঘৃণা করে।" পাপ তাই সর্বদা বর্জনীয়; কিন্তু পাপীকে বর্জন করা বা ঘৃণা করা ঠিক নয়। কেননা মানুষ অনেক সময়ই পাপ করে নানা কারণে বা অবস্থার বিপাকে পড়ে। ইচ্ছা করে হয়তো সে তা করে নি। অথবা অজ্ঞতার কারণে কিংবা অভাব অনটনে পড়ে বা রিপুর তাড়নায় বাধ্য হয়ে সে পাপ করেছে। অনেকে পরিণাম না বুঝে অনেক কাজ করে যা অত্যন্ত খারাপ, কিন্তু তাদের বুঝিয়ে বললে তখন সে পাপের জন্য তারা অনুশোচনা করে, অনুতপ্ত হয়। এমতাবস্থায় পাপীকে ঘৃণা করা কখনো ঠিক নয়। বরং ক্ষমা করে মহত্ত্ব দিয়ে পাপীকে কাছে টেনে নিলে পাপীও পাপের পথ ছেড়ে সুপথে ফিরে আসে। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স) তাঁর অশেষ ক্ষমাগুণ দিয়ে বহু পাপীকে সৎপথে ফিরিয়ে এনেছিলেন।
মন্তব্যঃ পাপীকে ঘৃণা করা যাবে না। পাপকে ঘৃণা করতে হবে, পাপীকে ক্ষমার মাধ্যমে সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url