একুশের চেতনা রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি একুশের চেতনা রচনাটি খুঁজছেন? যদি খুঁজে
থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের
জন্য একুশের চেতনা রচনাটি উপস্থাপন করেছি।
আশা করি পরীক্ষার ক্ষেত্রে রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি
রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে
সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
রচনার সংকেত সমূহঃ
ভূমিকা
আমাদের জাতীয় জীবনে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। একুশ স্বাধীন
বাংলাদেশের ভিত্তিমূল। একুশ আমাদের ঐকান্তিক উদ্দীপনা, আমাদের প্রেরণার প্রতীক।
মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৯৫২ সালে সালাম,
রফিক, বরকত, জব্বার প্রাণ দেন। ভাষা শহিদদের সেই আত্মত্যাগের চূড়ান্ত ও প্রত্যক্ষ
সুফল বাঙালি অর্জন করেছিল '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে একুশের
তাৎপর্য অপরিসীম।
ভাষা আন্দোলনের পটভূমি
অমর একুশকে অনিবার্য করে তুলেছিল যে ঘটনাপ্রবাহ, তাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথম ভাগ- ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশন। ১৯৪৭-এর ১৪-১৫
আগস্ট দুই ভূখণ্ডে বিভক্ত ধর্মভিত্তিক স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ
ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহর ভাষণ
দান। দ্বিতীয় ভাগ- এরপর থেকে ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
১৯শে মার্চ, '৪৮ জিন্নাহ ঢাকায় এলেন। মোট ৯ দিন তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে
অবস্থান করেন। ২১ মার্চ তিনি রমনা রেসকোর্স ময়দানে নাগরিক সংবর্ধনায় ভাষণ দেন।
পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহম্মদ আলী জিন্নাহ রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা দেন: Urdu
and Urdu shall be the only state language of Pakistan, সঙ্গে সঙ্গে
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত No No বলে প্রতিবাদ করে ওঠেন। এর তিনদিন পরে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পুনরায় তিনি একই কথা জোরের
সঙ্গে ঘোষণা করলে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে।
১৪৪ ধারা ভঙ্গ
২১শে ফেব্রুয়ারি '৫২ সালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার আন্দোলনে যারা অংশগ্রহণ করেন তাদের
মধ্যে নেতৃস্থানীয়রা হলেন, গাজীউল হক, অলি আহাদ, আবদুল মতিন, রফিকুল ইসলাম, আহমদ
রফিক, এম. আর আখতার মুকুল, মুহম্মদ আবুল কাশেম, মেয়েদের মধ্যে সাফিয়া খাতুন
প্রমুখ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত
ছিলেন এবং এ কারণে জেলও খেটেছেন।
২১শে ফেব্রুয়ারি '৫২ সালে সকাল ১০টায় ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় একত্র হয়।
ঠিক হয় ১০ জন করে এক একটি দলে বিভক্ত হয়ে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে
বেরোবে। প্রথমে থাকবে ছাত্রীদল। পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে কাঁদানে গ্যাস ও
লাঠি চার্জ করে। পুলিশ ও ছাত্রদের মধ্যে খণ্ড যুদ্ধ হয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল
কলেজ এলাকায়।
বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে পুলিশ গুলি চালায় মোট দুই দফায়। সরকারি নির্দেশে পুলিশি
বর্বরতার প্রথম বলি আবুল বরকত। ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহিদ। দুপুরে নবাবপুর রোডে
গুলি চলে। এতে হাইকোর্টের কর্মচারী শফিউর রহমান শহিদ হন। এভাবেই ভাষার দাবিতে গড়ে
ওঠা আন্দোলন দাবানলের মতো স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেয় সারাদেশে। পরিশেষে পশ্চিম
পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা
হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
একুশের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ
১৯৫২ সালের একুশের চেতনাকে বক্ষে ধারণ করে বাঙালি জাতির সামনে স্বাধিকার চেতনা,
স্বাধীনতা অনিবার্য হয়ে ওঠে। বস্তুত একুশ বাঙালিকে পাকিস্তানি কুচক্রীমহলের
ষড়যন্ত্রকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ফলে বাঙালি তার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এক
মজবুত ভিত খুঁজে পায়। অবশেষে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এর
চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি ঘটে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
১৯৫৩ সাল থেকে এদেশের মানুষ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। আর ২০০৮ সালের ৫ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ
অধিবেশনে দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং বিশ্বের
১২৪টি দেশ তা সমর্থন করে। এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ইউনেস্কোর ওই ঘোষণা পূর্ণাঙ্গ
রূপ পেল।
সাংস্কৃতিক বিকাশে একুশের চেতনা
আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৫৩ সালে
শহিদ দিবস উদ্যাপন করতে গিয়ে প্রগতিশীল কর্মীরা কালো পতাকা উত্তোলন, নগ্নপায়ে
প্রভাতফেরি ও সমবেত কন্ঠে একুশের গান, শহিদদের কবর ও মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ
ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে। সেই থেকে এসব কর্মসূচি বাঙালির জাতীয় চেতনার
নবজাগরণের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুনীর চৌধুরীর রচিত 'কবর' নাটকটি বাঙালি
সংস্কৃতি-চেতনার উজ্জ্বল স্বাক্ষর বহন করে।
একুশের প্রথম কবিতা রচনা করেন চট্টগ্রামের সীমান্ত পত্রিকার সম্পাদক মাহবুবুল
আলম। 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি' ১৭ পৃষ্ঠাব্যাপী সুদীর্ঘ কবিতা।
কবিতাটি রচিত হয় ২১শে ফেব্রুয়ারি '৫২-র বিকেলে। প্রথম গান রচনা করেছেন গাজীউল হক।
'আমরা ভুলব না, ভুলব না, ভুলব না একুশে ফেব্রুয়ারি, ভুলব না'। ২১শে ফেব্রুয়ারি
প্রভাতফেরিতে গানটিই গাওয়া হতো ৫৩ থেকে ৫৫ সাল পর্যন্ত।
উপসংহার
ভাষা আন্দোলনে শহিদদের রক্ত বৃথা যায়নি। আমরা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা
হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। একুশ আমাদের কন্ঠে ভাষা দিয়েছে, হৃদয়ে দিয়েছে
আবেগ, চেতনায় জাগিয়েছে দৃঢ়তা। একুশ আমাদের জাতীয় প্রতীক। বাংলা ভাষা আজ সমাজের
সর্বস্তরে স্বীকৃত। এ গৌরব সকল বাঙালির। আসুন একুশের চেতনায় এক সম্প্রদায়নিরপেক্ষ
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url