কলা খাওয়ার উপকারিতা - রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে
জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা অনেকেই আছি
যারা কলা খেতে পছন্দ করি কিন্তু কলা খাওয়ার উপকারিতা বা অপকারিতা সম্পর্কে অবগত
নয়।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক হয়ে
থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে কলা খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া
যাক।
সূচিপত্রঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা - রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের দেহের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা আমাদের
শরীরের হাড়কে মজবুত রাখতে সহায়তা করে এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
শুধু তাই নয় কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
পটাশিয়াম যার শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে থাকি।
কলাতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন
রোগের সাথে লড়াই করার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
যারা প্রচুর পরিশ্রম করে তাদের শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে খনিজ পদার্থ বের হয়ে
যায়। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম,
ফলফরাস, সোডিয়াম যা আপনার শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া খনিজ পদার্থ পুনরায় যোগাতে
সাহায্য করে।
যারা কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন তারা পাকা কলা খেতে পারেন কেননা পাকা কলায়
প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকায় এটি কোষ্টকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে।
যাদের শরীরে ক্যালরির পরিমান কম তারা নিয়মিত কলা খেলে ভালো উপকার পাবেন কারন
অন্যান্য ফলের চেয়ে কলাতে বেশি পরিমানে ক্যালরি পাওয়া যায়। এছাড়াও কলাতে উপস্থিত
লেকটিন নামক প্রটিন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ বৃদ্ধি রোধ করে।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
আমরা অনেকেই সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অবগত নয়। সকালে কলা খাওয়ার
বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। আমরা জানি কলা খুবই পুষ্টিকর একটি ফল যাতে আমাদের
শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম,
ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি ভরপুর রয়েছে।কলাই উপস্থিত এ সকল পুষ্টি উপাদান গুলো
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য খুবই উপকারী। সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো
নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- শরীরে শক্তির যোগান দেয়ঃ সকালে কলা খেলে শরীরে শক্তির যোগান দেয় কেননা কলায় উপস্থিত কার্বোহাইড্রেট যার শরীরে দ্রুত শক্তি যোগান দিতে সহায়তা করে। এছাড়াও সকালে কলা খেলে অনেক লম্বা সময় ধরে শরীরে শক্তি বজায় থাকে ক্লান্ত লাগে না। তাই যারা অনেক পরিশ্রম মূলক কাজ করেন তারা সকালের খাবার তালিকায় কলা রাখতে পারেন।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ অনেকেরই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে কলা খেতে পারেন কেননা গলায় উপস্থিত পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকালে কলা খেতে পারেন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের সহায়তা করেঃ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে এর পাশাপাশি পেট পরিষ্কার রাখে। তাই যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যায় ভুগছেন তারা সকালে কলা খেতে পারেন।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই এছাড়াও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফলফরাস, সোডিয়াম ইত্যাদি যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে খুবই উপকারী।
- অবসাদ কমায়ঃ কলা খেলে ভালো ঘুম হয় কেননা গলাতে উপস্থিত ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড মেলাটোনিন হরমোন তৈরি করে। আর মেলাটোনিন হরমোন আমাদের ঘুম আসছে সহায়তা করে তাই কলা খেলে ভালো ঘুম হয় এবং অবসাদ কমে।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক আমরা ইতিমধ্যে সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। তবে আপনি
কি জানেন রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা কি? রাতে কলা খেয়ে ঘুমালে তা ভালো ঘুম
হওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রাতে কলা খাওয়ার
উপকারিতা গুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
কলাতে রয়েছে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড যা মেলাটোনিন এবং সিরোটোনিন হরমোন
তৈরি করে আর এ হরমোন গুলো আমদের অবসাদ দূর করা, মন ভালো রাখা এছাড়াও ভালো ঘুমের
ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই রাতে ঘুমানোর আগে কলা খেলে তা ভালো ঘুম
হওয়ার ক্ষেত্রে উপকারে আসবে।
কলাতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান বিদ্যমান রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে
ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম যা পেশিতে স্বস্থি বা আরাম প্রদান করে থাকে। অনেকেরই
রাতে ঘুমের মধ্যে পেশিতে টান অনুভব করার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। রাতে কলা খেয়ে
ঘুমালে কলাতে উপস্থিত খনিজ উপাদান এ সকল অস্বস্তিকর অনুভূতি থেকে মুক্তি দিবে।
কলাতে আছে প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেইট যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে
সহায়তা করে। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেইট যুক্ত খাবার রাতে ঘুমানোর আগে না খাওয়ায়
ভালো তবে কলাতে যেহেতু প্রাকৃতিক শর্করা বিদ্যমান রয়েছে তা রক্তে শর্করার মাত্রা
নিয়ন্ত্রনে রাখে।
পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা
অনেকে আছে যারা পাকা কলা খেতে পছন্দ করেন। আপনি কি জানেন পাকা কলা খাওয়ার
উপকারিতা কি। আমেরিকার করনেল ইউনিভার্সিটির হিউম্যান ইকোলজির গবেষণায় জানা
গিয়েছে পাকা কলার আছে প্রচুর পরিমানে পুষ্টিগুন। চলুন তাহলে পাকা কলা খাওয়ার
উপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাকঃ
- পাকা কলায় উপস্থিত প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- এমনি কলার থেকে বেশি পরিমাণে পাকা কলায় প্রচুর ট্রিপটোফান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায়। আর এই ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড মেলাটোনিন এবং সিরোটোনিন হরমোন তৈরি করে যা আমদের ভালো ঘুম হওয়ার পাশাপাশি নার্ভাস সিস্টেম কে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
- কলাতে সোডিয়ামের তুলনাই পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকার ফলে এটি রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- পাকা কলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে এছাড়াও হার্ট অ্যাটাক অথবা স্টোক এর ঝুঁকিও কমায়।
- শরীরে রক্ত বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে আয়রন। পাকা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা আপনার রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করবে।
- পাকা কলায় উপস্থিত প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি শরীরে কোষ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- পাকা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর হওয়ার পাশাপাশি হজমে সমস্যা নিরাময় করে।
- পাকা কলা ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। টাকা কলায় উপস্থিত তেমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ গুলোকে ধ্বংস করে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় মেয়েদের খাবারের ক্ষেত্রে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় কেননা অনেক মা
তার গর্ভে থাকা বাচ্চার জন্য দুশ্চিন্তায় থাকেন যে কোন খাবারটি খেলে তার বাচ্চার
কোন প্রকার সমস্যা হবেনা ইত্যাদি। গর্ভাবস্থায় খাবারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের
পরামর্স নেওয়া সবথেকে ভালো। গর্ভাবস্থায় অনেকেই বিভিন্ন ফল খেয়ে থাকে তবে আপনি কি
জানেন গর্ভাবস্থায় কলা খেলে বিভিন্ন উপকার পাবেন। নিচে গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার
উপকারিতা উল্লেখ করা হলোঃ
- কলাতে রয়েছে ভিটামিন বি, যা গর্ভাবতী মহিলাদের মর্নিং সিকনেস দূর করতে সহায়তা করে।
- গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ উঠানামা করে এ সমস্যা এড়াতে কলা খেতে পারেন। কলায় উপস্থিত পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় কমবেশি প্রত্যাক নারীদেরই আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয় আর আয়রনের ঘাটতি দূর করতে কলা খুবই উপকারী কেননা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। তাই গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি এড়াতে নিয়মিত খাবার তালিকায় কলা রাখতে পারেন।
- কলাতে উপস্থিত ভিটামিন বি৬ সহ আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। তাই গর্ভাবস্থায় আপনার খাবার তালিকায় কলা রাখতে পারেন।
প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষন গর্ভাবস্থায় কলা খাবার উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম তাও বলা
বাহুল্য যে গর্ভাবস্থায় কোন কিছু খাওয়ার ক্ষেত্রে শতর্ক অবলম্বন করা জরুরী।
সবথেকে ভালো হয় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলা কেননা গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে কোন
উপাদানের ঘাটতি আছে, কোন উপাদান গ্রহন করলে আপনার উপকার হবে এবং কোন খাবার খাওয়া
আপনার জন্য উত্তম তা একজন বিশেষজ্ঞই ভালো বুঝবে। আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আশাকরি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অন্যদের সাথে
শেয়ার করবেন। আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এমন বিভিন্ন
টপিকে আর্টিকেল পড়তে আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে
আজকের মতো আমি বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url