মহাস্থানগড় সম্পর্কে রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি বাংলাদেশের পুরাকীর্তি অথবা মহাস্থানগড় সম্পর্কে জানেন? যদি না জেনে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কারণ আমরা এই আরটিকাটিতে আপনাদের জন্য মহাস্থানগড় সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য রচনা করে তুলে ধরেছি।
মহাস্থানগড় সম্পর্কে রচনা
আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি মহাস্থানগড় সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

মহাস্থানগড় সম্পর্কে রচনা সংকেত সমূহ

ভূমিকা

একটি দেশের পুরাকীর্তি সেই দেশের চিরায়ত ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। দেশটি কত উন্নত ছিল, তার সংস্কৃতি কত সমৃদ্ধ ছিল সে সম্পর্কে সে দেশের পুরাকীর্তি যে সাক্ষ্য তুলে ধরে; তার ওপর ভিত্তি করে সে দেশের সভ্যতার মান নির্ণীত হয়। এমনি পুরাকীর্তির পরিচয় বহন করে আমাদের দেশের নওগাঁ জেলায় 'পাহাড়পুর' ও বগুড়া জেলার 'মহাস্থানগড়'- যা আজ গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত।

পাহাড়পুরের ইতিবৃত্ত

নওগাঁ জেলায় পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারটি অবস্থিত। এটি নওগাঁর অন্তর্ভুক্ত হলেও জয়পুরহাট জেলার অত্যন্ত কাছাকাছি। পাল বংশের বিখ্যাত রাজা ধর্মপাল খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে বিহারটি নির্মাণ করেন। বিহারটির কাঠামো প্রায় বর্গাকৃতির। এটি উত্তর-দক্ষিণে ৯২২ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৯১৯ ফুট প্রশস্ত। 

দুর্গের মতো উঁচু প্রাচীর ঘেরা সুরক্ষিত এই বিহারে শিষ্যদের থাকার কাজে ব্যবহৃত ১৭৭টি কক্ষের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিহারটির অভ্যন্তরে বর্গাকৃতির চত্তরের প্রায় কেন্দ্রস্থলে ক্রুশাকৃতির ভিত্তির উপর ধাপে ধাপে উঁচু হয়ে ওঠা প্রধান মন্দিরটি উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্য ৩৫৬ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং প্রন্থে পূর্ব-পশ্চিমে ৩১৪ ফুট ৩ ইঞ্চি বিশিষ্ট।

কেন্দ্রীয় মন্দিরের মূল অংশটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও ভূমি থেকে এর বর্তমান উচ্চতা ৭২ ফুট। কাজেই কেন্দ্রীয় মন্দিরের পুরো ভবনটি যখন অক্ষত ছিল তখন তা যথার্থই গগনস্পর্শী ছিল। এছাড়া এর অনন্য নির্মাণ কৌশল আজও মানুষকে আকৃষ্ট করে।

মহাস্থানগড়ের ইতিহাস

প্রাচীনকালে কোনো এক রাজা ছিলেন। তার কোনো রাজ্য ছিল না। তখনকার দিনে বঙ্গ, পুঞ্জ, রাঢ়, গৌড় ইত্যাদি নামে এক একটি খণ্ডরাজ্য গড়ে উঠেছিল। এগুলোই হলো প্রাচীন বাংলার জনপদ। একসময় পুণ্ড্ররাজ্যের রাজধানী ছিল পুণ্ড্রনগর। বগুড়া জেলার সুলতানগঞ্জ এলাকায় ছিল প্রাচীন নগর বগুড়ার মহাস্থানগড়ে পুণ্ড্রনগর।

বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে 'মহাস্থানগড়' অবস্থিত। এটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ হলেও একটি মূল্যবান পুরাকীর্তি এবং দর্শনীয় স্থান। মহাস্থানগড়ের জন্ম ইতিহাস অতি চমৎকার এবং উপভোগ্যও বটে। অতীতে এখানকার এক প্রভাবশালী রাজা ছিলেন পরশুরাম।

তার সময় বলখ দেশ থেকে হজরত সুলতান বলখি ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য উত্তর বাংলায় আসেন। কথায় আছে তিনি ভারতে আসার সময় একটি বিরাট মাছের পিঠে করে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এদেশে আসেন। মাহী অর্থাৎ মাছের পিঠে করে এদেশে আসেন বলে তিনি মাহীসওয়ার নামে পরিচিত।

তিনি পাবনা জেলায় কিছুদিন অবস্থান করার পর কয়েকজন মুসলমান সাগরেদ নিয়ে বগুড়ায় আসেন এবং সুলতানগঞ্জ এলাকায় একটি আস্তানা স্থাপন করেন। আস্তানাটি বগুড়া শহর থেকে ১৬ কিমি দূরে অবস্থিত মহাস্থানগড় নামে ইতিহাসখ্যাত। সবাই এখন তার আস্তানাটি মহাস্থানগড় নামে জানেন। মহাস্থানগড় নিয়ে রয়েছে নানা ঘটনা ও কাহিনি।

চমকপ্রদ ঘটনা

একবার পরশুরামের সঙ্গে মাহীসওয়ারের ভীষণ যুদ্ধ হয়- সে যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন। তাঁর স্ত্রী সম্রাজ্ঞী শিলাদেবী কোনো উপায় না পেয়ে করতোয়া নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মবিসর্জন দেন। আজও সেখানে শিলাদেবীর বিচরণ ঘাটটি 'শিলাদেবীর ঘাট' নামে পরিচিত।

এ ঘাটে প্রতিবছর হিন্দু সম্প্রদায় গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠান পালন করে থাকে এবং মেলা বসে। শিলা দেবির আত্মত্যাগের জন্য এই মহাস্থানগড় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি পবিত্রস্থান এবং মাহীসওয়ারের ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্র বলে এটি মুসলমানদের পবিত্র একটি ধর্মীয় স্থান হিসেবে সমাদৃত। এখন মহাস্থানগড়ে সারা বছরেই বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শকের আগমন ঘটে।

দর্শনীয় বস্তু

সুলতান মাহীসওয়ারের মাজারটি মহাস্থানগড়ের একমাত্র দর্শনীয় এবং সম্মানীয় স্থান। মাজারটি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ২০/২৫ ফুট উঁচু জায়গায় অবস্থিত। মাজারের নিচে রয়েছে প্রধান খাদেম হায়াত নূরের কবর। এর একটু ডানদিকে দরবেশ বোরহান উদ্দীনের সমাধি। তারপর পাথরে বাঁধানো মোট আটত্রিশটি ধাপবিশিষ্ট একটি সিঁড়ি আছে।

মহাস্থানগড় অনেক পুরানো স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান। এখানে বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের বাড়ি। কালিদহ সাগর, বাসোবোনিয়া সওদাগরের ভিটা, গোবিন্দের ভিটা, উজানি ভাইটানি নগর। পরশুরামের ভাঙাবাড়ির ধ্বংসাবশেষ পাথরঘাট ইত্যাদি। অনেক নিদর্শনই এখানে বিদ্যমান রয়েছে।

উপসংহার

পুরাকীর্তিগুলো আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য এবং জাতীয় সম্পদ। এ মহামূল্যবান সম্পদ আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। এজন্য জনগণের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা একান্ত আবশ্যক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url