রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচনাটি খুঁজছেন? যদি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কারন আমরা এই আর্টিকেলটিতে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচনাটি তুলে ধরেছি।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচনা
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। প্রিয় পাঠক আপনি যদি রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে নিচে উল্লেখিত রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালে রংপুর জেলায় পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জহীর মোহাম্মদ আবু আলী সাবের। তিনি প্রভূত ভূসম্পত্তির অধিকারী ছিলেন। পায়রাবন্দ গ্রামে রোকেয়াদের বাড়িটি ছিল বিশাল। তাঁদের বাড়িটি ছিল সাড়ে তিন বিঘা জমির মাঝখানে।

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন যে সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই সময়ে বাঙালি মুসলমান সমাজে শিক্ষার প্রচলন ছিল না। ফলে মুসলমানরা শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরি, সামাজিক প্রতিষ্ঠার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল। মেয়েদের অবস্থান ছিল খুবই শোচনীয়। তখন পর্দাপ্রথার কঠোর শাসনে নারীসমাজ ছিল অবরোধবাসিনী। রোকেয়া পিছিয়ে পড়া সমাজের এই বৃহত্তর অংশকে শিক্ষা ও কর্মের আলোয় আলোকি করতে নিজের জীবনকে নিবেদন করেছিলেন।

রোকেয়ার বড় দুই ভাই কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন। বোনদের আগ্রহ দেখে বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের বোন করিমুন্নেসা ও রোকেয়াকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। করিমুন্নেসার অনুপ্রেরণায় রোকেয়া বাংলা সাহিত্য রচনা ও চর্চায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। রোকেয়া তাঁর রচিত 'মতিচুর' দ্বিতীয় খন্ড বোন করিমুন্নেসাকে উৎসর্গ করেছিলেন।

উৎসর্গপত্রে তিনি লিখেছিলেন, 'আপাজান! আমি শৈশবে তোমারই স্নেহের প্রসাদে বর্ণপরিচয় পড়িতে শিখি। অপর আত্মীয়গণ আমার উর্দু ও ফারসি পড়ায় তত আপত্তি না করিলেও বাঙ্গালা পড়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন। একমাত্র তুমিই আমার বাঙ্গালা পড়ার অনুকূলে ছিলে।' নানা বাধা এড়িয়ে রোকেয়া আপন সাধনায় বাংলায় সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন।

কিশোরী বয়সেই বিহারের ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে ১৮৯৮ সালে রোকেয়ার বিয়ে হয়। স্বামীর সহযোগিতায় তিনি তাঁর পড়াশোনার চর্চা চালিয়ে যান। বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। সেই সঙ্গে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।

বাংলা সাহিত্যে রোকেয়ার আনুষ্ঠানিক পদার্পণ ঘটে ১৯০২ সালে কলকাতার 'নবপ্রভা' পত্রিকায় 'পিপাসা' নামক রচনা প্রকাশের মাধ্যমে। ১৯০৫ সালে প্রথম ইংরেজি রচনা 'সুলতানাজ ড্রিম' মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত হয়। তাঁর রচনা সমাজের বিশিষ্টজনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন ১৯০৯ সালে মারা যান। রোকেয়া ভাগলপুরে তাঁর নামে 'সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল' প্রতিষ্ঠা করেন। তখন স্কুলের ছাত্রী ছিল পাঁচ জন। ১৯১১ সালে এ স্কুলটি তিনি কলকাতায় স্থানান্তর করেন। শুরুতে ছাত্রীসংখ্যা ছিল আট। আস্তে আস্তে স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং স্কুলের প্রশংসা চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

রোকেয়া বাঙালি মুসলমান মেয়েদের শিক্ষিত করার জন্য শুধু স্কুলই প্রতিষ্ঠা করেননি, ঘরে ঘরে গিয় মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর জন্য তাদের বাবা-মায়ের কাছে আবেদন-নিবেদন করেছেন। এ কাজে তিনি ছিলেন একজন নিরসল পরিশ্রমী কর্মী। তাঁর অক্লান্ত প্রচেস্টার ফলে নারীশিক্ষার অগ্রগতি সূচিত হয়। মেয়েরা ধীরে ধীরে শিক্ষার আলোর দিকে এগোতে থাকে। রোকেয়ার নিরলস পরিশ্রমও আলোর মুখ দেখতে থাকে।

১৯১৫ সালে তিনি আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম' নামে একটি মহিলা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে দুস্থ নারীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করা হতো। তাদের হাতের কাজ শেখানো হতো, সামান্য লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থাও ছিল। এক কথায় এই সংগঠনটির লক্ষ্য ছিল সমাজের সাধারণ দুস্থ নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলা। এতে পিছিয়ে পড়া নারীরা আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হতে শুরু করে।

রোকেয়ার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচ। এগুলো হলো- 'মতিচুর' ১ম খন্ড (১৯০৪), 'সুলতানাজ ড্রিম' (১৯০৮), 'মতিচুর' ২য় খন্ড (১৯২২), 'পদ্মরাগ' (১৯২৪) ও 'অবরোধবাসিনী' (১৯৩১) তাঁর উল্লেখযোগ্য দুটি রচনা। প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। হাস্যরস ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাহয্যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থার কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর সকল রচনাই নারীশিক্ষা বিস্তার ও সমাজ সংস্কারের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত।

মেয়েদের জন্য স্কুল স্থাপন করে, দুই, নিজের রচনায় নারীমুক্তির দিকনির্দেশনা দিয়ে। নারীমুক্তির জন্য তার ত্যাগ বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে। বাঙালি নারীসমাজ রোকেয়ার মহান ব্যক্তিত্বের কাছে চিরকৃতজ্ঞ ও শ্রদ্ধাশীল। ১৯৩২ সালের ৯ই ডিসেম্বর রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url