গ্রীষ্মের দুপুর অনুচ্ছেদ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। পরীক্ষার ক্ষেত্রে আমাদেরকে বিভিন্ন প্রকার
অনুচ্ছেদ পড়ার প্রয়োজন হয়। আপনি যদি গ্রীষ্মের দুপুর অনুচ্ছেদটি খুঁজে থাকেন
তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কারণ আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য
গ্রীষ্মের দুপুর অনুচ্ছেদটি তুলে ধরেছি।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ গুলোর মধ্যে এটিও একটি। আশা করি আপনাদের উপকারে
আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি অনুচ্ছেদটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর বৃথা সময়
নষ্ট না করে শুরু করা যাক।
গ্রীষ্মের দুপুর
বাংলাদেশের ঋতুচক্রে গ্রীষ্মের অবস্থান প্রথমে। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ- দুই মাস
গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মের আগমনে বাংলার প্রকৃতি রুক্ষ, বিবর্ণ ও শুষ্ক হয়ে ওঠে।
বছরের প্রথমেই ক্রুদ্ধ দুচোখে প্রখর বহ্নিজ্বালা নিয়ে আবির্ভাব ঘটে এই মহাতাপসের।
নির্দয় নিদাঘ সূর্য কঠিন হাতে ছুড়ে মারে তার নিদারুণ খরতপ্ত অগ্নিবাণ। প্রখর
তাপদাহে জীবদাত্রী ধরিত্রীর বক্ষ বিদীর্ণ হয়ে যায়, চৌচির হয়ে যায় তার তৃষ্ণার্ত
প্রান্তর। সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয় এক ধূসর মরুভূমির ধু-ধু বিস্তার। গ্রীষ্মের
দুপুর মানেই সূর্যের প্রচণ্ড তাপদাহ। খাঁখাঁ রোদ্দুর, তপ্ত বাতাসে আগুনের হলকা।
দিগ্বলয়ে তাকালে পরে তড়িৎসম রোদের ঝিলিক দেখে মাথা ঝিমঝিম করে। গ্রীষ্মের দুপুর
মানেই সবুজ কচি পাতা নেতিয়ে পড়ার দৃশ্য। জলশূন্য পুকুর, মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির।
সর্পিল চিরল চিরল ফাটলের দিকে তাকালে কেমন যেন নেশা ধরে। গ্রীষ্মের দুপুর মানেই
পথের মাঝে ঝাঁক বেঁধে চড়ুই পাখির ধুলোখেলা। চারদিকে নিঝুম, নির্জন, নিস্তব্ধ।
ঘামে দরদর তৃষ্ণার্ত পথিক। সর্বোপরি, রুক্ষ, শুক, নিষ্প্রাণ বৈচিত্র্যহীন নিপাট
দিনের একটি স্থিরচিত্র হলো গ্রীষ্মের দুপুর। গ্রীষ্মের দুপুরে ক্লান্তি আর
অবসন্নতায় নুয়ে পড়ে মানুষের শরীর। ক্লান্ত পথিক বটের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়। সমস্ত
প্রাণিকুল একযোগে ঝিমোতে থাকে। এ সময় সবার পানির চাহিদা বেড়ে যায়। গ্রীষ্মের
দুপুর মানবজীবনেও নিয়ে আসে নিশ্চলতার আমেজ। কর্মব্যস্ত জীবনে আসে অবসাদ। কর্মমুখর
দিনে গ্রীষ্মের দুপুরে সময় কিছুটা ধীরগতিতে অগ্রসর হয়। নিঃশব্দ প্রকৃতি আর নীরব
মানুষের কাছে গ্রীষ্মের দুপুর যেন ছির। বৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিন, কোথাও যেন
স্বস্তি নেই, শান্তি নেই। মাঠ-ঘাট চৌচির, নদী-পুকুর জলশূন্য। মাঠে মাঠে ধুলো ওড়া
বাতাস। আগুনঢালা সূর্য, ঘর্মাক্ত দেহ, ক্লান্তি আর অবসাদে গ্রীষ্মের দুপুর বড্ড
অসহনীয় হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মের দুপুর গ্রামজীবনে নিয়ে আসে বিশ্রামের সুযোগ। কেউ কেউ
নির্জন দুপুরে দিবানিদ্রায় ঢলে পড়ে। গৃহিণীরা সংসারের কাজের একটু অবসরে বিশ্রামের
সুযোগ খোঁজে। তালপাখার বাতাসে একটু প্রাণ জুড়ায়। শীতল পাটিতে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে
দিতে ইচ্ছে হয়। আমবাগানে দুষ্ট ছেলেদের আনাগোনা বেড়ে যায়। রৌদ্রক্লান্ত দুপুরে
গাছের শীতল ছায়ায় নানা গল্পের আসর বসে। বস্তুত বট, জাম, রেইন্ট্রি, প্রভৃতি
পাতাওয়ালা গাছের নিচে বসে প্রচণ্ড খরতাপ থেকে কিছুটা সময়ের জন্য মুক্তি পেতে চায়
শ্রমজীবী মানুষ। কর্ম কোলাহলময় যান্ত্রিক শহরে গ্রীষ্মের দুপুরে ক্লান্ত শ্রমিক
শ্রেণির মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে রিকশাওয়ালা, ফেরিওয়ালা,
ঠেলাওয়ালা ও খুদে দোকানদারদের সীমাহীন কষ্ট হয়। শহরে একে তো বড়ো গাছের অভাব; তাই
দু'দণ্ড জিরিয়ে নেওয়ার সুযোগটুকুও তাদের ভাগ্যে জোটে না। এসময় শহরাঞ্চলে
প্রচণ্ডভাবে খাবার পানির সংকট দেখা দেয়। অবশ্য বিত্তশালীদের কথা আলাদা- বৈদ্যুতিক
পাখার বাতাস এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জীবন সহজেই গ্রীষ্মের দুপুরকে তারা উপেক্ষা
করতে পারে। কিন্তু তারপরেও বিদ্যুতের ঘাটতি ঘটলে এ শহরে এক অসহনীয় পরিবেশের
সৃষ্টি হয়। গ্রীষ্মের দুপুর বাঙালি জীবনযাত্রার ক্লান্তি ও অস্বস্তিকর অবস্থার
নিদর্শন বহন করে। প্রখর তাপ প্রকৃতি ও জনজীবনের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। এই
প্রভাব কেবল বাহ্যিক নয়, অভ্যন্তরীণও। রহস্যময় প্রকৃতির এ যেন এক গোপন আয়োজন।
কখনো কালবৈশাখীর প্রচণ্ড তাণ্ডব সবকিছুকে তছনছ করে ফেলে। অন্যদিকে পাওয়া যায় এক
পশলা বৃষ্টি। গ্রীষ্মের দুপুরে এক পশলা বৃষ্টি জনজীবনে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে
দিয়ে যায়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url