নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। পরীক্ষার ক্ষেত্রে আমাদেরকে বিভিন্ন রচনা পড়ার প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে আপনি যদি নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনাটি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন,
নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা
কেননা এই আর্টিকেলটিতে আমরা আপনাদের জন্য নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনাটি খুব সহজভাবে উপস্থাপন করেছি। রচনার পাশাপাশি আপনারা নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবেন।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ
অথবা, নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ
অথবা, মূল্যবোধ

ভূমিকা: শিক্ষা হচ্ছে মানুষের সার্বিক বিকাশের পথ। প্রকৃতি প্রদত্ত মোনের সর্বোত্তম ব্যবহারে যার দার্তিক বিকাশের পেতত শিক্ষিত। যা নিজের এবং অন্যের কল্যাণে অবদান রাতে বেন্দিকেও অসুন্দরের ভেদ বিবেচনায় সহায়তা করে তাই শিক্ষার মানুষ প্রকৃতি থেকেই প্রথম শিক্ষা গ্রহণ করে। পরে ধীরে ধীরে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও শিক্ষালয় থেকে জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে গড়ে তোলে। শিক্ষা মানুষকে মানবীয় করে, প্রত্যাশার মতো করে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলে।

নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ: যে শিক্ষা মানুষের জীবনবোধের সঙ্গো নৈতিকতার সমন্বয় সাধন করে তাই নৈতিক শিক্ষা নৈতিক মূল্যবোধের জন্ম দেয়। মনুষ্যত্ব অর্জনে মানুষের যে অব্যাহত সাধনা চলছে সেই পথে এগিয়ে নেওয়ার যথার্থ নিয়ামক নৈতিক শিক্ষা। নৈতিক শিক্ষা এমন কিছু বিশেষ গুণাবলি অর্জন যা মানুষকে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত বিচার করার শক্তি দেয়।

অন্যদিকে তা অন্যায়, অনিয়ম, অনুচিত ও মন্দ কাজকে পরিহার করে নৈতিক আদর্শের অনুবর্তী করে তোলে। মানবসমাজ গড়ে ওঠার নেপথ্যে নৈতিক মূল্যবোধের দান অসীম। মানুষের জীবনের যাবতীয় কল্যাণকর, শুভবুদ্ধি ও শুভচিন্তা এবং তার বিপরীত বুদ্ধি ও চিন্তা বিচারের আপেক্ষিক মানদণ্ডই হলো নৈতিক মূল্যবোধ।

নৈতিক মূল্যবোধের গুরুত্ব: নৈতিক মূল্যবোধ হচ্ছে মানুষের জীবনব্যবস্থা ও জীবনপদ্ধতিকে সুন্দরভাবে নির্মলভাবে পরিচালনার অনুসরণযোগ্য কিছু আচরণ। নৈতিকতা মানুষকে অন্যায় ও বন্ধুর পথ থেকে বাঁচায়; আত্মস্বার্থ, লোভ, হিংসা, ভোগ থেকে মুক্ত রাখে; ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করে।

নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ মানুষকে প্রবল আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মানসিক শক্তি এনে দেয়। যার বলে বলীয়ান হয়ে মানুষ যাবতীয় দুর্নীতিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে শেখে; সচেতনভাবে অন্যায় ও অবৈধ পথ পরিহার করতে শেখে; সত্য ও ন্যায়ের আদর্শ অনুসরণ করে; পরের কারণে আত্মস্বার্থ ত্যাগ করে পরহিতে এগিয়ে যায়; সজ্ঞানে কখনোই অন্যের ক্ষতি করে না।

ধর্মের কল্যাণধর্মিতাকে আদর্শ ধরে নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ আলোকিত মানুষ। এ মানুষদের দ্বারাই নিষ্কলুষ আলোকিত সমাজ গড়ে ওঠে। কাজেই মানুষের আত্মিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ একান্ত জরুরি।

নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ: কোনোকালেই একটিমাত্র কারণে নৈতিক অবক্ষয় চূড়ান্ত রূপ লাভ করে নি। বহুবিধ কারণের যোগফলের ভায়ে নৈতিক অবক্ষয় ঘটে ব্যঙ্কের নিদার বিভিন্ন স্তরে মানবতাবোধসম্পন্ন মানসিকতায় গড়ে ওঠার মতো অনুকরণীয় আদর্শ বা পদ্মা পাঠ্যতালিকায় না থাকা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা,

অর্থনৈতিক জীবনে অস্থিতিশীলতা, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরের ব্যবস্থা না থাকা, বেকারত্বের হার অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া, সম্পদের সুষম বণ্টন ও সামানীতি না থাকা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অতিব্যবহার, শিল্প- সংস্কৃতি ও সমাজকর্ম-সাহিত্যের মূলধারা থেকে সরে দাঁড়ানো, গণমাধ্যমে বুচিহীন ও বিকৃত রুচির বিনোদন,

জনজীবনের স্বাভাবিক নিরাপত্তার অনিশ্চয়তা, পারিবারিক ভাঙন, নেশা-জাতীয় দ্রব্যের ব্যাপক ব্যবহার ও সহজলভ্যতা ইত্যাদি কারণে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় নেমে আসে। আর ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতীয় জীবনে একবার নষ্টের ঘুণপোকা ঢুকে গেলে, নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত বের হয় না। বর্তমান সময় এ অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।

নৈতিক অবক্ষয় রোধের উপায়: নৈতিক অবক্ষয় রোধের প্রধান উপায় হচ্ছে নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো। নৈতিক শিক্ষার প্রসারে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতীয় জীবনে সুস্থ ধারা ফিরে আসতে বাধ্য। নৈতিক অবক্ষয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়া। মূল থেকে সরে গিয়ে পাতায় পাতায় ঘুরে বেড়ানো।

ধর্মের প্রকৃত অনুশাসন ও প্রকৃত আদর্শ অনুধাবনের মতো শিক্ষার অভাবও এক্ষেত্রে সহায়ক কারণ। হযরত মুহম্মদ (স), যিশু খ্রিস্ট, গৌতম বৃদ্ধ, শ্রীকৃষ্ণ প্রমুখ ধর্মপ্রবক্তা ন্যায়-নীতি ও মানবিক মূল্যবোধের যে মহান মর্মবাণী মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন, তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো ধর্মেরই অপব্যাখ্যা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।

বিভিন্ন ধর্মের সারবস্তুর সাথে আদর্শ ও নীতির উদ্দেশ্য ও কাজের সাথে পরিচয় ঘটলে শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে উঠবে। মানুষের মানসিক বিকাশে নৈতিকতা ইতিবাচক দিক হিসেবে জায়গা করে নেবে। নৈতিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে সমাজজীবনে ন্যায়-নীতি, মানবিক মূল্যবোধ ও মহৎ আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাইকে আত্মোপলব্ধিতে সত্য ও ন্যায়কর্মের মহাসমাবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

উপসংহার: অন্যায়ের বিষবাষ্পে জাতি আজ মর্মাহত। নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঠেকাতে নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই। ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে সমাজের সর্বস্তরে কেবল দুর্নীতি নয়, মানবদেহে নানা রকম মরণ ব্যাধিও সংক্রমিত হচ্ছে। কাজেই নৈতিকতা বর্জিত শিক্ষা আমাদের জন্য আত্মঘাতী এবং আত্মহত্যার শামিল। সুতরাং প্রত্যেককেই নৈতিকতাবোধে উন্নীত হয়ে সুন্দর আগামী বিনির্মাণে এগিয়ে আসা উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url