কত বড় আমি কহে নকল হীরাটি ভাবসম্প্রসারণ

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি "কত বড় আমি," কহে নকল হীরাটি; তাইতো সন্দেহ করি, "নহ ঠিক খাঁটি।” এই ভাব সম্প্রসারণ কি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন।
কত বড় আমি কহে নকল হীরাটি
কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য এই ভাব সম্প্রসারণটি তুলে ধরেছি। আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে নিচে উল্লেখিত ভাব সম্প্রসারণটি পড়ে নেওয়া যাক।

"কত বড় আমি," কহে নকল হীরাটি;
তাইতো সন্দেহ করি, "নহ ঠিক খাঁটি।”

ভাব-সম্প্রসারণ: মিথ্যার উপর যাদের ভিত গড়া তারা তাদের সে মিথ্যাকে ঢাকতে, নিজেকে বড় বলে প্রকাশ করতে সর্বদা ব্যস্ত থাকে। কিন্তু যাঁরা প্রকৃত জ্ঞানী এবং বিজ্ঞ তাঁরা হন প্রচারবিমুখ। সচেতন ব্যক্তিরা তাই মিথ্যার জাহির দেখে মুখ টিপে হাসেন।

মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বাস করে। মানুষের মাঝে ভালো-খারাপ দু'প্রকারই সমাজে বাস করে। সমাজ বা মানুষের কল্যাণ কামনা করা ভালো মানুষের লক্ষণ। তিনি সবসময় চিন্তা করেন মানুষের শূভ কামনা। অথচ তিনি তা প্রকাশ করতে চান না। তাঁর প্রশংসা মানুষের মুখে প্রকাশ পায়। আর খারাপ লোক সব সময় মানুষের মন্দ, সমাজের মন্দ করার চিন্তাভাবনা করে। আর প্রকাশ করতে থাকে আমি মানুষের সমাজের ভালো কাজ করছি। এটা আসলে ঘৃণিত। সমাজের মাঝে যিনি ভালো কাজ করেন তার প্রকাশ মানুষের মুখে মুখে। খারাপ লোক নিজেকে প্রকাশ করতে উন্মুখ হয়ে থাকে। কীভাবে নিজের কৃতিত্ব প্রকাশ করতে পারবে তার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। যেমন নকল হীরা নিজেকে খাঁটি বলে বেড়ায়। আর এর জন্য খাঁটি হীরা নিজেকে খাঁটি বলতে কুণ্ঠাবোধ করে। কারণ নকল এর অস্তিত্ব আছে। খারাপ আছে বলে ভালোর দাম আছে। মন্দ না থাকলে আমরা ভালোর মর্ম বুঝতে পারতাম না। মন্দের বা খারাপের বড়াইই ভালোর দাম। সত্যিকার ভালো কখনো নিজেকে নিয়ে বড়াই করে না। মানুষ তার গুণগান করে। ভরা কলস যেমন শব্দ করে বাজে না, তেমনি যাঁদের দানে সভ্যতার বিকাশ তাঁরা কখনো তাঁদের মহিমা প্রচার করেন না। আর খালি কলস যেমন বেশি বাজে তেমনি গুণহীন ব্যক্তি নিজের ঢোল নিজে পিটিয়েই হয়রান হয় কেউ তা শোনে না বরং কানে তুলা দিয়ে রাখে দূষণ থেকে বাঁচতে।

একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন

ভাব-সম্প্রসারণ: বস্তুর বাহ্যিক আকৃতিতে অভিভূত না হয়ে তার অভ্যন্তরীণ দিক উপলব্ধিতেই আছে সার্থকতা। আয়তনে বিশাল এবং দেখতে চকচকে হলেই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হওয়া যায় না। যারা প্রকৃত অর্থে বড়ো, তারা নিরহংকার ও বিনয়ী হয়।

আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা সত্যিকার অর্থে খুবই তুচ্ছ, নিকৃষ্ট; কিন্তু অহংকারে অন্ধ হয়ে তারা বাইরে প্রচার করে যে, তারা অনেক বড়ো। শুধু তাই নয়, অনেক সময় হীনমনের এসব মানুষ নকল হীরের মতো আমাদের সমাজের মধ্যমণি হয়ে ওঠে। কিন্তু অন্যকে তুচ্ছজ্ঞান করে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বেশিদুর অগ্রসর হওয়া যায় না। তাদের আত্মপ্রচারের মধ্য দিয়ে তারা যে প্রকৃত ছোটো তা ধরা পড়ে যায়। একদিন তাদের সত্যিকার মুখোশ বেরিয়ে পড়ে। তখন মুখ লুকোবার জায়গা থাকে না। বস্তুত নিজের ঢাক নিজে পিটিয়ে কখনো বড়ো হওয়া যায় না। প্রকৃতই যারা বড়ো তাদের নিজের ক্ষমতা জাহিরের প্রয়োজন হয় না। তাদের সুকীর্তির আলোতেই লোকে তাদের পরিচয় পায়। মানুষের মহত্ত্ব প্রমাণিত হয় তার বিশ্বাস, কাজ, মূল্যবোধ, মন- মানসিকতা ইত্যাদি দিয়ে। আকাশে চাঁদ উঠলে তাকে দেখার জন্য যেমন আলো জ্বালানোর প্রয়োজন হয় না, এমনিতেই দেখা যায়, তদ্রূপ প্রকৃত মহৎ ব্যক্তিদের স্বভাব ও কর্মের গুণে স্বাভাবিকভাবেই চিহ্নিত করা যায়। নিছক বাহ্য আকৃতি কারোর আসল পরিচয় বহন করে না। বিশালকায় ডাইনোসর লাখো বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তার দৈহিক আকৃতি তাকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি। তেমনই হৃদয়ের বিশালতাই মানুষকে বড়ো করে, দেহের বিশালতা কিংবা অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য বা ক্ষমতার প্রাবল্য তাকে একটুও বড়ো করে না।

বস্তুত যাদের কর্মের ভান্ডার শূন্য; নিষ্ঠা, সাধনা ও শ্রমে যারা বিমুখ, মনের দিক থেকে যারা নিকৃষ্ট, চিন্তায় যারা ছোটো তারাই আত্মপ্রচার করে থাকে। প্রকৃত গুণীব্যক্তি কখনোই অহেতুক আত্মপ্রচারের কৌশল অবলম্বন করেন না। যার গুণ আছে তার সুনাম এমনিতেই প্রকাশ পায়। পক্ষান্তরে, মিথ্যা পরিচয়ে যে অহংকার করে, একদিন তার সত্য পরিচয় প্রকাশিত হলে সে লজ্জিত হয়। সমাজের কাছে জড় পদার্থ হিসেবে ধিক্কার পায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url