বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা রচনাটি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য এই রচনাটি তুলে ধরেছি।
বাধ্যতামূলক-প্রাথমিক-শিক্ষা
আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।চলুন তাহলে সময় নষ্ট না করে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা রচনার সংকেত সমূহঃ

ভূমিকা

শিক্ষা প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার। অতএব দেশের প্রতিটি সন্তানকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা, শিক্ষার সমান সুযোগ সৃষ্টি করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। কাজেই উন্নয়নের পূর্ব শর্ত দেশের প্রতিটি নাগরিকের শিক্ষাদান নিশ্চিত করা। আর এই কাজটি সম্পন্ন করতে হলে সরকারকে প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা।

শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীতে যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। উন্নত বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের সাক্ষরতার হার শতকরা ৯৫-১০০ জন। আর আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার শতকরা মাত্র ৬৫ ভাগ। কাজেই এই নিরক্ষর বিরাট জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে না পারলে দেশের উন্নয়ন মোটেই সম্ভব নয়।

শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কহীন জীবন অন্ধ এবং জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন বিদ্যা পঙ্গু। কাজেই প্রতিটি মানুষকে প্রথমে অক্ষরজ্ঞান দান করতে হবে, অতঃপর জীবনমুখী শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যক্তিগত উন্নতি, সামাজিক উন্নতি, জাতীয় উন্নতি- সকল উন্নতির জন্য চাই উপযুক্ত জীবনমুখী শিক্ষা।

প্রতিটি উন্নত ও সভ্য দেশ শিক্ষার মাধ্যমে ধীরে ধীরে উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছে। অন্যদিকে অশিক্ষিত মানুষ নিজের মঙ্গল, দেশের মঙ্গল কোনোটাই বুঝে উঠতে পারে না এবং সুন্দর জীবন ও আদর্শ জীবনের কথা ভাবতেও পারে না। উন্নত বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রেই প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। কাজেই প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক এবং সর্বজনীন করা একান্ত আবশ্যক।

প্রাথমিক শিক্ষার বর্তমান অবস্থা

প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক হলেও শিক্ষার মান এখনো সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত হয়নি। বিদ্যালয়ের সংখ্যাও জনসংখ্যার অনুপাতে অপ্রতুল। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবেশও সর্বত্র অনুকূল নয়। শিক্ষকের অভাব, আসবাবপত্রের অভাব, প্রয়োজনীয় শিক্ষা-সরঞ্জামের অভাবও কম নয়। বিদ্যালয়গুলো পরিচালনার ক্ষেত্রেও কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে।

বস্তুত আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা এখনও নানারকম সমস্যায় জর্জরিত। যার ফলে এখনও অনেক শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। প্রতিবছর ঝরে পড়ে অসংখ্য কোমলমতি শিশু। বিশ্বব্যাংকের এক জরিপ অনুযায়ী এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লক্ষাধিক শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া শিশুশ্রমিকের সংখ্যা তো দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।

দেশের সকল শিশুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনার ব্যবস্থা করা না গেলে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্য পূরণ হবে না। অবশ্য ইতোমধ্যেই সরকার চাকরিরত শিক্ষকগণের চাকরিকে জাতীয়করণ করে যে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা প্রাথমিক শিক্ষাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে সন্দেহ নেই, তবে শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে সরকারকে আরও কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতেই হবে।

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি সফল করার উপায়

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাকে সফল করতে হলে সরকারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে, আরও অধিক আন্তরিক হতে হবে। জনসংখ্যার অনুপাতে আরও নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষার্থী অনুপাতে আরও অনেক শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। সঠিকভাবে স্কুল পরিচালনার জন্য সঠিক নীতি প্রণয়ন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রতিটি স্কুলের জন্য এলাকার সৎ শিক্ষিত ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরিচালনা পরিষদ গঠন করতে হবে। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সৎ হতে হবে। শিক্ষক বেতন ও চাকরির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদানের যে রীতি আছে তা অব্যাহত রাখতে হবে এবং সকল শিক্ষার্থী যাতে সময়মত পুস্তক পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
 
দরিদ্র শিক্ষার্থীদের তালিকা সঠিকভাবে প্রণয়ন করে তাদের খাওয়া পড়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং এসব কর্মকাণ্ড যাতে সততার সঙ্গে পরিচালিত হয় সে দিকে সরকারের কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে। এছাড়াও শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও বেগবান করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকের বিষয়গুলো যাতে শিশু মানসে আনন্দ দিতে সক্ষম হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।

উপসংহার

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাকে সফল করতে হলে উল্লিখিত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি শিশুই যেন প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url