রচনা : নাগরিক অধিকার
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি নাগরিক অধিকার রচনাটি খুঁজে থাকেন তাহলে
একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য নাগরিক
অধিকার রচনাটি তুলে ধরেছি।
আশাকরি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক
হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।চলুন
তাহলে বৃথা সময় নষ্ট না করে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।
নাগরিক অধিকার রচনাটির সংকেত সমূহঃ
ভূমিকা
'নাগরিক' কথাটির অর্থ অতি ব্যাপক। সাধারণভাবে নাগরিক বলতে কোনো নগরের অধিবাসীকে
বোঝায়। কিন্তু বর্তমানে বৃহত্তর অর্থে কোনো রাষ্ট্রের অধিবাসীকে নাগরিক বলা হয়।
গ্রিসের ক্ষুদ্র নগর তথা রাষ্ট্রের অধিবাসী সে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রথম যে
স্বীকৃতি লাভ করেছিল তা বহুকালের বিচিত্র পরিবর্তন ও বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমানে
বৃহত্তর অর্থের পরিধিতে পৌঁছেছে। তাই আজকের দিনে নাগরিক বিশেষ কোনো নগরের অধিবাসী
নয়, শহর, বন্দর, গ্রামগঞ্জ যে যেখানেই থাকুক না কেন সে সেই রাষ্ট্রের নাগরিক
হিসেবে পরিচিত।
নাগরিক
নাগরিকত্ব অর্জনের বিভিন্ন পদ্ধতি বা উপায় আছে। দেশে দেশে সে নিয়মের তারতম্য
রয়েছে। তবে দেশে দেশে নাগরিকত্ব অর্জনের বিভিন্ন রূপ থাকলেও সাধারণভাবে প্রত্যেক
নাগরিকের কিছু না কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। পাশাপাশি দেশ নাগরিকের নিরাপত্তা ও
সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে থাকে।
নাগরিক হিসেবে দেশের প্রতি আমাদের যেসব দায়িত্ব থাকে সেগুলো পালনের মাধ্যমে আমরা
নাগরিকের প্রয়োজনীয় কর্তব্য সম্পাদন করে থাকি। তাই নাগরিক কথাটির সঙ্গে কর্তব্য ও
দায়িত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান।
নাগরিক অধিকার
প্রতিটি রাষ্ট্রের নাগরিকেরই সামাজিক এবং রাজনীতিক অধিকার থাকে। তাছাড়া কতগুলো
মৌলিক অধিকারও নাগরিকেরা ভোগ করে থাকে। যেমন- বাঁচার অধিকার, শিক্ষার অধিকার,
চিকিৎসা লাভের অধিকার; বাসস্থানের অধিকার ও ধর্ম পালনের অধিকার। রাষ্ট্র তার
নাগরিকদের জন্য এসব অধিকার রক্ষার চেষ্টা করে। পক্ষান্তরে, নাগরিকেরও কিছু
দায়িত্ব পালন করতে হয়। তা না হলে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি হতে পারে।
নাগরিকের কর্তব্য
একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকের কর্তব্য অপরিসীম। নাগরিকের প্রধান কর্তব্য হলো
রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। অর্থাৎ রাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলা।
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য
প্রত্যেক নাগরিককে সর্বদা সজাগ এবং ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন এবং সংবিধান মেনে চলা এবং আইনের প্রতি সম্মান দেখানো
নাগরিকদের অন্যতম দায়িত্ব। সততা ও সুবিবেচনার সঙ্গে ভোট দেওয়া নাগরিকের পবিত্র
দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর ফলে যোগ্য ও উপযুক্ত প্রার্থী জনপ্রতিনিধি হিসেবে
নির্বাচিত হবে।
রাষ্ট্রীয় আয়ের প্রধান উৎস নাগরিকদের প্রদেয় কর ও খাজনা, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক,
প্রতিরক্ষা এবং উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদনের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন।
নাগরিকদের যথাসময়ে কর প্রদান করে রাষ্ট্রীয় কাজে সহযোগিতা করতে হবে।
রাষ্ট্রীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা নাগরিকের কর্তব্য। প্রতিটি শিশুই রাষ্ট্রের
নাগরিক। তাই সন্তানদের জীবন রক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রতিষেধক টীকাদান, সুস্থসবল
রাখা এবং নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পাঠানো পিতামাতার দায়িত্ব। এতে করে সন্তান
সুশিক্ষিত সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে অবদান
রাখবে।
প্রত্যেক নাগরিককেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ থাকতে হবে। নিজস্ব সংস্কৃতি, রাষ্ট্রীয়
অর্জন ও সফলতা এবং সবসময় দেশের মঙ্গল কামনা করা নাগরিকদের কর্তব্য। জাতীয় সংগীত,
জাতীয় ইতিহাস, জাতীয় বীর ও মনীষীদের আবেদনকে স্মরণ করতে হবে। প্রত্যেক নাগরিককে
একে অপরকে সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। ভিন্নমতকে মূল্যায়ন করা এবং সম্মান করার
মধ্য দিয়ে জাতীয় সংহতি অর্জন করা সম্ভব।
নাগরিক অধিকারের পাশাপাশি নাগরিকদের কর্তব্য ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত বলে সবার বিশেষভাবে
সচেতন ওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে। দেশের সমৃদ্ধি এবং নাগরিকদের সুখশান্তির নিশ্চয়তা
বিধানে নাগরিকদের যথাযথভাবে কাজ করতে হবে। দেশের সার্বিক কল্যাণে সব শ্রেণির
নাগরিকের দায়িত্ব সচেতন হতে হবে এবং এতেই দেশের প্রকৃত কল্যাণ নিহিত।
রাষ্ট্রীয় কর্তব্য
নাগরিককে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে বিশেষ কতকগুলো কর্তব্য সম্পাদন করতে হয়। নাগরিককে
অবশ্যই দেশের আইনকানুন মেনে চলতে হবে। এছাড়াও নাগরিককে সরকার নির্ধারিত কর নিয়মিত
প্রদান করতে হবে। তাছাড়া নাগরিককে সরকারি প্রয়োজনীয় কাজকর্মে অংশগ্রহণ, দেশের
শান্তি-শৃঙ্খলা বিধানে কাজ করা, দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার প্রয়োজনীয়
উদ্যোগ নিতে হবে।
নাগরিকরা এভাবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করলে দেশ সুখী ও
সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। স্বাধীন দেশের ক্ষেত্রে এ দায়িত্ব ও কর্তব্য ভিন্ন
প্রকৃতির এবং তা জাতীয় জীবনের কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, স্বাধীন দেশের
সমস্যার অন্ত থাকে না এবং তা তার নাগরিকদের সমাধান করতে হয়।
সেজন্য স্বাধীন দেশের নাগরিকদের বেশি পরিমাণ কর্তব্যপরায়ণ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
পরাধীন দেশে শাসকের হাতেই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব থাকে। কিন্তু স্বাধীন দেশে
যেখানে শাসক ও জনগণই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে সেখানে নাগরিকদের অধিকতর
কর্তব্যসচেতন হতে হয়।
উপসংহার
আমাদের দেশে বর্তমানে অগণিত সমস্যা জাতীয় জীবনকে নিপীড়িত করছে। এসব সমস্যা
সমাধানের দায়িত্ব দেশের পরিচালকমণ্ডলীর হাতে ন্যস্ত থাকলেও জনগণ তা থেকে মোটেই
বিচ্ছিন্ন নয়। তাই নাগরিকদেরকে দেশ গঠনমূলক পরিকল্পনা দান করতে হবে এবং তা
বাস্তবায়নের জন্য নিজ নিজ কর্তব্য পালন করতে হবে।
দেশের উন্নতির জন্য শান্তি-শৃঙ্খলার প্রয়োজন। নাগরিকরা যদি কর্তব্য সচেতন হয় তবে
দেশ শৃঙ্খলার মাধ্যমে উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন,
সরকারি আদেশ- নিষেধ অনুসরণ ইত্যাদি যথাযথভাবে পালন করলে দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত
হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url