বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন রচনাটি খুজে থাকেন
তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন, কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে বিদ্যুৎ ও
আধুনিক জীবন রচনাটি তুলে ধরেছি। বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য বিষয় গুলোর মধ্যে
রচনা অন্যতম।
আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক
হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত
পড়ুন। চলুন তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।
বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন রচনার সংকেত সমূহ
ভূমিকা
বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার বিদ্যুৎ আধুনিক প্রযুক্তির ধাত্রী। প্রাচীন যুগে যে
মানুষ আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখে ভয়ে গুহার আড়ালে লুকাত, যুগের বিবর্তনে সেই
মানুষই বিদ্যুৎশক্তিকে করায়ত্ত করে সভ্যতার অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে।
রক্ত যেমন মানুষের দেহাভ্যন্তরে প্রাণ-স্রোতকে গতিময় করে, তেমনি আধুনিক বিশ্ব
বিদ্যুতের কল্যাণেই দুর্বার গতি লাভ করেছে। আজকের পৃথিবীকে যদি একটি প্রাণী
কল্পনা করা হয় তবে বিদ্যুৎ হলো তার চলমান প্রাণশক্তি। বিজ্ঞানের যুগান্তকারী
আবিষ্কার বিদ্যুৎ মানব সভ্যতার সার্বিক বিকাশে এক অত্যাশ্চর্য অনিবার্য শক্তি।
বিদ্যুতের আবিষ্কার
বিদ্যুৎ হলো জলের তীব্র স্রোতের সঞ্চিত শক্তি। ১৮৩১ সালে মাইকেল ফ্যারাডে বিদ্যুৎ
আবিষ্কার করে মানব ইতিহাসে এক বিরল অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। বিজ্ঞানী এ.সি.
ভোল্টার বৈদ্যুতিক সেল এবং হেনরিক হার্জে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ আবিষ্কার করেন।
আলভা এডিসন প্রথম বৈদ্যুতিক বাতির ফিলামেন্ট আবিষ্কার করে বিদ্যুৎ চালিত করে আলো
উৎপাদন করতে সক্ষম হন। জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমাণ করলেন, সমস্ত জড়-জগতকে ঘিরে রয়েছে
অসীম শক্তিধর বিদ্যুৎ। বর্তমানে পেট্রোলিয়াম, সৌরশক্তি থেকেও বিদ্যুৎশক্তি
আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে।
আধুনিক জীবনে বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ ব্যতীত বৈজ্ঞানিক যুগ অচল, বর্তমান জীবন স্থবির, আধুনিক সভ্যতা অন্ধকার।
আধুনিক সভ্যতা বিদ্যুৎশক্তির ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। বিদ্যুৎশক্তিকে
চুম্বকশক্তিতে রূপান্তর করা থেকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, কল-কারখানায়, কৃষিকাজে,
চিকিৎসা কেন্দ্রে, অফিস-আদালতে, ঘরে-বাইরে সর্বত্র বিদ্যুৎ এখন অপরিহার্য।
চিকিৎসাক্ষেত্রে, যোগাযোগ ব্যবস্থায়, শিল্পক্ষেত্রে, বিদ্যুতের অনুপস্থিতি
কল্পনাই করা যায় না। বিদ্যুৎ ছাড়া ইন্টারনেট অস্তিত্বহীন।
দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ মানুষকে দিয়েছে শক্তি, দিয়েছে আলো, দিয়েছে গতি। বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক
জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। বহুতল ভবনে ওঠানামার লিফট এবং পানীয় জল
সরবরাহে বিদ্যুৎ একান্তভাবে দরকার।
বৈদ্যুতিক বাতি, পাখা, বেতার, টেলিভিশন ইত্যাদি চলে বিদ্যুতের সাহায্যে। বিদ্যুৎ
ছাড়া কম্পিউটার অচল। গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, হিটার, কুকার,
ইস্ত্রি, টোস্টার ইত্যাদি ব্যবহারে বিদ্যুতের প্রয়োজন। সার্বক্ষণিক সঙ্গী
মুঠোফোনটি পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যতীত অকার্যকর হয়ে পড়ে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিদ্যুৎ
আধুনিক চিকিৎসা জগৎ বিদ্যুতের অবদানে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে।
আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, এক্স- রে, সিটি স্ক্যান' প্রভৃতি যান্ত্রিক প্রকৌশলে
বিদ্যুতের প্রয়োগ অপরিহার্য। এছাড়া বৈদ্যুতিক রশ্মির সাহায্যে ক্যান্সারের মতো
নানা দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসাও করা হচ্ছে।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ পৃথিবীর দূরত্বকে দূর করে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রামে পরিণত করেছে।
বৈদ্যুতিক ট্রেন, ট্রাম, কনকর্ড বিমানসহ অনেক বাহন বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত হয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দ্রুততর ও সহজতর করেছে বিদ্যুৎ।
টেলিগ্রাম, টেলিফোন, টেলিপ্রিন্টার বিশ্বের তথ্যপ্রবাহকে সচল রেখেছে, যা বিদ্যুৎ
দ্বারা চালিত হয় ।। বিদ্যুৎশক্তির ফলে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ই-মেইল ব্যবহার করে
বিশ্বের এক প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হচ্ছে।
কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুৎ
বৈদ্যুতিক ট্রাক্টর, ধান মাড়াই যন্ত্র, চালের কল ইত্যাদি এখন বিদ্যুৎশক্তি ব্যতীত
অচল। স্পিনিং মিল, গার্মেন্টস, পত্রিকা অফিস প্রভৃতি কল-কারখানার বিদ্যুতের
গুরুত্ব অপরিসীম। বিদ্যুতের কল্যাণেই সারাবিশ্বে শিল্প-বিপ্লবের সূচনা হয়েছে।
শিক্ষা ও বিনোদনে বিদ্যুৎ
বিজ্ঞানের আর্শীবাদে শিক্ষাব্যবস্থায় এসেছে অভূতপূর্ণ বিপ্লব। বৈদ্যুতিক
টাইপরাইটার, কম্পিউটার, ফটোস্ট্যাট মেশিন ইত্যাদি বিদ্যুৎ-নির্ভর যন্ত্রগুলো
শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। লেপটপ, টেলিভিশন, ক্যাসেট প্লেয়ার,
ডিভিডি বিনোদনের নিত্যনৈমিত্তিক বৈদ্যুতিক যন্ত্র। বিদ্যুৎ ছাড়া এসব যন্ত্র থেকে
বিনোদন লাভ করা একেবারেই অসম্ভব।
মুদ্রণ ও অফিসে বিদ্যুৎ
বিদ্যুতের স্পর্শে মুদ্রণযন্ত্র লাভ করেছে অতি গতিময়তা। পাঠ্যপুস্তক, বিনোদনের ও
বিচিত্র জ্ঞানের বই, প্রতিদিনের সংবাদপত্র প্রকাশে মুদ্রণ যন্ত্র অপরিহার্য। আর
সেই মুদ্রণযন্ত্রের প্রাণশক্তি হলো বিদ্যুৎ। আধুনিক যুগে অফিস আদালত পরিচালনায়
বিদ্যুৎ হলো একমাত্র অবলম্ব। আই.পি.এস বা জেনারেটর চালানোর ক্ষেত্রেও
বিদ্যুৎশক্তিকে স্থিতিশক্তি হিসেবে সঞ্চয় করে রাখা হয়।
সভ্যতার বিকাশে বিদ্যুৎ
বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড়ো উপকরণ বিদ্যুৎ বর্তমান সভ্যতার প্রধান চালিকাশক্তি। বিদ্যুৎ
ছাড়া সভ্যতার সমস্ত গতি ও প্রযুক্তি নিমিষে থমকে যাবে। বিজ্ঞানের যে কয়টি উদ্ভাবন
মানুষের জন্য অভাবিত কল্যাণ বয়ে এনেছে বিদ্যুৎ তার মধ্যে নিঃসন্দেহে প্রধান।
বিদ্যুৎ শক্তির বিচিত্র কার্যকারিতার ওপর রচিত হয়েছে আধুনিক সভ্যতার যাবতীয়
উন্নয়নের সুদৃঢ় বুনিয়াদ। বিজ্ঞানের সোনার কাঠি বিদ্যুৎ। মানব-সভ্যতার বিকাশে তার
অসামান্য অবদান অনস্বীকার্য।
উপসংহার
বিদ্যুতের সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয়তা কত প্রবল তার প্রমাণ, মাত্র এক মিনিট বিদ্যুৎ
না থাকলে খোদ আমেরিকায় ক্ষতি হয় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। বিদ্যুৎ মানুষের পরিশ্রমের
ভার লাঘব করেছে, দূরকে করেছে নিকট, আঁধারকে দিয়েছে আলোর মহিমা।
আর উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সাধন করেছে যুগান্তকারী বিপ্লব। অথচ আমাদের দেশে প্রচুর
বিদ্যুৎ সংকট বিদ্যমান। তাছাড়া আমাদের অসচেতনতায় প্রতিদিন অনেক বিদ্যুৎশক্তির
অপচয় ঘটছে। জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে তাকিয়ে বিদ্যুতের যথাযথ ব্যবহার এবং
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক পরিকল্পনা আমাদের গ্রহণ করা উচিত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url