অনুচ্ছেদ কি - অনুচ্ছেদ লেখার নিয়ম

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি অনুচ্ছেদ লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে একদম সঠিক যায়গায় চলে এসেছেন, কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য অনুচ্ছেদ লেখার নিয়ম সহ আরও ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেছি।
অনুচ্ছেদ-লেখার-নিয়ম
আপনি যদি অনুচ্ছেদ লেখার সঠিক নিয়মটি জেনে থাকেন তাহলে যে কোন অনুচ্ছেদই আপনি খুব সহজে লিখে ফেলতে পারবেন এমন কি পরীক্ষা কোন অনুচ্ছেদ কমন না আসলেও আপনি অনুচ্ছেদ লেখার নিয়ম ফলো করে তা খুব সহজেই লিখে ফেলতে পারবেন।

পেজ সূচিপত্রঃ অনুচ্ছেদ কি - অনুচ্ছেদ লেখার নিয়ম

অনুচ্ছেদ কি

অনুচ্ছেদ একটি চিন্তামূলক সাহিত্যকর্ম। এটি গদ্য রচনার সবচেয়ে ক্ষুদ্র সংস্করণ। ইংরেজি 'Paragraph' শব্দের বাংলা পরিভাষা অনুচ্ছেদ। Paragraph এবং অনুচ্ছেদের মধ্যে ভাষাগত প্রভেদ ছাড়া আকার ও প্রকৃতিগত কোনো পার্থক্য নেই। কোনো একটি ভাবকে ধারাবাহিক একগুচ্ছ বাক্যের স্বল্পায়তনের মধ্যে পরিপূর্ণ প্রকাশ করার প্রয়োজনে অনুচ্ছেদ রচনা করা হয়।

অল্প কথায় মনোভাব প্রকাশের সেরা মাধ্যম অনুচ্ছেদ। অপ্রাসঙ্গিক কথা কিংবা বাহুল্য বক্তব্য দিয়ে অনুচ্ছেদকে ভারাক্রান্ত করা যায় না। ছোটোগল্পের মতো অনুচ্ছেদেও বিন্দুর মাঝে সিন্ধুর গভীরতা সৃষ্টি করা যায়। তাই অনুচ্ছেদে উপমাবহুল বা অলংকারপূর্ণ ভাষা বর্জন করা শ্রেয়। পরিমিত বাক্য বিন্যাস ও ভাষার সহজবোধ্য প্রকাশ অনুচ্ছেদকে আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত করে তোলে।

অনুচ্ছেদের প্রথম বাক্যে বক্তব্য বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে পরবর্তী বাক্যসমূহে ধারাবাহিকভাবে এর বিস্তার ও সমাপ্তি সুনিশ্চিত করা আবশ্যক। অনুচ্ছেদের আকার বা পরিধি কত বিস্তৃত হবে এর কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে একের পর এক বাক্য সাজিয়ে বক্তব্য বিষয়টিকে যত স্বল্প আয়তনের মধ্যে শেষ করা যায় ততই ভালো।

অনুচ্ছেদের সংজ্ঞার্থ

কোনো বিষয় অবলম্বন করে ভাব প্রকাশের এক পর্যায়ে ব্যবহৃত ধারাবাহিক একগুচ্ছ বাক্যকে অনুচ্ছেদ বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, একটি ভাব বা বিষয়কে বর্ণনা করে লেখার উদ্দেশ্যে পরস্পর সম্পর্কিত একগুচ্ছ বাক্য বা বাক্য সমষ্টিকে অনুচ্ছেদ বলে।

কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে একক অনুচ্ছেদ রচনা করার ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদের বিষয়ভিত্তিক নামকরণ করা প্রয়োজন। কিন্তু গল্প, প্রবন্ধ প্রভৃতি দীর্ঘ গদ্য রচনার প্রতিটি অনুচ্ছেদের নামকরণ করতে হয় না। সেক্ষেত্রে অনুচ্ছেদের নিম্নোক্ত সংজ্ঞার্থটি প্রণিধানযোগ্য-

কোনো নির্দিষ্ট বিষয়কে শিরোনাম করে সে বিষয়ে পরিপূর্ণ অথচ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রায়তনে যে রচনা চয়ন করা হয় তাকে অনুচ্ছেদ বলে। একটি সার্থক ও মানসম্মত অনুচ্ছেদের আঙ্গিক বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
  • শিরোনাম
  • ধারাবাহিক বিস্তার
  • সূচনাপর্ব
  • সমাপ্তিসূচক বাক্য
উল্লিখিত চারটি বৈশিষ্ট্য সংকেত (point) আকারে লিখতে হয় না। কেননা অনুচ্ছেদ রচনায় সংকেত ব্যবহার করা যায় না।

অনুচ্ছেদ কত প্রকার

বিষয় ও ভাব অনুসারে অনুচ্ছেদকে নিম্নোক্ত তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথাঃ
  • বিবৃতিমূলকঃ যে অনুচ্ছেদে কোনো ঘটনার বর্ণনা উপস্থাপিত হয় তাকে বিবৃতিমূলক অনুচ্ছেদ বলে। যেমন- উৎসব, দুর্ঘটনা, মহৎ লোকের পরিচিতি প্রভৃতি বিবৃতিমূলক অনুচ্ছেদ।
  • বর্ণনামূলকঃ সাধারণত স্থান, কাল, বস্তু, ব্যক্তিগত স্মৃতি বা অনুভূতি প্রভৃতি বিষয়ে রচিত অনুচ্ছেদকে বর্ণনামূলক অনুচ্ছেদ বলা হয়। যেমন- গ্রন্থাগার, কাগজ, বর্ষাকাল, শৈশব স্মৃতি ইত্যাদি বর্ণনামূলক অনুচ্ছেদ।
  • চিন্তামুলকঃ যে অনুচ্ছেদে চিন্তামূলক বিষয়ের বর্ণনা উপস্থাপিত হয় তাকে চিন্তামূলক অনুচ্ছেদ বলে। যেমন- শিষ্টাচার, অধ্যবসায়, সময়ের মূল্য, পরিবেশ দূষণ, গণতন্ত্র প্রভৃতি চিন্তামূলক অনুচ্ছেদ।

অনুচ্ছেদ লেখার নিয়ম

অনুচ্ছেদ লেখার ক্ষেত্রে অনুচ্ছুদ লেখার সঠিক নিয়ম যেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন আপনি যদি অনুচ্ছেদ লেখার সঠিক বিষয়বস্তু গুলো যেনে থাকেন তাহলে যেকোনো অনুচ্ছেদ খুব সহজেই লিখে ফেলতে পারবেন। অনুচ্ছেদ রচনা করার সময় যে সকল বিষয়গুলো অনুসরণ করা আবশ্যক তা নিচে উল্লখ করা হলোঃ
  • অনুচ্ছেদ রচনার সময় প্রদত্ত বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা।
  • বিষয়বস্তু অবলম্বনে ধারাবাহিকভাবে বাক্য সাজিয়ে অনুচ্ছেদের কাঠামো নির্মাণ করা।
  • অনুচ্ছেদের প্রথম বাক্যে বক্তব্য বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা।
  • বক্তব্যের যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা।
  • সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তব্য উপস্থাপন করা।
  • অপ্রাসঙ্গিক কথা, উপমা ও অলংকার ব্যবহার করে বক্তব্যকে দুর্বোধ্য না করা।
  • দীর্ঘ বাক্য পরিহার করে ছোটো ছোটো বাক্যে বিষয়বস্তুকে ফুটিয়ে তোলা।
  • একই অনুচ্ছেদে সাধু ও চলিত রীতির ভাষা ব্যবহার না করা।
  • অনুচ্ছেদকে অযথা দীর্ঘ না করে স্বল্পায়তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা।
  • বিষয়বস্তু অনুসরণে সূচনা, বক্তব্যের বিস্তৃতি, উপসংহার প্রভৃতির সমন্বয়ে অনুচ্ছেদে পূর্ণতা আনয়ন করা।

অনুচ্ছেদ রচনার প্রয়োজনীয়তা

সাধারণত মননশীল ও সৃজনশীল রচনার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো অনুচ্ছেদ। অনুচ্ছেদের ক্ষুদ্র পরিসরে ভাব, ভাষা ও বিষয়ের বিস্তৃতি ঘটে। তাই রচয়িতার দায়িত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্প কথায় একটি সম্পূর্ণ ভাবার্থকে প্রকাশ করতে গিয়ে লেখকের দক্ষতা থাকতে হয়। স্বল্প কথায় পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে বলে অনুচ্ছেদ একটি উৎকৃষ্ট শিল্পকর্ম।

সমকালীন, চলমান, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিক্ষা, সমস্যা প্রভৃতি বিচিত্র বিষয়কে লেখকের চিন্তাশীলতা ও সৃজনশীলতা দিয়ে সার্থকরূপে প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরি। সুন্দরভাবে গুছিয়ে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ রচনার বাস্তব ধারণা থাকা একান্ত প্রয়োজন।

যেকোনো বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ রচনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে কাজটি সহজ হয়ে যায়। অনুচ্ছেদে মূল কথাগুলো আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপিত করা হয় বলে সবার মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ হয়। তাই সার্থক অনুচ্ছেদ রচনা করার জন্য অনুচ্ছেদ রচনার কৌশল রপ্ত করা একান্ত প্রয়োজন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url