প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি প্রতিবেদন লেখার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে না
জেনে থাকেন তাহলে একদম সঠিক যায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলটিতে প্রতিবেদন
লেখার নিয়ম ও উদাহরণ বিস্তারিত তুলে ধরেছি।
আশাকরি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ জানতে
আমদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ
প্রতিবেদন কাকে বলে
'প্রতিবেদন' শব্দের আক্ষরিক অর্থ 'বিবরণী'। কিন্তু 'বিবরণী' বললে 'প্রতিবেদন'
কথাটির মর্মার্থ বোঝায় না। কারণ, 'প্রতিবেদন' ইতোমধ্যে বিশেষ প্রর্তীতি হিসেবে
গৃহীত হয়েছে, সেখানে সংযুক্ত বিশেষ শৃঙ্খলা। তাই বলা যায়, 'প্রতিবেদন হলো কোনো
অনুষ্ঠান, ঘটমান ঘটনা কিংবা নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা পক্ষ
সমীপে যথানিয়মে গদ্যে লিখিত বিবরণ।
প্রতিবেদনের ইংরেজি প্রতিশব্দ Report। তবে ইংরেজি রিপোর্টের অর্থের চেয়ে
প্রতিবেদন আরো ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। রিপোট অর্থ কোনো ঘটনার হুবহু বর্ণনা।
কিন্তু প্রতিবেদনের দ্বারা কোনো ঘটনার অনুসন্ধানী পর্যবেক্ষণমূলক বিবৃতিকে বোঝায়।
সুতরাং প্রতিবেদন বলতে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের
ভিত্তিতে সে বিষয়ের ওপর কর্তৃপক্ষের জ্ঞাতব্য প্রস্তুতকৃত বিবরণীকে বোঝায়। তথ্য,
ঘটনা, সমস্যা সম্পর্কে অবহিতকরণ ও সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিত প্রদানও প্রতিবেদনের
লক্ষ্য।
প্রতিবেদন রচনাকারীকে বলা হয় প্রতিবেদক। আর প্রতিবেদক যা রচনা করেন তাই
প্রতিবেদন। প্রতিবেদন রচনাকারীকে বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত থাকতে হয়। সংশ্লিষ্ট
বিষয়ে প্রতিবেদকের যথাযথ জ্ঞান না থাকলে প্রতিবেদনের সীমাবদ্ধতা রয়ে যায়।
অধ্যাপক মাইক হ্যাচের মতে, 'প্রতিবেদন হলো একটি সুসংগঠিত তথ্যগত বিবৃতি যা কোনো
বক্তব্য সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত অথচ সঠিক বর্ণনাবিশেষ। একে যথেষ্ট সতর্কতা পর্যবেক্ষণ
পর্যালোচনা, গবেষণা ও বিচার বিশ্লেষণের পর তৈরি করা হয়।'
বিশেষ দ্রষ্টব্য: দাপ্তরিক বা অফিসিয়াল পত্রে 'জনাব' ব্যবহার করা অনুচিত। জনাব
হলো ইংরেজি 'গৎ, পরিভাষা। লেখা উচিত মহোদয়। কারণ, মহোদয় হলো 'Sir'-এর পরিভাষা।
মহোদয়-এর স্ত্রীবাচক মহোদয় ভুল নয়। তবে সাম্প্রতিক বিবেচনায় মহোদয়া না লিখে মহোদয়
লেখাই শ্রেয়।
প্রতিবেদন কয় প্রকার ও কী কী
প্রতিবেদন তৈরি হয় নানা ঘটনা, দুর্ঘটনা, অনুষ্ঠান ইত্যাদি ওপর নির্ভর করে।
প্রতিবেদক (Report) বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করেন। দুর্ঘটনার তদন্ত করে
প্রতিবেদন হতে পারে। অফিসের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন হতে পারে। কোনো সভা, আলোচনা,
অনুষ্ঠান শেষ তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন লেখা হতে পারে। সাধারণত সংবাদপত্রে
প্রতিবেদন ছাপা হয়।
সেখানে যে ব্যক্তি নিয়মিত প্রতিবেদন তৈরি করেন তাকে নিয়মিত প্রতিবেদক বলা হয়।
আবার কোনো ঘটনা উপলক্ষ্যে হঠাৎ করেই কেউ কোনো প্রতিবেদন তৈরি করলে তাকে সাময়িক
প্রতিবেদক বলা হয়। কোনো অফিস, কোম্পানি বা যে-কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব
অফিসিয়াল প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেন।
সার্বিক ভাবে বিবেচনা করে প্রতিবেদনকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়:
ক. সংবাদ প্রতিবেদন
খ. ক্ষেত্রসমীক্ষা বা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
গ. দাপ্তরিক বা অফিসিয়াল প্রতিবেদন
ঘ. সাধারণ প্রতিবেদণ
- সংবাদ প্রতিবেদন: সংবাদ সংস্থা বা সংবাদপত্রের নিজস্ব প্রতিবেদক এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করেন এবং তা তিনি সংবাদপত্রে পাঠান।
- ক্ষেত্রসমীক্ষা বা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন: এই ধরনের প্রতিবেদন সাধারণত সমস্যা ও উন্নয়নমূলক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সমাজতাত্ত্বিক অর্থনৈতিক গবেষণার প্রতিবেদনগুলো এই শ্রেণিভুক্ত। এই ধরনের প্রতিবেদনে পরিসংখ্যানমূলক বা গাণিতিক তথ্য পরিবেশন করা হয়।
- দাপ্তরিক বা অফিসিয়াল প্রতিবেদন: সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করে। হিসাব-নিকাশ, উন্নয়ন, দুর্নীতি, বেতন কাঠামো ইত্যাদি বিষয়ে কমিটি গঠিত হয়, সেই কমিটি তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে। এক্ষেত্রে অবশ্য সময় বেধে দেওয়া হয়। কমিটির সদস্য সংখ্যা ও নাম ঘোষণা করা হয়। হত্যা, দুর্ঘটনা নিয়ে পুলিশ যে প্রতিবেদন তৈরি করে, সেগুলো তদন্ত প্রতিবেদন বলা হলেও তা আসলে অফিসিয়াল প্রতিবেদন।
- সাধারণ প্রতিবেদন: সাধারণ প্রতিবেদনের সীমানা অনেক বিস্তৃত। ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে নানাভাবে প্রতিবেদন তৈরি হয়, সেগুলো সাধারণ প্রতিবেদন। স্কুলে বা কলেজের অনুষ্ঠানে উদ্যাপন নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি হয়, এগুলো সাধারণ প্রতিবেদন।
প্রতিবেদন লেখার উদ্দেশ্য কি
প্রতিবেদনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কোনো বিষয় সম্যকভাবে বা সবার গোচরভুক্ত করা।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশের জনগণকে অবহিত এবং রেকর্ড রাখাও এর লক্ষ্য। প্রতিবেদন লেখা
হলে বা সংবাদপত্রে ছাপা হলে যারা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নন বা বিষয়ের সাথে
সংশ্লিষ্ট নন, তারাও ঘটনা ও বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন। এক ধরনের নাগরিক সচেতনতা
এর মাধ্যমে তৈরি হয়। প্রতিবেদনের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো ঘটনার বা সত্য উদঘাটন বা
সত্যের কাছাকাছি পৌঁছে তা লিপিবদ্ধ করা।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ
একটি আদর্শ প্রতিবেদনের তিনটি অংশ থাকে। যেমন-
ক. প্রারম্ভিক অংশ
খ. মূল অংশ
গ. পরিশিষ্ট অংশ
প্রারম্ভিক বা সূচনা অংশে থাকে প্রতিবেদনের বিষয় সর্ম্পকে ভূমিকা, সূচিপত্র ও
আলোচনার সংক্ষিপ্ত পূর্বাভাস। অপরদিকে, প্রতিবেদনের মূল অংশে বা প্রধান অংশে থাকে
বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পর্যালোচনাসহ সুপারিশ ও উপসংহারমূলক বিবৃতি।
পরিশিষ্ট অংশ বা শেষ অংশে থাকে তথ্যসূত্র, গ্রন্থতালিকা, বা তথ্য নির্দেশ। একটি
ভালো প্রতিবেদন রচনার জন্য প্রতিবেদক নিম্নলিখিত কৌশল অবলম্বন করতে পারেন:
- প্রতিবেদন অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ, তথ্যবহুল ও স্পষ্ট হতে হবে।
- প্রতিবেদক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করবেন।
- প্রতিবেদক একাধিক সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সত্য বস্তুনিষ্ঠ ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পরিবশেন করবেন।
- কোনো সমস্যার দৃশ্যপট বা চিত্র ভিত্তিক অথবা স্থিরচিত্র ক্যামেরার সাহায্যে গ্রহণ ও ব্যবহার করবেন।
- প্রতিবেদককে প্রত্যক্ষদর্শী হতে হবে।
- এছাড়াও তথ্য বা উপাত্ত বর্ণনামূলক বা সাংকেতিক উভয় প্রকার হতে পারে। তবে সাধারণত বর্ণনামূলক প্রতিবেদনের চেয়ে সাংকেতিক বা গাণিতিক পদ্ধতিতে তথ্য উপস্থাপন বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে প্রতিবেদক সংখ্যা সারণী বা পাইচার্ট ইত্যাদি পদ্ধতি বা কৌশল অবলম্বন করতে পারেন।
- প্রতিবেদক সেকেন্ডারি তথ্য যত কম গ্রহণ করবেন, প্রতিবেদনের মান ততো ভালো বা বস্তুনিষ্ঠ হবে। এজন্য মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কোনো বিকল্প নেই।
- প্রতিবেদনে সিদ্ধান্তে উপনীতে হওয়া এবং উত্তরণের জন্য প্রতিবেদকের সুচিন্তিত সুপারিশমালা উপস্থাপন করা প্রয়োজন।
সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
- প্রতিবেদন আকর্ষণীয় একটি শিরোনাম (Head Line/Heading) প্রয়োজন। কিন্তু তা হবে সংহত ও আকর্ষণীয়। 'বাংলাদেশ বিমান ক্রিকেট দলকে আবাহনী ক্রীড়াচক্র পরাজিত করেছে'-এই শিরোনামে বিষয়বস্তু ও অর্থ স্পষ্ট। কিন্তু এই শিরোনাম আকর্ষণীয় নয়। যদি লেখা হয়: 'বিমানকে ভূপাতিত করলো আবাহনী' তাহলে সেখানে যেমন অর্থ অক্ষুণ্ণ থাকে, তেমনি তা আকর্ষণীয়ও হয়। কারণ ভাবতে হবে, এই প্রতিবেদন ছাপা হবে 'খেলার পাতা'য়। এখানে 'বিমান' অর্থ 'বিমান ক্রিকেট দল'ই বোঝাবে। শিরোনাম লিখতে হবে সাধারণ হাতের লেখা থেকে প্রায় দ্বিগুণ বড় করে।
- প্রয়োজন হলে প্রাসঙ্গিক উপ-শিরোনাম (Sub-Head Line/Heading) থাকতে পারে। উপ-শিরোনামে প্রতিবেদনের বিষয়ের সার অংশ অসম্পূর্ণ বাক্যে লেখা হয়।
- প্রতিবেদনের সূচনাতে 'নিজস্ব প্রতিবেদক' বা 'নিজস্ব প্রতিনিধি' কথা লিখতে হবে। প্রতিবেদনের তারিখ দেওয়া যেতে পারে।
- প্রতিবেদকের পরিচয় প্রদান প্রতিবেদনের নিচে করতে হবে। ডাকযোগে প্রেরিত প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনের নিচে প্রতিবেদকের রাবার স্টাম্প লাগিয়ে স্বাক্ষর ও তারিখ প্রদান করলেই চলে। বৈদ্যুতিন ডাক বা বৈ-ডাক বা ই-মেইলে পাঠানো প্রতিবেদনের নিচে প্রতিবেদকের স্বাক্ষর (স্ক্যান করে) না দিলেও চলে। কারণ প্রতিবেদক নিজের ই-মেইল আইডি থেকেই প্রতিবেদন প্রেরণ করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে প্রতিবেদক নিজের নাম ও তারিখ প্রদান করবেন।
ক্ষেত্রসমীক্ষা বা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
- আয়তনে বড় হয়। কারণ বিস্তৃত বিষয় এর পরিধি। যেমন: সুন্দরবনের পরিবেশ বিপর্যয় বা সংবাদপত্রে বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ।
- একটি শিরোনাম মূলে থাকবে। তবে প্রতিবেদনের মধ্যে একাধিক উপ-শিরোনাম থাকতে হবে।
- পরিসংখ্যান ব্যবহারের জন্য ছক তৈরি করা যেতে পারে।
- স্থানীয়দের বা বিশেষজ্ঞদের মতামত সংযুক্ত হতে পারে।
- প্রতিবেদকের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ অবশ্যই থাকতে হবে।
- এ ধরনের প্রতিবেদন পৃথক পুস্তিকাকারে বাঁধাই সমেত উপস্থাপন করতে হয় বিধায় কভার পৃষ্ঠায় প্রতিবেদনের শিরোনাম, প্রতিবেদকের উপস্থাপনা-প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা এবং উপস্থাপনের মাস ও বছর নাম-ঠিকানা, (নির্দিষ্ট তারিখের, প্রয়োজন নেই) উল্লেখ করতে হয়। প্রতিবেদকের যদি কোনো নির্দেশক থাকেন, এই পৃষ্ঠায় তাঁরও নাম থাকবে।
- মূল প্রতিবেদনের পূর্বে নির্দেশক (যদি থাকেন) এবং প্রতিবেদকের সংক্ষিপ্ত 'পূর্বকথা' সংযুক্ত হতে পারে।
দাপ্তরিক বা অফিসিয়াল প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
- যেহেতু এ ধরনের প্রতিবেদন সাধারণত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা নিয়োগদানকারী দ্বারা আদিষ্ট হয়ে লিখিত হয় সেহেতু এ প্রতিবেদনের ওপর একটি ছোট উপস্থাপনপত্র সংযুক্ত করতে হবে। এই পত্রে বরাবর, স্মারকসূত্র, বিষয় লিখতে হবে। পত্রের শেষে থাকবে প্রতিবেদক উপস্থাপকের নাম ও পরিচয়।
- মূল প্রতিবেদনের একটি শিরোনাম থাকবে। তবে তা একটু বড় লিপি বা হস্তাক্ষরে উপস্থাপিত হবে।
- মূল প্রতিবেদনের অভ্যন্তরে কিছু পয়েন্ট উপস্থাপিত হতে পারে। তার উপ-শিরোনামও থাকতে পারে।
- প্রয়োজন হলে সাক্ষীর জবানবন্দিও সংযুক্ত হতে পারে।
- সুপারিশ সংযুক্ত করতে হবে।
- প্রতিবেদনের নিচে প্রতিবেদকের অনুস্বাক্ষর বা কমিটি প্রধানের অনুস্বাক্ষর থাকবে।
সাধারণ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
- এটি যেহেতু অনেকটা স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবেদন সেহেত, এর গঠনগত বাধ্যবাধকতা তেমন নেই। তবে শিরোনাম অবশ্যই থাকবে।
- আয়তন বা অনুচ্ছেদের কোনো বেঁধে দেওয়া সীমা নেই।
- সংবাদপত্রে প্রকাশ; জেলা প্রশাসক বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ ইত্যাদি জন্য হলে একটি উপস্থাপনপত্র সংযুক্ত করতে হবে। সেখানে স্মারকসূত্রের প্রয়োজন নেই। বিষয় উল্লেখ করা যেতেপারে। প্রতিবেদকের নাম ও পরিচয় স্পষ্ট করে সে পত্রে জানাতে হবে।
প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য
- আগে চাই পরিকল্পনা: প্রতিবেদন তৈরির আগে প্রতিবেদককে অবশ্যই ভাবতে হবে যে, তিনি কীভাবে প্রতিবেদন লিখবেন। মূল অংশে কী কী তথ্য থাকবে, কোনটার পর কোনটা হবে, দ্রুত ভেবে নিতে হবে।
- সংহত: প্রতিবেদনে অপ্রয়োজনীয় কথা লেখা উচিত নয়। অর্থাৎ প্রতিবেদন হবে সংহত।
- নিরপেক্ষতা বজায়: প্রতিবেদন লেখার আগে কারো প্রতি বা কোনো গোষ্ঠীর প্রতি পূর্বনির্ধারিত কোনো ধারণা বা সিন্ধান্ত যেন না থাকে। নিরপেক্ষতা বাজায় রাখতে হবে। প্রতিবেদককে থাকতে হবে নৈর্ব্যত্তিক ও আবেগমুক্ত। মনে রাখা দরকার, প্রতিবেদক কোনো নীতিবিদও নন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যও নন, বিচারকও নন। তার কাজ হচ্ছে ব্যক্তি-নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সংবাদ পরিবেশন করা।
- পর্যাপ্ত তথ্য: প্রতিবেদন যেন পর্যাপ্ত তথ্যসমৃদ্ধ হয়, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। প্রতিবেদক কোথায় গিয়ে কী কী দেখলেন, কী কী শুনলেন, কী কী বুঝলেন, কেন এটি হলো, এ সম্পর্কে তার মূল্যায়ন কী, সুপারিশই বা কী কী-তা সব লিখতে হবে।
- বাহুল্য বর্জন: তথ্য দিয়ে গিয়ে প্রতিবদেন যাতে তথ্যভারে জর্জরিত না হয়ে পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অপ্রয়োজনীয়, অপ্রাসঙ্গিক ও ব্যক্তিগত কথা বাদ দিতে হবে।
- ভাষা হবে সহজ: সরল অথচ শিল্পগুণসমৃদ্ধ প্রতিবেদনের ভাষা হবে সহজবোধ্য এবং সরল ও স্পষ্ট। ভাষা যেন দুর্বোধ্য, অস্পষ্ট, স্ববিরোধী, বহুদিক-জ্ঞাপক না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। বানান, বিরামচিহ্ন ইত্যাদি যেন ব্যাকরণসম্মত হয়। যে কেউ পড়ে সহজেই তা বুঝতে পারে। দুর্বোধ্য বা দ্ব্যর্থবোধক শব্দ প্রতিবেদনে ব্যবহার করা উচিত নয়।
- তুন প্রসঙ্গে নতুন পরিচ্ছেদ: ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন অনচ্ছেদে সাজাতে হবে। এক অনুচ্ছেদে সবকিছু না সাজানোই ভালো। প্রতিবেকের পর্যবেক্ষণ এবং সুপারিশ একাধিক হওয়াটাই স্বাভাবিক।
- উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ: প্রতিবেদন তৈরি করার সময় প্রতিবেদক তার লক্ষ্যে কখনো যেন ভুলে না যান। অর্থাৎ অসঙ্গতিপূর্ণ প্রতিবেদন কখনোই কাম্য নয়।
প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা
প্রতিবেদন একটি স্থায়ী ও প্রামাণ্য দলিল। এজন্য প্রশাসনিক কার্যক্রম,
ব্যবসায়-বাণিজ্য, আইন-আদালত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিবেদনের বিশেষ গুরুত্ব ও
প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বিবরণকেই আগে প্রতিবেদন বলা হতো,
কিন্তু আধুনিককালের নানা ধরনের জটিলতার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদনের
গুরুত্ব বেড়েছে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও এর উপযোগিতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে খুঁটিনাটি তথ্য অবগত হওয়া যায় এবং তার প্রেক্ষিতে কোনো বিষয়
সম্পর্কে সঠিক সিন্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। কোনো সংগঠনের কার্যক্রম বাস্তবায়নের
ক্ষেত্রে প্রতিবেদন অত্যন্ত উপকারী। এর মাধ্যমে কোনো বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ,
সংগঠন, নিদের্শনা, ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণ, নীতি নির্ধারণ, ফলাফল নিরূপণ, সমন্বয়
সাধন ইত্যাদি সহজ হয়। বলিষ্ঠ যোগাযোগ মাধ্যমে হিসেবেও প্রতিবেদন অনন্য ভূমিকা
রাখে। বিরোধপূর্ণ এবং জটিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পতিবেদন অত্যন্ত
ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে।
সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নমুনা
নমুনা: সংবাদ প্রতিবেদন
শহরে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদন।
কামালপুরে চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য
নিজস্ব প্রতিবেদক: ৭ জুলাই, ২০২৪
চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের হাতে কামালপুরবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছে। এদের দাপটে মানুষের
প্রতিটি প্রহর কাটে আতঙ্কের মধ্যে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও চাঁদাবাজরা
সাম্প্রতিক বাসাবাড়িতে গিয়েও হানা দিচ্ছে। গতকাল সকাল দশটা থেকে এগারটা পর্যন্ত
ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রকাশ করে কিছু সময়
দোকানপাট বন্ধ রাখে। ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, শহর জুড়ে গড়ে উঠেছে
চাঁদাবাজদের বিশাল চক্র। নগরের পাড়া-মহল্লার বখাটে তরুণরা জড়িয়ে পড়েছে এদের
সঙ্গে। এদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নগরবসী অতিষ্ঠ। প্রাণহারানো
আশঙ্কায় চাঁদাবাজদের দাবি মেটাতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এদের প্রধান
টার্গেট। সন্ত্রাসীরা চাঁদা চেয়ে না পাওয়ায় অগ্রদূত জয়েলার্স নামের একটি দোকানে
বোমা নিক্ষেপ করে।
দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতারা গতকাল রাতে স্থানীয়
মাননীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে এক বৈঠকে
মিলিত হন। সভায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা বিধানের
আশ্বাস দেওয়া হয়।
চাঁদাবাজদের শিকার এমন কয়েজন এ প্রতিনিধিকে জানান, চাঁদাবাজরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
ছাড়াও বাড়িতে গিয়ে অথবা টেলিফোনের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করছে। চাহিদা
মোতাবেক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তারা জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে। এক ব্যবসায়ী তার জীবন
রক্ষার জন্য চাঁদাবাজদের গোপনে অর্থ প্রদান করলেও প্রকাশ্যে তা স্বীকার করছে না।
চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তথা প্রভাবশালী মহলের ছাত্রছায়ায়
থেকে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় এদের দাপট এতই বেড়ে গেছে যে মানুষ
ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার কারণে সাধারণ ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে মুখ
খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
কয়েক মাস আগে শহরের বেশ ক'জন ব্যবসায়ীকে এরা চিঠি দিয়ে চাঁদা দাবি করে বলে
স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ভুক্তভোগীরা চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী
দমনে পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলেছেন। এই মহলের মতে, সরকার, রাজনৈতিক
নেতৃত্ব ও পুলিশ শক্ত অবস্থান নিলে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস দমন করা সময়ের ব্যাপার
মাত্র।
শেষকথা
আমদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আশাকরি আর্টিকেলটি
আপনাদের উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অন্যদেরকে শেয়ার করুন। যদি কোন মতামত
থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আমি বিদায় নিচ্ছি।
আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url