ভাষণ লেখার নিয়ম জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি ভাষণ দেওয়া অথবা ভাষণ লেখার নিয়ম না যেনে থাকেন তাহলে একদম সঠিক যায়গায় চলে এসেছেন। আমাদের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা ভাষণ কাকে বলে, ভাষণ কত প্রকার, ভাষণ লেখার নিয়ম ইত্যাদি বিষয়ে জানতে পারবেন।
ভাষণ-লেখার-নিয়ম
আশাকরি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক ভাষণ লেখার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ ভাষণ লেখার নিয়ম জেনে নিন

ভাষণ কাকে বলে

ভাষণ বাশিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সাধারণত নানা আয়োজনে, সভা-সমিতি বা আলোচনায় ভাষণ প্রদান করতে হয়। ভাষণে আলোচ্য বিষয় সম্বন্ধে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা, মতামত উপস্থাপিত হয় এবং উপস্থাপনের ভাষা অবশ্যই মাধুর্যময় ও সাবলীল হতে হয়। ভাষণকে বক্তৃতা, অভিভাষণ, প্রতিভাষণ, বিবৃতি প্রভৃতি নামে আখ্যায়িত করা যায়।

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বক্তৃতা কিংবা ভাষণকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে আসছে। স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে যে ভাষণ প্রদান করেছেন তার জন্য তিনি আজও খ্যাত। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন শুধু অসাধারণ বাগ্মিতার জন্য পৃথিবীর সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অসাধারণ বক্তা হিসেবে বাঙালির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

ভাষণের গুরুত্ব

একটি বিষয়কে শ্রোতা-দর্শকের কাছে বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য ভাষণের গুরুত্ব যথেষ্ট।সাধারণ কোনো বিষয়, কোনো ব্যবস্থা, কোনো পদক্ষেপের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে কিংবা কোনো বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে ভাষণ কার্যকর ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ একটি বলিষ্ঠ জনমত গঠনে ভাষণের অপরিহার্যতা রয়েছে। তাই দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত ভাষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভাষণের উপাদান

ভাষণের প্রধান উপাদান তিনটি। যথা:
  1. বক্তা
  2. শ্রোতা/দর্শক
  3. আলোচ্য বিষয়
ভাষণের মূল উদ্দেশ্যকে জনসম্মুখে উপস্থাপনের জন্য প্রথম প্রয়োজন বক্তা। তবে বক্তাকে যুক্তিসহকারে এবং হৃদয়গ্রাহী ভাষায় বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে। আবার বক্তার প্রয়োজনেই শ্রোতার আবশ্যকতা রয়েছে। ভাষণে শ্রোতা/দর্শকের প্রয়োজন অপরিসীম। কেননা যাদের উদ্দেশে বক্তব্য নিবেদিত হবে তাদের উপস্থিতি একান্ত দরকার। অন্যদিকে, আলোচ্য বিষয় সম্বন্ধে বক্তার স্পষ্ট ধারণা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তও জানা অত্যাবশ্যক।

ভাষণ কত প্রকার

ভাষণ সাধারণত দুই প্রকার। যথা:
  1. মুখস্থ ভাষণ বা প্রস্তুতকৃত ভাষণ বা লিখিত ভাষণ
  2. তাৎক্ষণিক ভাষণ বা অলিখিত ভাষণ।
পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে বক্তা জনসম্মুখে লিখিত ভাষণ প্রদান করেন। অন্যদিকে কোনো ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে দর্শক/শ্রোতার উদ্দেশে বক্তব্য প্রদানকে তাৎক্ষণিক ভাষণ বলে। লিখিত ভাষণে বিষয়টি সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট ভাবনা এবং সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করা যায়। অন্যদিকে, তাৎক্ষণিক ভাষণে প্রয়োজনীয় অনেক বিষয়ের উপস্থাপন না-ও হতে পার। তাৎক্ষণিক ভাষণে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ও মুখ্য হতে পারে, তাই বক্তব্য দীর্ঘও হতে পারে।

ভাষণ লেখার নিয়ম

একটি সার্থক ভাষণের চারটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব রয়েছে। যথা:
  1. সম্ভাষণ
  2. সূচনা বা প্রস্তাবনা
  3. মূল বক্তব্য
  4. উপসংহার
  • সম্ভাষণ: বক্তাকে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মর্যাদা অনুযায়ী সম্ভাষণের পর্ব শেষ করেই বক্তব্যে আসতে হয়। এটিই সম্ভাষণ। সেজন্য ভাষণে সম্ভাষণ একটি আকর্ষণীয় বিষয়ও বটে। সম্ভাষণে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, কোনো মান্য ব্যক্তি, সভাপতিকে তাঁদের মর্যাদা অনুযায়ী সম্ভাষণ করা শ্রেয়। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সম্ভাষণকে আকর্ষণীয় করা যায়। অনেকের ধারণা প্রথমে সভার সভাপতিকে সম্ভাষণ করতে হবে তারপর প্রধান অতিথিসহ অন্যান্যদের। কিন্তু এটি কোনো ধরাবাঁধা নিয়মের বিষয় নয়; বরং শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সম্ভাষণই মূলকথা। সম্ভাষণ পর্ব শেষ হলেই ভাষণের সূচনা পর্বে প্রবেশ করতে হয়। অবশ্য ইদানীং ভাষণে প্রথম সূচনা পর্বে প্রবেশ করে সম্ভাষণ পর্বে আসা যায়।
  • সূচনা বা প্রস্তাবনা: সাধারণত বক্তা তার মূল বক্তব্যে প্রবেশ করার আগেই এখানে বিষয়টি সম্বন্ধে স্বল্প পরিসরে উপস্থাপন করে। যার রেশ ক্রমান্বয়ে বক্তব্যে সঞ্চালিত হয়ে থাকে। তাই সূচনা পর্বটি অবশ্যই আকর্ষণীয় ও বস্তুনিষ্ঠ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
  • মূল বক্তব্য: মূল বক্তব্যে ভাষণের সারকথা থাকে। সুতরাং মূল বক্তব্যটিকে যথাসাধ্য আকর্ষণীয় করতে হয়। চিন্তা-চেতনাপ্রসূত জ্ঞানের বিস্তার বক্তব্যে গাম্ভীর্য ভাব আনে, তবে তা সহজ-সরল ভাষায় উপস্থাপিত হওয়াই উত্তম। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো উপস্থিত দর্শক-শ্রোতার মন-মেজাজ, শিক্ষাদীক্ষা ও রুচিবোধকে প্রাধান্য দিয়ে বক্তাকে তার মূল বিষয়ের অবতারণা করতে হয়। মূল বক্তব্যে কোনো মনীষীর উদ্ধৃতি নির্ভুলভাবে প্রয়োগ করতে হয়। কোনোভাবেই কোনো ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করা উচিত নয়। এতে বক্তব্যের মান ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে বক্তব্যের বিষয় যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত হওয়াই শ্রেয় এবং শ্রোতার ধৈর্যচ্যুতির আগেই বক্তব্যের সমাপ্তি টানা উচিত।
  • উপসংহার: ভাষণের সমাপ্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মূল বক্তব্যের সঙ্গে সংগতি রক্ষা করে ভাষণের সমাপ্তি টানতে হয়।

ভাষণের পরিধি

বেতার-টেলিভিশনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ভাষণের মূল বিষয়কে তুলে ধরতে হয়। অন্যদিকে, সভা-সমাবেশে এবং সেমিনারে দীর্ঘক্ষণ ভাষণ দানের সুযোগ রয়েছে। তবে পরীক্ষার খাতায় ভাষণের আকার-আয়তন সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের নম্বর ও সময়ের প্রতি লক্ষ রেখেই তৈরি করতে হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url