দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রচনাটি খুজছেন?
যদি খুজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক যায়গায় চলে এসেছেন। কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে
আপনাদের জন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রচনা তুলে ধরেছি।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। আশাকরি রচনাটি আপনাদের
উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি এই রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে এই
আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রচনা পড়ে নেওয়া যাক।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রচনার সংকেতঃ
ভূমিকা
আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি আজ আর কোনো 'বিশেষ সংবাদ' নয়।
প্রতিবছর বা প্রতিমাসে তো বটেই, প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দর বেড়ে চলেছে। ফলে জনজীবন
হচ্ছে দুঃখ ও ভোগান্তির শিকার। ক্রমাগত পণ্যমূল্য-বৃদ্ধি জনজীবনে অসন্তোষ, ক্রোধ
ও বিদ্বেষ পুঞ্জীভূত করে।
বর্তমান সমাজজীবনে ধর্মঘট, আন্দোলন এগুলোর পেছনে
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিধ্বাংসী অভাব ও দরিদ্রতাই দায়ী। আর দরিদ্রতার মূলে
রয়েছে পণ্যমূলোর বৃদ্ধি। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আজ আমাদের সামাজিক, জাতীয় ও
অর্থনৈতিক জীবনে এক বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চিত্র ও জনজীবনে দুর্ভোগ
দ্রব্যমূল্যের অভিঘাতে পড়েছে দেশের অতি দরিদ্র, হতদরিদ্র, নিম্ন ও নিম্নমধ্যম
আয়ের মানুষ। ২০১৭-১৮ সালে চালসহ বেশকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা ও পণ্যের মূল্য
বৃদ্ধি পাওয়ায় ভার। এই অভিগাতের শিকার হয়েছেন। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়
অত্যধিক হারে বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ দেশের সার্বিক
উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ পর্যবেক্ষণ কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব
বাংলাদেশ (ক্যাব)।
ক্যাব-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে সর ধরনের চালের গড় মূল্য বেড়েছে
২০ দশমিক ৪০ শতাংশ। তুলনামূলক বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি
দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ দশমিক ৯৯ শতাংশ ও আমদানিকৃত
পেঁয়াজে ৫৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এছাড়া এই সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার
বেশিরভাগেরই দাম বেড়েছে। খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে মানুষ অনেকে কষ্টে আছেন।
তাদের জমানো সঞ্চয় হ্রাস পাচ্ছে।
ক্যাবের সভাপতি বলেন, দেশে এখনো প্রায় দুই কোটি মানুষ স্মৃতি দরিদ্র। এছাড়া বেশির
ভাগ জনসংখ্যা হতদরিদ্র, নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষ। পণ্য ও সেবার মূল্য
বৃদ্ধিতে এসব মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব আরো বেশি হারে পড়েছে। এতে ধনী- দরিদ্রের
বৈষম্য বাড়াচ্ছে। মানুষের মাঝে হতাশা আর অসন্তোষ বাড়ছে। দেশে অর্থনৈতিক অনেক
উন্নতি হচ্ছে।
কিন্তু মানুষের। অর্থনৈতিক উন্নয়নের আশানুরূপ সুফল এখনো পায়নি। এর সুফল সাধারণ
মানুষের কাছে পৌঁছাতে সরকারকে অবশ্যই কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার ব্যয়
সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গত এক বছরে শাকসবজির গড়ে
দাম বেড়েছে ২৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। তরল দুধে বেড়েছে ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ, গরুর মাংস ১৯
দশমিক ৭২ শতাংশ।
ভোজ্যতেলে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ, চা-পাতায় বেড়েছে ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ। সেবা খাতে ২
বার্নার গ্যাসের চুলায় গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ২৩ দশমিক ০৮ শতাংশ, আবাসিক খাতে
বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ, বাণিজ্যিক খাতে বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৮
শতাংশ। আবার কিছু পণ্যের দাম কমেছে। যদিও স্বাস্থ্য খাতে সেবার মান ছিল আগের মতোই
প্রশ্নবিদ্ধ ও ব্যয়বহুল। সরকারি হাসপাতালে রোগীর বাড়তি চাপ ও অব্যবস্থাপনা
অব্যাহত আছে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ
আমাদের এই দরিদ্র দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির কারণ ও সূত্র
নানাবিধ। তবে উৎপাদন অব্যভাষাই চাহিদা মের কারণ এতে কোনো সন্দেহ নেই। দ্রব্যমূল্য
বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ হলো চাহিদার তুলনায় জোপানের অভাব। যেখানে বিশাল সমুদ্রের
ন্যায়। জিনিসের জন্য অগণিত ক্রেতার তার ভিড় সেখানে কূপ খনন করে পানি সরবরাহ চলে
না।
ফলে সীমাবদ্ধ এবং পরিণামে মূল্যবৃদ্ধি ও জিনিস সপ্তাহের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা।
এ সমস্যা সমাধানের জনা প্রয়োজন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি। প্রয়োজন
চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সম্পতি-বিধান। কেউ কেউ বলেছেন, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব
বাংলাদেশ (টিসিবি) সক্রিয় না থাকায় বাজারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে না।
টিসিবি ছাড়াও নবাই দশকের আগে পর্যন্ত দেশে বাজার দর সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ ও
দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দেল কার্যকর ছিল। পরে
মুক্তবাজার অর্থনীতির জন্য এটি বিলুপ্ত করা হয়। বস্তুত, মজুতদারেরাই নিজেদের
লাভের জন্য জিনিসপত্রের দাম চড়িয়ে দেয় এবং তাদের দেখাদেখি সকল ব্যবসায়ীরা বেশি
মুনাফার পথ বেছে নেয়।
বাজারে চলে মুনাফা অর্জনের প্রতিযোগিতা ও মূল্য বৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেট গঠন। ফলে
বাজার কখনোই স্থিতিশীল থাকে না। এ পর্যন্ত দাম বৃদ্ধির ট্রেন্ড অব্যাহত আছে।
কিন্তু বাজারের উপর কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বরং, ব্যবসায়ীরা বাজেট, খরা-বন্যা,
হরতাল, ধর্মঘট, পূজাপার্বণ, ইদ উৎসব, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য মূল্যের বৃদ্ধির
অজুহাতে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।
এ যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে সরকার আমদানি শুল্ক কমানোসহ
অন্যান্য সুবিধা দিলেও ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমায় নি। একই সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংক ও
আইএমএফের পরামর্শে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও পরিবহনের মতো সেবা সার্ভিসের মূল্য
দফায় দফায় বেড়ে যাওয়ায় দেশের ক্রেতা-ভোক্তা সাধারণ আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়ে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্য কারণগুলো
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মুনাফালোভী
মজুদদারি, মুদ্রাস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, পণ্যের ওপর কর আরোপ ইত্যাদি
প্রধান। নিচে প্রধান কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলোঃ
১। সাধারণত পণ্যের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সমন্বয় না হলে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়।
এরূপ পরিস্থিতিতে কিছু মুনাফালোভী মজুদদার পণ্য গোডাউনজাত করে রেখে দেয়, ফলে
পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়।
২। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে পণ্য উৎপাদনের জন্য
প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাবে স্বাভাবিকভাবে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়।
৩। বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে অনেক সময় দেশের এক
অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় পণ্যের
উৎপাদন-স্থল থেকে চাহিদা অঞ্চলে পণ্য পৌছানো সম্ভব হয় না। ফলে সরবরাহের
স্বল্পতাহেতু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়।
৪। অনেক সময় সরকারি নিয়ন্ত্রণের শিথিলতার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের মজুদ
বৃদ্ধি করে। ফলে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম ঘাটতিজনিত কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।
৫। মাঝে মাঝে দেখা যায় দেশের অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার অতিরিক্ত মুদ্রা
বাজারে ছাড়ে। ফলে সম্পদের তুলনায় টাকার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি
হয়। এরূপ অবস্থার দ্রব্যমূল লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পায়।
৬। অনেক সময় হরতাল, অবরোধ প্রভৃতি কর্মসূচি এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে
কলকারখানার উৎপাদন ব্যাহত
৭। আবার রাজস্ব বাজেটে করারোপিত পণ্যের আমদানি খরচ বেশি হয় বলে স্বাভাবিকভাবেই ঐ
সমাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। পণ্যের ওপর যে শুদ্ধভার আরোপ করা হয়, তা
প্রকারান্তরে জনসাধারণকেই বহন করতে হয়। পরিকল্পিত অর্থনীতি রূপায়ণ করতে গেলেই
দ্রব্যমূল্য অনিবার্যভাবে বৃদ্ধি পায়। তার ওপর বর্তমানে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ
হ্রাস পেয়েছে।
কর-পীড়ন বেড়েছে। তাই তাই প্রতি বছরই দেখা যায়, কর-প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সঙ্গে
সঙ্গেই দ্রুত হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটে। অসাধু ব্যবসায়ীরা আগে থাকতেই
প্রয়োজনীয় পণ্য অদৃশ্য করে দিয়ে এর পুরোপুরি সুযোগ নেয়। প্রতি বছরই তাই বাজেটের
সময় সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়।
সরকারি হাসপাতালে, বিশেষ করে মফস্বল এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি,
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ লোকবলের অভাব, প্রাইভেট হাসপাতালের দালালের প্রকোপ
ইত্যাদি কারণে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা হতে ভোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। দরিদ্রদের মধ্যে
স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য স্বাস্থ্যকার্ড ব্যবস্থা চালু এবং স্বাস্থ্য
খাতকে রাজনীতি ও দুর্ণীতিমুক্ত রাখা। অপরিহার্য।
এছাড়া হৃদরোগ ও হার্টের চিকিৎসায় ব্যবহৃত টেস্টের মূল্য নির্ধারণ সরকারের একটি
প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে জনস্বার্থে ডাক্তারদের ফিসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষার
মূল্য নির্ধারণ, ওষুধের মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও
ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে সুলভে মানসম্মত চিকিৎসা ও সেবা প্রদান নিশ্চিত করার উদ্যোগ
গ্রহণ করা হলে ভোক্তারা উপকৃত হবে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক বা পরিণাম
বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে জনগণের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি থাকে না। ফলে
জনজীবনে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় এবং দুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির
ফলে মুষ্টিমেয় বিত্তবান ছাড়া অধিকাংশ মানুষ নিদারুণ সমস্যায় পড়ে। সংখ্যাগরিষ্ঠ
ভাগ্যহত মানুষকে দ্রব্যের বাড়তি মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে গিয়ে
ব্যয়সংকোচন নীতি অবলম্বন করতে হয়। এমনকি তাদের সংসারের অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের
প্রয়োজনীয় ব্যয়ের খাতও উপেক্ষা করতে হয়।
এতে সংসারে দুঃখ-দুর্দশা বৃদ্ধি পায়। শোচনীয় অভাব আর দুঃসহ দারিদ্র্যের কশাঘাতে
মানুষ হয় মরিয়া। সমাজের বুকে সঞ্চারিত হয় বিক্ষোভের উত্তাপ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির
সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় সুযোগসন্ধানী অসাধু ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারি আঙুল ফুলে
কলাগাছ হয়ে ওঠে এবং সমাজে নানা অবক্ষয়ের উদ্ভব ঘটে। সর্বোপরি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
জনজীবনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনজীবন আজ সংকটের সম্মুখীন। এগুলোর
মধ্যে অর্থনৈতিক বিপর্যয়, দুর্ভিক্ষ ও মুহামারি প্রধান। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ
অভাবের তীব্রতা ও শোচনীয় দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত। তারা দারিদ্র্যের কশাঘাত
থেকে মুক্তি পেতে কখনো ধর্মঘট করে আবার কখনো বা বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলনে নামে।
তাদের আন্দোলনের মুখে সরকার সামান্য বেতন বৃদ্ধি করলেও মূল্যবৃদ্ধির দুর্বার ও
আগ্রাসী শরির সঙ্গে তারা সামঞ্জস্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। সীমাবন্ধ ক্র্যাশক্তি
নিয়ে পণ্যের বাজারে সাধারণ মানুষ আজ কোনঠাসা, দিশেহারা, উদ্ভ্রান্ত। দিনের পর
দিন সাধারণ মানুষ আজ তলিয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিক দুর্গতির অতলে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধের উপায়
নানা কারণে আজও আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বেড়েই চলছে। এর সূত্র
ব্যাপক, কারণ নানাবিধ। কিন্তু প্রশ্ন হলো এ দরিদ্র দেশটির অবস্থার পরিবর্তন কি
নেই। তাই দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে,
'অভাব শুধু নাই মানুষের-
চাহিদা নাই মানুষগুলোর।/ কেবলই তার পড়ছে বাজার।'
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আমাদের সামাজিক, জাতীয় ও অর্থনৈতিক জীবনে এক দুষ্ট রাছু। তাই
যথাশীঘ্র এই রাহু থেকে মুক্তির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এই উদ্দেশ্যে
বাজারে চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্যের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। কল-
কারখানার উৎপাদন নিয়মিত করার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি প্রক্রিয়ায়
যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
হরতাল, অবরোধ ইত্যাদিতেও কলকারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখতে হবে। পণ্যের
ঘাটতি দেখা দিলে সরকারি ভান্ডার থেকে পণ্যের জোগান দিয়ে বাজার দাম স্থিতিশীল
রাখতে হবে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য মজুদদারি ও কালোবাজারি দূর করতে
হবে। মুদ্রাস্ফীতি যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। অসাধু ও ফটকা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে
আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সর্বোপরি সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে এবং
কেউ যেন হঠকারী সিদ্ধান্ত দিয়ে দ্রব্যের মূল্যকে প্রভাবিত করতে না পারে সেদিকে
লক্ষ রাখতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে, আইন ও
বিচার-ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শুধু কথার কামান দাগালে বা বক্তৃতার ফুলঝুরি
ফোটালেই চলবে না। তবে, শুধু সরকারের একার পক্ষে এর সমাধান দেয়া কঠিনতর ব্যাপার।
সরকারের পাশাপাশি সচেতন জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের
নৈতিকতা বিরোধী কার্যক্রম পরিহারই এই সমস্যার আশু সমাধান দিতে পারে। সরকার
বর্তমানে পণ্যের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং করার জন্য টিসিবিকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
পাশাপাশি এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে স্পর্শকাতর পণ্যের খুচরা ও পাইকারি মূল্যের
তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপসংহার
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আমাদের একটি জাতীয় সমস্যা। এতে দেশের অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে
পড়ে এবং বাজার ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তাই একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের
জন্য দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি প্রতিরোধকল্পে আমাদের সকলকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে
হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url