বাংলাদেশের পাখি রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি বাংলাদেশের পাখি রচনাটি খুজছেন? যদি খুজে
থাকেন তাহলে একদম সঠিক যায়গায় চলে এসেছেন। কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের
জন্য বাংলাদেশের পাখি রচনা তুলে ধরেছি।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। আশাকরি রচনাটি আপনাদের
উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি এই রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে এই
আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে বাংলাদেশের পাখি রচনা পড়ে নেওয়া যাক।
বাংলাদেশের পাখি রচনার সংকেত সমূহঃ
ভূমিকা
অপূর্ব রূপবৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আবহমানকাল থেকেই ধানের দেশ, গানের
দেশ, পাখপাখালির দেশ। রুনা-শালিক-বউ-কথা-কও কল-কূজন যেন এক স্বপ্নলোকের ইন্দ্রজাল
রচনা করে দেয়। এখানে পাখির ডাকে সকালে মানুষের ঘুম ভাঙে। পাখির গানে মানুষের মন
বিমোহিত হয় এদেশের গাছে গাছে, ঝোপে-ঝাড়ে, বনে-জঙ্গলে, মাঠে-ঘাটে, নদী-নালায়, খাল,
বিল-হাওড়ে বহু বিচিত্র পাখির মেলা। পাখির দেশ বাংলাদেশ। কত বিচিত্র আকৃতি
প্রকৃতি, কত রং ও সূর এদের পাখায় আর গলায়।
পাখির প্রকারভেদ
বাংলাদেশে রয়েছে ৬২৮ প্রজাতির পাখি। উপমহাদেশের বৃহত্তম পাখি সারস। বাংলাদেশে
কদাচিৎ দেখা যায়। সাধারণভাবে পাখিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা : লোকালয়ের
পাখি, শিকারি পাখি এবং জলাভূমির পাখি। আবার পাখিকে দেশি পাখি ও অতিথি পাখি-এ দুটো
ভাগেও ভাগ করা চলে। দেশি পাখি আবার দুইরকম গৃহপালিত ও বনের পাখি। এছাড়া রয়েছে-
খাঁচার পাখি, শিকারি পাখি এবং নিশাচর পাখি।
লোকালয়ের পাখি
সাধারণত লোকালয়ের পাখি বলতে আমাদের চারপাশের পরিবেশে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় এবং
লোকালয়ে বাস করে এমন পাখি বোঝায়। এর মধ্যে গৃহপালিত পাখিও পড়ে। গৃহপালিত পাখি
বলতে সাধারণত পোষা পাখিকে বোঝায়। এদেশে পোষা পাখিদের মধ্যে হাঁস, মুরগি, কবুতর
প্রধান। গৃহপালিত পাখির ডিম ও মাংস খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
লোকালয়ের অন্যান্য পাখির মধ্যে রয়েছে দোয়েল, কাক, কোকিল, টুনটুনি, নীলটুনি,
বুলবুলি, ময়ূর, ময়না, টিয়া, খঞ্জনা, চন্দা, শ্যামা, শালিক, চড়ুই, বাবুই,
হুপহুপ, বাঘাটিকি, সাতভাই, সুইচোরা, ফুলঝুরি, নীলকণ্ঠ, চোখ গেলো, ফিঙে, ঘুঘু,হলদে
পাখি, কাঠঠোকরা, ছোটো বসন্ত বাউরি, ছোটো মাছরাঙা, লাল সাতসাইলি ইত্যাদি
উল্লেখযোগ্য।
সিকারি পাখি
অন্য প্রাণী, বিশেষত মেরুদণ্ডী প্রাণী শিকার করে খায় এমন পাখিকে শিকারি পাখি বলে।
এদের বোধশক্তি অভান্ত তীক্ষ্ণ এবং ঠোঁট ও নখর খুব ধারালো ও মজবুত। শিকারি
পাখিগুলোকে দুটো ভাগে ভাগ করা হয়- দিবাচর ও নিশাচর।
ঈগল জাতীয় পাখি যেমন: সাদা ঈগল, মাছ মুরাল, সাদা চোখ বাজার্ড, কুড়া, বাজ, ধলা
চিল, শঙ্খচিল, ভুবন চিল, তুর্কিবাজ, সারা চিল, কেস্ট্রেল, রাখাল ভুলানি, অসপ্রে
প্রধান। এগুলো সবই দিবাচর শিকারি পাখি। নিশাচর শিকারি পাখি হলো প্যাচা: হুতোম
প্যাঁচা, লক্ষ্মী প্যাঁচা, খুরুলে প্যাঁচা ইত্যাদি। শিকারি পাখি মাংসাশী।
জলাভূমির পাখি
জলাভূমির পাখির মধ্যে মাছরাঙা, বক, পানকৌড়ি, গয়ার, মদন টাক, কোড়া, ডাহুক ইত্যাদি
উল্লেখযোগ্য। এরা জলাভূমিতে বাস করে। বিচিত্র রঙের এসব পাখি আমাদের মন কেড়ে নেয়।
নিচে বাংলাদেশের পরিচিত পাখিগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলো:
কাক ও কোকিল
কাক দেখতে কালো ও কুৎসিত পাখি। এর কণ্ঠস্বর কর্কশ ও বিরক্তিকর। কাক অতি ধূর্ত
পাখি। দু প্রকারের কাক রয়েছে দাঁড়কাক ও পাতিকাক। কাক দেখতে কুৎসিত হলেও আমাদের
নানা উপকারে আসে। ময়লা আবর্জনা এবং অন্যান্য নোংরা জিনিস খেয়ে কাক আমাদের
পরিষ্কার পরিবেশ বজায় রাখে। কোকিলও কালো পাখি। কিন্তু এর রয়েছে মধুর কন্ঠ। বসন্তে
এর আগমন ঘটে বলে একে বসন্তের দূত বলে। কোকিল অত্যন্ত চতুর। সে কাকের বাসায় গোপনে
ডিম পাড়ে ও কাককে দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে নেয়।
চড়ুই, বাবুই, শালিক
ঝোপ-ঝাড়ে, বনে-জঙ্গলে তো থাকেই- লোকালয়ে চড়ুই, বাবুই, শালিক হরহামেশাই ঘুরে।
বেড়ায়। এগুলো আকারে ছোটো কিন্তু দেখতে খুব সুন্দর ঘরের বারান্দার কোণে চড়ুই, ভাল
ও খেজুর গাছে বাবুই এবং গাছের আগডালে শালিক পাখি বাসা বাঁধে। শালিক সারাদিন সবার
সঙ্গে কিচিরমিচির ঝগড়া করে। আবার গরু, মোষ, ঘোড়া, হাতি ইত্যাদির পিঠে চড়ে দোল
খেতেও ভালোবাসে। বাসা তৈরিতে বাবুই পাখির কারিগরি জ্ঞান সবচেয়ে বেশি।
ময়না, টিয়া, কাকাতুয়া
এদের খাঁচার পাখি বলা হয়। এদের খাঁচায় বন্দি করে পোষ মানানো যায়। এমনকি কথা
শেখালে কথাও বলতে পারে।
ঘুঘু, দোয়েল, বুলবুলি, পাপিয়া, বউকথা কও
এগুলো গানের পাখি। এদের মিষ্টি কণ্ঠ আমাদের মুগ্ধ করে। ঘুঘুর করুণ দূর মনকে করে
উদাস। বউকথা কও পাখির মধুর ডাকে মন উতলা হয়ে যায়। বুলবুলি আকারে ছোটো হলেও দেখতে
সুন্দর। জোছনা রাতে পাপিয়া অতি মধুর সুরে ডাকে। দোয়েল চমৎকার শিস দেয়, ভোর হবার
অনেক আগে থেকেই সে ডাকতে শুরু করে। দোয়েল বাংলাদেশের জাতীয় পাখি।
অতিথি পাখি
শীতকালে ও মাঝে-মধ্যে অন্য ঋতুতে সুদূর সাইবেরিয়া, তিব্বত, নেপাল প্রভৃতি দেশ
থেকে হাজার হাজার পাখি কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশে আসে। এদের অতিথি পাখি বলে। অতিথি
পাখির অধিকাংশই আসে হিমালয় ও উত্তর এশিয়া থেকে। এরা যাযাবর পাখি- দলবদ্ধভাবে উড়ে
এসে এদেশের জলাভূমিতে ভিড় জমায়। শীতের শেষে এরা আবার দল বেঁধে নিজ নিজ দেশে ফিরে
যায়।
উপসংহার
চিরস্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক পাখি। শান্তির দূত এসব পাখি মানুষের অতি প্রিয়।
প্রকৃতি জগতে এটি এক চমৎকার সৃষ্টি। পাখিবিহীন পৃথিবী কল্পনা করা যায় না।
প্রকৃতির সৌন্দর্য ও মাধুর্যের প্রতীক এই পাখি। এরা আমাদের পরিবেশের ভারয়াম্য
রক্ষা করে। তাই এদের শিকার কিংবা হত্যা করা উচিত নয়। এসব পাখি লালন-পালন ও
সংরক্ষণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এদের নিরাপত্তা দানেই আমাদের মহত্ত্ব ও
শ্রেষ্ঠত্ব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url