তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনাটি খুজছেন? যদি খুজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক যায়গায় চলে এসেছেন। কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা তুলে ধরেছি।
তোমার-জীবনের-লক্ষ্য-রচনা
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। আশাকরি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি এই রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা পড়ে নেওয়া যাক।

তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনাটির সংকেত সমূহঃ

ভূমিকা

যেখানে কোনো স্বপ্ন নেই, সেখানে বৈপ্লবিক কোনো চেতনাও নেই। আর যেখানে চেতনা নেই, সেখানে কোনো ভালো কাজও সাংঘটিত হতে পারে না। তাই প্রত্যেকেরই জীবনে স্বপ্ন, আশা ও লক্ষ্য থাকা চাই। সকলেই জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে না। তবু বড় হওয়ার জন্য সব মানুষেরই মগ্ন থাকে, থাকা দরকার। শৈশব থেকেই জীবনের একটি লক্ষ্য থাকা উচিত।

মহাসমুদ্রে নাবিকরা যেমন ধ্রুবতারাকে দক্ষ করে বিশাল সমুদ্রে পাড়ি জমায়, তেমনি শৈশবেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করে জীবনসমুদ্রে পাড়ি জমাতে হবে। তাহলে লিগ্‌ভ্রষ্ট হয়ে বিপথগামী হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। আমাদের মনে রাখতে হবে,
'সংসার সিন্ধুতে ধ্রুবতারা সমস্থির লক্ষ্য চাই,
লক্ষ্যবিহীন জীবনতরণী কূল নাহি কভু পায়।'

জীবনে লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা

জীবনে সার্থকতা লাভ করতে হলে একটি দৃঢ় সংকল্প চাই। মানব-জমিনে সোনা ফলাতে হবে। এজন্য যথাসময়ে বীজ বপন এবং আনুষঙ্গিক পরিশ্রম ও সাধনার দরকার। তেমনি জীবনের উদ্দেশ্যকে সার্থক করে তুলতে হলে প্রয়োজন সাধনার, প্রয়োজন একনিষ্ঠ শ্রমের। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, 'An aimless life is like a boot without a rudder.' তাই জীবনের চলার পথে চাই নির্দিষ্ট এবং সুপরিকল্পিত পথরেখা। সেই পথরেখাই সফলতার দুয়ারে উপনীত করবে। সেজন্যই জীবনের সূচনাতেই লক্ষ্য স্থির হওয়া উচিত।

ছাত্রাবস্থায়ই লক্ষ্য স্থির করার উপযুক্ত সময়

ছাত্রজীবন পরিণত-জীবনের প্রস্তুতিপর্ব। ছাত্রাবস্থার স্বপ্ন ও কল্পনা পরিণত-জীবনে বাস্তবের মাটিতে ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে সার্থক হয়। কিন্তু স্বপ্ন কেবল স্বপ্ন হলেই, কিংবা কল্পনা, অবাস্তব ও উদ্ভট হলেই চলে না; পরিণত জীবনের লক্ষ্যবাহী হওয়া চাই। সেজন্য ছাত্রাবস্থাতেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে হয়। সে লক্ষাকে সামনে রেখে অগ্রসর হতে হয় শ্রম, নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও একাগ্রতার সঙ্গে।

মানুষের কর্মজীবন বিকশিত হতে পারে বিচিত্র পথে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনা, চিকিৎসা-সেবা দান, শিল্প-কলকারখানা স্থাপন, ব্যাবসায়-বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন- নানাভাবে মানুষ কর্মজীবনে ভূমিকা রাখতে পারে। পেশা হিসেবে কেউ বেছে নিতে পারে চাকুরি, কেউ হতে পারে আইনজ্ঞ, কেউ হতে পারে প্রকৌশলী বা চিকিৎসক, কেউ-বা ব্রতী হতে পারে শিক্ষকতার মহান পেশায়, কেউ-বা বেছে নিতে পারে কৃষি উন্নয়ন।

যে যাই হতে চাক না কেন বৃত্তি নির্বাচন অনেকাংদে মারে শিক্ষকতার মহান শেখায়, কেউ বা বেছে নিয়ের্থিক সচ্ছলতা ও উপযুক্ত পরিবেশের ওপর। রায়ান্নেতের সরে বিশেষ বৃত্তি পেশা গ্রহণের জন্য সুনির্ধারিত পাঠক্রম অধ্যয়নের প্রয়োজন হয়। সেজন্য জীবনের লক্ষ্য ঠিক করার সঙ্গে সঙ্গে সেই অনুযায়ী পাঠক্রম ঠিক করতে হয়।

পাঠক্রম নির্বাচন

আমাদের দেশে সাধারণত মাধ্যমিক পর্যায়েই পাঠক্রমকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে সাধারন পিনির্বাচনক কোমালের তিনটি শাখায় বিভক্ত করা হয়েছে- ১। বিজ্ঞান শাখা, ২। মানবিক শাখা, ৩। ব্যবসায় শিক্ষা সাধারণ শিক্ষা পাঠক্রমকে প্রধানত তিনটি পাখায় বিউপশাখাভিত্তিক বিষয় রয়েছে যেগুলোর কোনো একটিরুম বিন ও গবেষণার শরিরে অনেক শাকরে উচ্চতর শিক্ষার ব্যাপক পাঠক্রম গড়ে উঠেছে। হাইকম নির্বাচনের ক্ষেত্রে শক্ষার্থীর ইচ্ছাকেই গ্রহণ করেছো।

যার যে বিষয়ে আগ্রহ আছে তাকে সে বিষয়ে পড়তে দেওয়াই যুক্তিসংগত। শুধু আগ্রহ ইয়ার জন্য শিক্ষার্থীকে নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন করতে চায়। বোনবিজ্ঞানন প্রকৌশ বিষয় আছে যেগুলোর জন্য ভাঁড়া মেধারে পড়াশোনা প্রয়োজন হয়। যেমন- কম্পিউটার বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল বিজ্ঞানের যেনোর জন্য বা মেধাব্য খর্থীকে কেবল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অসাধারণ ভালো ফল করলেই চলে না, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে হয়।

আমার জীবনের লক্ষ্য

আমার জীবনের লক্ষ্য আমি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে একজন সুদক্ষ কৃষক হব। আমার লক্ষ্য জেনে অনেকে হয়তো আমাকে উপহাস করবে। কিন্তু আমার জীবনের স্থির লক্ষ্যই হলো কৃষক হওয়া। আমার লক্ষ্যকে অনেকে সামান্য এবং দীন মনে করতে পারে। যারা এ রকম মনে করে, আমি তাদের দোষ দিই না।

কারণ দোয় তাদের নয়, দোষ তাদের দৃষ্টির সংকীর্ণতার এবং উন্নত বিশ্ব ও কৃষির উন্নয়নের সঙ্গে দেশ ও জাতির উন্নয়ন যে জড়িত সে সম্পর্কে অজ্ঞতার। তাদের দায়ি সবাই আমাদের দেশের গতানুগতিক ধারার মান্ধাতার আমলের সেই কৃষক, যাদের শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্য নেই, দুই বেলা দুই মুঠো পেট ভরে খাওয়ারও সংস্থান নেই, আর্থিক সচ্ছলতা নেই তাদের কথা ভেবে থাকে। আমি সে-রকম কৃষক হওয়ার কথা ভাবছি না।

আমি আধুনিক যুগের শিক্ষিত, সুদক্ষ, বিজ্ঞাননির্ভর প্রগতিশীল কৃষক হতে চাই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো আজ বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ-আবাদ করে কৃষিক্ষেত্রে এনেছে বিপুল পরিবর্তন। দেশের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করেছে। দারিদ্র্যকে চির- বিদায় দিয়েছে। সোনার বাংলা আমি আবার সোনার ফসলে ভরে দিতে চাই। চাই দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে আমাদের দেশের শতকরা আশি জন কৃষককে মুক্তি দিতে। এদেশে ঘটাতে চাই কৃষিবিপ্লব।

এরকম লক্ষ্য স্থির করার কারণ

বন্ধুমহলের কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ-বা অর্থনীতিবিদ। সকলে চাকরিকেই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেছে। বাংলাদেশে এই চাকরিপ্রিয়তা এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে, তার ফলে সমস্ত দেশে কৃষি বিমুখতা দেখা দিয়েছে।

যে কৃষি আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল উৎস এবং যে কৃষি নানা উপায়ে আমাদের দেশে লোকসংখ্যার অধিকাংশের জীবিকার আয়োজন করে দেয়, তার পরিচালনার দায়িত্ব মুষ্টিমেয় নিরক্ষর, রুগ্‌ণ, পরিবর্তন বিমুখ, দরিদ্র কৃষকের হাতে তুলে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছি। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দুঃখের বিষয়, লজ্জার বিষয়। আমাদের শিক্ষিত যুবসমাজের কেউ কি সেই মাটির ডাকে সাড়া দেবে না? কবিগুরুর আহ্বানও কি
কেউ শুনবে না?- 'ফিরে চল ফিরে চল মাটির টানে'
আমি কবিগুরুর আহ্বানে মাটির কোলেই ফিরে যেতে চাই। আমি পেতে চাই নজরুলের বন্দনা-
'শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি-তলে এস্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুলে ফলে।
তারই তরে ভাই গান রচে যাই, বন্দনা করি তারে।' [জীবন-বন্দনা।

দেশের অবস্থার সঙ্গে আমার লক্ষ্যের যোগসূত্র

আজ আমাদের শিল্পবিধ্বস্ত-কৃষি অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত। দিনের পর দিন শোষক-শাসকেরা এ দেশকে কামধেনুর মতো দোহন করে নিয়ে গেছে। ক্ষমতার অতিরিক্ত উৎপাদন করে বাংলাদেশের কৃষি আজ সর্বমান্ত। অথচ স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের লক্ষ্য ছিল-'ধন ধান্যে পুষ্পেভরা' একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার। স্বপ্নের বাংলাকে বাস্তবিক সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে আমার লক্ষ্যের বিকল্প নেই।

সার্থকতা

আমাদের দেশের কৃষক ভোঁতা লাঙল, রুগ্‌ণ বলদ ও নিকৃষ্ট বীজ নিয়ে সারহীন জমিতে যথাসম্ভব স্বল্প পরিমাণ ফসল ফলিয়ে চলছে। সেচের জল তারা ঠিকমতো পায় না। এখনো তারা দৈব-নির্ভর। চোখের জলে আর ঘামে মাটি ভিজে ওঠে, তবু নদীর জল এসে আমাদের জমিতে পৌঁছায় না। আমি নতুন উদ্যমে এই হতাশাক্লিষ্ট কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে চাই। উন্নত সারের ব্যবহার সম্পর্কে আজও তারা অজ্ঞ। উন্নত বীজ সংগ্রহে এখনো তাদের উদাসীনতা।

আজও অভাব, দারিদ্র্যের এক নিষ্করুণ চিত্র। তার ওপর অশিক্ষার অন্ধকার। কুসংস্কারের আনুগত্য। রোগ-মহামারির অভিশাপ। বস্তুত কৃষকদের উন্নতি ব্যতীত কৃষিপ্রধান এই দেশের সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব নয়। তাই আমি কৃষি সেবার মাধ্যমে যতটুকু সাধ্য দেশ সেবা করে যাব। আর এর মাঝেই আমার জীবনের স্বপ্ন ও লক্ষ্যের সার্থকতা নিহিত বলে আমি মনে করি।

উপসংহার

কৃষিসাধনাই দেশের সমৃদ্ধি সাধনার মূল চাবিকাঠি। কৃষিই দেশের সকল উন্নয়নের বুদ্ধদ্বার খুলে দেবে। মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে। আমার বিশ্বাস, যদি আমার চেষ্টায় কোনো ত্রুটি না থাকে এবং মনের একাগ্রতা অটুট থাকে, তবে আমি এ বিষয়ে নিশ্চয়ই সফল হব। 'মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন।'-এ শপথ বাক্য আমাকে সাফল্যের সিংহদ্বারে পৌঁছে দেবে, আমার প্রাণে নতুন উদ্যম ও নতুন প্রেরণা জোগাবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url