ব্যবসায়ের অবস্থান বলতে কি বুঝায় বিস্তারিত জেনে নিন
একটি ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে
ব্যবসায়ের অবস্থান। আপনি যদি ব্যবসায়ের অবস্থান বলতে কি বুঝায় এ সম্পর্কে না
জেনে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন।
কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য ব্যবসায়ের অবস্থান বলতে কি বুঝায় এ
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ব্যবসার অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে
আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
সূচিপত্রঃ ব্যবসায়ের অবস্থান বলতে কি বুঝায় বিস্তারিত জেনে নিন
ভূমিকাঃ ব্যবসায়ের অবস্থান বলতে কি বুঝায়
প্রত্যেক ব্যবসায়ী ব্যবসায় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য উপযুক্ত অবস্থান নির্বাচন
করে থাকে। ব্যবসায়ের উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিবেশগত কার্যকরী ও
সাধারণ উপাদান, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, ক্রেতাদের পর্যাপ্ততা ও নৈকট্য,
নিরাপত্তা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা, ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু ইত্যাদি বিষয়
বিবেচনা করা হয়। উপযুক্ত অবস্থান নির্বাচনের উপর ব্যবসায়ের সাফল্য নির্ভর করে।
ব্যবসায়ের অবস্থান বলতে কি বুঝায়
যে কোন উৎপাদন বা ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপযুক্ত স্থান প্রয়োজন। যে
স্থানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করা হয় তাকে ব্যবসায়ের অবস্থান বলে।
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভূমি, কাঁচামাল, শক্তি
সম্পদের সহজপ্রাপ্যতা, শ্রমিক সরবরাহ, জলবায়ু, ক্রেতাদের নৈকট্য, নিরাপত্তা
ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হয়।
উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের উপর ব্যবসায়ের সাফল্য নির্ভর করে। তাই বিশেষ বিশেষ
এলাকায় বিশেষ ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে দেখা যায়। যেমন- হাসপাতাল এলাকায়
ফার্মেসি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে পেপার স্টেশনারি, ফটোকপি ও ফাস্টফুডের
দোকান। আবার অবস্থানগত কারণেই একই শপিং কমপ্লেক্সের বিভিন্ন বিপণির পজেশনের মূল্য
ও ভাড়ার মধ্যে ব্যাপক তারতম্য পরিলক্ষিত হয়।
ব্যবসায়ের অবস্থানের গুরুত্ব
ব্যবসায়ের উপযুক্ত অবস্থানের উপর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে। এজন্য
ব্যবসায়ীদের এমন স্থান নির্বাচন করা উচিত যেখান থেকে ব্যবসায়ের সামগ্রিক
কর্মকাণ্ড সহজে ও সাফল্যের সাথে পরিচালনা করা যায়। ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ধারণের
গুরুত্ব নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- ভোক্তাদের চাহিদা পূরণঃ ব্যবসায়ের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা হলে ভোক্তাদের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করা যায়। যে স্থানে যে ধরনের পণ্যের চাহিদা আছে ঐ স্থানে ঐ ধরনের পণ্যের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান সহজেই ভোক্তাদের প্রত্যাশা পূরণ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।
- ব্যবসায় সম্প্রসারণঃ উপযুক্ত স্থানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হলে সঠিকভাবে ও দক্ষতার সাথে উৎপাদন ও বিপণন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যায়। এর ফলে বিক্রয় বৃদ্ধি পায় এবং বৃদ্ধি প্রাপ্ত আয় দ্বারা নতুন নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়।
- পণ্যের প্রমোশনঃ সঠিক স্থানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হলে প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবার ব্যাপক প্রমোশনেও সহায়তা করে। এতে ক্রেতারা পণ্য সম্পর্কে জানে এবং উক্ত পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়। যেমন- প্রধান সড়কের পাশে ফ্যাক্টরি বা বিপণির অবস্থান হলে বড় আকৃতির সাইনবোর্ড বা নিয়নসাইন ব্যবহার করা হলে তা প্রমোশনেরই কাজ করে।
- অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাঃ অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বলতে মূলতঃ রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ও যাতায়াত সুবিধা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস, পানি সরবরাহ ইত্যাদিকে বুঝানো হয়। উপযুক্ত স্থানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সকল ধরনের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগানো যায়। এর ফলে ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে উৎপাদন ও বিপণন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট প্রভৃতি অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সাফল্যের সাথে ব্যবসায় পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- প্রতিযোগিতা মোকাবেলাঃ বর্তমানে ব্যবসায়ে তীব্র প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। এরূপ প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত স্থানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা প্রয়োজন। কেননা উপযুক্ত স্থানে ব্যবসায় স্থাপন করা হলে ক্রেতারা সহজে আসতে পারে। ব্যবসায়ের জন্য আদর্শ ও উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা সম্ভব হলে সফলভাবে প্রতিযোগিতা মোকাবেলা ও সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়।
- বিক্রয় ও মুনাফা বৃদ্ধিঃ উপযুক্ত স্থানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধি করা যায়। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের আয় বা মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এরূপ আয় পুনরায় বিনিয়োগ করে নতুন নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়। যেমন- ব্যস্ততম রাস্তার মোড়ে অথবা বাণিজ্যিক কেন্দ্রে ফাস্টফুড ও স্ন্যাকস্ এর দোকান ভালো চলে।
- সম্পদের সঠিক ব্যবহারঃ ব্যবসায়ের উপযুক্ত অবস্থান নির্বাচন সম্পদের সঠিকু ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে শ্রম, মূলধনসহ সব ধরনের উৎপাদন উপকরণের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়। এর ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং বিপণন কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হয়। প্রতিষ্ঠান অনায়াসে প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে পারে।
- প্রতিষ্ঠানের স্থায়িত্বঃ প্রতিষ্ঠানের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ের স্থান সঠিকভাবে নির্বাচন করা প্রয়োজন। উপযুক্ত স্থানে ব্যবসায় গড়ে তোলা হলে উৎপাদন ও বিপণন কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে পরিচালিত হয় এবং ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে ব্যবসায়ের অবস্থান যথাযথ না হওয়ায় লোকসানের কারণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ব্যবসায় গুটিয়ে নিতে হয়েছে।
- জীবনযাত্রার মান উন্নয়নঃ উপযুক্ত স্থানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে ভোক্তারা উন্নতমানের পণ্য ভোগের সুযোগ পায়। এরূপ পণ্য ভোগ ও ব্যবহারের মাধ্যমে সকলের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। তাছাড়া যথাযথ স্থানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হলে প্রতিষ্ঠানটি উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করে। ফলে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমেও মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটে।
- কর সুবিধাঃ কোন নির্দিষ্ট স্থানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে সরকার থেকে কর সুবিধা পাওয়া যায়। কাজেই কর সুবিধার কথা বিবেচনা করে নির্দিষ্ট স্থানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা উচিত। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে এবং কম ব্যয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।
- অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ কোন নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে ঐ এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হয়। কারণ মানুষ তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পায় এবং তাদের আয় বৃদ্ধি পায়। একই সাথে তাদের জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।
- সামাজিক কল্যাণঃ কোন নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে ঐ এলাকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানি, স্কুল, কলেজ ইত্যাদির আরো উন্নয়ন ঘটে। এতে সমাজের কল্যাণ সাধিত হয় এবং মানুষ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে।
উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা বলতে পারি ব্যবসায়ের অবস্থান নির্বাচনের গুরুত্ব
অপরিসীম। উপযুক্ত অবস্থান নির্বাচনের মাধ্যমে যেমন ব্যবসায়ের সাফল্য অর্জিত হয়,
তেমনি ভোক্তা ও সমাজের কল্যাণ সাধিত হয়।
ব্যবসায়ের অবস্থানের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান
ব্যবসায়ের উপযুক্ত অবস্থান নির্বাচনের উপর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে। দক্ষ
জনশক্তি ও বিপুল পরিমাণ পুঁজি বিনযোগ করেও ব্যবসায়ে সফলতা অর্জন করা যাবে না যদি
ব্যবসায়ের অবস্থান নির্বাচন সঠিক না হয়। এ কথাটি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু
করে ক্ষুদ্রাকারে পরিচালিত খুচরা ব্যবসায় পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
শ্রমিক, কাঁচামাল ও অন্যান্য উপকরণের সহজলভ্যতা, বাজারের নৈকট্য, জলবায়ু,
নিরাপত্তা প্রস্তুতি বিষয়সমূহ একজন উদ্যোক্তার ব্যবসায়ের অবস্থান নির্বাচনের
সিদ্ধান্তকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। তাই বিভিন্ন উপাদজার সম্ভাব্য প্রভাব এবং
সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় রেখে ব্যবসায়ের জন্য একটি আদর্শ স্থান নির্বাচন করতে হয়।
নিম্নে ব্যবসায়ের অবস্থানের উপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো-
- শিল্প বা ব্যবসায়ের প্রকৃতিঃ ব্যবসায়ের অবস্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঐ নির্দিষ্ট শিল্প বা ব্যবসায়ের প্রকৃতি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন। শিল্পের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও শ্রমিকের সহজপ্রাপ্যতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া বাজারের নৈকট্য, নিরাপত্তা, পণ্যসামগ্রী আনা-নেয়ার সুবিধাও এক্ষেত্রে বিবেচনা করা প্রয়োজন। অন্যান্য ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের প্রকৃতি বিশেষভাবে বিবেচিত হয়। যেমন- বৃহদায়তন খুচরা ব্যবসায়ের অবস্থান শহরের কেন্দ্রস্থলে হলে ভালো হয়। ক্ষুদ্রাকারে পরিচালিত খুচরা ব্যবসায় অন্য যে কোন সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত হতে পারে।
- সমজাতীয় ব্যবসায়ের উপস্থিতিঃ সমজাতীয় এবং পরিপূরক পণ্যের ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অবস্থান নির্বাচনে কোন বিশেষ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, প্রতিযোগিতা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অনেক সময় কোন বিশেষ স্থানে নির্দিষ্ট ধরনের ব্যবসায় কেন্দ্রীভূত হলে অধিক ক্রেতা সমাগমসহ কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। আবার শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উপস্থিতির বিষয়টি বিবেচনা করতে হয়।
- মূলধনের পর্যাপ্ততাঃ ব্যবসায়ে বিনিয়োগকৃত মূলধনের উপর শিল্প অথবা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি কোথায় স্থাপিত হবে সে বিষয়টি নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ- অধিক মূলধন বিনিয়োগে সক্ষম হলে উদ্যোক্তারা সব সময় সর্বাধিক সুবিধাসম্পন্ন স্থানে ব্যবসায় স্থাপন করতে আগ্রহী থাকবে। এমনকি খুচরা ব্যবসায় পরিচালনার জন্য শহরের নামকরা বড় বড় বিপণি কেন্দ্রকে সর্বাগ্রে বিবেচনায় রাখবে।
- ভবিষ্যত সম্ভাবনাঃ অনেক সময় ব্যবসায়ের অবস্থান নির্বাচনে বর্তমান অবস্থা বিবেচনার পাশাপাশি ভবিষ্যত সম্ভাবনার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। কোন স্থানে ভবিষ্যতে ব্যবসায় সম্প্রসারণের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকলে সে স্থানে ব্যবসায় স্থাপন উত্তম বলে বিবেচিত হয়।
- পরিবেশগত প্রভাবঃ যে সকল শক্তি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা ব্যবসায় কর্মকাণ্ডের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে তাকে ব্যবসায় পরিবেশ বলে। কোন স্থানে ব্যবসায় স্থাপনের ক্ষেত্রে সেখানকার প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি উপাদানের প্রভাব বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। তাছাড়া ক্রেতা, প্রতিযোগী, সরবরাহকারী প্রভৃতি উপাদান দ্বারা সৃষ্ট পরিবেশগত অবস্থাও বিচার-বিবেচনা করে ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
- পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ব্যবসায়ের অবস্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঐ স্থানের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকলে সেখানে সহজে আসা-যাওয়া করা যায়, আবার পণ্যের আগমন-নির্গমনও সহজ হয়। পারস্পরিক যোগাযোগ প্রক্রিয়াও সাবলীল ও গতিশীল হয়।
- কাঁচামাল ও শ্রমিকের প্রাপ্যতাঃ যে সকল পণ্য ইতোপূর্বে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়নি, সম্পূর্ণ প্রথমবারের মতো উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তাকে কাঁচামাল বলে। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বা উপকরণ এবং শ্রমিকের সহজপ্রাপ্যতার উপর ব্যবসায়ের অবস্থান বিশেষভাবে নির্ভরশীল। যে স্থানে পর্যাপ্ত উপকরণ ও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায় সে স্থানে বা তার আশেপাশে ব্যবসায় স্থাপন করা প্রয়োজন।
- জ্বালানি ও শক্তি সম্পদের প্রাপ্যতাঃ ব্যবসায় পরিচালনার জন্য জ্বালানি ও শক্তি সম্পদের প্রয়োজন। যে সকল স্থানে বিদ্যুৎ, গ্যাস, তেল, কয়লা ও অন্যান্য জ্বালানি সম্পদ পাওয়া যায় সে সকল স্থানে ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ধারণ করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সুবিধা থাকায় এসব অঞ্চলে অধিক সংখ্যায় বিভিন্ন ধরনের শিল্প গড়ে উঠেছে।
- বাজারের নৈকট্যঃ বাজারের নৈকট্য বলতে বিপণনকৃত পণ্য ও সেবাসামগ্রীর বর্তমান ও সম্ভাব্য ক্রেতাদের নিকটবর্তী অবস্থানকে বুঝানো হয়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অবশ্যই বাজার তথা ভোক্তা বা ক্রেতাদের নিকটবর্তী স্থানে স্থাপন করা প্রয়োজন। এর ফলে স্বল্প খরচে পণ্য ভোক্তা বা ক্রেতাদের নিকট পৌছানো যায় এবং সামগ্রিকভাবে বিপণন খরচ হ্রাস পায়।
- নিরাপত্তাঃ ব্যবসায়ের অবস্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে নিরাপত্তা। এজন্য ফায়ার ব্রিগেড, থানা বা নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যারাকের নিকট ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ধারণ করা প্রয়োজন। যেখানে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম আছে এমন স্থানে ব্যবসায় স্থাপন বা পরিচালনা করা ঠিক নয়। বরং ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োজন একটি আদর্শ ও নিরাপদ পরিবেশ।
আমাদের শেষ কথাঃ ব্যবসায়ের অবস্থান বলতে কি বুঝায়
আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা এতক্ষণ
ব্যবসায়ের অবস্থান বলতে কি বুঝায়, ব্যবসায়ের অবস্থানের গুরুত্ব এবং ব্যবসায়ের
অবস্থানের উপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান ইত্যাদি বিষয়ে জানলাম। আশা করি
আর্টিকেলটির মাধ্যমে ব্যবসায়ের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করতে
পেরেছি। এমন বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েব সাইটে নিয়মিত ভিজিট
করুন। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত আমি বিদায় নিচ্ছি, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url