দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস কয়টি জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস কয়টি তাই
আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের
উপকারে আসবে।
দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস সহ, কোম্পানির মূলধন, স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নের উৎস,
কোম্পানি মূলধন কত প্রকার ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ শেষ
পর্যন্ত পড়ুন।
সূচিপত্রঃ দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস কয়টি জেনে নিন
কোম্পানি মূলধন কাকে বলে
মূলধনের আভিধানিক অর্থ হলো ব্যবসায়ে নিয়োজিত অর্থ বা সম্পদ। এই মূলধনের মধ্যে
যেমনি মালিক বা শেয়ারহোল্ডারদের প্রদত্ত অর্থ বা মূলধন থাকে তেমনি অন্যান্য উৎস
থেকেও মূলধন সংগৃহীত হতে পারে। তাই কোম্পানি তার শেয়ারহোল্ডার ও অন্যান্যদের নিকট
থেকে যে মূলধন সংগ্রহ করে তাকেই কোম্পানির মূলধন বলে।
কোম্পানি মূলধন কত প্রকার
ক) উৎস বিচারে (According the source):
কোন উৎস থেকে কোম্পানির মূলধন সংগৃহীত হচ্ছে তা বিচারে এর মূলধন দু'ধরনের হয়ে
থাকে:
- শেয়ার মূলধন (Share capital): জনগণের কাছে শেয়ার বিক্রয় করে যৌথ মূলধনী ব্যবসায় যে পুঁজি সংগ্রহ করে তাকে কোম্পানির শেয়ার মূলধন বলে। সাধারণ শেয়ার বিক্রয় করে যে মূলধন সংগৃহীত হয় তাকে সাধারণ শেয়ার মূলধন বলে। আমাদের দেশের কোম্পানিসমূহ সাধারণত সাধারণ শেয়ার ইস্যু করে এরূপ মূলধন সংগ্রহ করে। তবে অগ্রাধিকার শেয়ার বিক্রয় করেও ক্ষেত্রবিশেষে এ ধরনের মূলধন সংগ্রহ করা হয়।
- ঋণ মূলধন (Debt capital): কোম্পানি তার শেয়ারমালিকদের বাইরে অন্য উৎস থেকে যে অর্থ বা মূলধন সংগ্রহ করে তাকে ঋণ মূলধন বলে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ঋণপত্র বা বঙ বিক্রয় করে ঋণ মূলধন সংগ্রহ করে। এর বাইরে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সংগৃহীত ঋণ, ব্যবসায় ঋণ ইত্যাদি কোম্পানির ঋণ মূলধনের উল্লেখযোগ্য উৎস বিবেচিত হয়।
খ) প্রকৃতি বিচারে (According the nature):
মূলধন কোন ধরনের বা এর কার্যকারিতা কোন প্রকৃতির সে বিচারে মূলধনকে নিম্নোক্ত
দু'ভাগে ভাগ করা যায়:
- স্থায়ী মূলধন (Fixed capital): কোম্পানির মূলধনের যেই অংশ প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পদ ক্রয়ে ব্যবহৃত হয় তাকে স্থায়ী মূলধন বলে। এরূপ মূলধন প্রতিষ্ঠানের মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস থেকে মূলত নির্বাহ করা হয়ে থাকে। ভূমি, দালান-কোঠা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র যানবাহন, ইত্যাদি কোম্পানির স্থায়ী মূলধনের উদাহরণ।
- চলতি মূলধন (Working capital): কোম্পানির উৎপাদন কার্য পরিচালনা, মালামাল ক্রয় এবং দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের জন্য যে অর্থ সম্পদ ব্যয়িত হয় তাকে চলতি মূলধন বলে। একটা কোম্পানির হাতে পর্যাপ্ত এ ধরনের মূলধন না থাকলে কোম্পানির স্থায়ী মূলধন বা সম্পদকে কাজে লাগানো যায় না। নগদ জমা, ব্যাংক।
দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস কয়টি
সাধারণত পাঁচ বছরের বা এর অধিক সময় ব্যবহারের জন্য কোম্পানিতে যে মূলধন সংগ্রহ
করা হয় তাকে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বলে। কোম্পানিতে এ ধরনের মূলধন সংগ্রহের উৎসসমূহ
নিম্নরূপ:
- শেয়ার বিক্রয় (Sale of share): কোম্পানি নিজস্ব মূলধন সংগ্রহের জন্য বাজারে শেয়ার বিক্রয় করে। এরূপ সংগৃহীত অর্থ ব্যবসায় বিলোপের পূর্ব পর্যন্ত ফেরত দেয়ার প্রশ্ন আসে না। অবশ্য অগ্রাধিকার শেয়ার বিক্রয় করা হলে বিক্রয় চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বা পরে এর মূল্য পরিশোধ করতে হতে পারে।
- ঋণপত্র বিক্রয় (Sale of debenture): পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ঋণপত্র বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ে দীর্ঘমেয়াদে অর্থসংস্থান করতে পারে। ঋণপত্র গ্রহীতাদের নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করা হয়। ঋণপত্রের বিপক্ষে সংগৃহীত অর্থও চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পরিশোধ্য।
- সঞ্চিতি তহবিল (Reserve fund): কোম্পানিতে অর্জিত মুনাফার সবটুকু লভ্যাংশ আকারে বণ্টন না করে এর অংশবিশেষ বিভিন্ন সঞ্চিতি হিসাবে জমা করা হয়। এই অর্থ কোম্পানি ক্ষেত্রবিশেষে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে পারে।
- অবলেখক (Underwriter): চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানির শেয়ার ও ঋণপত্র বিক্রয়ে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানকে অবলেখক বলে। অবলেখকগণ কোম্পানির শেয়ার ও ঋণপত্র বিক্রয়ের ঝুঁকি গ্রহণ করে। চুক্তি অনুযায়ী সম্পূর্ণ শেয়ার বিক্রয় না হলে তারা নিজেরাই শেয়ার ক্রয় করে কোম্পানিতে অর্থসংস্থান করে। অবশ্য এরূপ উৎস কার্যত শেয়ার বিক্রয়ের মধ্যেই পড়ে।
- শিল্প ব্যাংক (Industrial bank): দেশের শিল্পোন্নয়নে সকল দেশেই শিল্প ব্যাংক বা অনুরূপ ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে দেখা যায়। এরূপ ব্যাংক শিল্পক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে অর্থসংস্থান করে। বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যাংক লি. (B.D.B.L) আমাদের দেশে এরূপ দায়িত্ব পালনকারী একটি ব্যাংক।
- বন্ধকী ও অন্যান্য ব্যাংক (Mortgage & other bank): বিভিন্ন স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে বন্ধকী ব্যাংকসমূহ ব্যবসায়ে দীর্ঘমেয়াদে অর্থসংস্থান করে। ভূমি বন্ধকী ব্যাংক এরূপ উৎসের একটি উদাহরণ। বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যাংক নেই। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ কোম্পানির স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিয়ে থাকে।
- নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (Non bank financial institute): ব্যাংকের ন্যায় আমানত সংগ্রহ করে না তবে নিজস্ব উৎস থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ে দীর্ঘ মধ্যমেয়াদি অর্থসংস্থান করে এমন নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহও কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সংস্থানের উৎস। বাংলাদেশের শিল্পক্ষেত্রে IDLC (Industrial development and leasing company), গৃহ নির্মাণ খাতে HBFC, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ইত্যাদি এ ধরনের প্রতিষ্ঠান।
- বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান (Investment of institution): সকল দেশেই দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসায়ে অর্থসংস্থানের জন্য বিনিয়োগ ব্যাংক ও বিভিন্ন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ সংস্থা (ICB) এরূপ দায়িত্ব পালনকারী একটি সংস্থার উদাহরণ।
- বিমা প্রতিষ্ঠান (Insurance company): সকল দেশেই বিমা প্রতিষ্ঠান বৃহদায়তন ব্যবসায়ে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সরবরাহ ও পুঁজিসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। আমাদের দেশে বিমা প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে গড়ে না ওঠায় দীর্ঘমেয়াদি অর্থসংস্থানে এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য নয়।
- বিদেশী সংস্থা (Foreign agencies): বিদেশী বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে বড় বড় কোম্পানি সংগঠনে অর্থসংস্থান করে। বাংলাদেশে সুদের হার বেশি হওয়ায় জাপানি ও ইউরোপীয় আর্থিক সংস্থাগুলো দেশের টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানিতে ইতোমধ্যে যথেষ্ট মূলধন সংস্থান করেছে।
- সম্পত্তি বিক্রয় (Sale of property): অনেক সময় ব্যবসায়ের অব্যবহৃত সম্পদ বিক্রয় করেও দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসায় অর্থসংস্থান করা যায়। এক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ভূমি ও যন্ত্রপাতি বিক্রয়ের খাত হিসেবে বিবেচিত হয়।
স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের উৎস কি কি
সাধারণত এক বছর বা তার কম সময়ের জন্য কোম্পানিতে যে মূলধন সংগ্রহ করা হয় তাকে
স্বল্পমেয়াদি মূলধন বলে। কোম্পানিতে এরূপ মূলধন সংগ্রহের বা স্বল্পমেয়াদি
অর্থসংস্থানের উৎসসমূহ নিম্নরূপ:
- মালিকদের নিজস্ব তহবিল (Proprietors' own capital): প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির স্বল্পমেয়াদি মূলধন সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালকদের নিকট থেকে সংগৃহীত ঋণ। জরুরি প্রয়োজন পূরণে অন্য কোনো উৎস থেকে সংগ্রহ করা না গেলে সেক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালকগণ স্বল্প সময়ের জন্য কোম্পানিকে ঋণ দিতে পারেন। পরবর্তীতে প্রত্যাশিত অর্থ পাওয়া গেলে উক্ত ঋণ পরিশোধ করে দেয়া হয়।
- ঘনিষ্টজনদের নিকট হতে গৃহীত ঋণ (Loan from near relations): কোম্পানিতে বিশেষ করে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে জরুরি প্রয়োজন পূরণে অনেক সময় পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডারগণ কোনো দিক থেকেই অর্থসংগ্রহে সমর্থ না হলে নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবগণের নিকট হতে স্বল্পমেয়াদে ঋণ বা হাওলাত হিসেবে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। যতশ্রিঘ্র সম্ভব তা পরিশোধ করা হয়ে থাকে।
- বাণিজ্যিক ব্যাংক (Commercial bank): সকল দেশেই বাণিজ্যিক ব্যাংক স্বল্পমেয়াদি ঋণের অন্যতম উৎস হিসেবে গণ্য হয়। ব্যাংক হতে নগদ ঋণ ও জমাতিরিক্ত ঋণ নিয়ে যৌথ মূলধনী কোম্পানিসমূহ ব্যবসায়ে স্বল্পমেয়াদে অর্থসংস্থান করতে পারে। বাংলাদেশের অধিকাংশ কোম্পানিই এরূপ উৎস থেকে স্বল্পমেয়াদি মূলধন সংগ্রহ করে।
- ব্যবসায় ঋণ (Trade credit): বর্তমানকালে অধিকাংশ লেনদেন ধারে সম্পন্ন হয়। অনেকক্ষেত্রেই কোম্পানি ধারে পণ্য সংগ্রহ করে তা বিক্রয়পূর্বক মূল্য পরিশোধ করে। ফলে এরূপ ধারে ক্রয়, ব্যবসায়ে অর্থসংস্থানের উৎস হিসেবে গণ্য হয়।
- শিল্প ব্যাংক ও ভূমি বন্ধকী ব্যাংক (Industrial and mortgage bank): এ সকল ব্যাংক সাধারণভাবে ব্যবসায়ে দীর্ঘমেয়াদে অর্থসংস্থান করলেও যৌথ মূলধনী কোম্পানির ব্যবসায়ের প্রয়োজনে এ ব্যাংক অনেক সময় স্বল্পমেয়াদেও ঋণ দেয়।
আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠক আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আশা করি আরটিকাটি আপনাদের উপকারে আসবে। এমন বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে আমাদের
ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে থাকুন। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত আমি
বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url