নতুন ব্যবসার আইডিয়া
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি নতুন ব্যবসায় আইডিয়া খুজছেন? যদি খুঁজে
থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের
জন্য বেশ কয়েকটি নতুন ব্যবসায় আইডিয়া তুলে ধরেছি।
আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। নতুন ব্যবসায় আইডিয়া সম্পর্কে জানতে
আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে
নতুন ব্যবসায় আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ নতুন ব্যবসার আইডিয়া
- ভূমিকা
- বায়িং হাউজ (Buying House)
- মার্চেন্ডাইজিং (Merchandising)
- স্টক এক্সচেঞ্জ (Stock Exchange)
- ক্ষুদ্র খঋণ (Micro-credit)
- বিকাশ (Bkash/bkash)
- আউটসোর্সিং ব্যবসায় (Outsourcing Business)
- ডাটা এন্ট্রি ব্যবসায় (Data Entry Business)
- কল সেন্টার (Call Center)
- কুরিয়ার সার্ভিস (Courier service)
- মানিগ্রাম (MoneyGram)
- সফটওয়্যার উন্নয়ন (Software Development)
- মোবাইল সার্ভিসিং (Mobile Servicing)
- কম্পিউটার ও ফটোকপি সার্ভিস (Computer & Photocopy Service)
- আমাদের শেষকথা
ভূমিকা
চাল-ডাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্য দিয়ে যে ছোট্ট
একমালিকানা ব্যবসায় যাত্রা শুরু করেছিল কালের বিবর্তনে সেই ব্যবসায় এখন হাজারো
পণ্য ও সেবার সম্ভার নিয়ে কোম্পানি সংগঠন, যৌথ উদ্যোগে ব্যবসায় ইত্যাদি নানানভাবে
বিকশিত হয়েছে।
প্রচলিত মুদিখানা, মনিহারি, কাপড়ের দোকান, মাছ- গোশতের দোকান ইত্যাদি এখন আলোচনার
কেন্দ্রবিন্দুতে নেই। বরং সেখানে কোকোকোলা, কেএফসি, কম্পিউটার, সফটওয়্যার,
ইন্টারনেট সেবা ইত্যাদি স্থান করে নিয়েছে। ই-কমার্স, ই-রিটেইলিং ইত্যাদি এখন
জনপ্রিয় ব্যবসায় পরিভাষা।
ব্যবসায়ের উপস্থাপনার ধরনেও নিত্যনতুন পদ্ধতি যোগ হয়ে নতুন ব্যবসায়ের সৃষ্টি
করেছে। এমন অবস্থায় আমাদের সকলকে নতুন নতুন ব্যবসায় সম্পর্কে জানা 'প্রয়োজন।
নিম্নে এরূপ কিছু বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।
বায়িং হাউজ (Buying House)
কমিশনের ভিত্তিতে বায়ারের পক্ষে ক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী
প্রতিষ্ঠানসমূহ বায়িং হাউজ নামে পরিচিতি। এরা মূলত মধ্যস্থ ব্যবসায়ী। ক্রেতার
চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনকারী বা বিক্রেতা খুঁজে বের করে দাম-দর ও শর্তাদি ঠিক করার
ক্ষেত্রে এরা মধ্যস্থ ব্যবসায়ীর ভূমিকা পালন করে। অতঃপর ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে
চুক্তি হলে উক্ত চুক্তি প্রতিপালিত হওয়া পর্যন্ত বায়িং হাউজ দায়িত্ব পালন করে
থাকে।
বাংলাদেশে গার্মেন্টস খাতে প্রচুর বিদেশী ক্রেতা অর্ডার Place করে। এই অর্ডার
দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের পক্ষে এসে ফ্যাক্টরি পরিদর্শন, উৎপাদকের সামর্থ্য বিবেচনা,
ফরমায়েশ অনুযায়ী সঠিকভাবে কাজ বুঝে নেয়া, যথাসময়ে শিপমেন্টের তদারকি ইত্যাদি করা
সম্ভব হয় না। এ জন্য তারা বায়িং হাউজগুলোর ওপর নির্ভর করে।
কোনো বায়িং হাউজ কার্যকর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বায়ারের প্রয়োজন জানা,
প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য সংগ্রহে ভালো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা, দক্ষতার
সাথে চুক্তি সম্পাদনে সহায়তা এবং সঠিকভাবে মানসম্পন্ন পণ্য বুঝে নিয়ে তা ক্রেতা
বা আমদানিকারক বরাবর পাঠিয়ে আস্থা অর্জন করতে পারলে তা তার ব্যবসায়িক সুখ্যাতির
সৃষ্টি করে।
এভাবে দু'চারটে কার্যকর লেনদেনে সহায়তা করতে পারলে ঐ বায়িং হাউজকে আর পিছনে ফিরে
তাকাতে হয় না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক সময়ই বায়িং হাউজগুলো বিক্রেতার নিকট
থেকেও কমিশন নেয়ার চেষ্টা করে। যা এ ব্যবসায়ে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। অনেকেই এরূপ
করার কারণে এখন বাংলাদেশের বায়িং হাউজ ব্যবসায় কার্যত ভারতীয় ও শ্রীলংকানদের হাতে
চলে যাচ্ছে।
অবশ্য এ সকল বিষয় দেখাশুনার জন্য বাংলাদেশে বায়িং হাউজ ব্যবসায়ীদের সংস্থা
Bangladesh Garments Buying Association / BGBA কাজ করছে। আমাদের গার্মেন্টস
খাতের বায়িং হাউজগুলো গার্মেন্টস মেশিনারিজ, এক্সেসরিজ ও অন্যান্য মাল বিদেশ থেকে
আমদানিতেও স্থানীয় ক্রেতাদের ক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে।
বায়িং হাউজ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে প্রথমেই অন্যান্য ব্যবসায়ের ন্যায় ট্রেড
লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয় BGMEA সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বায়িং হাউজ কাজ করে বিধায়
উক্ত এসোসিয়েশন থেকেও বায়িং হাউজ হিসেবে কাজ করার অনুমতি সনদ গ্রহণের প্রয়োজন
পড়ে। এজন্য ট্রেড লাইসেন্স, সংঘবিধি বা অংশীদারি চুক্তিপত্র, অফিস ভাড়ার
চুক্তিপত্র বা ক্রয় দলিল,
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্র (যদি থাকে), সত্যায়িত ছবি ইত্যাদি জমা দিতে হয়।
বায়িং হাউজ প্রতিষ্ঠানসমূহের এসোসিয়েশন (BGBA) থাকলেও সেখানকার সদস্যপত্র এখনও
বাধ্যতামূলক নয়। একসময় BGMEA এর অনুমতি বাধ্যতামূলক থাকলেও এখন এরূপ সনদ ছাড়াও
কেউ বায়িং হাউজ হিসেবে কাজ করতে পারে।
এর কারণ হলো যোগ্যতার সাথে কেউ ক্রেতাদের থেকে অর্ডার সংগ্রহ করতে পারলে
শুধুমাত্র এই সনদ নেই-এ যুক্তিতে কাউকে কাজ করতে বাধা দেয়ার শর্ত-এখন অনেকটাই
শিথিল করা হয়েছে। তবে সকল বায়িং হাউজের অবশ্যই ব্যাংকে বৈদেশিক বিনিময় হিসাব থাকা
বাধ্যতামূলক।
মার্চেন্ডাইজিং (Merchandising)
Merchandising শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো পণ্য বেচা-কেনা করা। অন্য আরেকটি অর্থ
হলো পণ্য বেচা- কেনার উন্নতিসাধন করা। তাই কোনো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পণ্য বেচা-কেনা
ও বিক্রয়ের উন্নতি সাধনের কাজকেই মার্চেন্ডাইজিং বলে। বেচা-কেনা বা বিক্রয়ের
উন্নতি সাধনের মূল লক্ষ হলো প্রত্যাশিত মানের ও পরিমাণের গ্রাহক আকৃষ্ট করে তাদের
নিকট পণ্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা।
গ্রাহকদের স্থায়ী গ্রাহকে পরিণত করাও এর উদ্দেশ্যে। প্রতিযোগিতার বাজারে গ্রাহক
সংগ্রহ, গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জন ও স্থায়ী গ্রাহক বাবানোর কাজটি বেশ কঠিন। তাই
যোগ্য মার্চেন্ডাইজার নিয়োগ ও তাদের আন্তরিক সহযোগিতা নিতে পারা যে কোনো
ব্যবসায়ীর জন্য খুবই প্রয়োজন।
বিশেষ করে গার্মেন্টস ব্যবসায়ের মত ফরমায়েশনির্ভর ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে তা আরও অধিক
গুরুত্বপূর্ণ। মার্চেন্ডাইজিং বা বিক্রয়ের উন্নতি সাধন প্রচেষ্টা শুধুমাত্র
গার্মেন্টস শিল্পের ন্যায় প্রতিষ্ঠানেই নয় বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে তা সকল
ধরনের ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।
কোনো পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য একজন খুচরা বিক্রেতা বা তার পক্ষে কোনো
প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে পণ্যের বিশেষ সাজসজ্জাকরণ,
বিশেষ ছাড় বা মূল্য হ্রাস, বিনামূল্যে নমুনা বিতরণ, বিক্রয় কুপন, গিফট কার্ড,
পুরস্কার প্রদান ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এ সকল বিশেষ কার্যক্রমের মাধ্যমে দোকান বা
পণ্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে গ্রাহক বা ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয় বৃদ্ধি করা যায়।
বর্তমান মিডিয়া নির্ভর বিশ্বে বিভিন্ন দিবস পালনে জমজমাট ব্যবসায় লক্ষণীয়। ঈদ,
পুজা, বড়দিন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বাবা দিবস, বিশ্ব মাতৃ দিবস- এভাবে নানান
দিবসকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ের যে অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়- মার্চেন্ডাইজিং
সেক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবসায় কার্যক্রম হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ী মহলে অত্যন্ত জনপ্রিয়
কার্যক্রম।
মার্চেন্ডাইজিং বর্তমানে একটা বিশেষ ব্যবসায় হিসেবেও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এরূপ
ব্যবসায়ীরা উৎপাদকের নিকট থেকে পণ্য ক্রয় বা সংগ্রহ করে তাদের অপূর্ব কৌশলে তা
ক্রেতাদের নিকট উপস্থাপন করে।
মধ্যস্থ ব্যবসায়ী বা কমিশন এজেন্ট হিসেবে মার্চেন্ডাইজার গ্রাহক জোগাড় করতে পারলে
উক্ত বিক্রয় চুক্তির উপর সে কমিশন পায়। গার্মেন্টস শিল্প মালিকগণ মার্চেন্ডাইজিং
অফিসার নিয়োগ করেন। তাদেরও কাজ হলো উৎপাদিত পণ্য বিদেশী ক্রেতা বা বায়িং
হাউজগুলোর নিকট সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। যাতে বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করা যায়।
মার্চেন্ডাইজারগণ বিদেশি ক্রেতা জোগাড় করতে পারলে বায়িং হাউজের ন্যায় অনেক সময়
জাহাজে পণ্য বোঝাই পর্যন্ত দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে। আমাদের দেশে হাউজিং সেক্টরেও
মার্চেন্ডাইজিং ব্যবসায় বিস্তার লাভ করছে।
স্টক এক্সচেঞ্জ (Stock Exchange)
সহজ অর্থে শেয়ার বাজার হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা অনুমোদিত স্থান যেখানে
এর তালিকাভুক্ত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার ও ঋণপত্র কেনা-বেচা করা হয়।
প্রকৃত অর্থে, যে সুসংহত বাজারে বা স্থানে এর তালিকাভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি
কোম্পানির শেয়ার-সিকিউরিটিজ নিয়মিতভাবে ও নির্ধারিত বিধি অনুযায়ী ক্রয়-বিক্রয় করা
হয়ে থাকে তাকেই স্টক এক্সচেঞ্জ বলে।
১৭৭৩ সালে লন্ডনের Sweeting Alley তে এ ধরনের একদল ব্যবসায়ী (Jobber) একটা ভবন
ক্রয় করে সর্বপ্রথম এটাকে এরূপ ব্যবসায়ের স্থানে পরিণত করে। এ ভবনটিই পৃথিবীর
ইতিহাসে সর্বপ্রথম স্টক এক্সচেঞ্জ বা শেয়ার বাজার নামে অভিহিত হয়। শেয়ার বাজারের
নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়:
- শেয়ার বাজার হলো একটা সংগঠিত বাজার;
- এ বাজারের সদস্যরাই শুধু যথানিয়মে ক্রয়-বিক্রয়ে অংশ নিতে পারে;
- এ বাজারে শুধুমাত্র তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয় হয় এবং
- এটি একটি মাধ্যমিক বাজার অর্থাৎ মাধ্যমিক শেয়ার এখানে ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে দু'টি স্টক এক্সচেঞ্জ রয়েছে; (১) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ /DSE
(প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৬৪) ও (২) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ / CSE (প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯৫)।
স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন
/ BSEC (প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯৩) রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে।
ক্ষুদ্র খঋণ (Micro-credit)
জামানত দেয়ার সামর্থ্য রাখে না এমন দরিদ্র মানুষদের গ্রুপ তৈরি করে ঋণ দেয়ার
বিশেষ ব্যবস্থা ক্ষুদ্র ঋণ নামে পরিচিতি। দরিদ্র মানুষের ঋণের প্রয়োজন সীমিত।
কিন্তু সেই স্বল্প পরিমাণ ঋণ দিতেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অনীহা। কারণ ঋণ নিতে
হলে জামানত দিতে হয়। যা দিতে এই শ্রেণির মানুষ অসমর্থ।
তাই দরিদ্রকে ঋণ দিয়ে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই-দীর্ঘকাল এটাই মনে করে এসেছে মানুষ।
১৯৬০ এর দশকে বাংলাদেশের সমবায়ের প্রাণপুরুষ ড. আকতার হামিদ খান সমবায়ের ভিত্তিতে
গ্রুপ তৈরি করে দরিদ্র কৃষকদের ঋণ দিয়ে সমবায়ের কুমিল্লা মডেল নামে যে
অগ্রযাত্রার বীজ বুনেছিলেন তা বাংলাদেশে কৃষক সমাজের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও
সাধারণ দরিদ্র মানুষকে নাড়া দিতে পারেনি।
অন্যান্য দেশের অনেক মানুষ এ চিন্তায় যোগ দিলেও এ ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন আরেক
বাংলাদেশী নোবেল বিজয়ী কীর্তিমান পুরুষ ড. মো. ইউনূস। তিনি যে ব্যবস্থার মধ্য
দিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সুখী সমৃদ্ধ পরিবার ও সমাজ গড়ার
স্বপ্ন দেখেছিলেন তাই আজকের দিনে ক্ষুদ্র ঋণ/মাইক্রো-ক্রেডিট নামে বিশ্বখ্যাত।
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ১৯৮৩-তে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের যাত্রা শুরু
হয়। গ্রামীণ ব্যাংক প্রদত্ত রিপোর্ট অনুযায়ী এই ঋণ আদায়ের হার ক্ষেত্রভেদে ৯৫%
থেকে ৯৮%। বাংলাদেশে ব্রাক, আশা, প্রশিকাসহ প্রচুর প্রতিষ্ঠান মাইক্রোক্রেডিটের
সাথে জড়িত। উন্নত দেশগুলোতেও এটি নতুন ব্যবসায় ধারণা হিসেবে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠা
লাভ করেছে।
বিকাশ (Bkash/bkash)
মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রাহকের অর্থ এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে স্থানান্তর ও
এজেন্টের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধের ব্রাক ব্যাংক প্রচলিত ব্যবস্থা বিকাশ নামে
পরিচিত। ব্রাক ব্যাংক লিমিটেড বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মানি এন্ড মোশন
এলএলসি-এর যৌথ উদ্যোগে গঠিত বিকাশ লিমিটেড বাংলাদেশে ব্রাক ব্যাংকের একটা
সাবসিডিয়ারি কোম্পানি।
যা গ্রাহকদের এরূপ সার্ভিসের ব্যবস্থা করে অর্থ প্রেরণ পদ্ধতিতে যুগান্তকারী
পরিবর্তন আনতে সমর্থ হয়েছে। স্বল্প আয়ের লোকদের সহজে, সাশ্রয়ী মূল্যে এবং আস্থার
সাথে আর্থিক লেনদেন করতে সহায়তা করা এর লক্ষ্য। বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রায় ষোল
কোটি লোকের ৭০% গ্রামে বাস করে। এ দেশের সামর্থ্যবান মাত্র ১৫% লোক ব্যাংকের সাথে
লেনদেন করে থাকে।
বাংলাদেশের সাধারণ পরিবারের প্রচুর মানুষ এখন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরি,
ব্যবসায় বা অন্য কর্মে নিয়োজিত। তাই এরা পরিবারের নিকট ব্যাংকিং পন্থায় সহজে টাকা
পাঠাতে আগ্রহী। এছাড়াও নানান প্রয়োজনে অন্যের নিকট টাকা পাঠানোর প্রয়োজন হয়। আগে
ডাকঘরের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হলেও তা সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য।
অথচ এ দেশের সক্ষম ৮০% এর বেশি লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। এই মোবাইল ফোনের
মাধ্যমে হিসাব খুলে টাকা পাঠানোর সুবিধা দানে BKash যে ভূমিকা রাখছে তা এক কথায়
অনন্য। BKash এর সুবিধা নিতে হলে সেবাগ্রহীতাকে স্থানীয় বিকাশ কেন্দ্রে ফরম পূরণ
করে মোবাইল নম্বরসহ নাম এন্ট্রি বা বিকাশ মোবাইল একাউন্ট খুলতে হয়।
এরূপ হিসাবে যে কেউ টাকা জমা দিতে চাইলে স্থানীয় বিকাশের এজেন্টের অফিসে টাকা জমা
দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। অতঃপর তা হিসাবগ্রহীতার হিসাবে জমা হয়। হিসাবগ্রহীতা এখান
থেকে সুবিধামতো টাকা উঠিয়ে খরচ করতে পারে। এতে গ্রাহক সঞ্চয় সুবিধাও লাভ করে
থাকে। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে গ্রাহকের মোবাইল নম্বরই হিসাব নম্বর হিসেবে বিবেচিত
হয়।
আউটসোর্সিং ব্যবসায় (Outsourcing Business)
নিজে বা নিজ প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগ না দিয়ে অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে
দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়া হলে তাকে আউটসোর্সিং বলে। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অন্যের
ফরমায়েশ অনুযায়ী নিজে বা লোক নিয়োগ দিয়ে অন্যের আউটসোর্সিং-এর কাজ করে আয় উপার্জন
করে তার এরূপ কাজকে আউটসোর্সিং ব্যবসায় বলা হয়ে থাকে।
যে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিং কাজে নিয়োজিত থেকে আয় করে তাকে
ফ্রি-ল্যান্সার (Free-lancer) বলা হয়। সাধারণত 'ফ্রি-ল্যাঞ্চার' শব্দটি ব্যক্তি
পর্যায়ে কাজ করে দেয়ার সাথেই মূলত সম্পর্কিত। অন্যের অধীনে চাকরি না করে
ফ্রি-ল্যান্সিং এখন জনপ্রিয় বৃত্তি বা কাজ। একটা প্রতিষ্ঠান সব কাজ নিজেরা না করে
কিছু কাজ চুক্তির মাধ্যমে অন্যের নিকট থেকে করিয়ে নিতে পারে, সব ক্রয় নিজেরা না
করে অন্যের মাধ্যমে কিছু ক্রয় করিয়ে নিতে পারে,
সব লোক নিজেরা নিয়োগ না দিয়ে বাইরের প্রতিষ্ঠান থেকে লোক নিয়ে এসে চুক্তির
মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিতে পারে-চুক্তির মাধ্যমে এরূপ কাজ করে দেয়া আউটসোর্সিং
ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত। আউটসোর্সিং-এর বড় সুবিধা হলো এক্ষেত্রে নিজেদের জনশক্তি
নিয়োগ দেয়া, তাদের বেতন, ইনক্রিমেন্ট, পদোন্নতি, অবসরভাতা ইত্যাদির কোনো ঝামেলা
থাকে না। প্রয়োজনে সহজেই কাউকে বাদ দেয়া যায়।
কম্পিউটারে ডাটা এন্ট্রি দেয়ার কাজে অন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নেয়া,
সফট্ওয়্যারে ডাটা এন্ট্রি দেয়ার কাজ অন্যকে দিয়ে করানো বা এ ধরনের কাজ করে
দেয়া-এভাবে নানান কাজে উন্নত বিশ্বে আউটসোর্সিং ব্যবসায়ের যাত্রা শুরু। যা এখন
নানানভাবে বিকশিত হয়েছে। ধরা যাক, নিশাত গার্মেন্টস বিদেশ থেকে দশ লক্ষ শার্ট
বানানোর বড় ফরমায়েশ পেয়েছে।
তারা দুই লক্ষ করে তিনটা গার্মেন্টস থেকে শার্ট বানিয়ে ও নিজেরা। বাকিটা উৎপন্ন
করে শার্ট সরবরাহ করলো। এক্ষেত্রে নিশাত গার্মেন্টস আউটসোর্সিং ব্যবসায়ের সুবিধা
নিয়েছে দু'টি পাশাপশি অবস্থানরত ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম সকল দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নিজেরা
নিয়োগ না দিয়ে বৃত্তির ভিত্তিতে দাপ্ত প্রতিষ্ঠান দু'ধরনের দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ
দিয়েছে।
এক্ষেত্রে নিয়োগকৃত ইঞ্জিনিয়ার নিজের কাজ ছাড়াও অন্য ফার্মটির কাজে সহায়তা করে।
এক্ষেত্রেও আউটসোর্সিং ব্যবসায়ের সহায়তা নেয়া হয়েছে বলা হবে। বর্তমান বিশ্বে
উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ নানানভাবে আউটসোর্সিং ব্যবসায়
সুবিধা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
যেমন-নিরাপত্তা প্রহরী স্থায়ীভাবে নিয়োগ না দিয়ে সিকিউরিটি কোম্পানির সাথে চুক্তি
করা হচ্ছে। এতে ব্যয় কমছে। কর কম দিতে হচ্ছে। এভাবে সিকিউরিটি কোম্পানির ন্যায়
আউটসোর্সিং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
ডাটা এন্ট্রি ব্যবসায় (Data Entry Business)
ডাটা এন্ট্রি হলো কম্পিউটারের মাধ্যমে একটা নির্দিষ্ট ধরনের ডাটা একস্থান থেকে
অন্যস্থানে বা এক প্রোগ্রাম থেকে আরেক প্রোগ্রামে প্রতিলিপি তৈরি করা। এরূপ কাজ
করে দেয়ার ব্যবসায়কে আউটসোর্সিং ব্যবসায় বলে। এক্ষেত্রে হাতে লেখা কোনো তথ্যকে
কম্পিউটারে টাইপ করা হয় অথবা কম্পিউটারের কোনো একটা প্রোগ্রামের ডাটা একটা
স্প্রেড শিট ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
কম্পিউটার ব্যবহারের শুরু থেকেই ডাটা এন্ট্রির ধারণা চলে এসেছে এবং তথ্য
প্রযুক্তির বিকাশের ধারার সাথে পাল্লা দিয়ে ডাটা এন্ট্রির কাজ বা এর ব্যবসায়ও
বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধরা যাক, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট তাদের পুরনো লিখিত ও সংরক্ষিত
ফাইলগুলোকে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করতে চায়। এখানে অনেক কাজ।
মনে করি, একটা কোম্পানি এই ফাইলের তথ্যগুলোকে এন্ট্রি দিয়ে যথানিয়মে এগুলোকে
ফরমেট করে দেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এখানে তারা যে কাজ করবে এটা ডাটা এন্ট্রি
ব্যবসায় নামে খ্যাত। ডাটা এন্ট্রি ব্যবসায়ের কাজে কী ধরনের দক্ষ অপারেটরের
প্রয়োজন হবে তা প্রজেক্টের ধরনের ওপর নির্ভর করে।
তবে আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস থেকে কোনো কাজ পেতে চাইলে দ্রুত ইংরেজি টাইপ করতে
অভিজ্ঞ অপারেটর আবশ্যক। এছাড়া নতুন প্রযুক্তির কম্পিউটারের পাশাপাশি মাইক্রোসফট
ওয়ার্ড ও মাইক্রোসফট এক্সেলে অপারেটরের ভালো জ্ঞান থাকা উচিত। এ ছাড়াও ইন্টারনেট
ও ওয়েবসাইটের ওপর দখল থাকা আবশ্যক।
আন্তর্জাতিকভাবে কাজ পেতে চাইলে ডাটা এন্ট্রির আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেস
সাইটগুলোতে খোজ নিতে হয়। কিছু ভূঁয়া ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে ভালো কাজের মিথ্যা
তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফি আদায় করার চেষ্টা করে। এগুলো পরিহার করা উচিত। বিনা
ফিতে কাজ পাওয়ার জন্যও অনেক ওয়েব সাইট রয়েছে। সেখানে একবার কাজ পেয়ে দক্ষতার
পরিচয় দিতে পারলে পরে কাজ পাওয়া সহজ হয়ে যায়।
কল সেন্টার (Call Center)
কল সেন্টার ব্যবসায় বাংলাদেশে এখনও বিকাশ লাভ না করলেও উন্নত বিশ্বে কল সেন্টার
এখন গুরুত্বপূর্ণ একটা টেলিফোন সেবা ব্যবসায়। কল সেন্টার হলো এমন একটা
কেন্দ্রীভূত অফিস যেখানে টেলিফোনের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গ্রাহকদের
তথ্য পেতে সহায়তা করা হয়।
প্রতিটা অফিসে যেভাবে গণসংযোগ বিভাগ কাজ করে এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠান
সম্পর্কে যে কোনো তথ্য গ্রাহকদের পেতে সহায়তা দেয়, কল সেন্টারের বেলায়
সেন্টারসমূহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের এরূপ গণসংযোগের দায়িত্ব পালন করে। অর্থাৎ এ
ব্যবস্থায় প্রতিটা অফিস সম্পর্কে তথ্য পেতে আলাদা আলাদা অফিসে যোগাযোগ করার কোনো
প্রয়োজন পড়ে না।
কল সেন্টারের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সর্বশেষ তথ্য কল সেন্টার প্রতিষ্ঠানকে
সরবরাহ করে। যেখান থেকে গ্রাহক, পণ্য সরবরাহকারী, সরকারসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট
পক্ষগুলো সহজেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। একটা কল সেন্টারের অধীনে দেশে-বিদেশে
বিভিন্ন এজেন্ট প্রতিষ্ঠান কাজ করে।
টেলিফোনে গ্রাহকদের চাহিদা সংগ্রহ করে দ্রুত এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে
তথ্য প্রত্যাশীকে তথ্য প্রদান করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে এজেন্ট অফিস তথ্য সরবরাহ
করে। এক্ষেত্রে প্রতিটা এজেন্টের কম্পিউটার সেট, টেলিফোন সেট ও হেড সেটের প্রয়োজন
হয়। এই সেটসমূহ একটা টেলিকম সুইচ এবং এক বা একাধিক সুপারভাইজার কেন্দ্রের সাথে
সংযুক্ত থাকে।
একটা নির্দিষ্ট কোম্পানির কল সেন্টার হিসাবে এরূপ সেন্টার কাজ করলে তখন আর সংযোগ
দরকার হয় না। তবে বর্তমানে এই ব্যবসায় এতটা সমৃদ্ধ হয়েছে যে, সর্বত্র নানান তথ্য
আদান-প্রদানে এটি ব্যবহার হচ্ছে। তবে আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ভাষার ওপর
দখল রয়েছে এমন দক্ষ কর্মীর যথেষ্ট অভাব থাকায় এখানে এ ব্যবসায়ের প্রসার ঘটছে না।
কুরিয়ার সার্ভিস (Courier service)
ডাক যোগাযোগের বিকল্প হিসাবে চিঠিপত্র দলিলপত্রাদি ও মালামাল একস্থান থেকে
অন্যস্থান প্রেরণের জন্য বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কুরিয়ার সার্ভিস নামে
পরিচিত। ইংরেজি শব্দ Courier -এর অর্থ হলো দূত বা সংবাদবাহক। বর্তমানে বেসরকারি
ডাক যোগাযোগের ক্ষেত্রে Courier Service শব্দদ্বয় ব্যবহৃত হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬৭ সাল থেকে এরূপ সার্ভিস বেসরকারিভাবে ডাক যোগাযোগ
ব্যবস্থায় অত্যন্ত দ্রুততা ও দক্ষতার পাশাপাশি বিশ্বস্ততার সাথে কর্তব্য সম্পাদন
করে আসছে। বর্তমানে কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যক্রম কার্যত সারা বিশ্বব্যাপী
বিস্তৃত। ১৯৬৭ সাল থেকে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে Adrin Dalsey, Larry Hilbolm
Robert Lay সম্মিলিতভাবে বিশ্বে প্রথম কুরিয়ার সার্ভিস কার্যক্রম প্রবর্তন
করেন।
তারা তাদের তিন বন্ধুর নামের আদ্যক্ষর DHL নিয়ে (Dalseryএর D. Hilbolm এর H এবং
Lay এর L) বিশ্বে প্রথম কুরিয়ার সার্ভিস শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে
কুরিয়ার সার্ভিস চালু হওয়ার পরে ১৯৬৯ সালে এশিয়ায় এর কার্যক্রম শুরু হয়।
চিঠিপত্র, পার্সেল, বুকপোস্ট, চেক ইত্যাদি দেশ-বিদেশে পাঠানোর জন্য ব্যাপক
কার্যক্রম চলতে থাকে।
সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টার মধ্যে চিঠি এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যেকোনো মালামাল প্রাপকের নিকট
পৌঁছাতে কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্বের ১১৮টি দেশে বিস্তৃত এই (DHL)
কুরিয়ার সার্ভিসে একমাত্র এশিয়াতেই ১৪৯টি নিজস্ব বিমান সার্বক্ষণিক কুরিয়ার
সার্ভিস পরিচালনায় নিয়োজিত। বাংলাদেশে কন্টিনেন্টাল, সুন্দরবন ইত্যাদি নামকরা
কুবিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান।
মানিগ্রাম (MoneyGram)
আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সেবা পণ্যের
নাম হলো মানিগ্রাম। মানিগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইনফরমেশন এই ট্রেডনামের মালিক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বৈশ্বিক কল সেন্টার (ডেনভার,
কলারোডায় অবস্থিত) এর সাহায্যে আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ের এজেন্টের সাথে
সম্পর্কযুক্ত। যার ব্যবহার করে স্বল্পসময়ের মধ্যে পৃথিবীর একস্থান থেকে
অন্যস্থানে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অর্থ প্রেরণ করতে পারে।
আর্থিক ফাও টান্সফার ছাড়াও আর্থিক পেপার প্রোডাক্টস; যেমন- শেয়ার, বিল, বন্ড
ইত্যাদি এরূপ প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর করে থাকে। ট্রাভেলস এক্সপ্রেস কোং ইনক, ও
ইন্টিগ্রেটেড পেমেন্ট সিস্টেম ইনক,- এ দু'টি প্রতিষ্ঠান মিলে ২০০৪ সালে মানিগ্রাম
ইন্টারন্যাশনাল ইনক, গড়ে তুলে মানিগ্রাম নামে আর্থিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে
আই. এফ. আই. সি ব্যাংকসহ বেশ কিছু ব্যাংক বাংলাদেশে এ প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট হিসেবে
কাজ করছে। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো-
- মানিগ্রাম বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মানি ট্রান্সফার ব্যবসায়;
- ২০০৬ সালেই প্রতিষ্ঠানটি বিলিয়ন ডলার অর্থ স্থানান্তরের মাইলফলক অতিক্রম করেছে:
- ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১৮ বিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করেছে- এথেকে এর দ্রুত প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত মেলে;
- এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির ১৯৪ দেশে মোট এজেন্টের সংখ্যা ছিল ৩,১০,০০০:
- এ সময়ে সারা বিশ্বের কেন্দ্রীয় আঞ্চলিক ও স্থানীয় অফিসে মোট ২,৬০০ কর্মী কর্মরত ছিল এবং
- এ সময়ে কোম্পানি মানি ট্রান্সফার ও এতদংক্রান্ত আর্থিক সেবা থেকে ১.১৭ বিলিয়ন ডলার আয় করে।'
সফটওয়্যার উন্নয়ন (Software Development)
কম্পিউটারের সাহায্যে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে কোনো সমস্যা সমাধান বা কাজ সম্পাদনের
জন্য ধারাবাহিকভাবে সাজানো নির্দেশের সমষ্টিকেই সফটওয়্যার বলে। ধারাবাহিকভাবে
সাজানোর কাজকেই সফটওয়্যার উন্নয়ন বল হয়ে থাকে। সফটওয়্যার কার্যত হার্ডওয়্যার
ব্যবহারকারীকে ধারাবাহিক নির্দেশনা দিয়ে কার্য সমাধানের পথনির্দেশ করে।
যার সহযোগিতা ছাড়া কার্যত ব্যবহারকারীর তেমন কিছুই করার থাকে না। কম্পিউটার
প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো সুষ্ঠুভাবে কম্পিউটার পরিচালনার জন্য কিছু কমন
সফটওয়্যার কম্পিউটারে স্থাপন ( করে দেয়। সফটওয়্যার বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক
উন্নয়ন করা অবস্থায়ও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠান যখন তাদের প্রয়োজনে আলাদাভাবে সফটওয়্যার উন্নয়ন করতে চায়
তখন তাদের এ ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন পড়ে। সেক্ষেত্রে
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার টিম কাজে লাগিয়ে তা উন্নয়ন ও
স্থাপন এবং পরীক্ষামূলক পরিচালনার মধ্য দিয়ে কার্যকরী ও কার্যক্রম সফটওয়্যার
হস্তান্তর করে।
ব্যাংক, বিমা, শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি প্রত্যেকের আলাদা আলাদা সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয়। একজন
দোকানদার, সাধারণ ব্যবসায়ীও নিজেদের মতো হিসাব, তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনার জন্য
নিজস্ব সফটওয়্যার উন্নয়ন করতে পারে।
একটা কলেজ তাদের ছাত্র বেতন ও ফি সংগ্রহ, ছাত্র-ছাত্রীদের হাজিরা সংরক্ষণ, ফলাফল
তৈরি, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন প্রদান ইত্যাদি কাজে নিজস্ব সফটওয়্যার উন্নয়ন করে
নিতে চাইলে সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে। অতঃপর
তারা কলেজের প্রতিটা কাজ ম্যানুয়ালি কিভাবে সম্পাদিত হয় তা দেখে সেভাবে সফটওয়্যার
তৈরি করে।
এক্ষেত্রে প্রতিটা বিষয় আলাদা আলাদা তৈরি করে পরে তা সমন্বিত করা হয়। পরবর্তীতে
একটা সময় পর্যন্ত ম্যানুয়ালি কাজের পাশাপাশি সফটওয়্যারের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করা
হয়। প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এক সময় দক্ষ ও যথার্থ সফটওয়্যার
প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
মোবাইল সার্ভিসিং (Mobile Servicing)
প্রত্যেকের হাতে হাতে মোবাইল। তাই মোবাইল সেট বিক্রয়কারী কোম্পানিগুলোর সেট
বিক্রয় যেমনি বাড়ছে তেমনি তার সাথে পাল্লা দিয়ে কত কমদামে অধিক সুবিধাসহ মোবাইল
সেট সরবরাহ করা যায় তারও প্রতিযোগিতা চলছে। তাই এ সকল মোবাইল দ্রুত নষ্ট হওয়ার
ঝুঁকিও বাড়ছে। এছাড়া উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন এ সকল মোবাইল চালাতে যেয়ে অপারেটরের
ভুলেও নষ্ট হওয়ার হার বাড়ছে।
এ অবস্থায় মোবাইল মেরামতের জন্য মোবাইল সার্ভিসিং এখন ভালো ব্যবসায়। মোবাইল
সার্ভিসিং-এ দু'ধরনের ব্যবসায় লক্ষণীয়। এক ধরনের ব্যবসায়কে Costomer Care Center
বলা হয়। Nokia, Symphony ইত্যাদি কোম্পানির মোবাইল সার্ভিসিং সেবা আমাদের দেশে
সচরাচর সবারই চোখে পড়ে।
এরা কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে Care Center পরিচালনা করে। Warranty Period এর
মধ্যে বা পরে নষ্ট হলে এরা তা সংগ্রহ করে কোম্পানির নিজস্ব Care Center পাঠায়।
গ্রহণ, কোম্পানির সার্ভিসিং সেন্টারে পাঠানো, সেখান থেকে সার্ভিসিং করিয়ে
গ্রাহককে ফেরৎ দেয়ার জন্য তারা একটা সার্ভিস চার্জ পেয়ে থাকে।
অনেক সময় দক্ষ মেরামতকর্মী নিয়োগ করে Care Center গুলো নিজ দায়িত্বেও অনেক
সময় মোবাইল মেরামতের ব্যবস্থা করে। এর বাইরেও মোবাইল সার্ভিসিং এর আলাদা ব্যবসায়
কেন্দ্র গড়ে তোলা হতে পারে। সব ধরনের মোবাইল সেট মেরামতের লক্ষ্যে এখানে দক্ষ
কারিগর দ্বারা মেরামতের ব্যবস্থা থাকে।
অনেকে Customer Care Center এ যাওয়ার ঝামেলা এড়াতে স্বতন্ত্র এ সকল মোবাইল
সার্ভিসিং সপ-এর সাহায্য নিতে পারে। তবে কম দামী সেট একবার নষ্ট হলে তা সেরে
চালানো কষ্টকর। তাই Warranty Period এর বাইরে যেয়ে এটা না সারিয়ে নতুন সেট কেনাই
উত্তম।
কম্পিউটার ও ফটোকপি সার্ভিস (Computer & Photocopy Service)
আজকাল অধিকাংশ গ্রাম-গঞ্জে বিদ্যুত পৌছে যাওয়ার সুবাদে কম্পিউটার ও ফটোকপি
সার্ভিস একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায় হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
শিক্ষার্থীদের বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন, রেজিস্ট্রেশন, ফরম পূরণ
ইত্যাদি কাজ কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার করে অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে।
কম্পিউটারে ফলাফল প্রকাশিত হওয়ায় ফলাফল সংগ্রহে শিক্ষার্থীদের নিকট এ সার্ভিস
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবেদপত্র তৈরি, ই- মেইলে তথ্য প্রেরণ, তথ্য প্রাপ্তি ইত্যাদির
ক্ষেত্রেও কম্পিউটার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ইন্টারনেট সার্ভিস যেখানেই পৌঁছেছে
সেখানেই কম্পিউটার আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ায় এ সংক্রান্ত ব্যবসায়ও বৃদ্ধি
পাচ্ছে।
একজন গ্রামের শিক্ষিত তরুণ একটা কম্পিউটার, স্ক্যানার, ইন্টারনেট লাইন নিয়ে সহজেই
এ ব্যবসায় শুরু করতে পারে। এতে পাশাপাশি ফটোকপিয়ার বা ফটোস্ট্যাট মেশিন ক্রয় করে
ফটোকপি সার্ভিস দিয়েও একজন বাড়তি আয় করতে পারে। কোনো বই, নোট, দলিলপত্র,
বিজ্ঞপ্তি, মেমো ইত্যাদি হুবুহু নকল করতে এরূপ সার্ভিস অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ
বিবেচিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকান এখন জনপ্রিয়
ব্যবসায়।
আমাদের শেষকথা
আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি
আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা নতুন ব্যবসার আইডিয়ার বিভিন্ন বিষয়
সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এমন বিভিন্ন ধরনের তথ্যমূলক আর্টিকেল
পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে
আজকের মত আমি বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url