মান ব্যবস্থাপনা কি - মান ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি জানেন পণ্যের মান ব্যবস্থাপনা কি? এই
আর্টিকেলটিতে আপনারা মান ব্যবস্থাপনা কি এবং মান ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি মান ব্যবস্থাপনা
সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ
শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
সূচিপত্রঃ মান ব্যবস্থাপনা কি - মান ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
ভূমিকা
মান ব্যবস্থাপনার চারটি প্রধান উপাদান হলো মান পরিকল্পনা, মান নিয়ন্ত্রণ, মানের
নিশ্চয়তা বিধান এবং মান উন্নয়ন। মান ব্যবস্থাপনা কেবল পণ্যের মান নিশ্চিত করে না
পাশাপাশি কিভাবে মান অর্জিত হবে সে ব্যাপারেও নিশ্চয়তা দান করে। মান নিয়ন্ত্রণ
করা উৎপাদন ব্যবস্থাপনার একটি অপরিহার্য কাজ।
মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অপচয় ও উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়, পণ্যের গুণগতমান বৃদ্ধি
পায়, ভোক্তার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। সার্বিক মান
ব্যবস্থাপনা তিনটি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত। যথা- ভোক্তা বা ক্রেতা সন্তুষ্টি,
প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সম্পৃক্ততা, গুণগতমান ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন। মান
ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে BSTI ও ISO গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মান ব্যবস্থাপনা কি
পণ্যের ধারাবাহিক মান উন্নয়নের মাধ্যমে ত্রুটিমুক্ত সর্বোৎকৃষ্ট মানের পণ্য ও
সেবা সরবরাহ করে ভোক্তার আকাঙ্ক্ষা পূরণ, উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা, অপচয় হ্রাস করে
ভোক্তা সন্তুষ্টি ও আনুগত্য সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে মান ব্যবস্থাপনা বলে। অর্থাৎ
ভোক্তার প্রত্যাশা অনুযায়ী পণ্যের মান সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণকে মান
ব্যবস্থাপনা বলে।
এ প্রসঙ্গে Kenneth Rose বলেন, "Quality management refers to quality assurance
and control of processes as well as products to achieve more consistent
quality." (মান ব্যবস্থাপনা হলো মানের নিশ্চয়তা বিধান এবং মানের ক্ষেত্রে অধিকতর
ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য পণ্য ও পণ্য উন্নয়ন প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ বজায়
রাখা)।
আবার John W. Horch বলেন, "Quality management is the empowering and encouraging
of the producer to identify and submit improvements to the product development
process." (পণ্যের উন্নয়ন প্রক্রিয়া চিহ্নিতকরণ ও মান উন্নয়নের জন্য
উৎপাদনকারীদের উপর কর্তৃত্বারোপ এবং তাদের উৎসাহিতকরণকে মান ব্যবস্থাপনা বলে)।
মান ব্যবস্থাপনার আওতায় পণ্যের মান সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা
প্রদান করা হয়। মান ব্যবস্থাপনার চারটি প্রধান উপাদান হলো মান পরিকল্পনা, মান
নিয়ন্ত্রণ, মানের নিশ্চয়তা এবং মান উন্নয়ন। মান ব্যবস্থাপনা কেবল পণ্যের মান
নিশ্চিত করে না পাশাপাশি কিভাবে মান অর্জিত হবে সে ব্যাপারেও নিশ্চয়তা প্রদান করে
মান ব্যবস্থাপনার নিম্নোক্ত বিষয়গুলো দেখা যায়-
- মান ব্যবস্থাপনা সর্বোৎকৃষ্ট মানের পণ্য ও সেবার নিশ্চয়তা দেয়;
- মান ব্যবস্থাপনা ভোক্তা সন্তুষ্টি নিশ্চিত করে যা ভোক্তা আনুগত্য সৃষ্টি করে;
- এটি ভোক্তার প্রকৃত আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পণ্য ডিজাইন এবং পণ্য উন্নয়ন করে;
- মান ব্যবস্থাপনা উচ্চ মুনাফা এবং উচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করে;
- মান ব্যবস্থাপনা পণ্যের অপচয় হ্রাস এবং মজুদ পণ্য কাম্য পরিমাণে রাখতে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায়, সর্বোৎকৃষ্ট মানের পণ্য ও সেবার নিশ্চয়তা বিধান, ভোক্তা
সন্তুষ্টি ও আনুগত্য সৃষ্টি, উচ্চ মুনাফা ও উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা, পণ্যের অপচয়
হ্রাস ও মজুদ পণ্যের কামান্তর বজায় রাখার প্রক্রিয়াকে মান ব্যবস্থাপনা বলে।
মান ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
মান ব্যবস্থাপনার সাহায্যে পণ্যের ত্রুটি দূর করে ভোক্তার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী
সর্বোৎকৃষ্ট মানের পণ্য "Just in time" এ সরবরাহ করা হয়। এতে ভোক্তা সন্তুষ্টি ও
আনুগত্য বৃদ্ধি পায় এবং সামগ্রিকভাবে অপচয় হ্রাস পায়। পণ্যের সঠিক মান নিশ্চিত
করে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে টিকে থাকতে মান ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম যা
নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
- সর্বোৎকৃষ্ট পণ্য ও সেবার মানের নিশ্চয়তাঃ পণ্যের কার্যকারিতা, নির্ভরযোগ্যতা, স্থায়িত্বতা ইত্যাদি দ্বারা পণ্যের মান পরিমাপ করা যেতে পারে। মান এমন একটি পরিমাপক যা দ্বারা প্রতিযোগী কোম্পানি থেকে কোন কোম্পানিকে পৃথক করা যায়। মান ব্যবস্থাপনার সাহায্যে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়। যার মাধ্যমে সর্বোৎকৃষ্ট মানের পণ্য বা সেবা পাওয়া যায়।
- ভোক্তা সন্তুষ্টি ও আনুগত্য সৃষ্টিঃ সর্বোৎকৃষ্ট মানসম্মত পণ্য ভোক্তার সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি ভোক্তা আনুগত্য সৃষ্টি করে। ভোক্তারা যে ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহার বা ভোগ করে সন্তুষ্টি অর্জন করে বার বার সেই ব্র্যান্ডের পণ্য ক্রয় করে।
- পণ্যের ত্রুটি দূরঃ মান ব্যবস্থাপনা পণ্যকে ত্রুটি মুক্ত করে এবং উচ্চ গুণগতমানের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এছাড়াও মান ব্যবস্থাপনা নিয়মিতভাবে পণ্যের মান উন্নয়নের নিশ্চয়তা প্রদান করে।
- পণ্য ডিজাইন করাঃ ভোক্তার প্রয়োজন, অভাব, চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে বাজার গবেষণার মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যায়। এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে পণ্য উৎপাদন করলে উক্ত পণ্য ভোক্তার আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হয়।
- উচ্চ উৎপাদনশীলতা ও মুনাফাঃ মান ব্যবস্থাপনার সাহায্যে কর্মীদের আর্থিক ও অনার্থিক প্রেষণা প্রদান করা হয়। ফলে উৎপাদন ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষে উচ্চ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয়।
- অপচয় হ্রাসঃ মান ব্যবস্থাপনার অধীনে কর্মীরা টীম ওয়ার্কের ভিত্তিতে কাজ করে। এ সকল কাজের মধ্যে সুসমন্বয় বজায় থাকে ফলে অপচয়ের পরিমাণ হ্রাস পায়।
- পণ্যের মানে নিশ্চয়তাঃ মান ব্যবস্থাপনা পণ্যের মানের নিশ্চয়তা প্রদান করে। পণ্যের মানের মধ্যে পণ্যের কার্যকারিতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং স্থায়িত্বতা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। কোম্পানি মান ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পণ্যের মানে নিশ্চয়তা প্রদানের পাশাপাশি নতুন পণ্য ডিজাইন করতে পারে।
- মুনাফা বৃদ্ধিঃ মানসম্মত পণ্য ও সেবা কোম্পানির সুনাম সৃষ্টি করে। এইভাবে অর্জিত সুনামের সাহায্যে কোম্পানি নতুন নতুন ভোক্তা বা ক্রেতা খুঁজে পায়। ফলে বিক্রয় ও মুনাফা বৃদ্ধি পায়।
- মজুদ মালের খরচ হ্রাসঃ মান ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির আওতায় গুদামে কম পরিমাণ মজুদ পণ্য রাখলেও চলে। কারণ মান ব্যবস্থাপনার আওতায় এমনভাবে গুদামে মজুদ পণ্য রাখা হয় যাতে পণ্যের অপচয় হ্রাস পায়।
- উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধিঃ মান ব্যবস্থাপনার আওতায় অপচয় হ্রাস পায়, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং সর্বোৎকৃষ্ট মানের পণ্য উৎপাদনের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। ফলে মোট উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- ঝুঁকি হ্রাসঃ মান ব্যবস্থাপনার ফলে ভোক্তার অনুগত্য সৃষ্টি হয়, ভোক্তা পণ্য ভোগ বা ব্যবহার করে সন্তুষ্ট হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়।
- উৎপাদক ও সরবরাহকারীর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টিঃ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল সরবরাহকারী একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এই পারস্পরিক সম্পর্ক উক্ত প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সামর্থ্য বৃদ্ধি করে থাকে। এক্ষেত্রে মান ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই তাদের মধ্যকার সম্পর্ক সুদৃঢ় করে।
- কর্মীদের সম্পৃক্ততাঃ প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে যদি মান ব্যবস্থাপনায় সকল কর্মীদের সম্পৃক্ততা বজায় রাখা যায় তাহলে সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি সাধিত হয়।
- উৎপাদন ব্যয় হ্রাসঃ মান ব্যবস্থাপনার সাহায্যে অপচয় হ্রাসের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য উপকরণের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। ফলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়।
- প্রতিযোগিতার সামর্থ্য বৃদ্ধিঃ মান ব্যবস্থাপনার ফলে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়। পাশাপাশি পণ্যের মান উন্নত হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করার সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়।
- মানের উন্নয়নঃ প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান মান ব্যবস্থাপনার সাহায্যে সফলতা অর্জন করতে পারে। এতে পণ্যের মানের ধারাবাহিক উন্নয়ন ঘটে এবং ভোক্তা সন্তুষ্ট হয়। ফলে প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকে।
- ক্রেতা ধরে রাখাঃ ধারাবাহিকভাবে উৎপাদিত মানসত্তর পণ্য প্রতিষ্ঠানের জেতা। ধরে রাখতে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায়, মান ব্যবস্থাপনা পণ্য মান উন্নয়ন করে পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের
আস্থা বৃদ্ধি করে, উৎপাদক ও ক্রেতার মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে এবং অপচয় ও ঝুঁকি
হ্রাস করে। সর্বোপরি, ব্যবসায় ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে টিকে থাকতে বা
সাফল্য লাভের নিশ্চয়তা বৃদ্ধিতে মান ব্যবস্থাপনার শুরুত্ব অপরিসীম।
মান ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি
পণ্যের ধারাবাহিক মান উন্নয়নের মাধ্যমে ত্রুটিমুক্ত সর্বোৎকৃষ্ট মানের পণ্য ও
সেবা সরবরাহ করে ভোক্তার আকাঙ্ক্ষা পূরণ, উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা এবং অপচয় হ্রাস
করে ভোক্তা সন্তুষ্টি ও আনুগত্য সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে মান ব্যবস্থাপনা বলে। নিম্নে
মান ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি আলোচনা করা হলো-
- মান নির্ধারণঃ পণ্যের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য যেমন- পণ্যের আকার, রং, ডিজাইন ইত্যাদি যা ভোক্তা বা ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম তাকে পণ্যের মান বলে। পণ্য উৎপাদনের পর উক্ত পণ্যের মান নির্ধারণ করা মান ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান কাজ।
- মান নিয়ন্ত্রণঃ পূর্ব নির্ধারিত মান অনুযায়ী পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা এবং মানের বিচ্যুতি হলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা মান ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান কাজ।
- প্রশিক্ষণ দানঃ পণ্যের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা মান ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান কাজ।
- প্রেষণা দানঃ মান ব্যবস্থাপনার নীতি অনুসারে কর্মীদের কাজে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য প্রেষণা দান করা আবশ্যক।
- তথ্য প্রদানঃ ভোক্তার সন্তুষ্টিবিধানের লক্ষ্যে পণ্যের গুণগত মান, কার্যকারিতা, স্থায়িত্বতা ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য ভোক্তাদের মধ্যে সরবরাহ করা মান ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ।
- গবেষণা পরিচালনাঃ নতুন নতুন পণ্য উন্নয়ন, বর্তমান পণ্যের মান উন্নয়ন, পণ্যের নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য সংযোজন ইত্যাদি কারণে গবেষণা কার্য পরিচালনা করতে হয়।
- পণ্যের ডিজাইনঃ পণ্যের আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য ডিজাইন করা মান ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান কাজ।
- উৎপাদন উপকরণ সংগ্রহঃ পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে উৎপাদন উপকরণ সংগ্রহ করা মান ব্যবস্থাপনার কাজ।
- যোগাযোগ রক্ষাঃ মান ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান কাজ হলো যোগাযোগ রক্ষা করা। এখানে 'কোম্পানিতে কর্মরত বিভিন্ন ব্যক্তি ও কোম্পানির বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়।
- উৎপাদন পরিচালনাঃ উৎপাদন কাজ পরিচালনার সাথে বিভিন্ন ব্যক্তি জড়িত থাকে। এছাড়া উৎপাদন পরিচালনার জন্য নানা ধরনের যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়। তাই ব্যক্তিবর্গ ও যন্ত্রপাতি পরিচালনা করা মান ব্যবস্থাপনার কাজ।
- দক্ষ কর্মী নিয়োগঃ পণ্যের মান বৃদ্ধি, পণ্য উৎপাদন, বিপণন ইত্যাদি ক্ষেত্রে মান নিশ্চিত করার জন্য দক্ষ কর্মী বাহিনী নিয়োগ দান মান ব্যবস্থাপনার কাজ। কেননা প্রতিষ্ঠানের সাথে দক্ষ কর্মীরা যত বেশি একাত্ব হয়ে সংশ্লিষ্ট থাকবে ততই কাজে উৎসাহ পাবে। ফলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
- বাজার শেয়ার বৃদ্ধিঃ প্রত্যেক বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হলো বাজার শেয়ার বা ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি করা। পণ্যের মান উন্নয়ন করে উন্নত ক্রেতা সেবা প্রদানের মাধ্যমে বাজার শেয়ার বৃদ্ধি করা মান ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান কাজ।
- ধারাবাহিক উন্নয়নঃ পণ্য মানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা মান ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ। পণ্যের ধারাবাহিক মান উন্নয়ন করে মান ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অবদান রাখে।
- প্রতিযোগিতার সামর্থ্য বৃদ্ধিঃ মান ব্যবস্থাপনা পণ্য মান ও পণ্য মূল্যের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সামর্থ্য অর্জনে সহায়তা করে। মান ব্যবস্থাপনার ফলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়। ফলে মূল্য প্রতিযোগিতার সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়। আবার মান ব্যবস্থাপনার কারণে পণ্যের মান বৃদ্ধি পায় এবং উচ্চ মানসম্পন্ন পণ্যের প্রতিযোগিতা করার সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়।
পরিশেষে বলা যায়, মান ব্যবস্থাপনা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা,
সামগ্রিক ব্যয় হ্রাস, ত্রুটিপূর্ণ উৎপাদন শূন্যের কোঠায় নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি
কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে।
মান ব্যবস্থাপনা নীতি
বেশ কিছু দর্শন বা নীতির আলোকে মান ব্যবস্থাপনা ধারণাটি পরিচালিত হয়। নিম্নে মান
ব্যবস্থাপনার নীতি বা দর্শনসমূহ আলোচনা করা হলো-
- ক্রেতা বা ভোক্তা সন্তুষ্টিঃ ক্রেতা বা ভোক্তাদের রুচি, প্রয়োজন, অভাব, চাহিদা, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের উপযোগী পণ্য উৎপাদন করে ক্রেতা বা ভোক্তা সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হয়। তাই বলা যায়, ভোক্তা সন্তুষ্টি মান ব্যবস্থাপনার অন্যতম দর্শন বা নীতি।
- পণ্যের ধারাবাহিক মান উন্নয়নঃ মান ব্যবস্থাপনা একটি ধারাবাহিক মান উন্নয়ন প্রক্রিয়া। দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য সময়ের পরিবর্তনে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য ক্রেতা বা ভোক্তাদের মাঝে সরবরাহ করা হয়।
- কর্মী সংশ্লিষ্টতাঃ কর্মী সংশ্লিষ্টতা কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের সাথে একাত্ব হয়ে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে। মান ব্যবস্থাপনা দর্শনের আওতায় কর্মীদের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হয়। ফলে তারা কাজে আন্তরিক হয় এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষে উন্নত গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
- দক্ষ কর্মী নিয়োগঃ উন্নত গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন, পণ্যের মান বৃদ্ধি, বিপণন ইত্যাদি ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীবাহিনী নিয়োগদান মান ব্যবস্থাপনার অন্যতম নীতি বা দর্শন।
- প্রশিক্ষণ ও প্রেষণা দানঃ পণ্যের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং কাজে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য প্রেষণা দান মান ব্যবস্থাপনার অন্যতম দর্শন বা নীতি।
- ক্রেতা বা ভোক্তাদের যথাযথ তথ্য প্রদানঃ মান ব্যবস্থাপনা পণ্যের উপকারিতা, স্থায়িত্বতা, কার্যকারিতা, গুণগত মান, উৎপাদনকারী, উৎপাদনে ব্যবহৃত উপাদান, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ইত্যাদি সম্পর্কে ত্রুটিহীন তথ্য ভোক্তাদের সরবরাহ করে। ফলে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়।
- পণ্যের ডিজাইনঃ পণ্যের আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য ডিজাইন পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাদের আকর্ষণ সৃষ্টি করে। পণ্যের ডিজাইন যদি যুগোপযোগী হয় এবং ব্যবহার উপযোগিতা বৃদ্ধি করে তাহলে ঐ পণ্যের ক্রেতার সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। পণ্যের আধুনিক ডিজাইন মান ব্যবস্থাপনার অন্যতম নীতি বা দর্শন।
পরিশেষে বলা যায়, মান ব্যবস্থাপনা উপরিউক্ত নীতি বা দর্শন অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
আমাদের শেষকথা
আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি
আর্টিকেলটিতে আপনারা মান ব্যবস্থাপনা কি, মান ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব, মান
ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী এবং মান ব্যবস্থাপনার নীতি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত
জানতে পেরেছেন। এমন বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত
ভিজিট করুন। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত আমি বিদায় নিচ্ছি, আল্লাহ
হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url