সময়ানুবর্তিতা রচনা: জীবনে শৃঙ্খলা আনার গুরুত্ব ও উপায়

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি সময়ানুবর্তিতা রচনাটি খুজছেন? যদি খুজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই ব্লগ পোস্টে আপনাদের জন্য সময়ানুবর্তিতা রচনাটি তুলে ধরেছি।
সময়ানুবর্তিতা রচনা
অন্যান্য যে সকল গুরুত্বপূর্ণ রচনা রয়েছে এর মধ্যে সময়ানুবর্তিতা রচনাটি অন্যতম। আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে সময়ানুবর্তিতা রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ সময়ানুবর্তিতা রচনা: জীবনে শৃঙ্খলা আনার গুরুত্ব ও উপায়

ভূমিকা

'বার বার কারো পানে ফিরে চাহিবার
নাই যে সময়
নাই নাই।' রবীন্দ্রনাথ
সময়ের ভটভূমিতেই মানুষের ভাঙা-গড়ার ইতিহাস। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের, অন্য থেকে মৃত্যুর অন্তহীন এক লীলা। নদীর স্রোতের মতোই বহমানুহ চর্চার ধর্ম। কারো জন্যই তার অপেক্ষা নেই বলেছ কোজেন থেকে মৃত্যুর আবাধীন পিছুটান। মুহূর্তের জন্যও সে থামে মটুকু খ চলে। চলে আর চলে। মহাকালের সেই অধ্যাদেশই কোনো কিছুর জন্যই আসক্তি, বিরাটত সময়যায়া থেকে যে-খন্ডসময়টুকু মানুষ তার জীবন রচনার জন্য পায় তা এত দূর্গত, অত মূল্যবান যে মানুষকে চিরকাল হাহাকার করতে হয়-'নাই যে সময়, নাই নাই'। নদী সমুদ্রে গিয়ে তার কলতান থামায়। মানুষ মল্যবান কমানুষকে চিরকা পূর্ণতা খোঁজে। যে সময়টুকু মানুষ নিজের জীবনে লাভ করে তাই পৃথিবীতে টিকে থাকার সম্বল। তাই সংসারে এক মুহূর্ত থেমে থাকার উপায় নেই, একটু সময় নষ্ট করার অবসর নেই।

সময়ের গুরুত্ব

মানুষের জীবনে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো তার নিজের জীবন, আর জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো সময়। সময় সবার জন্যই মূল্যবান সম্পদ। সময়কে মূল্যবান সম্পদ বলা হলেও, সময়কে কখনোই মূল্যমানে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। কেননা শার্ষিবজীবনের কোনো কিছুর বিনিময়েই চলে যাওয়া সময়কে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। 'একটা দিন চলে যাওয়া মানে জীবন থেকে একটা দিন ঝরে যাওয়া' (-রবার্ট ব্রাউনিং। 

মানবজীবনের এই দুর্লভ সময়কে যথার্থভাবে কাজে লাগানোর মধ্যেই জীবনের সার্থকতা সূচিত হয়। সময় অনন্ত এক দুর্লভ ঐশ্বর্য। তাই সময়ের মূল্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন হতে হয়। জীবন সীমাবদ্ধ, সংক্ষিপ্ত। এই সংক্ষিপ্ততার জন্যই জীবনের এত মধুময় আকর্ষণ। জীবনের একপ্রান্তে জন্ম, অন্যপ্রান্তে মৃত্যু ("Life is a vision or a watch between a sleep and a sleep)।

জন্ম-মৃত্যুর আলিঙ্গনে জীবন সদা কুণ্ঠিত। জীবনের প্রারতেও ঘুম, অন্তিমেও ঘুম। মাঝখানে ক্ষণিকের জন্য চোখ মেলে চাওয়াই জীবন। জীবন তাই অনন্ত ধাবমান সময় থেকে কতগুলো খণ্ডমুহূর্ত আহরণ করার আকুল আকুতি। সেকেন্ড-মিনিট-ঘণ্টা-দিন-মাস বছরের সময়সূচিতে সেই জীবনের ক্ষণ- কখন। আমাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনকে গৌরবময়, স্মরণীয় ও বরণীয় করে তোলার একমাত্র উপায় হলো ছন্দময়, 

গতিময় সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করা। এ বিশ্বের সকল কর্মকান্ড- ক্ষুদ্র বা বৃহৎ, সবকিছুর আধার সময়। আর জীবনের কর্মকাণ্ডের মধ্যেই মানুষের নাম, যশ, খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা, প্রতিপত্তি সবকিছু নির্ভর করে। কিন্তু- 'Life is short but art is long.' ক্ষণস্থায়ী এই জীবনে কাজের অন্ত নেই, তাই সময়ের বিপুল অংশ কাজে লাগিয়ে জীবনকে সফল ও সার্থক করা আমাদের ব্যক্তিক,

সামাজিক ও জাতীয় দায়িত্ব। জীবনের সকল কর্মকান্ড যথাসময়ে শেষ করার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা নির্ভর করে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সময়ের সদ্ব্যবহার করে অনেক সাধারণ লোকও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আবার সময়ের মূল্যবোধ না থাকায় বহু প্রতিভাবান লোকও দুঃখের সাগরে পতিত হয়েছে।

তাছাড়া জীবনের কর্তব্য সম্পাদনের জন্য সময় নির্ধারিত থাকে, অপব্যয় অপচয়ের ফলে তা কমে যায়। তখন সময়ের অভাব বেশি অনুভূত হয়। তাতে সময়ের মূল্য বেশি বলে বিবেচিত হয়। তাই মানবজীবনে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এজন্যই লালন গেয়েছেন- 'সময় গেলে সাধন হবে না।'

সময়ানুবর্তিতা ও সময়ের সদ্ব্যবহার

'মানবজাতির প্রতি বিধাতার শ্রেষ্ঠ দান হচ্ছে মহামূল্য সময়' ( আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়)। সময়ই মানবের জীবনাকাশে উন্নতির অরুণোদয় ঘটায়, আবার সময়ই মানবের জীবনে এনে দেয় অবনতির অমা- অন্ধকার। একমাত্র সময়ের সদ্ব্যবহারেই ক্ষণিকের জীবন চিরকালীন-সার্থকতায় ভাস্বর হয়ে ওঠে। 

মানবজীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে নশ্বর পৃথিবীতে অবিনশ্বর কীর্তি স্থাপন করে যাওয়ার মধ্যেই জীবনের চরম সার্থকতা নিহিত। খণ্ড- কালের সীমিত জীবনে সময়ের যে ভগ্ন-মুহূর্ত মানুষ পায়, তার যথার্থ প্রয়োগেই জীবন সার্থক ও সুন্দর হয়। জগতের মধ্যে এমন একজন মনীষীও খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি বড়ো হয়েছেন, অথচ সময়ের সদ্ব্যবহার সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন না।

জীবনের লক্ষ্য খির করে কর্তব্য অনুযায়ী সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। জীবনের প্রতিটি কাজের জন্যই রয়েছে নির্দিষ্ট সময়। ফলে কোনো একটি কর্তব্য অসম্পূর্ণ থাকলে জীবনে আর তা সম্পূর্ণ করার সুযোগ থাকে না। একটি করতে গেলে অন্যটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

জীবনের প্রত্যেকটি কর্ম পরস্পরের সঙ্গে এমন নিবিড় সম্পর্কযুক্ত যে একটি অসম্পূর্ণ থাকলে অপরটিও যথাযথভাবে সম্পূর্ণ হতে পারে না। ফলে জীবনের প্রতিটি কর্মের অঙ্গহানি ঘটে। অতএব নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করার জন্য বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে। আর এটিই হলো সময়ানুবর্তিতা অর্থাৎ সময় সম্পর্কে সচেতনতা।

সময়ের অবহেলার পরিণাম

জীবনের এই সীমাবদ্ধ অবসরে সময়ের যে ভগ্নাংশটুকু পাওয়া যায়, তার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমেই জীবন সার্থক এবং সুখময় হয়ে ওঠে। কাজেই, জীবনের সীমায়তনের মধ্যে যে পরম মূল্যবান সময় আমরা পাই, তাকে যদি অবহেলা করি, যদি আলস্যভরে সেই দুর্লভ সময় কাটিয়ে দিই, তাহলে সেই সময়ের অপচয়ের বেদনা আমাদের জীবনে একদিন মর্মান্তিক দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়াবে,

এতে কোনো সন্দেহ নেই। তখন বুকফাটা আর্তনাদ, অজস্র অশ্রু বর্ষণে কিংবা অনুতাপের অন্তর্দাহে সেই আলস্যে অতিবাহিত সময় আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। আর এ জন্যই কবি বলেছেন 'রাত্রে যদি সূর্য শোকে ঝরে অশ্রুধারা সূর্য কভু ফেরে নাহি, ব্যর্থ হয় তারা।' সময়কে চোখে দেখা যায় না,

শোনা যায় না তার অনন্ত চলার ধ্বনি। মানুষ তাই ভুল করে। মনে করে সময় স্তব্ধ, অনড়। অলস, কর্মবিমুখ, উদাসীন মানুষ সময়ের মূল্য সম্পর্কে অজ্ঞ, অচেতন। উপযুক্ত সময়ে মহাকাল নেয় এর প্রতিশোধ। দুঃখময়, অভিশাপের জীবন নিয়ে মানুষ শোধ করে তার জন্ম-ঋণ।

আর যাঁরা সময়ের মূল্যবোধে শ্রদ্ধাবনত, নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে ব্যাপক কল্যাণ-কর্মে নিয়োজিত থাকেন, সফলতা তাদের দরজায় এসে কড়া নাড়ে। সময় দুর্লভ। দুর্লভ এই মানবজন্মও। যথাসময়েই আবাদ করতে হয় এই মানব-জমিন। আর তাতেই ফলে সোনার ফসলের পর্যাপ্ত ফলন।

বাঙালির সময়জ্ঞান

বাঙালির যে সময়জ্ঞান কম তা বলাই বাহুল্য। এর মূলে রয়েছে বাঙালির প্রাচীন জীবনযাত্রা থেকে প্রাপ্ত অভ্যাস। দীর্ঘকাল ধরে বাঙালির সমাজজীবনের কাঠামো ছিল গ্রামকেন্দ্রিক। সেখানে জীবনে জটিলতা ছিল কম। অল্প আয়াসে সোনার ফসলে মাঠ ভরে যেত বলে জীবনসংগ্রামের গতি ছিল মন্থর। প্রচুর অবসর মিলত বলে সেকালে বাঙালির জীবনে ছিল বারো মাসে তের পার্বণের আনন্দ। বাইরের জগৎ কোথায় চলছে সেদিকে বাঙালি খুব একটা ফিরে তাকায়নি।

কিন্তু বাঙালির সুখবিভোর অলস-মন্থরতা ভরা জীবনে প্রবল অভিঘাত লাগে এদেশে ইংরেজ আগমনের পর পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রভাবে। দেখা গেল, পৃথিবী যেমন এগিয়ে গেছে তেমনি তাদের সময়-সচেতনতার তুলনায় বাঙালির সময়-সচেতনতা রয়েছে অনেক পিছিয়ে। এরপর বাঙালি সময়-সচেতন হতে চেষ্টা করছে। কিন্তু অলস অভ্যাসের জের এখনো চলছে। বাঙালির সময়জ্ঞান সম্পর্কে যে ঠাট্টা-বিদ্রুপ চলে সে অপবাদ এখনো আমরা মোচন করতে পারিনি।

সময়কে কাজে লাগানোর উপায়

সময়ের যথার্থ মূল্যায়নই মানবজীবনে সাফল্য অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ সোপান। কাজের পরিমাণ বিবেচনা করে সময়কে ভাগ করে নিলে যথাসময়ে সে কাজটি সহজেই সম্পাদন করা যায়। যে সময়ের কাজ, না করে ফেলে রাখলে পরবর্তীকালে তা আর করা হয়ে ওঠে না। স্বর-পরিসর-জীবনের মধ্যে সকল দায়দায়িত্ব সুষ্ঠু ও সে সময়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে হলে উপযুক্ত সময় নির্ণয় করে নিতে হবে।

স্কুল, কলেজে যেরূপ বুটিন মোতাবেক সময়কে কাজে লাগানো হচ্ছে, তেমনি প্রাত্যহিক জীবনেও আহার-বিহার ও বিনোদনের সময় চিন্তা করে সময়কে ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রতিটি খন্ড-সময়কে হিরার খণ্ড কিংবা তার চেয়েও দামি ভেবে কাজে লাগাতে হবে।

ছাত্রজীবনে সময়ানুবর্তিতা

পবিত্র বাইবেলে ঘোষিত হয়েছে, 'পৃথিবীতে প্রত্যেক কাজের একটা উদ্দেশ্য, একটা কাল ও একটা সময় আছে। জন্মাবার একটা সময় আছে, মরবারও একটা সময় আছে। গাছ রোপণ করার একটা সময় আছে আর রোপিত গাছ উপড়ে ফেলারও একটা সময় আছে।

'অনুরূপভাবে সময় সম্পর্কে সচেতন হওয়ার প্রকৃষ্ট সময় ছাত্রজীবন। ছাত্রজীবনে সময়ানুবর্তিতার মূল্য সর্বাধিক। কর্মজীবনের পূর্ণ সফলতা নির্ভর করে ছাত্রজীবনে সময়ের সঠিক মূল্যায়নের ওপর। উপযুক্ত সময়েই কৃষক বীজ বপন করে। তবেই তো ফসলের ঋতুতে তার খামার শস্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। বীজ বপনেই তো ফসলের প্রতিশ্রুতি। তা না হলে খামার শূন্য।

অশ্রুবর্ষণেও সেই অবহেলার ক্ষমা নেই। অনুশোচনায়ও নেই সেই অন্তর্জালার অবসান। মানুষের ছাত্রজীবনই হলো ভবিষ্যৎ ফসলের বীজ বপনের প্রত্যাশিত লগ্ন, সুন্দর ও সার্থক জীবন-গঠনের প্রস্তুতিপর্ব। তখন থেকেই সময়ের সদ্ব্যবহারের শুভযাত্রা। শ্রমকুণ্ঠিত, সময়-অচেতন, অলস ছাত্র শুধু যে পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয় তাই নয়, বৃহত্তর জীবনের ক্ষেত্রেও পদে পদে তার ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাস।

সময়-শিক্ষার প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রই হলো ছাত্রজীবন। প্রসঙ্গত উইলিয়াম শেক্সপিয়র বলেছেন, 'সময়ের প্রতি যাদের শ্রদ্ধা নেই, তারাই পৃথিবীতে নিঃস্ব, বঞ্চিত ও পরমুখাপেক্ষী।' সুতরাং ছাত্রজীবন থেকেই সময়সচেতন হয়ে নিজেকে উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে হবে।

মনীষীদের জীবনে সময়ানুবর্তিতা

সমাজে যাঁরা বরণীয়, জীবনের শুরুতেই তাঁরা সময়-চেতনার মহৎ উপলব্ধিতে উজ্জীবিত হয়েছেন। খন্ড-কালের জীবনেই তাঁরা রেখে যান মৃত্যুঞ্জয়ী স্বাক্ষর। সময়ের শাসনকে স্বীকার করেই জীবন-সাধনায় লাভ করেন পরম সিদ্ধি। সময়ের আরাধনা করেই মানুষ হয়েছে ইতিহাসের কৃতী পুরুষ। কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকের দল ওই সীমিত জীবনেই কত মহৎ সৃষ্টির উপচার সাজিয়ে মহাকালের আরাধনা করেছেন। 

বিজ্ঞানী তাঁর অতন্দ্র সাধনার মধ্য দিয়েই জগৎকে দিয়ে গেছেন নব নব আবিষ্কারের অতুল বৈভব। কত ধর্মনেতা হিংসায় মত্ত ধরণির বুকে এনেছেন প্রেমের প্লাবন। বিশ্বনবি হযরত মুহম্মদ (স), কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সক্রেটিস, আইনস্টাইন, নিউটন, শেক্সপিয়ার, মিলটন, ওমর খৈয়াম প্রমুখ মনীষীর জীবনী আলোচনা করলে দেখা যায়, তাঁরা দিন-রাত তাঁদের উপাসনা,

গবেষণা ও লেখার কাজ চালিয়েছেন। এভাবে সময়ের মূল্যায়নের মাধ্যমেই তাঁরা জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন। সময়ানুবর্তিতার কারণেই ইংল্যান্ড, আমেরিকা জাগান, রাশিয়া, জার্মানি, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কোরিয়া প্রভৃতি দেশ শিক্ষা, আন-বিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতিতে উন্নতির সর্বোচ্চ নিখরে আরোহণ পেরেছে।

সময়ের অপব্যবহার ও আমাদের কর্তব্য

যারা সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগায় না এবং সময়ের মূল্য দেয় না, তাদের স্ত্রীংদাকাশ ঘনকালো মেঘে আচ্ছন্ন। 'ওয়াটার-লু'র যুদ্ধে নেপোলিয়নের সেনাপতি নির্দিষ্ট সময়ের কিছুক্ষণ পরে সসৈন্য যুগ্মক্ষেত্রে হাজির হওয়ায় নেপোলিয়নের শোচনীয় পরাজয় হয়েছিল। প্রসঙ্গক্রমে একটি জার্মান ছড়ার উল্লেখ করছি।

একটি পেরেকের অভাবে ঘোড়ার খুর কাজ করেনি। খুরের সমস্যার ফলে ঘোড়া কাজ করেনি। ঘোড়া না থাকাতে অশ্বারোহী সৈন্য পাওয়া যায়নি। অশ্বারোহী সৈন্যের অভাবে যুদ্ধে হেরে যেতে হলো। যুদ্ধে হেরে যাওয়াতে রাজত্ব হারাতে হলো। আর এ সবকিছুই ঘটেছিল সময়মতো ঘোড়ার খুরের একটি পেরেকের অভাবে। মনে রাখতে হবে যে, 'সময়ের একফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়'।

সময়মতো একটি পেরেকের জোগান না দিতে পারায় জীবনযুদ্ধে হেরে যেতে হয়েছে। এমনিভাবে সময়ের অপব্যবহারে বহু প্রতিভাবান ও শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি জীবনযুদ্ধে হেরে গেছেন। সময়ের কোন মুহূর্তটি যে মূল্যবান তা কেউ জানে না বলেই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকেই মহামূল্যবান ভেবে কাজে লাগাতে হবে। সময়ের অবহেলা মানে জীবনকে অবহেলা করা।

উপসংহার

সময়জ্ঞানই মানুষের সার্বিক উন্নতির চাবিকাঠি। ব্যক্তিজীবনে ও জাতীয় জীবনে সময়ের মূল্য অপরিসীম-"Time is part of modern civilization." পাশ্চাত্য দেশে বলা হয়, 'Time is money.' সুতরাং সময়ই হলো সকল সম্পদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। সময়ের মূল্যবোধই দেশ ও জাতির জীবনকে শৌর্যে-বীর্যে, মননে, অর্থনৈতিক নিশ্চয়তায় করেছে সমুন্নত সাধনার পীঠস্থান।

জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগাতে পারলে ক্ষণস্থায় জীবন জ্ঞান ও কর্মের মহিমায় অনন্তকাল ধরে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। তার অস্তিত্ব অবিনশ্বর ইতিহাসে পরিণত হবে-মরেও সে মানুষের অন্তরে অমর হয়ে থাকবে। যুগে যুগে কবিকণ্ঠে- ধ্বনিত হয়ে উঠবে-
এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ,
মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url