একজন শিক্ষার্থীর দিনলিপি
আপনি যদি একজন শিক্ষার্থীর দিনলিপি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন, কেননা আমরা এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য একজন শিক্ষার্থীর দিনলিপি আলোচনা করেছি।
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ে দিনলিপি লিখতে হয়। আশা করি একজন শিক্ষার্থীর দিনলিপিটিও আপনাদের উপকারে আসবে। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে দিনলিপি পড়ে নেওয়া যাক।
একজন শিক্ষার্থীর দিনলিপি
০৪.০৪.২০২৪, মঙ্গলবার
প্রতিদিনের দিনলিপি লেখার শুরুতেই প্রথমেই আমার জীবন-ভাবনাগুলো কিছু কথায় লিখে রাখি। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। করনা-বিলাসিতা আর কস্যুদের সঙ্গে আড্ডা বার বার গ্রাস করতে চায় মূল্যবান সময়। আমি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে চাই। চাই জীবনকে সার্থক করে তুলতে।
আজ ৪ এপ্রিল। সময় সকাল সাতটা বিশ মিনিট। আমার জীবনে আরো একটি সম্ভাবনাময় দিনের সূত্রপাত হলো। প্রতিটি দিনই আমার কাছে নতুন, সম্ভাবনাময় এবং জীবন গঠনের নতুন প্রত্যয়ে জেগে ওঠার আহ্বান।
ভোর ৫টা- সকাল ৭.২০টা
আজ ঘুম থেকে উঠেছি খুব ভোরে। তারপর হাতমুখ ধুয়ে অজু করে নামাজ পড়ে বাইরে বেরুই। এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করি, একটু ব্যায়ামও করি। তারপর বাসায় ফিরে নাস্তা শেষে পড়তে বসি।
সকাল ৭টা- সকাল ৮টা
সকালে লেখাপড়ার খুব একটা সময় আমি পাই না। তাই যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো একবার চোখ বুলিয়ে নিই। বিশেষভাবে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো, ইংরেজি গ্রামারের কোনো সূত্র ভুলে গেলে তা বার-বার পড়ে মনে রাখার চেষ্টা করি। যে বিষয়গুলো বুঝতে পারিনি সেগুলো খাতায় টুকে রাখি, তারপর কলেজে গিয়ে সহপাঠীদের কাছে বোঝার চেষ্টা করি, প্রয়োজনে স্যারের সাহায্য নিয়ে থাকি। কলেজ ব্যাগ গুছিয়ে নিই।
সকাল ৮টা- সকাল ৯টা
এক ঘণ্টার মধ্যে গোসল, খাওয়া-দাওয়া এবং কলেজের জন্য প্রস্তুত হওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে যায়। বেশ তাড়াহুড়ো করতে হয়। অনেকসময় খাবার না খেয়েই কলেজে ছুটতে হয়। মাকে বলি পেটে খিদে নেই, কলেজ থেকে ফিরে এসে খাব। মা বিষয়টি বুঝেও না বোঝার মতোই থাকেন। তবে সঙ্গে একটা কেক-বিস্কিট হাতে দিয়ে বলেন রিকশায় যেতে যেতে খেয়ে নিস।
রিকশায় বসে খেতে আমার ভালো লাগে না। মায়ের দেয়া খাবার কলেজ-ব্যাগে পড়ে থেকে থেকে পুনরায় বাসায় ফিরে আসে। মা জানতে পারলে নিশ্চয়ই রাগ করবেন। আজকের খাবারটা এক পথশিশুকে দিয়ে দিয়েছি। সে খুব খুশি হলো। তার আনন্দ দেখে মনে হলো তাদের প্রতি আমাদের স্নেহশীল হওয়া কর্তব্য এবং যতটুকু পারা যায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।
সকাল ১টা- দুপুর ২টা
এ সময়টা আমার কলেজেই কাটে। কখনো কখনো তা তিনটে কিংবা চারটায় গড়ায়। তা অবশ্য নির্ভর করে কলেজ রুটিনের ওপর। সচরাচর দুটার মধ্যে কলেজ ছুটি হয়ে যায়। আজ ছুটি হয়েছে আরো এক ঘণ্টা আগে। দ্বিতীয় ঘণ্টার পর কলেজ ছুটি ঘোষণা করেছে। কলেজ উন্নয়ন নিয়ে স্যারদের আজ বিশেষ মিটিং আছে।
দুপুর ২টা- বিকেল ৪টা
এ সময় সাধারণত কলেজে কাটে, না হয় বাসায় কাটে। কখনো কলেজ থেকে এক ঘণ্টা আগে ফিরতে পারলে সে-সময়টুকু গল্পের বই, কিংবা টেলিভিশনে কোনো মুভি দেখি। বন্ধুদের বাসায়ও যাই। আজ বাসায় ফিরে এসেই মায়ের সঙ্গে মার্কেটে যেতে হয়েছে। মা আমার জন্য সুন্দর একটা হাত-ঘড়ি কিনলেন। আমি আনন্দে মাকে জড়িয়ে ধরলাম।
বিকেল ৪টা- সন্ধ্যা ৬টা
এ সময় সাধারণত আমি বাগান করি কিংবা খেলতে যাই। আজকাল যদিও খেলার মাঠ বলতে কিছু নেই। খেলা বলতে এখন যা বোঝায় তা হলো- যন্ত্র নিয়ে খেলা। মোবাইল ফোনে কথা বলা অথবা ফেসবুকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া অথবা কম্পিউটার নিয়ে বসা। আমার এর কোনোটার প্রতিই বিশেষ আগ্রহ নেই। প্রয়োজনে কম্পিউটার ব্যবহার করি।
সন্ধ্যা ৬টা- রাত ১১টা
একটানা দুই ঘণ্টা পড়া শেষে হয় খবর দেখি না হয় টেলিভিশনে কোনো অনুষ্ঠান, বিশেষত নাটক দেখি। সে-সঙ্গে খাওয়া- দাওয়ার কাজটাও শেষ করি। ঘুমুতে যাওয়ার আগে আমি সাধারণত দিনলিপি লিখি। এবং পরবর্তী দিনের কার্যক্রম ঠিক করে ঘুমুতে যাই। বস্তুত একজন অধ্যবসায়ী শিক্ষার্থী হিসেবে রুটিনমাফিক ছকবাঁধা জীবন আমার।
যদিও রুটিনমাফিক ছকবাঁধা জীবনের সঙ্গে আমার অনেক ফেসবুকপ্রিয় সহপাঠী একমত হতে না পেরে বহুতর ঠুনকো যুক্তি এনে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। আমি কিন্তু 'তর্কে জড়াই না, ঠাঁই না পেলে ধৈর্য-বিনয়ে পাশ কেটে যাই'। ইন্টারনেট গুগলে শুধু প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অনলাইনে যুক্ত হই একটা নির্দিষ্ট সময়ে। প্রকৃতার্থে এটা অগ্রাহ্য করার সুযোগ থাকে না, যখন সবাই যা জানে তা নির্দ্বিধায় মেনে নিতে হয়- 'জীবন-গঠনের সর্বোত্তম সময়ের মাইলফলক ছাত্রজীবন'।
জীবনের স্বপ্ন-আশা পূরণের লক্ষ্যে প্রতিদিন এগিয়ে চলি, লক্ষ্যে পৌঁছাতে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্র পরিধিতে প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। ফলে প্রতিদিনই আমার দিনলিপিতে প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয় রকমারি এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি।
আমি কেবল লিখেই চলি - বারছে আমার দিনলিপি,
প্রতিদিন মনে মনে বলি - লক্ষ্যে পৌঁছাতে আর কতটা বাকি
অনন্ত সময়ের দিকে অক্লান্ত হেঁটে চলে স্বপ্ন - আসার জীবন ঘড়ি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url