বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম: সহজ এবং নিরাপদ উপায়

প্রবাসে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জন্য পরিবারের পাশে থাকার একমাত্র পথ হলো অর্থ পাঠানো। এই রেমিটেন্স কেবল পরিবারকেই নয়, দেশের অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করে। তবে অনেকেই জানেন না বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম কীভাবে কাজ করে,
বিদেশ-থেকে-টাকা-পাঠানোর-নিয়ম
কোন মাধ্যম সবচেয়ে নিরাপদ এবং কিভাবে সরকারি প্রণোদনা পাওয়া যায়। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।

সূচিপত্র: বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম: সহজ এবং নিরাপদ উপায়

বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো কেন গুরুত্বপূর্ণ?

প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা প্রতি বছর দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠিয়ে থাকেন। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ রেমিটেন্স তারা বাংলাদেশে প্রেরণ করে থাকেন। এই রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অসাধারণ অবদান রাখে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতও এই রেমিটেন্স থেকে সরাসরি লাভবান হয়। বিদেশ থেকে আসা অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করায় ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ সুবিধা সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হয়, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

রেমিটেন্সের একটি বিশাল ইতিবাচক প্রভাব পড়ে প্রবাসীদের পরিবারগুলোর উপর। দেশের আনুমানিক ১ কোটিরও বেশি পরিবার এই রেমিটেন্সের সুবিধা পান। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে তাদের পরিবারগুলো আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয় এবং শিক্ষাসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়। এতে পরিবারে আর্থিক স্থিতিশীলতা আসে এবং সমাজে দারিদ্র্যের হার কমে।

সব মিলিয়ে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিটেন্স শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পর্যায়েই নয়, বরং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে বিশাল অবদান রাখে।

বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর বৈধতা

বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব অনুমোদিত চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ পুরোপুরিভাবে বৈধ এবং সরকারের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বৈধ চ্যানেল যেমন ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত মানি ট্রান্সফার কোম্পানির মাধ্যমে পাঠানো অর্থ দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখে। এর বিপরীতে, হুন্ডি বা অবৈধ পথে টাকা পাঠানো একটি দণ্ডনীয় অপরাধ, যা দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ।

আইনি চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠালে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা পাওয়া যায়। প্রথমত, সরকার বৈধ পথে প্রেরিত রেমিটেন্সের উপর প্রণোদনা দিয়ে থাকে, যা প্রবাসীদের জন্য একটি অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে কাজ করে। এই প্রণোদনার হার সাধারণত মোট পাঠানো অর্থের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ হিসেবে প্রদান করা হয়, যা প্রবাসীদের জন্য আর্থিকভাবে লাভজনক।

দ্বিতীয়ত, অনুমোদিত চ্যানেল ব্যবহারে অর্থ লেনদেন সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত থাকে। হুন্ডির মতো অবৈধ পদ্ধতিতে টাকা পাঠালে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে এবং সেই অর্থ দেশে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা থাকে না। অথচ বৈধ পথে পাঠানো অর্থ ব্যাংক বা নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পরিবারের কাছে পৌঁছে যায়।

তৃতীয়ত, আইনি পথে পাঠানো অর্থের তথ্য সংরক্ষণযোগ্য এবং হিসাবযোগ্য হয়। এটি ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং ভবিষ্যতে ব্যাংকিং সুবিধা, বিনিয়োগ, বা ঋণ গ্রহণে সহায়ক হয়। সরকারের পক্ষে এই তথ্য ব্যবহার করে রেমিটেন্স প্রবাহ বিশ্লেষণ করাও সহজ হয়, যা নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।

অতএব, প্রবাসীদের উচিত সব সময় বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত চ্যানেল ব্যবহার করে টাকা পাঠানো, যাতে তারা যেমন ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হন, তেমনি দেশের অর্থনীতিও লাভবান হয়।

সরকার অনুমোদিত টাকা পাঠানোর মাধ্যম

বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা যখন দেশে অর্থ পাঠাতে চান, তখন তাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হলো বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত চ্যানেল ব্যবহার করা। এসব বৈধ মাধ্যমের মাধ্যমে টাকা পাঠালে প্রবাসী ও তার পরিবার উভয়ই নিরাপদ ও নিশ্চিত লেনদেনের সুবিধা পান। পাশাপাশি, অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

১. ব্যাংকিং চ্যানেল (Banking Channel):
সবচেয়ে প্রচলিত ও নিরাপদ মাধ্যমগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠানো। বিদেশে বসবাসকারী ব্যক্তি তার স্থানীয় ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের কোনো স্বীকৃত ব্যাংকে অর্থ প্রেরণ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সাধারণত SWIFT কোড ব্যবহার করে ট্রান্সফারটি সম্পন্ন হয়। SWIFT কোড হলো একটি নির্দিষ্ট কোড, যা আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং লেনদেনকে দ্রুত ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়:
  • HSBC Bank (UK বা অন্য দেশ থেকে) → Islami Bank Bangladesh Ltd.
  • Citi Bank → BRAC Bank Ltd.
এই ধরনের ব্যাংক-টু-ব্যাংক লেনদেন স্বচ্ছ, ট্র্যাকযোগ্য এবং নিরাপদ, যা প্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত।

২. রেমিটেন্স পার্টনার বা অনুমোদিত মানি ট্রান্সফার কোম্পানি:
বাংলাদেশ সরকার কিছু নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার কোম্পানিকে রেমিটেন্স পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রবাসীদের দ্রুত ও সহজ উপায়ে টাকা পাঠানোর সুযোগ করে দেয়। বিখ্যাত কিছু অনুমোদিত রেমিটেন্স পার্টনার হলো:
  • Western Union
  • MoneyGram
  • Ria Money Transfer
  • Express Money
এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রেরিত অর্থ স্বল্প সময়ের মধ্যেই দেশের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে যায় এবং সহজে উত্তোলন করা যায়। অনেক সময় প্রবাসীরা নিকটবর্তী এক্সচেঞ্জ হাউজ বা অ্যাপ ব্যবহার করেই এই সার্ভিস গ্রহণ করে থাকেন।

এ ধরনের বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করলে অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা পাওয়া যায় এবং ভবিষ্যতে প্রবাসীর অর্থনৈতিক কার্যক্রমেও এটি সহায়ক হয়। তাই দেশের জন্য দায়িত্বশীল এবং প্রবাসীদের জন্য লাভজনক সিদ্ধান্ত হলো – বৈধ এবং সরকার অনুমোদিত চ্যানেল ব্যবহার করে টাকা পাঠানো।

অনলাইন রেমিটেন্স প্ল্যাটফর্মসমূহ

বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অনলাইন ভিত্তিক রেমিটেন্স সেবাগুলোর জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে যারা প্রবাসে আছেন এবং সহজ, দ্রুত ও ঝামেলামুক্তভাবে দেশে অর্থ পাঠাতে চান, তাদের জন্য এসব অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো অত্যন্ত কার্যকর। স্মার্টফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার করেই ঘরে বসে অনায়াসে টাকা পাঠানো যায়, ব্যাংকে যাওয়ার ঝামেলা নেই, সময়ও বাঁচে। বর্তমানে কিছু অনলাইন রেমিটেন্স সার্ভিস বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
  • Wise (formerly TransferWise): ট্রান্সফার রেট স্বচ্ছ এবং মধ্যস্থ ব্যাংক ফি কম হওয়ায় Wise অনেক প্রবাসীর পছন্দ। এটি রিয়েল-টাইম এক্সচেঞ্জ রেট অনুযায়ী টাকা ট্রান্সফার করে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য বেশি লাভজনক।
  • WorldRemit: মোবাইল মানি, ব্যাংক ডিপোজিট, ক্যাশ পিকআপসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে টাকা পাঠানোর সুযোগ দেয়। সহজ ইন্টারফেস এবং দ্রুত ট্রান্সফারের জন্য এটি জনপ্রিয়।
  • Remitly: রেমিটলি ‘এক্সপ্রেস’ ও ‘ইকোনমি’ নামে দুটি অপশন দেয়। এক্সপ্রেস ট্রান্সফারে দ্রুত অর্থ পাঠানো যায়, আর ইকোনমি ট্রান্সফারে খরচ কম হয়।
  • Xoom (PayPal-এর মালিকানাধীন): PayPal-এর একটি অংশ হিসেবে Xoom অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। এটি দ্রুত টাকা পাঠাতে পারে, এবং প্রাপক সরাসরি ব্যাংক একাউন্ট, ক্যাশ পিকআপ বা মোবাইল মানিতে অর্থ গ্রহণ করতে পারেন।
প্রতিটি অনলাইন রেমিটেন্স সার্ভিসের নিজস্ব সার্ভিস চার্জ, টাকা পাঠানোর সীমা এবং স্থানভেদে ভিন্ন ভিন্ন শর্ত থাকে। তাই এই সেবা ব্যবহারের আগে ভালোভাবে তাদের শর্তাবলী ও চার্জ সম্পর্কিত তথ্য জেনে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়ানো যায় এবং টাকা পাঠানোর অভিজ্ঞতাও হয় মসৃণ ও নির্ভরযোগ্য।

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে টাকা পাঠানো

বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) ব্যবহার করে রেমিটেন্স পাঠানো এবং গ্রহণ করা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে। বিকাশ, নগদ এবং রকেটের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রবাসীরা খুব সহজেই দেশের পরিবারের কাছে অর্থ পাঠাতে পারেন।

এই সেবাগুলোর মাধ্যমে প্রেরক ও প্রাপক উভয় পক্ষই দ্রুত এবং নিরাপদভাবে টাকা লেনদেন করতে সক্ষম হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে বিকাশে রেমিটেন্স পাবেন? বিকাশের মাধ্যমে রেমিটেন্স গ্রহণ করার প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং সুবিধাজনক। তবে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়:

প্রেরককে বিকাশের পার্টনার ব্যবহার করতে হবে:
বিদেশে বসবাসকারী প্রবাসীকে বিকাশের সাথে অনুমোদিত পার্টনার প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন WorldRemit বা TransferGalaxy ব্যবহার করে টাকা পাঠাতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি বিকাশের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানোর সুবিধা দেয়, যা দ্রুত এবং নিরাপদ।

প্রাপককে বিকাশ একাউন্ট চালু রাখতে হবে:
চরেমিটেন্স প্রাপ্তির জন্য প্রাপকের অবশ্যই একটি সক্রিয় বিকাশ একাউন্ট থাকতে হবে। একাউন্ট না থাকলে, প্রাপককে প্রথমে বিকাশ একাউন্ট খুলে নিতে হবে। একাউন্ট চালু থাকলে, সহজেই রেমিটেন্স গ্রহণ করা সম্ভব।

এসএমএস ও অ্যাপে নোটিফিকেশন পাওয়া যাবে:
রেমিটেন্স প্রেরণের পর, প্রাপককে এসএমএস এবং বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পাঠানো হয়। প্রাপক ওই নোটিফিকেশন দেখে সহজেই টাকা উত্তোলন করতে পারেন। এই নোটিফিকেশনটি প্রাপকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি টাকা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে।

এই সিস্টেমটি প্রবাসীদের জন্য একটি সুবিধাজনক উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এটি সময় এবং শ্রম বাঁচানোর পাশাপাশি নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে। এছাড়া, কোনো ব্যাংকে যাওয়ার প্রয়োজন না থাকায় প্রাপকের জন্য এটি আরো সহজ এবং দ্রুত।

টাকা পাঠানোর ধাপসমূহ

বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়। এই প্রক্রিয়া সুষ্ঠু এবং নিরাপদভাবে সম্পন্ন করতে, প্রেরক এবং প্রাপকের পক্ষ থেকে কিছু প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। নিচে টাকা পাঠানোর ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হলো:

প্রেরকের করণীয়:

গ্রাহকের নাম, ঠিকানা, NID/Passport:
প্রেরককে প্রথমে নিজের তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে। এর মধ্যে তার পূর্ণ নাম, ঠিকানা, এবং পরিচয়পত্রের নম্বর যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা পাসপোর্ট নম্বর অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এগুলো রেমিটেন্স প্রেরণের প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাপকের সঠিক তথ্য (নাম, ঠিকানা, ব্যাংক ডিটেইলস):
প্রেরককে অবশ্যই প্রাপকের সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে। এতে প্রাপকের পূর্ণ নাম, বর্তমান ঠিকানা, এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য (যেমন ব্যাংক নাম, অ্যাকাউন্ট নম্বর, এবং SWIFT কোড) অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। সঠিক তথ্যের ভিত্তিতেই রেমিটেন্স প্রক্রিয়া দ্রুত এবং নিরাপদভাবে সম্পন্ন হয়।

রেমিটেন্স এজেন্ট/ব্যাংক নির্বাচন:
রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য প্রেরককে একটি উপযুক্ত রেমিটেন্স এজেন্ট বা ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রেমিটেন্স প্ল্যাটফর্ম বা ব্যাংক চ্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে টাকা পাঠানো সম্ভব। এজেন্ট বা ব্যাংক নির্বাচন করার সময় তাদের সার্ভিস চার্জ, রেট, এবং বিশ্বস্ততা বিবেচনায় নেয়া উচিত।

প্রাপকের করণীয়:

সঠিক রেফারেন্স নম্বর ও পরিচয়পত্রসহ টাকা গ্রহণ:
রেমিটেন্স প্রাপককে সঠিক রেফারেন্স নম্বর এবং পরিচয়পত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা অন্য কোনো বৈধ পরিচয়পত্র) নিয়ে টাকা গ্রহণ করতে হবে। প্রেরক যখন টাকা পাঠান, তখন একটি রেফারেন্স নম্বর দেওয়া হয় যা প্রাপককে রেমিটেন্স গ্রহণের সময় উপস্থাপন করতে হয়।

মোবাইল ব্যাংক/ব্যাংক একাউন্ট রেডি রাখা:
প্রাপকের কাছে যদি মোবাইল ব্যাংকিং (যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট) বা ব্যাংক একাউন্ট থাকে, তবে সে একাউন্টটি সক্রিয় ও প্রস্তুত রাখা উচিত। রেমিটেন্স গ্রহণের সময় একাউন্টের মাধ্যমে অর্থ তোলা বা স্থানীয় ক্যাশ আউট পয়েন্টে নগদ অর্থ গ্রহণ করা যেতে পারে।

এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে, প্রেরক এবং প্রাপক উভয়েই নিরাপদ ও দ্রুতভাবে রেমিটেন্স লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন।

কত টাকা পাঠানো যায়?

বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সীমা না থাকলেও, কিছু ক্ষেত্রে লেনদেনের পরিমাণ অনুযায়ী অতিরিক্ত যাচাই বা প্রমাণ দাখিলের প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত, বিভিন্ন রেমিটেন্স সিস্টেম এবং ব্যাংক তাদের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী লেনদেনের পরিমাণ সীমিত করে থাকে। নিচে টাকা পাঠানোর বিভিন্ন স্তরের জন্য কিছু সাধারণ নির্দেশনা দেওয়া হলো:

১০০০ ডলারের নিচে:
সাধারণত, ১০০০ ডলারের নিচে রেমিটেন্স পাঠানোর সময় কোনো অতিরিক্ত যাচাই বা প্রমাণ দাখিল করার প্রয়োজন পড়ে না। এই পরিমাণ অর্থ সহজেই প্রক্রিয়া হয়ে যায় এবং প্রেরক বা প্রাপককে কোনো অতিরিক্ত তথ্য দিতে হয় না।

৫০০০ ডলারের বেশি:
৫০০০ ডলারের বেশি অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত তথ্য বা প্রমাণ চাওয়া হতে পারে। ব্যাংক বা রেমিটেন্স এজেন্ট প্রেরকের বা প্রাপকের পরিচয় এবং রেমিটেন্সের উদ্দেশ্য যাচাই করার জন্য আরো কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এর মধ্যে প্রেরকের আয়, ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য, বা অন্যান্য সম্পর্কিত ডকুমেন্টেশন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

বিশেষ খাতে (ব্যবসা/বিনিয়োগ):
ব্যবসায়িক লেনদেন বা বিনিয়োগের জন্য পাঠানো অর্থের ক্ষেত্রে আলাদা অনুমোদন প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে যদি কোনো বড় বিনিয়োগ বা ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পর্কিত অর্থ পাঠানো হয়, তবে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা ব্যাংক তাদের নির্দিষ্ট বিধি অনুসারে অতিরিক্ত যাচাই প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে পারে।

এই বিধি-বিধানগুলো রেমিটেন্স সিস্টেম এবং ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রবর্তিত হয়। এগুলোর উদ্দেশ্য হলো অর্থের বৈধতা এবং প্রেরণকারীর আইনগত অবস্থান নিশ্চিত করা, যাতে অবৈধ কার্যক্রম বা অর্থপাচার রোধ করা যায়।

বাংলাদেশ সরকারের রেমিটেন্স প্রণোদনা

বাংলাদেশ সরকার বৈধ রেমিটেন্স প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্রদান করে থাকে, যা প্রবাসীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা। সরকারের এই প্রণোদনা স্কিমের মাধ্যমে, বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানো অর্থের উপর ২.৫% নগদ প্রণোদনা পাওয়া যায়। এটি প্রাপকের জন্য অতিরিক্ত অর্থ লাভের একটি ভালো সুযোগ তৈরি করে।

ধরা যাক, একজন প্রবাসী ১ লাখ টাকা বাংলাদেশে প্রেরণ করছেন। এই ক্ষেত্রে, প্রাপকের জন্য মোট অর্থ হবে ১,০২৫০০ টাকা। এর মধ্যে ২.৫% প্রণোদনা (২৫০০ টাকা) যোগ হবে, যা তাকে অতিরিক্ত পাওয়া যাবে। তবে প্রণোদনা পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত অনুসরণ করা আবশ্যক:

বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করা:
প্রণোদনা পাওয়ার জন্য প্রবাসীকে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক বা অনুমোদিত রেমিটেন্স পার্টনারের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে হবে। বৈধ চ্যানেল ছাড়া পাঠানো অর্থের জন্য এই প্রণোদনা প্রদান করা হবে না।

হুন্ডি বা অবৈধ চ্যানেল নিষিদ্ধ:
হুন্ডি বা অবৈধ পথে পাঠানো অর্থে সরকারী প্রণোদনা দেয় না। অর্থাৎ, যদি প্রবাসী কোনো অবৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে টাকা পাঠান, তবে সে ক্ষেত্রে প্রণোদনা পাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ সরকারের এই প্রণোদনা স্কিম প্রবাসী বাংলাদেশিদের উৎসাহিত করার জন্য এবং বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর জন্যও একটি কার্যকরী পদক্ষেপ।

পাঠানোর সময় যেসব ভুল এড়াতে হবে

বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর সময় প্রবাসীদের কিছু সাধারণ ভুল এড়ানো উচিত, যা তাদের জন্য সময় এবং অর্থের অপচয় হতে পারে। এসব ভুল এড়ানো নিশ্চিত করে যে রেমিটেন্স প্রক্রিয়া সুষ্ঠু এবং নিরাপদভাবে সম্পন্ন হবে। এখানে কয়েকটি সাধারণ ভুলের বর্ণনা দেয়া হলো, যেগুলি পাঠানোর সময় সচেতনভাবে এড়ানো উচিত:

ভুল প্রাপকের তথ্য:
প্রাপককে টাকা পাঠানোর সময় তার সঠিক তথ্য (যেমন নাম, ঠিকানা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস) নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল তথ্য প্রদান করলে, অর্থ প্রাপককে পৌঁছাতে দেরি হতে পারে কিংবা পুরো লেনদেনটি বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই প্রেরককে প্রাপকের তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করে পাঠাতে হবে।

হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো:
হুন্ডি বা অবৈধ পদ্ধতিতে টাকা পাঠানো না শুধুমাত্র আইন বিরোধী, বরং এর মাধ্যমে প্রেরকের অর্থ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশ সরকার বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করে এবং হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই অবশ্যই সরকার অনুমোদিত মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত।

অবৈধ অ্যাপ বা মাধ্যম ব্যবহার:
বর্তমানে অনেক অবৈধ অ্যাপ বা মাধ্যম রেমিটেন্স পরিষেবা দেওয়ার দাবি করে থাকে। এসব অ্যাপ বা মাধ্যমের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এগুলোর মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সময় ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিরাপত্তার জন্য, বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত অ্যাপ বা মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত।

একাধিকবার ছোট অঙ্কে পাঠিয়ে বেশি ফি গুনা:
অনেক সময়, প্রেরকরা ছোট ছোট অঙ্কে একাধিকবার টাকা পাঠাতে চান, যাতে তারা সার্ভিস চার্জ কম মনে করেন। তবে এটি উল্টো হয়ে যেতে পারে, কারণ একাধিক ট্রান্সফারের জন্য অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ গুনা হতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য বেশি খরচে পরিণত হয়। সুতরাং, একবারে বড় অঙ্কে টাকা পাঠানো সবসময় আর্থিকভাবে সুবিধাজনক।

এভাবে রেমিটেন্স পাঠানোর সময় এই সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চললে প্রক্রিয়াটি আরও নিরাপদ, সুষ্ঠু ও দক্ষ হবে।

হুন্ডি বনাম বৈধ রেমিটেন্স

প্রবাসীরা বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে দেশে টাকা পাঠান, তবে হুন্ডি এবং বৈধ রেমিটেন্সের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। নিচে হুন্ডি এবং বৈধ রেমিটেন্সের তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:
  • বৈধতা: হুন্ডি একটি অবৈধ অর্থ পাঠানোর মাধ্যম। এটি সরকার এবং ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অনুমোদিত নয়। অন্যদিকে, বৈধ রেমিটেন্স চ্যানেল সম্পূর্ণরূপে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এবং আইনগতভাবে বৈধ।
  • নিরাপত্তা: হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো অর্থের নিরাপত্তা অনেকটাই অনিশ্চিত এবং তা কখনোই নিশ্চিত করা যায় না। এই পদ্ধতিতে অর্থের গন্তব্য এবং প্রাপ্তি সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। অন্যদিকে, বৈধ রেমিটেন্সের মাধ্যমে পাঠানো অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং এটি অনুমোদিত পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যা নিশ্চিত করে প্রাপকের কাছে অর্থ পৌঁছানো।
  • ট্র্যাকিং: হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পর সেটির কোনো ট্র্যাকিং ব্যবস্থা থাকে না, অর্থাৎ আপনি জানেন না আপনার টাকা কোথায় এবং কখন পৌঁছাবে। কিন্তু বৈধ রেমিটেন্স চ্যানেলে পাঠানো অর্থ পুরোপুরি ট্র্যাকযোগ্য, অর্থাৎ প্রেরক ও প্রাপক উভয়ই লেনদেনের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে পারেন।
  • প্রণোদনা: হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জন্য কোনো ধরনের প্রণোদনা পাওয়া যায় না, কিন্তু বৈধ রেমিটেন্স চ্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রণোদনা পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ সরকার বৈধ রেমিটেন্সের উপর ২.৫% নগদ প্রণোদনা প্রদান করে।
  • শাস্তি: হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানো আইন বিরোধী হওয়ায় এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোর জন্য শাস্তির সম্মুখীন হতে হতে পারে। তবে, বৈধ রেমিটেন্সের মাধ্যমে টাকা পাঠানো আইনসম্মত এবং এতে কোনো শাস্তির ঝুঁকি থাকে না।
এই তুলনা থেকে স্পষ্ট যে, হুন্ডি কখনোই নিরাপদ এবং আইনসম্মত উপায় নয়, এবং বৈধ রেমিটেন্স চ্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রবাসীরা নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং লাভজনকভাবে টাকা পাঠাতে পারেন।

বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর সময় খরচ ও চার্জ

বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর সময়, বিভিন্ন মাধ্যম এবং পরিষেবার উপর নির্ভর করে চার্জ এবং খরচের পার্থক্য থাকে। এই খরচ এবং সার্ভিস চার্জ প্রেরকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি প্রেরিত অর্থের পরিমাণকে প্রভাবিত করতে পারে। নিচে বিভিন্ন জনপ্রিয় মাধ্যমের গড় চার্জের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
  • ব্যাংক ট্রান্সফার: ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে গড় সার্ভিস চার্জ সাধারণত $5 থেকে $15 পর্যন্ত হতে পারে। এই চার্জটি ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং এটি ট্রান্সফারের পরিমাণ ও গন্তব্যের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
  • Western Union: Western Union-এর মাধ্যমে টাকা পাঠানো বেশ জনপ্রিয়। এই মাধ্যমটি গড়ে $3 থেকে $10 পর্যন্ত ফি নেয়, যা প্রেরকের অবস্থান, গন্তব্য দেশ, এবং পাঠানো পরিমাণের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে, এটি বেশ দ্রুত এবং সুবিধাজনক একটি পদ্ধতি।
  • Wise (পূর্বে TransferWise): Wise-এর মাধ্যমে টাকা পাঠানোর খরচ সাধারণত 0.5% থেকে শুরু হয়। এই মাধ্যমটি লেনদেনের জন্য স্বচ্ছ এবং সাশ্রয়ী, তবে প্রেরিত অর্থের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে এর চার্জ পরিবর্তিত হতে পারে। Wise আন্তর্জাতিক রেমিটেন্সের জন্য একটি জনপ্রিয় এবং আধুনিক প্ল্যাটফর্ম।
  • বিকাশ/নগদ: মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম বিকাশ এবং নগদ সাধারণত রেমিটেন্স গ্রহণের জন্য কোনো অতিরিক্ত ফি নেয় না, অর্থাৎ এটি ফ্রি রিসিভ করা যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে বা বিশেষ শর্তের অধীনে কিছু চার্জ আরোপিত হতে পারে। তবে সাধারণভাবে, বিকাশ এবং নগদ দেশে দ্রুত এবং কম খরচে টাকা গ্রহণের সুবিধা দেয়।
এই খরচ এবং চার্জের মধ্যে পার্থক্য জানলে, প্রবাসীরা তাদের রেমিটেন্স পাঠানোর উপযুক্ত মাধ্যম বেছে নিতে পারবেন এবং তারা সর্বোচ্চ সুবিধা লাভ করতে পারবেন।

রেমিটেন্স সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক আইন ও নীতিমালা

রেমিটেন্স প্রেরণ এবং গ্রহণের জন্য বাংলাদেশে কিছু নির্দিষ্ট আইন এবং নীতিমালা প্রযোজ্য যা দেশের আর্থিক নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক মুদ্রার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে। এই আইন ও নীতিমালা রেমিটেন্স প্রক্রিয়াকে বৈধ ও নিরাপদ করতে সহায়ক। নিচে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইন তুলে ধরা হলো যা রেমিটেন্স প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত:

ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭:
ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭ বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা পরিচালনা এবং লেনদেনের জন্য একটি মৌলিক আইন। এই আইনের অধীনে, বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন এবং রেমিটেন্স কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই আইনে বলা হয়েছে যে, বৈদেশিক মুদ্রা কেবল অনুমোদিত ব্যাংকিং চ্যানেল বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রেরণ ও গ্রহণ করা যাবে। অবৈধ বা হুন্ডির মাধ্যমে মুদ্রা লেনদেন নিষিদ্ধ এবং এটি আইনগতভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২:
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন, যা দেশের আর্থিক সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখতে কাজ করে। এই আইনের মাধ্যমে, মানি লন্ডারিং এবং অবৈধ অর্থপ্রবাহ রোধ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। রেমিটেন্স প্রেরণকারীদের জন্য এই আইন অনুসরণ করা আবশ্যক, যাতে তারা বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে টাকা প্রেরণ করে এবং সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী অনুসরণ করে। এই আইনে বলা হয়েছে যে, অবৈধ আর্থিক লেনদেন বা অর্থ পাচার কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

এই দুটি আইন রেমিটেন্স প্রক্রিয়াকে আইনগতভাবে সুরক্ষিত এবং স্বচ্ছ করতে সাহায্য করে এবং দেশীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স নির্দেশিকা

বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্স সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করেছে, যা প্রবাসীদের জন্য রেমিটেন্স প্রেরণ ও গ্রহণের প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট এবং আইনানুগ করার উদ্দেশ্যে প্রণীত। এসব নির্দেশিকা অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে রেমিটেন্স প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অবৈধ কার্যক্রম, মানি লন্ডারিং বা অন্য কোন আর্থিক অপরাধ সংঘটিত না হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স নির্দেশিকা অনুযায়ী, রেমিটেন্স পাঠানোর এবং গ্রহণের উভয় ক্ষেত্রেই তথ্য সংরক্ষণ এবং রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ, ব্যাংক এবং রেমিটেন্স সেবাদাতারা, প্রেরক এবং প্রাপকের তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করবেন এবং প্রয়োজন হলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে হবে। এই নির্দেশিকাগুলি নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করে:
  • তথ্য সংরক্ষণ: ব্যাংক এবং অন্যান্য অনুমোদিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রেরক এবং প্রাপকের পরিচয়, লেনদেনের পরিমাণ, এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
  • রিপোর্টিং: যদি কোনো সন্দেহজনক বা অবৈধ লেনদেন ঘটে, তবে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে রিপোর্ট করতে হবে। এই রিপোর্টিং ব্যবস্থা অর্থনৈতিক অপরাধের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং দেশে আর্থিক নিরাপত্তা বজায় রাখে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশিকা রেমিটেন্স প্রক্রিয়া আরও সুষ্ঠু, নিরাপদ এবং স্বচ্ছ করতে সহায়ক। এছাড়াও, এটি বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনতে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রবাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

প্রবাসীদের জন্য বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ রয়েছে, যা তাদের লেনদেনকে সুরক্ষিত এবং সুষ্ঠু রাখতে সাহায্য করবে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ তুলে ধরা হলো:

সর্বদা সরকার অনুমোদিত এজেন্ট ব্যবহার করুন:
টাকা পাঠানোর সময় অবশ্যই সরকার অনুমোদিত এবং ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরণকারী এজেন্ট বা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে হবে। অবৈধ চ্যানেল বা হুন্ডি ব্যবহার করা আইন বিরোধী এবং এতে অর্থ হারানোর ঝুঁকি থাকে। সরকার অনুমোদিত মাধ্যম ব্যবহারে শুধু সুরক্ষা নিশ্চিত হয় না, বরং আপনি সরকারি প্রণোদনা সুবিধাও পেতে পারেন।

রসিদ ও রেফারেন্স নম্বর সংরক্ষণ করুন:
টাকা পাঠানোর পর প্রাপ্ত রসিদ এবং রেফারেন্স নম্বর সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভবিষ্যতে যদি কোনো সমস্যা বা প্রশ্ন উঠলে সহজেই সঠিক তথ্য প্রমাণ করতে সহায়ক হবে। এছাড়াও, এই তথ্যের মাধ্যমে লেনদেনের অবস্থান ট্র্যাক করা সম্ভব হয়।

নিজের নামেই টাকা পাঠান (ব্যবসার নামে নয়):
রেমিটেন্স প্রেরণকারী ব্যক্তির নিজের নামেই টাকা পাঠানো উচিত, কারণ যদি আপনি ব্যবসার নামে টাকা পাঠান, তবে তা বিশেষ অনুমোদন ছাড়া গ্রহণ করা যেতে পারে না এবং এটি আপনার ট্রানজ্যাকশনকে জটিল করতে পারে। ব্যক্তি হিসেবে পাঠানো অর্থে কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং এটি নিরাপদও।

বড় অঙ্কে পাঠালে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন:
যদি আপনি বড় অঙ্কের অর্থ পাঠান, তবে ব্যাংক বা রেমিটেন্স এজেন্টের সাথে যোগাযোগ রেখে চলুন। এতে তারা আপনার লেনদেনের তথ্য নিশ্চিত করবে এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। বড় অঙ্কের লেনদেনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যাচাই প্রক্রিয়া বা অনুমোদন প্রয়োজন হতে পারে, তাই ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা অত্যন্ত জরুরি।

এই পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে প্রবাসীরা তাদের রেমিটেন্স প্রক্রিয়া সহজ, নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্তভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)

প্রশ্ন ১: বিদেশ থেকে সরাসরি বিকাশে টাকা আসতে কত সময় লাগে?
উত্তর: সাধারণত ৫-৩০ মিনিটের মধ্যে টাকা চলে আসে।

প্রশ্ন ২: রেমিটেন্সে ইনসেনটিভ পাওয়ার জন্য আলাদা কিছু করতে হয়?
উত্তর: না, ইনসেনটিভ নিজে থেকেই যুক্ত হয়ে যায়।

প্রশ্ন ৩: টাকা পাঠাতে কি NID বাধ্যতামূলক?
উত্তর: হ্যাঁ, প্রেরক ও গ্রহীতার উভয়ের NID থাকা উচিত।

প্রশ্ন ৪: হুন্ডির টাকা কি ব্যাংকে জমা করা যায়?
উত্তর: না, এটি অবৈধ এবং ব্যাংকে ট্রেস হলে আইনি ঝামেলা হতে পারে।

উপসংহার

বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো এখন আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে সহজ, দ্রুত এবং নিরাপদ। শুধু সঠিক নিয়ম ও বৈধ মাধ্যম ব্যবহার করলেই আপনি পরিবারের কাছে দ্রুত টাকা পৌঁছে দিতে পারেন। এছাড়াও সরকারি প্রণোদনা পেয়ে অতিরিক্ত সুবিধাও ভোগ করতে পারেন।

তাই সবসময় চেষ্টা করুন হুন্ডি পরিহার করে বৈধ চ্যানেল ব্যবহারের। এতে আপনি যেমন নিরাপদ থাকবেন, তেমনি দেশের অর্থনীতিও মজবুত হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url